পাগলীটাকে হারাতে চাই না

পাগলীটাকে হারাতে চাই না

আমি রাস্তা দিয়ে দিক বেদিক হয়ে হাঁটছি
কারন, আমাকে আমার পছন্দের মানুষটা বাবু বলছে। কিন্তু, ভালবেসে নয় বরং বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে। আসলে আমি যাকে লাইক করি সে আমার ভাইকে পছন্দ করে তাই আজ যখন আমি দেবিকা কে বলতে গেছি ও আমার পছন্দ তখন ওর কথা শুনে যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেছি।
— হাই দেবিকা..
— হ্যালো।
— কেমন আছো?
— হুমম ভালো… তুমি?
— হুমম বিন্দাস। আসলে দেবিকা তোমাকে একটা কথা বলতে আসছিলাম।
— হুমম বলো।
— আসলে তোমাকে না আমার হেব্বি পছন্দ।
— ও তাই। তোমাকেও আমার খুব পছন্দ বাবু।
— বাবু? সত্যি বলছো।
— হুমম তুমি যেহেতু আমার হবু বর এর ভাই তাই তোমাকে পছন্দ হবে না তো কাকে পছন্দ হবে।
— কি??
— হুমম একটু আগেই তোমার ভাই আমাকে প্রপোজ করে গেছে আর আমিও তোমার ভাইকে ভালবাসি তাই রাজিও হয়ে গেলাম।

এরপর যখন রাস্তা দিয়ে বাসায় আসছি তখন শুধু ভাবছি ” ওরে আমার ভাইরে আর কোন মেয়ে পাইলি না। আমার কেরাশ দেবিকাকেই তোর ভালো লাগতে হলো।” আজ রাতে ভাই অফিস থেকে আসুক, ওর একদিন কি আমার যতদিন লাগে।
দেবিকার বাসা আর আমাদের বাসা হলো পাশাপাশি দুই বিল্ডিং এর দুইটা ফ্ল্যাট। কিন্তু ওরে মনের কথা বলতে ওর কলেজের সামনে গেছিলাম আর ও আমারে দেবর বানাই ফেলল। রাতে বসে বসে বই পড়ছি। আসলে কিসের বই পরছি, বইয়ের পাশে মোবাইল রেখে ফেসবুক চালাচ্ছি। হঠাৎ দেখি ভাইয়া রুমে ডুকলো আর আমি মোবাইলটা লুকিয়ে ফেললাম।

— বাব্বা আজ চাদঁ কোন দিকে উঠলোরে। নবাব সাহেব যে পড়তে বসছে।
— ভাইয়া আমি কি তোর মত পড়ায় ফাকিঁ দিতাম যে মোবাইল পাশে নিয়ে পড়তে বসবো। আমি খুব ভাল ছাত্র।
— হুমমম তাই তো দেখছি এখনো মোবাইলটা ঠিক মত লুকাতে শিখিস নি।
— ইশশ।
ভাইয়া আর কোন কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। আমি আর ভাই এক রুমেই থাকি। কথায় আছে না, সেড়ের উপর সোয়া সেড়। ঠিক এমন হলো আমার ভাই। ও কেমনে জানি বুঝে যায় আমি কি করতে যাবো। আর দেবিকাকেও হয়ত ভাই অনেক আগে থেকে লাইন মারতো তাই প্রপোজ করছে। তাছাড়া দেবিকাও ভাইকে লাইক করে তাই এটা নিয়ে ভাইয়ের সাথে কথা না বলে বরং বাবার ভয় দেখিয়ে দেখি কিছু টাকা হাতানো যায় কি না। ভাই ওয়াশরুম থেকে আসতেই আমি বললাম….
— ভাইয়া দেবিকা কে রে?
— তোর হবু বৌদি।
— কি? দাঁড়া এখনি বাবাকে গিয়ে সব বলছি। আমরা এইদিকে তোর জন্য মেয়ে খুঁজে বেড়াই আর তুই কি না অন্য দিকে রাসলীলা করস।
— ও তাই নাকি। আচ্ছা মনে কর,তুই এইসব বাবাকে বলবি না। তাই তোর মুখ বন্ধ করতে আমার টাকা দিতে হবে তাই তো।
— হুমমম ঠিক তাই।
— আচ্ছা তোরে একটা আপডেট নিউজ দেই। বাবা গত পরশুদিন দেবিকার বাবার সাথে বসে আমার বিয়ে ঠিক করে আসছে।আর আমারও যেহেতু দেবিকাকে পছন্দ তাই আর ওয়েট না করে আজ সকালেই ওর কলেজের সামনে গিয়ে ওরে প্রপোজ করে আমি অফিসে যাই। আর সামনের মাসে তো আমার বিয়ে এটা আজ খাবার টেবিলে বাবা বলবে।
— এ্যা! এত্তো কাহিনী ঘটে গেল আর আমি কোথায় ছিলাম?
— তুই মনে হয় সাড়াদিন বাসায় থাকিস যে তোর এইসব জানার কথা।
— তাও তো ঠিক। আমি তো বেশি বাইরে থাকি। আচ্ছা বাদ দে, ভাইয়া তোর কোনো শালী আছে।
— হুমম শুনছি একটা আছে তবে হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া করে হয়তো।
— ও তাইলে হয়ত আন্ডা বাচ্চা মানে পিচ্ছি হবে। ওকে বাদ দে।
— হুমম এখন খেতে আয়।
.
তারপর ভাইয়ার সাথে খেতে চলে গেলাম। আমার কি কপাল রে, ভাইয়ের বিয়ে নাকি সামনের মাসে আর তারই কিছুদিন পর আসছে দূর্গা পূজা। এখন আমি অনার্সে ৩য় বর্ষের ছাত্র কিন্তু একটাও জি এফ কপালে জুটে নি। যাও জোটার কথা ছিল তাও ভাইয়া পাক্কাপোক্ত করে নিয়ে গেল।
.
প্রায় ভাইয়ের বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে রুমে শুয়ে শুয়ে আমার সব ফ্রেন্ডদের ফোন দিয়ে নিমন্ত্রণ দিচ্ছি। হঠাৎ মায়ের ডাকে বাস্তবে আসলাম….
— ওই রাজ তোরে কখন থেকে ডাকছি। কান কি কাউকে ধার দিয়ে দিলি নাকি।
— আমার গার্লফ্রেন্ড তোমার বড় ছেলে নিয়ে গেছে আর এই কান তো সামান্য ব্যাপার।
— কি?
— না কিছু না। কি দরকারে ডাকছো?
— বিয়ের তো আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। নে যা তো এই লিস্টের বাজার গুলো করে নিয়ে আয়। ( আমার হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে)
— আরে এটা লিস্ট নাকি বাংলাদেশী রাজনীতিবিধ গনের অপরাধের তালিকা। এত্তো বড়….।
— ওই চুপ। যা এখন
— ওই আমি কেন যাবো? ভাইয়ের বিয়ে তাই ভাই ই তো যেতে পারে।
— তোর ভাই তো আর তোর মত বাসায় বসে থাকে না। আর তোর বয়সে তোর ভাই টিউশনি করতো বুঝলি।
— হুমমম সবখানেই বড় ছেলে ফ্যাক্ট।
— হুমম এবার যা।
আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে পরলাম সেই ইয়া বড় একটা লিস্ট নিয়ে। আমি গেট থেকে বার হয়ে বাম দিকে বাকঁ নিতে যাবো। ওমনি পরে গেলাম ধাক্কা খেয়ে। যদিও হেব্বি রাগ উঠছে কিন্তু দেখি মেয়ে তাই আর রাগ দেখাই নি।কিন্তু ওই মেয়ে ঠিকই রাগ দেখানো শুরু করে দিলো….
— ওই ছেলে দেখে চলতে পারো না। মেয়ে দেখলেই কি ধাক্কা খাইতে মন চায়।
— ( আমি ওর দিকে তাকিয়েই আছি)
— ওই কি হলো? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?
— আচ্ছা তোমার বাসাটা কোনটা গো?
— মানে?
— না মানে তোমার লগে প্রেম করবো তো তাই ইচ্ছাকৃত ধাক্কা খেলাম। তাই বাসাটাও চিনতে চাচ্ছি।
— ওই বেয়াদব সাইড দাও। ফাজিল ছেলে একটা
— আরে যাবে তো যাও, নামটা তো বলে যাও।
— বাঁদর একটা।
বলেই বকবক করতে করতে চলে গেল। কিন্তু সে গেল আমাদের পাশের বিল্ডিং এ। মানে যে বাসার ৩য় তলায় আমার ভাইয়ের বিয়ে। যাক মেয়েটা কাছেই থাকে আর ক্রাশটাও ভালই লাগলো। কিন্তু একটু ঝগড়াটে তবে মানিয়ে নেওয়া যাবে।

বিকালে বসে আছি কিন্তু রুমে বসে বসে কাজ করছি। হঠাৎ দেখি এই দুপুরেই ভাইয়া অফিস থেকে চলে আসছে। আগেতো কখনো ভাইয়াকে এমন সময় আসতে দেখি নি….
— আরে ভাইয়া এই বিকেলে তুই বাসায় আসলি?
— হুমম দেবিকা ফোন দিয়ে বলল একটু তারাতারি চলে আসতে তাই আরকি।
— এখনই বউয়ের আচঁলের নিচে চলে গেলি। বাকি জীবন তো পরেই আছে।
— ওই চুপ। দেবিকার বোন নাকি আজ হোস্টেল থেকে আসছে আর আমায় দেখতে চাইছে তাই আসলাম।
— একেই তো বলে কপালের কপাল আর আকপালের চাড়া..। ও তোরই তো কপাল। বউয়ের সাথে শালী ফ্রী।
— রাজ বেশি হচ্ছে কিন্তু…
— আচ্ছা আর কিছু বলবো না।
— চল এখন ছাদে যাই।
— আমি কেন ছাদে যাবো। তোর বউ তোরে ডাকছে তাই তুই যা।
— ভাই না ভাল আমার। আচ্ছা তোরে একটা অফার দিচ্ছি, তুই যে মেয়েকে লাইক করবি আমি বাবাকে বলে ওর সাথে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করবো।
— পাক্কা তো।
— একদম।
— ওকে চল তাহলে।

আমি আর ভাইয়া ছাদে যেতে লাগলাম। কারন আমাদের দুইটা বিল্ডিং পাশাপাশি দাড়াঁনো। যখনই আমি ছাদে গেলাম, দেখি আমার সাথে ধাক্কা খাওয়া মেয়েটা দেবিকার সাথে বসে আছে। ওয়াও এইটা দেবিকার বান্ধবী মনে হয়। আমি ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আর ভাইয়া ওদের ডাক দিলো। আর তখনই ওই মেয়ের ঝড় শুরু করলো।

— ওই বাঁদর তুমি আমার পিছু পিছু নিয়ে এখানেই চলে আসলে।
ও কথা বলার সাথে সাথে আমি ভাইয়ার পিছনে চলে গেলাম আর ভাইয়া তো অবাক। কারন মনে করছে বকা গুলো ওনারে বকতাছে। তাই ওনি বলল…
— আরে আমি কখন তোমার পিছু নিলাম।
— আরে আপনি না তো। আপনার পিছনে যে বাঁদরটা আছে, আমি ওর কথা বলছি।
— ও আচ্ছা। এটা বাঁদর না তো, আমার ভাই তবে বাঁদরের সহোদর।
— ভাইয়া একটা মেয়ের সামনে আমার মত একটা শিশুকে তোমার সবাই মিলে এমনে অপমান করতেছেন। দেখে নেবো সবাইকে…. ( আমি)
— আরে ভাইয়া তুমি যেও না। তোমার দলে আমি আছি তো। তোমার ভাই আর স্নিগ্ধা এক দল হলে তুমি আর তোমার এই বৌদি হলো আরেক দল।( দেবিকা)
— ওকে তাহলে ঠিক আছে। ম্যানিব্যাগই আমার দলে তাই আর কি লাগে?
— মানে?
— মানে বিয়ের পর তো ভাইয়া ঘরে আলমারিতে টাকা রাখবে আর সেই আলমারির চাবি থাকবে বৌদির কাছে তাই কোন সমস্যা নেই।
— ওই আরেকজনের টাকা নেওয়ার চিন্তা করো কেন? নিজে কাজ করতে পারো না। ( স্নিগ্ধা)
— ওই আমি কি তোমার জামাইয়ের টাকা নিবো বলছি। আমার ভাইয়ের টাকা নিবো। এতে বৌদির কোন আপত্তি নেই তবে তুমি বাধাঁ দিচ্ছো কেন?
— ওই তোমরা থামবে। এখানে আসছি তোমাদের পরিচয় করাতে আর তোমরা ঝগড়া শুরু করে দিলে। ( দেবিকা)
— হুমম ঠিক। ( ভাইয়া)
— এই রাজ এ হলো আমার বোন স্নিগ্ধা আর স্নিগ্ধা এটা হলো রাজ।(দেবিকা)
— হুহহ ওর সাথে হাত মিলাতে আমার বয়েই গেছে।

বলেই রাগ দেখিয়ে ছাদ থেকে চলে গেল। আর আমিও বলে উঠলাম I like it.
ভাই আর দেবিকাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমিও চলে আসলাম। আসলে দেবিকা আমার বৌদি হতে গেলেও আমার সমান বয়সের তাই নাম ধরেই ডাকি। কিন্তু আমারে কিছু বলে না।
অনেক দুষ্টামীর মাঝে দিয়ে ১ সপ্তাহ পার করলাম। এর মাঝে যে স্নিগ্ধাকে কত জ্বালিয়েছি তা সেই বুঝছে। যাই হোক, আজ ভাইয়ের গায়ে হলুদ। সব থেকে মজার হলো, পাশাপাশি দুই বিল্ডিং এর মাঝে অনুষ্ঠান।
আমি ক্যামেরা ম্যানের সাথে বসে কথা বলছি তখনই দেখি দেবিকাকে নিয়ে আসা হচ্ছে আর তার পাশেই আমার ক্রাশ স্নিগ্ধা। ওরে দেখে যেন চোখই সরতেই চাচ্ছে না। বার বার ইচ্ছা হচ্ছে ওরে একটু দেখি। তাই ক্যামেরা ম্যানের থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে লাফ দিয়ে ওদের বিল্ডিং এ আসলাম। আর ছবি তুলতে লাগলাম বৌদির। তবে আসলে আমি স্নিগ্ধার ছবিই তুলছিলাম। আর ওর রাগি রাগি তাকানো আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম। স্নিগ্ধা হয়ত জানে না ওরে রাগলেও সেই মাপের কিউট লাগে।

হঠাৎ একটা মজার কাজ করলাম। ক্যামেরা ম্যানকে বললাম আমাদের একটা ছবি তুলে দিতে কিন্তু স্নিগ্ধা এতে নারাজ। ও আমার সাথে কোন ছবি তুলবেই না। তাই ওরে বললাম, বৌদির এক পাশে ও বসতে আর আরেক পাশে আমি বসবো । ও না করলেও বৌদির কথায় আর না করতে পারলো না। ছবি তুলার সময় এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যেন ওর মুখে খাবার আটকে আছে কিন্তু আমি ওরে জল খেতে দিচ্ছি না।
ছবি তুলা শেষ হতেই আমি আমার বিল্ডিং এ চলে আসি আর ভাইকে নিয়ে আসা হয়। তারপর খুব মজার মাঝে সকল নিয়ম মেনেই গায়েঁ হলুদ শেষ হয়।

সকালে কিছু কিনতে বাজারে যাবো তখনই দেবিকা মানে বৌদির ফোন আসলো।
— হ্যা বলো।
— কোথায় যাচ্ছো এখন তুমি?
— এই তো বৌদি রুম সাজানোর জন্য কিছু ফুল কিনতে যাবো। আসলে ফুল কম পরে গেছে।
— ও ভাল হইছে। তোমার সাথে নাকি স্নিগ্ধা কথা বলবে?
— আচ্ছা দাও ফোনটা।
— ওই আমি স্নিগ্ধা। আমার জন্য তিনটা বড় দেখে গোলাপ আনবে। আর দুইটা রজনীগন্ধার গাজড়া নিয়ে এসো।
— একটু ভালবেসে তো বলতে পারো। এমন জ্বাল নিয়ে বলছো কেন?
— তোমাকে আনতে বলছি তাই নিয়ে এসো। আর বেশি ভালবাসাও ভাল না।
— হুহহ ওকে।
আমিও বাজারের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। প্রায় ২ ঘন্টা বাজারে ছিলাম। আর ফুল গুলো শেষে কিনে নিয়ে আসলাম।
যেহেতু স্নিগ্ধার নাম্বার আমার কাছে নেই তাই বৌদিকে ফোন দিলাম। আর ফোনটা স্নিগ্ধাই ধরলো।
— হুম ফুল নিয়ে আসছো।
— হুমম ছাদে এসে নিয়ে যাও।
আমার শরীরের অবস্থা হেব্বি খারাপ দেখাচ্ছে। বাজার করে আসলাম বলেই হয়ত এমন দেখাচ্ছে। তারপর ফুল গুলো নিয়ে ছাদে গেলাম। দেখি মহারাণী আমার আগেই চলে আসছে।
— এই নাও ফুল গুলো
— হুহহ ভাল করেও তো দিতে পারতেন।
— ভাল করে বলতে কেমন করে?
— কিছু না। যাও কাজ করো গিয়ে… মাথা মোটা একটা।
বলেই স্নিগ্ধা চলে গেল। হায়রে কপাল আমার, বড়রা সত্যিই বলছিল মেয়ে চরিত্র বেজায় জটিল। কেউ পারে না ওদের বুঝতে। তবে ওরা যদি সত্যি কাউকে ভালবাসে তবে সেই প্রিয় মানুষটাকে কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না।

রাতে বিয়ের মন্ডপে আমি আর স্নিগ্ধা পাশাপাশি দাড়িয়ে বিয়ে দেখছি। তখন মাথায় একটু দুষ্টামী চাপলো।
— ওই শুনো না গো।
( আমার ডাক শুনে স্নিগ্ধা খানিকটা অবাক হয়েই তাকালো?)
— ওই এমন করে তাকিয়ো না গো। মনে হচ্ছে শুভদৃষ্টি হচ্ছে।
— তুমি আসলেই একটা বাঁদর।
— ওকে বাদ দাও। আমার না একটা জিনিস ভেবে খুব লজ্জা লজ্জা লাগছে।
— কি?
— মানে আমার আর তোমার বিয়ে তো এমনেই হবে। এটা ভেবে খুব ভালই লাগছে। ইশশ আমিও পাঞ্জাবী পরবো আর তুমি শাড়ী কিন্তু হ্যা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী। আর হ্যা হালকা গয়না পরো। লম্বা হাতার মেচিং ব্লাউজ, খোলা চুল। কপালে হালকা কালো টিপ। হাতে কিছু হালকা চুড়ি।সেই লাগবে তোমায় আর তুমি কম সাজলেই তোমায় ভাল লাগবে, তুমি এমনিই খুব সুন্দর।
পাশে তাকিয়ে দেখি স্নিগ্ধা নেই। হয়ত আমার ডাক শুনেই পালিয়েছে। তবে যাই হোক, ওরে এমন সাজেঁ হেব্বি লাগবে। আমি তো হাজার বার ক্রাশ খেতে বাধ্য। এইটা যদি সে বুঝতো তাহলে খুব ভালই হতো।

তারপর সাড়া রাত বিয়েতে ওরে দেখলেও তেমন একটা কথা বলে নি দরকারি কথা ছাড়া। হয়ত আমার কথা গুলো ওর ভাল লাগছে না নয়ত আমাকে বোরিং লাগছে। ইশশ ও যদি আমায় বুঝতে পারতো।

ভোরে ভাইয়া বৌদিকে নিয়ে বাসায় চলে আসে আর যেহেতু সাড়া রাত সবাই সজাগ তাই যে যেমন করে পারে ঘুমানের জায়গা করে নিচ্ছে। আর আমার জায়গা হলো ড্রয়িং রুমের সোফায়।
দুপুরে ছোটদের হৈ চৈ শুনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। খুব বিরক্ত লাগছে এখন। তাই কয়টা পিচ্ছিদের ডাক দিলাম….
— ওই তোদের কি ঘুম পায় না। এমন হৈ চৈ করছিস কেন?
— তুমি তো পচা। সকাল থেকেই দেখছি ঘুমাচ্ছো। মা বলে যে সকালে বেশি ঘুমায় সে পচা। আর তুমি তো সেই সকাল থেকে ঘুমাচ্ছো।
— তবে রে..
দিলো একটা দৌড়, এখন ওরে আর পাওয়া যাবে না। রান্না ঘরে চলে গেছে। কি পিচ্ছিরে বাবা, মিষ্টি মুখে দুষ্টু কথা শুনিয়ে দিয়ে গেল।
চোখটা মুছতে মুছতে রান্না ঘরের সামনে গেলাম। দেখি বৌদি আর মা রান্না করছে আর অনেক মানুষই আছে। আজ রাতেই নাকি বৌভাত শেষ করে ফেলবে। কিন্তু স্নিগ্ধা কোথায়? কাল যে আমার কাছে বর্ণনা শুলো ওরে কেমন লাগবো, এরপর তো ওর কোন পাত্তাই নেই।তারপর বৌদিকে বললাম…
— বৌদি আজ রাতে আমার জন্য স্পেশাল কি রান্না করবে?
— তিতা করলা ভাজি।
— কি???
— হুমম তুমি আমার এক মাত্র দেবর। তোমার জন্য এমন স্পেশাল জিনিস না করলে কার জন্য করবো বলো তো।
— হুহহ তুমিই খাও তোমার তিতা করলা। আর ওই স্নিগ্ধাকেও খাওয়াও।

আমার কথাটা শুনার পর সবাই আমার দিকে কেমন যেন একটা কৌতুহল নজরে তাকালো। তাই আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে আসলাম। ইশশ আরেকটু হলেই তো সবার কথার ফাকেঁ পড়তাম।

রাতে অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে অনেক আড্ডা দিচ্ছি কিন্তু আমার চোখ গুলো যেন স্নিগ্ধার দিকেই রয়েছে। কিন্তু ও আমার দিকে তাকালো সেই রাগী লুকে। আরে বাবা আমি ওর কি এমন ক্ষতি করলাম যে সবার সাথে নরম আর আমার সাথে গরম রূপ দেখাতে হবে। হঠাৎ কথার ফাকেঁ ভাইয়া জানতে চাইলো স্নিগ্ধা আর কয়দিন থাকবে। তখন স্নিগ্ধা বলল, কালই নাকি হোস্টেলে চলে যাবে। তবে এটা শুনেই কেমন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল আর আমিও সবার সামনে থেকে উঠে চলে আসলাম।
যখন সবাই যে যার মত চলে যাচ্ছিল তখন আমি স্নিগ্ধাকে ডাক দিলাম।
— তোমার সাথে কিছু কথা ছিল?
— হুমম বলো মিস্টার বাঁদর।
— আসলে তুমি কি কাল না গেলে হয় না। আর তো ১০ দিন পরে দূর্গা পূজা। এক সাথে পূজাটা কাটালে হয় না।
— না গো বড্ড পড়ার চাপ।
— আমি খুব সিরিয়াসলি বলছি।
–বাব্বা বাঁদরও সিরিয়াস হয় বুঝি? যাই হোক, কাল আমাকে একটু বাসস্টপ পর্যন্ত দিয়ে এসো কিন্তু?
আমাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। খুব একটা আবদার নিয়ে বলছি থেকে যেতে কিন্তু সে থাকলো না। যাক গে, যে যাওয়ার সে তো যাবেই।

সকালে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি স্নিগ্ধাকে বাসস্টপে দিয়ে আসবো বলে। কি যেন মিস করছি আর নাই নাই মনে হচ্ছে। হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলো। অনেক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফোনটা ধরলাম…….
— হ্যালো।
— ওই বাঁদর আমি তোমার বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আমায় নিয়ে যাবেন না।
— হুমম আসছি।
ও কেন ফোন দিলো জানি না। তবে ও চাইলে বাসায় আসতে পারতো। আমিও আর ওয়েট না করে চলে গেলাম ওর কাছে।
ওর কাছেই যেতেই ও কেমন করে যেন তাকাচ্ছে আর বলল…
— কি ব্যাপার মিস্টার বাঁদর? মুখটা এমন বাংলার পাচেঁর মত করে রাখছো কেন?
— না কিছু না।
— আহারে আমার সাথে প্রেম করার শখটা বুঝি পূরন হলো না।
— বাদ দাও। চলো তো..
ও কি সত্যি চলে যাবে নাকি যাবে না। কিন্তু আমার কেন খারাপ লাগছে ওর জন্য। ও যে চলে যাচ্ছে ওর কি একটুও খারাপ লাগছে না।
একটা রিকশা নিয়ে বাসস্টপ আসলাম। আর আমি ভাড়া মিটিয়ে দিলাম….
— এবার বলো কোন বাসের টিকিট কেটে দিবো?
— বাস নয় বরং একটা রিকশা নাও।
— মানে হোস্টেলে যাচ্ছি না।
–কেন??
— না কারন একটা ছেলে খুব রোমিও ভাব নিয়ে আমার কাছে আবদার করলো পূজা পর্যন্ত থেকে যাওয়ার জন্য। আমি কি তার আবদার ফেলতে পারি। শত হলেও কত দরদ দিয়ে কথা গুলো বলে ছিলে।
— কথা গুলোর উত্তর পরে দিচ্ছি। এবার বলো কোথায় যাবে।?
— হুম শপিংয়ে যাবো তোমার সাথে। পূজার জন্য তো কিছু কিনতে হবে, তাই না।
— কিন্তু?
— ভয় পেও না তো। বেশি কিছু না, একটা শাড়ি আর কিছু চুড়ি কিনবো । এখনই যেই ভয় পাচ্ছো তারপরও প্রেম করার শখ দেখাও।
— ওই আমি ভয় পাই নি।
— মুখ দেখেই বুঝা গেছে। আর আজকাল তো কিছু ছেলে দেখা যায়। বলতে গেলে অনেকেই বাপের হোটেলে খায়, টাকা তো উপার্জন করে না কিন্তু প্রেম করতে যায়। আরে আগে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটা, তারপর প্রেমের স্বপ্ন দেখ।

— হুমম ঠিক বলছো।
তারপর দুইজনে মিলে একটা শপিং মলে গেলাম। আর ও আমাকে বসিয়ে রেখে বলল ” ও নাকি নিজে ওর শপিং করবে ” আর আমাকে ওর সামনে যেতে দিবে না। শুধু বলছে টাকা দেওয়ার সময় টাকাটা দিয়ে দিতে।আমাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে নিজে গেল শপিং করতে।
প্রায় ২০ মিনিট পরেই ডাক দিলো। আহা এতো খুব তারাতারি হয়ে গেল। আর বলল সাড়ে আটশ টাকা দিতে। আমিও খুশি খুশি দিয়ে দিলাম। ও যে আমার সাথে পূজা কাটাতেঁ রাজি হইছে এতেই আমি খুশি।

তারপর ওরে নিয়ে রিকশা দিয়ে ঘুরলাম আর ফুসকা খাওয়ালাম। এখন যেন মনটা খুব খুশি লাগছে। তারপর ওরো বাসায় দিয়ে আমিও বাসায় চলে আসলাম। দেখি সবাই বাইরের রুমে বসে আছে। আর আমাকে দেখে জানতে চাইলো….
— কিরে সকালে কই গেছিলি যে এখন আসলি?
— গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজা করে আসলাম।
— মানে?
— কাল বৌদিকে প্রণাম করছি পরে বৌদি আমারে ১ হাজার টাকা প্রণামী দিছিল। আমি ওই টাকা দিয়ে স্নিগ্ধাকে পূজার গিফট কিনে দিছি।
— কি?( সবাই অবাক)

আমি আর কথা না বলে চলে আসলাম। আচ্ছা বার বার মুখ থেকে সত্যি কথা বার হয়ে যাচ্ছে কেন? আরে যাই হোক, খারাপ তো আর হয় নি। যা হইছে ভাল হইছে, যা হবে তা ভালই হবে।

স্নিগ্ধার সাথে আগামী দশটা দিন খুব ভালই কাটলো আর অনেক মজাও করলাম। এমন কি আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরতেও যেতাম কিন্তু কাউকে বলতাম না। আমি ফোন দিলে ও এলাকার মোড়ে চলো আসতো আর তারপর এক সাথে ঘুরতাম।
আর দেখতে দেখতে ষষ্ঠি পূজা চলে আসলো। সকালে স্নিগ্ধার ফোন আসলো…
— হুম বলো?
— মিস্টার বাঁদর এখন কোথায় আছো?
— এই তো টিউশনিতে আছি।
— কি? আমি কি কোন ভুল শুনছি নাকি।
— না ঠিকই শুনছো।
— হুমম তা কবে থেকে টিউশনি শুরু করে দিলে?
— এই তো ৫ দিন হবে। আচ্ছা বাসায় এসে ফোন দিবো নে।
— ওকে এসো।
ওর অবাক হওয়ারই কথা কারন যে ছেলে মেয়ে কি না নিজের বাবাকে হাসি খুশি রাখতে পারে না,তার প্রেম করার অধিকার নেই। প্রেম একটা পবিত্র জিনিস। তাই এবার টিউশনির টাকা দিয়ে বাবা মাকে কিছু কিনে দিবো। আর সামনের মাসে ভাইয়া আর বৌদিকে কিছু দিবো। আরেকটা টিউশনি বাড়িয়ে নিবো আর স্নিগ্ধাকে একটা শাড়ী দিবো। বসেই তো থাকি, আড্ডা দেওয়ার থেকে টিউশনি করা ভালো। এতো মৌখিক পরীক্ষা প্রস্তুতি হয়ে যায়।

রাতে বাসায় গিয়ে স্নিগ্ধাকে ফোন দিলাম। একটু সময় নিয়েই ফোনটা ধরলো…
— বাব্বা মিস্টারের এখন ফোন দেওয়ার সময় হইছে।
— হুমম ছাদে আসো তো।
আমিই ফোনটা কেটে দিয়ে ছাদে চলে গেলাম। প্রায় ৫ মিনিট পরে মেডামের আগমন হলো।
— তা স্যার হঠাৎ টিউশনি করা শুরু করলেন? ব্যাপার কি?
— আমার সব আছে। যখনই টাকা চাই তখনই পাই কিন্তু ওরা যে টাকা কোথা থেকে আনে, কত কষ্ট করে উপার্জন করে এইসব ভাবি নি কিন্তু তোমার ওইদিন কথা গুলো খুব ভাল লাগছে তাই আমি টিউশনিটা নিয়েই নিলাম। সামনের মাস থেকে আরেকটা নিবো।
— খুব ভালো।
— জানো স্নিগ্ধা আজ এই বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে প্রেম করবো না কখনো তবে খুব ভাল একটা জীবন সঙ্গী পাশে চাই। যে আমার খোঁজ নিবে।
— ওকে এইসব বাদ দাও আর হা কাল তো সপ্তমী পূজা। করবে না?
— হুমম করবো। তুমি পূজার মন্ডপে যাওয়ার সময় আমাকে ডেকে নিও।
— ওকে এখন বায়। যাও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।
— ওকে।
আমি রুমে চলে আসলাম। আজ মনটাই অন্য রকম লাগছে। যদি প্রতিটা ঘরে একটা ছেলে এমন চিন্তা করতো তাহলে হয়ত কখনো কোনো বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো স্নিগ্ধার ফোনে। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা ধরলাম…
— হ্যালো।
— শুভ সপ্তমী।
— তোমাকেও।
— ওই তারাতারি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে পূজার মন্ডপে চলে আসো তো। দিদি আর জিজু চলে আসছে আর ওনি এখনো ঘুমাচ্ছে।
— ওকে আসছি।
আর লেট না করে উঠে পরলাম। কারন, পূজার মাঝে মনটাকে ঘুমের মধ্যে হারাতে চাই না। আর এখন ঘুমটাও খুব ভাল হয়। হয়ত যারা কাজ করে তারা এমনেই ঘুমায়।

স্নান শেষে নতুন জামা পরে মন্ডপে চলে গেলাম। দেখি মেডাম ফুলের মালা গাথঁছে। আজ ও একটা গ্রাওন জামা পড়ছে। আমাকে দেখে একটু মুচকি হাসলো। কিন্তু সব থেকে ভাল লাগলো ও আজ চোখে কাজল দিছে। যা লাগছে না, মনে হচ্ছে ওর প্রেমে পরে যাই। আরে আমি তো প্রেমই করবো না। আর এখানে এসে কি ভাবছি আমি?আমি আস্তে আস্তে ভাইয়ের পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম।
— কিরে তুই পূজা করবি?
— না ভাই মানে হ্যা করবো।
— হঠাৎ মাথায় ভাল বুদ্ধি উদয় হলো কবে থেকে।
— যেদিন থেকে তোমার শালীর পিছনে পড়েছি ঠিক সেই দিন থেকে।
— কি?
— কিছু না। মন দিয়ে পূজা করো। পূজার মাঝে এসে কথা বলো, এটা কিন্তু ঠিক না।
–দাঁড়া বাবাকে বলছি তোর কথা।
— অল দি বেস্ট ভাই। আমার কথা তো তুই বলবি তবে এখন না আরো ২ বছর পরে। যদি এখন কিছু বলিস তাইলে বৌদিকে দিয়ে…
— না থাক আর বলিস না।
আর কোন কথা না বাড়িয়ে পূজায় মন দিলাম। প্রথম সপ্তমী পূজাটাও খুব ভাল মত হয়ে গেল। পূজা শেষে স্নিগ্ধা আমাকে প্রসাদ দিতে আসলো।আর আমি ওকে বললাম…
— আজ কাজলে তোমাকে খুব ভাল দেখাচ্ছে।
— ও আচ্ছা তাই বুঝি।
— হুমম।
— হইছে এবার বাসায় যাও আর কিছু খেয়ে নাও। আর হা আজ কিন্তু আমাকে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে। অনেক আগে একবার গেছিলাম। এবার বাসায় আসার পর আর যাওয়া হয় নি।
— আচ্ছা যদি ঘুমিয়ে না থাকি তাহলে নিয়ে যাবো।
— কি বললে? আবার বলবে? ঠিক শুনতে পাই নি।
— ও তোমার কানে সমস্যা তাহলে নিয়ে যাবো নে বিকালে ডাক্তার দেখাতে।
— কি বললে?
— কিছু না আমি গেলাম।

আমি আর না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম। বাসায় আসতেই বৌদি সামনে এসে দাঁড়ালো। মনে হয় আমার আগে সবাই চলে আসছিল।

— কি ব্যাপার হে? পূজাতে দেখলাম তোমার মনযোগ অন্য কারো উপর ছিল?
— কি যে বলো না গো তোমরা?
— হুমম ঠিকই বলছি। এবার বলো কি চলছে তোমার মাঝে?
— বৌদি খুব ভাল গন্ধ আসছে রান্নাঘর থেকে। কি রান্না হয়েছে গো?
— এই ছেলে কথা ঘুরানো বাদ দিয়ে বলো কি চলছে?
— ওই বৌদি তোমার দেবর বড় হইছে চোখে লাগে না। এই ছেলেটারও তো একটা মন আছে তোমরা কবে বুঝবে? একটু প্রেম করতে চাইলেও শান্তিতে করতে দিবে না।
— এ্যা….
আমি কথা গুলো খুব তারাতারি বলে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। নয়ত আজ আমার শনি লাগলো বলে।

বিকালে রুমে বসে বসে একটা ছবি আকঁতে ছিলাম। হঠাৎ মনে পরলো, এখন তো স্নিগ্ধাকে নিয়ে নদীর পাড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাই আর লেট না করে ফোন দিলাম। প্রথম রিং এ ফোন রিসিভ করলো। হয়ত মোবাইলটা হাতেই ছিল….
— হুমম মাস্টার সাহেব বলো।
— তুমি না নদীর পাড়ে যাবে। তো আর কতটুকু সময় নিবে।
— আমি তো রেডি হয়ে তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। প্রায় আধ ঘন্টা পর তুমি ফোন দিলে।
— ইশশ সরি। ওকে তুমি বার হও, আমিও বেড়িয়ে পরবো।
— ওকে।

তারাতারি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। নয়ত ওর অনেক অপেক্ষা করতে হতো। আমি বাসা থেকে বের হয়েই দেখি ও আমার গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ও বেশির ভাগ সময় মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটু অবাক হয়েও জানতে চাই নি কিছু।

নদীর পাড়ে পাশাপাশি হাটছি কিন্তু দুইজনেই চুপ। মনে হচ্ছে আমরা বিশ্ব চুপ দিবস পালন করতে আসছি। হঠাৎ আমাদের দুইজনের মোবাইলটাই বেজেঁ উঠলো। আমাকে বৌদি ফোন দিছে আর ওরে ভাইয়া ফোন দিছে…
— কি ব্যাপার দেবর সাহেব? এখন কোথায় আছো তুমি?
— এই তো এলাকার রাস্তা দিয়ে হাটছি।
— ও তাহলে একটু বাসায় আসো তো দরকার আছে?
— না আমি তো এখন আসতে পারবো না।
— কেন?
— মন্ডপে পূজার কাজ আছে।
— ও তাহলে আমি আসতেছি।
— কিন্তু আমি তো মন্ডপে নেই।
— তাহলে বললে যে এলাকায় আবার মন্ডপে কাজ আছে।
— আরে তাই তো আমি মন্ডপের কাজে এলাকার রাস্তা দিয়ে সামনে যাচ্ছি।
— ও আচ্ছা রাখি তাহলে।
— ওকে বাচাঁ গেল।
— কি বললে?
— না না কিছু না। বায়।

আরে এ কোন ঝামেলা। ওর বোনের সাথে একটু লাইন মারার চেষ্টা করছি তো এমন করেই জ্বালাবে নাকি। তারপর আমি স্নিগ্ধার কাছে জানতে চাইলাম…..

— ভাইয়া কি বলছে?
— জানতে চাইছে কোথায় আছি?
— তো তুমি কি বললে?
— বললাম পূজার মন্ডপে কাজ করছি ।
— ও ভাল করছো। ওই কি করছো বললে?
— বললাম পূজার মন্ডপে কাজ করছি আর তোমার কথা জানতে চাওয়াতে বললাম তুমি এখানে নেই।
— বাহ্ আমিও বললাম পূজার কাছে। এবার চলো বাসায় চলে যাই নয়ত সমস্যায় পরবো।
— ওকে
আর লেট না করে বাসায় চলে গেলাম আর ওরে ও বাসায় দিয়ে আসলাম। কিন্তু আমি যখন বাসায় ডুকতে যাবো তখনই বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে খুব হাসছে। আররে এমন কি করলাম য হাসতে হবে।

পরের দিন সকালের ঘুমটাও ভাঙ্গলো স্নিগ্ধার ফোনে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১০ টার উপর বাজে।
— হ্যালো শুভ অষ্টমী বাঁদর
— হুমম তোমাকেও শুভ অষ্টমী।
— তারাতারি যাও পূজায়। আমি যেন গিয়ে দেখি তুমি পূজার কাজ করছো।
— ওকে।

বলেই ফোনটা রেখে দিলো। আমি তো আর ওর কথা ফেলতে পারি না। তাই তারাতারি স্নান শেষে একটা পাঞ্জাবী পরে চলে গেলাম পূজার মন্ডপে। দেখি ভাইয়াও পাঞ্জাবী পরছে। আমাকে দেখে ভাই আর বৌদি দুইজনেই মুচকি আসছে। আমি চুপচাপ ভাইয়ের পাশে বসলাম। আজ আর কিছুই বলল না। হঠাৎ দেখি স্নিগ্ধা আসছে কিন্তু আমি কি দেখছি এইসব। ওরে তো আমার চিনতেই কষ্ট হচ্ছে। মনে হয় চরম পরিমাণে একটা ক্রাশ খেলাম। ওর যদি বর্ণনা দেই তবুও কম হবে।

লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী পরনে, হালকা গয়না । সাথে কিছু হালকা চুড়ি, কপালে টিপ, চোখে কাজল। চুল গুলো এলোমেলো উড়ছে। শাড়ীর সাথে মেচিং ব্লাউজ।

— আরে মুখ তো বন্ধ কর, মুখে তো মাছি যাবে। ( ভাই আমার মুখটা বন্ধ করে দিয়ে বলল)
আর স্নিগ্ধা এসে আমার বরাবরি বসেই কাজ করতে লাগলো । ইশশ এখনই মনে হচ্ছে বাবাকে গিয়ে বলে দেই বাবা ওরে আমার ভালো লাগে। তখনই বাবার রাগি মুখটা চোখে ভাসলো আর আমিও ঠান্ডা হয়ে গেলাম।
— ভাই ও আমার ভাই।
— কি বাবার মুখটা চোখে ভাসছে তাই না।
— তুই কেমনে বুঝলি?
— আমারও এমন হয়েছিল।
— তো এখন কি করবো?
— কিছু করার নেই। চেঁপে যা, সময় হলে আমিই সব ঠিক করে দিবো।
— ইয়াহু উম্মা…
— ওই চুপ, মানুষের মাঝে কি করছিস?
— ওকে।

তারপর পূজায় মন দিলাম। বড় ভাই যার সহায় তার আর কিসের ভয়।
পূজায় কি মন দিবো, মন তো বার বার স্নিগ্ধার দিকেই চলে যাচ্ছে। পূজা শেষ হতেই ও আমার কাছে প্রসাদ নিয়ে আসলো।

— নাও প্রসাদ খাও।
— ধন্যবাদ এমন করে সাজার জন্য।
— যার জন্য সেঁজেছি সে যে বুঝল এটাই অনেক।
— হুমম খুব কিউট লাগছে।
— হুমম এবার শুনো, আজ রাতে আমরা দুই বাড়ির সবাই এক সাথে ঘুরতে বের হবো নে।
— যাহা হুকুম মহারানী। এবার চললো বাসায় গিয়ে একটু ঘুমাই। তোমার কারনে আমি একটু ঘুমাতেও পারলাম না।
— ওই আমার জন্য ঘুমাতে পারলে না মানে?
— আরে কিছু না, চলো তো।

বাসায় চলে আসলাম আর খাওয়া দাওয়া করে দিলাম একটা ঘুম। আমার জীবনের সেরা পূজা হয়ত এবার পাচ্ছি। খুব ভালবাসতে ইচ্ছা করছে ওরে।
ঘুম ভাঙ্গলো প্রায় সন্ধ্যার দিকে আর বাসায় এসে আগে ভাই কে বলে রাখছিলাম যেন সবাইকে বলে এক সাথে ঘুরতে যাবো আজ।
আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি সবাই রেডি হওয়া শুরু হয়েছে আর স্নিগ্ধাও বৌদির সাথে আছে। বাহ্ আজজ বাসার একটা অন্য রূপ দেখছি। তাই দেরি না করে আমিও গেলাম রেডি হতে।

সবাই এক সাথে পাশাপাশি হাটছি। আর প্রায় সবাই জোড়ায় জোড়ায় হাঁটছে। স্নিগ্ধার বাবা আর আমার বাবা। স্নিগ্ধার মা আর আমার মা।ভাইয়া আর বৌদি, ঠিক সুযোগে আমি আর স্নিগ্ধাও পাশাপাশি হাটছি। সবাই সামনে আর আমরা পিছনে।

প্রায় ৩ ঘন্টা আমার ঘুরি আর অনেক মজা করি। তারপর রাতে ডিনার করে বাসায় আসি। স্নিগ্ধাকে বিদায় দিয়ে আমিও সবার সাথে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে যাই।

সকালে কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। তাকিয়ে দেখি স্নিগ্ধা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু অবাক হয়ে যাই…
— আরে তুমি এখানে?
— হুমমম শুভ নবমী।
— হুমম শুভ নবমী। কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, তুমি সবার আগে আমায় পূজার শুভেচ্ছা জানাও কেন?
— কারন আমি চাই না, আমার আগে কেউ তোমায় পূজার শুভেচ্ছা জানাবে।
— ও আচ্ছা শুনো, তুমি আজ এখানে কেন?
— আজ তোমায় সাথে করে পূজার ওইখানে নিয়ে যাবো। আর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এক সাথে পূজা করবো।
— কিন্তু সবাই কি ভাববে?
— মানুষের কাজই তো ভাবা। তাই বলে কি আমরা পূজা দিবো না।
— ওকে তুমি পাশের রুমে যাও। আমি রেডি হয়ে আসছি।
— ওকে।

তারপর পাশাপাশি পূজা করলাম আর অনেকই আমাদের দেখছে। হঠাৎ বৌদি আমার পাশে আর ভাই স্নিগ্ধার পাশে এসে দাঁড়ালো আর আমরা মাঝে।
— বাহ্ জল তো অনেক দূর গড়িয়ে গেছে।
— বৌদি কি যে বলো না? আমি তো এখনো তোমার বোনকে প্রপোজই করি নি।
— কেন?
— তুলে রাখলাম। কারন বিয়ের পর সবার সামনেই প্রপোজ করবো।
— ওয়াও আমার দেবর তো হেব্বি রোমান্টিক।
— দেখতে হবে না ভাইটা কার। ( ভাই বলল)
— তুমি আর কিছু বলো না ।

একসাথে সবাই মিলে পূজা শেষ করলাম। আর আমরা বাসার সবাই পূজা করছি। ইশশ খুব ভালই লাগছে।
তারপর পূজা শেষে একসাথে অনেক সময় মিলে আমরা সবাই আড্ডা দিলাম। বাবার ছোটবেলার গল্প শুনলাম। সবার মুখে এমন হাসি দেখতে চাই বার বার।

রাতে বাসায় বসে বসে পরছিলাম। হঠাৎ স্নিগ্ধার ফোন আসলো। আর বলল ছাদে যেতাম তাই আর লেট না করে ছাদে চলে গেলাম।

— তো বাঁদর সাহেব তোমার পূজা কেমন কাটছে?
— বেশি ভাল না। গত পূজায় কত মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম কিন্তু এবার তো একজনেই আমার সব ক্রাশ নিয়ে নিয়েছে।
— হুম এটাই যেন শেষ ক্রাশ হয় ওকে।
— হুমম।
— আচ্ছা যাও এখন ঘুমিয়ে পরো ।
— হুমম শুনো, কাল একটা পাঞ্জাবী পরে মন্ডপে আসবে। তোমার সাথে রং খেলবো।
— ওকে মহা রানী।

সকালে ঠিক স্নিগ্ধার ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো। আমার এখন আর এলার্ম ঘড়ির দরকার হয় না। কারর স্নিগ্ধাই আমার এলার্ম ঘড়ি। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ও আমায় বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানালো। আমিও জানালাম, আর ও আমায় পূজার জায়গায় যেতে বলল।
আমিও রেডি হয়ে চলে গেলাম একটা পাঞ্জাবী পরে। আজ ও একটা থালায় সিঁদুর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ী পরে। ও আমায় প্রণাম করে আমার গালে সিঁদুর লাগিয়ে দিলো। আর আমিও দিয়ে দিলাম কিন্তু ভাই আর বৌদি এসে আমারে সিঁদুরে লাল বানিয়ে দিলো।
সবাই মিলে শুরু করে দিলাম সিঁদুর খেলা। শুধু ঈশ্বরের নিকট আমার একটাই প্রার্থনা, ওনি যেন এমন সুখে দুঃখ না আনে। আর স্নিগ্ধাকে আমার পাশে রাখে প্রতিটা পূজায়।

মায়ের বিজয়া দশমী শেষ করে সবাই বাসায় চলে আসলাম। সবার মনই একটু খারাপ কারন আবার এক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে এইদিনটার জন্য। আর স্নিগ্ধাকে তো পাশে পাবো কি না জানি না? কখনো জোর করতে পারবো না তবে ও যদি আমার জন্য জন্ম নিয়ে থাকে তাহলে ও আমারই থাকবে।আর ওর কাছে আমি শিখেছি কারো কষ্ট কি করে হালকা করতে হয়।বাসায় এসে যে যার মত আগামী ব্যস্ততার জীবন শুরু করবো তা নিয়ে ভাবছি।

রাতে শুয়ে আছি তখন স্নিগ্ধার নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজজ আসলো ” রাজ কাল সকাল ৮ টা বাজে আমার বাস, পারলে এবার বাসস্টপে দিয়ে এসো “।
বুকের বাম পাশটায় একটা আঘাত হানলো। কিন্ত নিজেকে শক্ত করে নিলাম।

সকালে ৭ বাজে আমার গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার পাশে ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। আর স্নিগ্ধাকে নিয়ে বৌদি আসলো। ওর ব্যাগটা আমার হাতে দিলো। স্নিগ্ধা রিকশায় উঠে বসলো। আমার খুব ভয় লাগছিল, আমি কি হারিয়ে ফেলছি ওরে। তখন আমার ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রাখলো আর বলল…
— তোর ভাই তো আছে, তো টেনশন কিসের?

কাধেঁ যেন একটা শক্তি পেলাম আর ওর পাশে গিয়ে বসলাম। আর ভাইয়া আগেই বাসের টিকেট কেটে রাখছিল তাই শুধু বাসে তুলে দেওয়ার অপেক্ষা। রিকশা তার অাপন গতিতে চলতে লাগলো কিন্ত কারো মুখে কোন কথা নেই।
রিকশা থেকে নামতেই দেখি স্নিগ্ধার চোখ দিয়ে যেন জল পরে যাবে। তবু ওরে নিয়ে বাসের কাছে গেলাম। ও কিছুই বলছে না, বরং ও চুপ চাপ বাসে উঠে বসলো। ও বাসের বাইরে মাথাটা বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। ওর চোখের ভাষা খুব ভালই বুঝছিলাম।

বাসটা এখন ছেড়েই দিলো কিন্তু আমি সড়ে গেলাম ওর চোখের আড়াল হয়ে।
— কিছু খুজঁছো বুঝি বাইরে?
— আরে তুমি, তাও আমার পাশের সিটে।
— হুমমম এত্তো দূরে তুমি একা যাবে, এটা কি করে মেনে নেই বলো তো। তাই চলো তোমায় নামিয়ে দিয়ে চলে আসবো।
— হুহহ যেতে হবে না।
— বললেই হলো। ভাইয়া তো দুই সিটের টিকেট কাটছে। এখন তো টাকা নষ্ট হবে।
— বাহ্ ভালো তো। আমি যদি হারিয়ে যাই, এতে তোমার কি সমস্যা?
— তোমার সাথে প্রেম করতে চাই না বরং তোমার সাথে পথ চলার সাথী হতে চাই। চলবে তো আমার সাথে বাকিটা পথ…( আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলাম)
— তুমি বড্ড কাদাতেঁ পারো। হুহ ( কেদেঁ দিলো)
— আরে কাদছোঁ কেন?
— এমনি, তোমার কি?
— পাগলীটা আমার।
— হুমম বাঁদর।

বলেই আমারর কাধেঁ মাথা রাখলো। ভালবাসি এটা না হয়, নাই বা বললাম। বরং ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। আর পাগলীটাকে হারাতেই চাই না।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত