অমি রেজা

অমি রেজা

সরি,আজকেও দেরী হয়ে গেল। এসাইনমেন্ট ওয়ার্ক ছিল। তুমি নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ ধরে বসে আছ।
ইটস ওকে রবিন। মিষ্টি একটা হাসি দেয় দিয়া।
তুমি এত ভালো কেন দিয়া।
তুমি ভালো জানো,তাই!
তোমার মুখটা এত শুকনো দেখাচ্ছে কেন?
দুপুরে কিছু খাওনি?
সময় পাইনি।
কি বলছ?
সময় মতো না খেলে শরীর খারাপ করবে।
আমার অভ্যাস আছে দিয়া।
চলো আমার সাথে।
দিয়া রবিনের হাত ধরে টানতে থাকে।
কি করছ? সবাই দেখছে।
দেখুক,তাতে আমার কিছু এসে যায়না।
রবিন কথা না বাড়িয়ে দিয়া র সাথে পা বাড়ায়।

টিএসসি থেকে বেরিয়ে,ডাস এর সামনে এসে একটা রিক্সায় উঠে পড়ে দিয়া। ইশারায় রবিন কে উঠতে বলে।
রবিন বাধ্য ছেলের মতো রিক্সায় উঠে বসে।

রিক্সাওয়ালা মামু নীরব হোটেল এ যাও। রিক্সা চলতে শুরু করে।
এতো খাবার! আমি খাব?
হিমমম,তুমি খাবে,আর আমি দেখব।
তোমার কি হয়েছে দিয়া।
কিছু হয়নি।
ওকে আমি খাচ্ছি,তুমি দেখো।

দিয়ার চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু শিঁশির কণা জমেছে,তর্জনি দিয়ে আলতো করে মুছে ফেলে।পাশে রবিন দেখে ফেলে।

রবিন খাবার মুখে দিয়ে টের পায়, সত্যি তার ভীষন ক্ষুধা পেয়েছে।

দিয়া জানেনা, কেন,কি কারনে,রবিন নামের মানুষটাকে সে এতটা ভালোবাসে। তবে একটা কথা সত্যি মানে,
এই মানুষটা কে দেখে,দেখে সে অনন্তকাল,

এক লহমায় কাটিয়ে দিতে পারবে।
দিয়া!!
হিমমম।
কি ভাবছ?
কৈ কিছুনা’ত? দিয়া হাসতে থাকে।
রবিন অপলক তাকিয়ে থাকে দিয়া র দিকে।
চার চক্ষু এক হয়। না বলা কথাগুলো ভাষা পায় না। সময় বয়ে যায়।
শীতকালের বেলা। টুপ করেই পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে যায়।সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে এল।
দিয়াকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে,রবিন হোস্টেলে ফিরে আসে। সে বুয়েটে পড়ে। আর কিছুদিন পরই লেখাপড়ায় ইতি টানবে।

তারপর একটা চাকুরী আর কিছু স্বপ্ন।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রবিন। তার মনের আকাশটা অন্ধকার এ ছেয়ে যায়। সেই অন্ধকার আকাশ এ আশা-নিরাশা র মেঘেরা ছুটোছুটি করতে থাকে।

একজন মায়াবতীর জন্য মনটা কেমন হাহাকার করতে থাকে।
সে ভয় পায়,ভীষন রকমের ভয়। দিয়া’ কে সে আপন করে পাবে’ত?
সামান্য এক স্কুল মাস্টারের ছেলে সে। আর দিয়া কোথায় ধনকুবেরের একমাত্র মেয়ে।
পরিবারের কত দায়িত্ব তার মাথার উপর। কি করবে, রবিন বুঝে উঠতে পারে না।
দিয়া কে সে অনেকবার বলেছে,বুঝিয়েছে। কিন্ত দিয়া, তার সিদ্ধান্তে অটল।
এখন আর রবিন চাইলেও পিছপা হতে পারবে না।

দিয়া র চাওয়ার কাছে,সেও যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। দিয়া কে ছাড়া,সেও যে অসম্পূর্ণ।
বাসায় ফিরে একটা লম্বা শাওয়ার নিলো দিয়া। তারপর সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আরামে চোখ বুঁজে আসে তার।গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সে।

আজ পূর্ণিমা তিথি। চাঁদের আলোয় ডুবে আছে দিয়া দের বাড়ীর ছাদ। ভরা জ্যোৎস্নার সমুদ্রে, দিয়া আজ চন্দ্রস্নান করবে। সে আজ অপরুপ সাজে সেজেছে। খোঁপায় পড়েছে শিউলি ফুলের মালা। কপালে দিয়েছে সিঁদুর রঙা টিপ। নীল রঙের শাড়ী পড়েছে। তাকে যেন রুপকথা র রাজকণ্যা লাগছে। সে খুব সন্তর্পণএ সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ছাদে চলে আসে। মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়। ফিনিক ফোঁটা জ্যোৎস্নার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। চন্দ্রস্নান করতে থাকে সে।
ধ্যানমগ্ন কোন দেবীর মত লাগছে তাকে। এভাবে

কতক্ষণ কেটেছে বলতে পারবে না সে। চোখ খুলতেই দেখতে পায় এক পৌরুষ যুবা তার সামনে দাড়িয়ে আছে। হাসছে সে খিল খিল করে। মলিন মুখটা কেমন মায়ায় মাখানো। এত সুন্দর তার চোখ দুটি। কিন্ত এই মুখ,সে দেখেছে বহুবার,এই মুখটি তার বহুদিনের চেনা। আশ্চর্য! দিয়া তার নামটা ভুলে গেছে। কিছুতেই মনে করতে পারছে না। কিছুতেই না।

দিয়া,এই দিয়া! কি হয়েছে?

হঠাৎ চমকে,দিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। সে লাফ দিয়ে ওঠে বসে,আর ঠিক তখনি তার নামটা মনে পড়ে,,,রবিন। সেই পৌরুষ যুবাটির নাম রবিন।

কি হয়েছে মা। ঘুমের মধ্যে অমন করছিলি কেন?
দিয়া তার বাবা কে জড়িয়ে ধরে।
মিঃ অাসিফ রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন।
পাগলী মেয়ে,কিছু হয়েছে তর?
কিছু না বাবা।
মনে মনে বলে, আমার একটা অসুখ হয়েছে বাবা,”রবিন অসুখ”।
খাবি চল। রাত দশটা বাজে। তর মা রেগে টমেটো হয়ে আছে।
তুমি যাও,আমি আসছি বাবা।
ফোন বাজছে রবিনে র। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে দিয়া বলে,
আজকে বিকালে দেখা করতে পারবে?
কেন?
আমার জরুরী কথা আছে।
আজকে যে টিউশনি তে যেতে হবে।
অন্যদিন পড়াবে।
খুউব জরুরী।
ভী–ষ—ন।
কোথায় আসতে হবে,বলো।
তুমি হলে থেকো,আমি ফোন দিলে গেট এ চলে এসো।
ওকে।
তোমার হাতে ওটা কি?
ওওওও,,, এটা তোমার জন্য।
কি আছে এতে?

দাড়াও দেখাচ্ছি,প্যাকেট থেকে একটা স্যুয়েটার বের করে দিয়া। টকটকে নীল রঙের। দিয়া জানে রবিনের প্রিয় রঙ নীল।

সুন্দর না রবিন। পছন্দ হয়েছে।
হিমমমম। দারুন।
দাও পড়ি।
রবিন স্যুয়েটার পড়ছে।
দিয়া মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখছে।
এটা তোমার জরুরী কথা দিয়া?
রাগ করেছ?
আজকে ঘন্টায় রিক্সা ভাড়া নেব,তারপর তোমাকে নিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুড়ব।
রিক্সা চলছে,,পলাশীর মোড় ঘুরে প্রথমে নিউমার্কেট,তারপর সাইন্সল্যাব,,
তুমি এমন ফ্রিজ হয়ে বসে আছ কেন। ঠিক হয়ে বস। আমার ঠান্ডা লাগছে,হুডটা তুলে দাও।
দিয়ার গা থেকে পারফিউম এর মিষ্টি গন্ধ বের হচ্ছে। রবিনের হৃদয়ের আনাচে কানাচে কেমন যেন লাগছে, ভালো লাগায় মন ভরে যাচ্ছে।

দিয়া রবিনের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।গভীর আবেগে চেপে ধরে,তার হৃদয়ের উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় রবিনের হৃদয় গভীরে।

রবিন ঠিক মতো বসতেও পারো না। আমি পড়ে যাচ্ছি। পিছনে হাত দিয়ে আমাকে ধরে রাখো।
রবিন তাই করে।
দিয়া রবিনে র বুকে মাথা রাখে।
রিক্সা আসাদগেট পেরিয়ে থানার মোড় ঘুরে সংসদ ভবন এলাকায় ঢুকে পড়ে।
রবিনে র বুকে দিয়া এই প্রথম।
কেমন যেন পাগল পারা ভালোলাগায় রবিনের বুকের ভেতরতা উথাল পাতাল করতে থাকে। কেমন যেন মাথা নষ্ট ভালো লাগা তার শরীরের শিরা, উপশিরায় বইতে থাকে।
দিয়া তোমার কি হয়েছে?
কিছু হয়নি’ত।
এমন করছ কেন?
কি করেছি?
রবিন কিছু বলে না। দিয়া কে গভীর আবেগে জড়িয়ে রাখে।
রবিন।
হিমমমমমম।
আমি জানি,তুমি কি ভাব?
আমাকে নিয়ে তোমার খুব ভয় হয়,তাই না?
বিশ্বাস করো,এক মৃত্যু ছাড়া,আমাকে তোমার কাছ থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
দিয়া,!

রবিনের চোখের কোনে ছোট্ট ছোট্ট কষ্ট জমেছে। তা যে কোন সময় বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে পারে। দিয়াকে সে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বুকে চেপে নেয়, মনে মনে বলে–
মায়াবতী, আমার মায়াবতী,
তোমার জন্য আমি হাজার,লক্ষ,কোটি জীবন প্রতিক্ষা করতে পারি।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত