সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

মানিক ভাই মোবাইলে একটা ছবি দেখিয়ে আমাকে বললো- রাজভী এটা ছিলো আমার ফেবারিট এক্স গার্লফেন্ড।।

আমি তাজ্জব বনে গেলাম, মানুষের জীবনে একটা দুইটা প্রেম কাহিনী থাকতে পারে, তাই বলে- এক্সের মধ্যেও আবার ফেবারিট এক্স, বিষয়টা কেমন অদ্ভুত শোনায় না।।

মানিক ভাই আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন, সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই, সে বলেই যাচ্ছে- আমার সাথে প্রায় দেড় বছর প্রেম ছিলো।। চুটিয়ে প্রেম করছি ইভেন আমার গার্লফ্রেন্ডসদের মধ্যে সবথেকে সুন্দরী আর স্মার্ট ছিলো এই মেয়ে।।

আমি মানিক ভাইয়ের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলাম, ভালো করে ছবিটা দেখলাম।। মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে, মনে হয় কোথায় যেনো দেখেছি এমন এমন লাগছে।।
আমি মানিক ভাইকে বললাম- ভাই এই মেয়ের নাম কি? তার আরও ছবি আছে আপনের কাছে?

মানিক ভাই আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে বললো- ছবি আর নাই।। নাম তাম্মী।। দুই বোন ওরা শাম্মী আর তাম্মী।। জানিস, মেয়েটা এখনো আমাকে চায়, আমার জন্যে প্রতিরাতে কান্না করে।। আমি আর পাত্তা দেই না, আমি নতুন রিলেশনের ধান্ধায় আছি।।
এইটুকু বলে মানিক ভাই আমাকে খোঁচা দিয়ে আবার বলে- কিরে তোর আবার পছন্দ হইলো নাকি তাম্মীরে?

আমি লজ্জা পেয়ে বললাম- না ভাই উনাকে চেনা চেনা লাগছে তাই জিগাইলাম।।
মানিক ভাই কিছুটা অহংকার নিয়েই বললো- আরে বেটা আমার জিএফরা সব নামকরা পাবলিক ফিগার, চেনা চেনা লাগবেই।। যার তার লগে এই মানিক প্রেম করে না-
.
আমি এই ব্যাচেলর বাসায় উঠেছি আজ মাত্র ১৫ দিন।। এরমধ্যেই মানিক ভাই আমাকে আপন করে নিয়েছে।। উনার বাড়ি নোয়াখালী কিন্তু খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে।। মিরপুরের এই ব্যাচেলর বাসা মানিক ভাই পরিচালনা করে।। বাসার মোট সদস্য আমিসহ ৫ জন।। আমি একরুমে একাই থাকি, বাকী দুই রুমে ২ জন করে ৪ জন থাকে।। আপাতত মানিক ভাই আর আমি কোন কাজবাজ করি না, তাই সারাদিন মানিক ভাইয়ের রুমে গিয়ে পড়ে থাকি।। আর সে তার জীবনের সাথে ঘটা কাহিনী একটার পর একটা শুনিয়ে আমাকে অবাক করে দেয়।।
আজকের বিষয় হলো- গার্লফ্রেন্ড।

তার নাকি এ পর্যন্ত ৭৩ টা প্রেম করার রেকর্ড আছে৷। এরমধ্যে আরো অনেক বাদ আছে যেগুলো সে গোণায় ধরে নাই।। মানিক ভাইয়ের বয়স আনুমানিক ৩০-৩২ বছর, বিয়ে সাদীর কথা বললে বলে- আগে একটা চাকরি বাকরি পাই পরে বিয়ে।। অথচ তার চাল চলন কোন কিছু দেখেই মনে হয় না সে চাকরি খুঁজে বা চাকরি করবে।।
মানিক ভাইয়ের বলা সব কথাকে আমি একদম সত্য বলে বিশ্বাস করি, এই পনেরদিনে আমি উনাকে গুরু মেনে নিয়েছি।। উনার মত একজনের সান্নিধ্য পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।।

রাতে ঘুমানের আগে আচমকা তাম্মীর ছবির কথা মনে পড়লো, মেয়েটাকে এখন কল্পনা করে আরো চেনা চেনা লাগছে।। কি অদ্ভুত জ্বালা!! কিছুতেই মনে পড়ছে না- আগে কোথাও দেখেছি কিনা, অথচ চেনা চেনা লাগার প্রবণতা বেড়েই যাচ্ছে।। মোবাইল হাতে তুলে নিলাম।। ফেসবুকে ঢুকে সার্চ দিলাম তাম্মী লিখে- খুব সহজেই আইডি এসে গেলো।। দেখি মানিক ভাইয়ের সাথে মিউচুয়াল আছে।। যে ছবি আজ বিকেলে দেখেছি, সেটাই প্রোফাইল পিকচারে দেয়া।। আমার খুশি দেখে কে- বিসমিল্লাহ বলে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে ঘুম দিলাম।।

আজ ৪-৫ দিন ধরে তাম্মীর সাথে নিয়মিত চ্যাট হচ্ছে।।
আমি তাম্মীকে মানিক ভাইয়ের কথা কিছুই জিজ্ঞেস করি নি।। হাই-হ্যালো, গুড মর্নিং, গুড নাইট টাইপ আলাপ আমাদের।। আমার ধারণা তাম্মীকে মানিক ভাইয়ের কথা বললে- সে রাগ করে আমার সাথে কথাই বলবে না।। তাই মানিক ভাইকে নিয়ে টু শব্দ করি না।। এদিকে তাম্মীর পুরো আইডি ঘেঁটে আবিষ্কার করলাম, মেয়েটাকে কেনো চেনা চেনা লেগেছে।। সে টিকটকে ভিডিও বানিয়ে মোটামুটি ফেমাস, আর আমিও টিকটকের প্রচ্চুর ভিডিও দেখি।। মেয়েটার কথা ভেবে অবাক লাগে বাস্তবে দেখি নাই তবুও আমার ধারণা সে অনেক সুন্দরী সে কিভাবে মানিক ভাইয়ের সাথে প্রেম করলো।। আবার নাকি মানিক ভাইয়ের জন্যে কান্নাও করে।। আচ্ছা মেয়েটাকে দেখে তো মনে হয় সে অনেক লম্বা, মানিক ভাই তো ৫ ফুট ৫ এর উপরে হবে না।।
আসলে, প্রেম ভালোবাসা যে চেহারা দেখে হয় না, তা এই জুটিকে মানুষ পাশাপাশি দেখলে বুঝতো!!

মানিক ভাইকে আজকাল খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে।। সারাদিন হাসি হাসি মুখ নিয়ে থাকে, কেমন যেনো অন্যরকম তার চালচলন।। আমার ধারণা সে ৭৪ নাম্বার প্রেম করতে যাচ্ছে বা করে ফেলেছে।।

কিন্তু, তার এই প্রেম প্রেম খেলা ব্যাপারটা আমার আজকাল আর ভালো লাগে না।। আমি তাম্মীর সাথে চ্যাট করে করে তাম্মীর উপর অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছি।।আর, এই তাম্মীকে মানিক ভাই কস্ট দেয়, ওকে বাদ দিয়ে ইচ্ছামত অন্যগুলোর সাথে প্রেম করে বেড়ায়।। এসব সত্যিই আমার মেনে নিতে কস্ট হয় এখন।।

আমার ধারণাই ঠিক।। মানিক ভাইয়ের ফেসবুকে আবার এক মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছে।। মানিক ভাই সেই খুশিতে সারা দিন বাকবাকুম করে।। অবাক ব্যাপার, কেউ প্রথম প্রেম করলেও এত খুশি হয় না যতটা না সে ৭৪ নাম্বার প্রেম করে হয়ে গেছে।।
মানিক ভাই আমাদের বলে, শুক্রবার সেই মেয়ে নাকি এই ব্যাচেলর বাসায় আসবে।। আমরা যেনো ঘন্টা দুয়েকের জন্যে বাসা খালি করে দেই, বাইরে বা অন্য কোথাও থাকি।। কি বিশ্রী ব্যাপার, ভাবতেই আমার গা গুলাচ্ছে- মানিক ভাই এসব জগণ্য কাজ কিভাবে করে।। আল্লাহ্ উনাকে শিক্ষা দেয় না কেন!!

আজ শুক্রবার!! আমাদের মানিক ভাইয়ের বিয়ে।।
মিরপুর ১ নাম্বার এলাকার ছাত্রলীগের কিছু নেতা-ফেতা, মুরব্বি সব জোর করে মানিক ভাইয়ের সাথে হুসনে বানুর বিয়ে দিচ্ছে।। বেচারা মানিক ভাই নতুন জিএফ নিয়ে বাসায় ঢুকার খানিক বাদেই একঝাঁক লোক, বাসায় হানা দেয়।। দরজা ধাক্কাতে থাকে, বাধ্য হয়ে মানিক ভাই দরজা খুলে দেয়- লোকজন ঢুকেই মেয়ে সহ ব্যাচেলর বাসায় থাকার অপরাধে টুকটাক চড় থাপ্পড় মারে মানিক ভাইকে।।
অতঃপর মুরব্বিরা মানিক ভাইয়ের মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকেসহ বাসার বাকী ৪ সদস্যকে ডাকে।৷ আমরা গিয়ে দেখি কাজী টাজি সব রেডি, মানিক ভাইকে বিয়ে করিয়েই দিবে।। এলাকার উঠতি নেতা রুবেল আমার বন্ধু মানুষ।। ও নিজেও আছে এখানে।। ওর কাছে শুনলাম- বাসায় ঢুকে নাকি মানিক ভাইকে হালকা উত্তম-মাধ্যম দেয়া হয়েছে।।

বিয়ের কাজ শেষ।।

আমি ইচ্ছামত নয়া জামাই বউয়ের সাথে সেলফি তুলছি।। মনের ভিতর আমার খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে- হারামি মানিকটার শিক্ষা হলো বটে।। ৭৪ নাম্বার প্রেম করবা তাও ধরা খাবা না- আবার আমার তাম্মীকেও কস্ট দিবা।। আমি মনে মনে ভাবলাম- তাম্মী আর কোনদিন মানিকের হবে না।। এদিকে, তাম্মীর সাথে আমার প্রেম প্রায় হয়েই গেছে।। এইবার মানিকের বিয়ের এসব ছবি তাম্মীকে দেখাবো, ব্যাস আর কি লাগে।। মানিক ভাই আর তার বউয়ের এত ছবি তুললাম, একটা ছবিতেও বেচারা মানিক ভাইয়ের মুখে হাসি নাই!! আফসোস-

উঠতি নেতা রুবেল আর আমি চা স্টলে বসে আছি, সাথে আমাদের বাসার তিন সদস্য।। আজ আমরা সবাই রুবেলের বাসায় থাকবো- মানিক ভাই আর হুসনে বানুর বাসর রাতের জন্যে পুরো বাসা খালি করে দিয়ে আসছি।।

রুবেল আমাকে বললো- দোস্ত দিলাম তোর মানিক ভাইরে বিয়া করাইয়া।। নুচ্ছামির শিক্ষা দিলাম ব্যাটারে।। সব ক্রেডিট তো তোর দোস্ত, তোরে ব্যাটা ধন্যবাদ এই রকম একটা নিউজ না দিলে, জানতামি না এলাকায় এসব হয়।।

আমি বললাম- হালায় নাকি এর আগে ৭৩ টা প্রেম করছে তাই তোকে বলেছিলাম হালায় আজ রুমে মাইয়া নিয়ে ঢুকবে।। তুই সেই একটা ব্যবস্থা নিলি বন্ধু।। এদের এমন ভাবেই শিক্ষা দেয়া দরকার।।

আমার বাসার সদস্যদের মধ্যে একজন বললো- রাজভী ভাই, মানিক ভাইকে দেইখা মনে হয় না, সে আগে কোনদিন এসব প্রেম ট্রেম করছে।। তার কিন্তু ঝাড়ি মারার অভ্যাস আছে।।

পরদিন বিকেলে তাম্মীর সাথে আমার প্রথম দেখা হবে।।
আমি খুব এক্সসাইটেড।। মানিক ভাইয়ের বিয়ের কাহিনী, ছবি দেখে তাম্মী না জানি কত্ত অবাক হবে।। সেটা ভেবেই খুব মজা পাচ্ছি-

আমি আর তাম্মী মিরপুর ১ এর, পিজ্জা ইনে বসে আছি।।
সত্যি মেয়েটার বেশ লম্বা।। হাইট ৫.৬ এর উপরে হবে আনুমানিক।। আবার তাম্মী দেখতেও বেশ সুন্দরী আর ড্যাম স্মার্ট অথচ এই মেয়ে কিনা মানিক ভাইয়ের জন্যে কান্না করে করে বালিশ ভেজাতো।। হায় সেকুলাস!!

আমি তাম্মীর দিকে হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছি।। আমার চোখের পলক পড়ে না।। তাম্মী স্মিত হেসে বলে- রাজভী কি দেখো এত।। কিছু বলো-

আমি তাম্মীতে মুগ্ধ হয়ে মজে আছি।।
হঠাৎ তাম্মীকে বললাম- তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে?
তাম্মী খুশি খুশি হয়ে বললো- কি সারপ্রাইজ রাজভী? আই লাভ সারপ্রাইজ!!

আমি পকেট থেকে আমার মোবাইল বের করলাম।। মানিক ভাই আর হুসনে বানুর বিয়ের একটা সুন্দর কাপল পিক সামনে এনে, তাম্মীর হাতে মোবাইল দিয়ে বললাম- দেখো তো চিনো কিনা?

তাম্মী ছবি দেখে মূহূর্তেই উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়েছে।। এসির মধ্যেও সে ঘামছে, মনে হচ্ছে।। ভ্রু কুঁচকে ছবি দেখেই যাচ্ছে।।
আমি তাম্মীর দেখাদেখি দাঁড়িয়ে পড়ে বললাম- কি হলো তাম্মী, চিনো নাই?

তাম্মী বললো- তুমি আমাদের বাসার কাজের মেয়ের ছবি কই পাইলা?? সে তো কালকে থেকে বাসায় নাই, আমাদের বলেছে বোনের বাসায় যাচ্ছে- আর খোঁজ নাই ওর।। বাই দ্যা ওয়ে, এই বিশ্রী বেটা কে ওর পাশে? আর কবে কার ছবি এটা??

আমি থ হয়ে গেলাম- কাকে সারপ্রাইজ দিবো, আমি তাম্মীর কথা শুনে নিজেই ডাবল সারপ্রাইজড।।

মনে মনে ভাবলাম- মানিক ভাই এত ঝাড়িবাজ কেন, ফেসবুক থেকে মেয়েদের ছবি নামিয়ে ইচ্ছামত প্রেমের গল্প বানায়।। এই কাজের মেয়ে হুসনে বানুই মনে হয় মানিক ভাইয়ের প্রথম প্রেম।। বস তো আবার যার তার সাথে প্রেম করে না।।

বাহ!! ভালো তো, প্রথম প্রেমের- প্রথম ডেট- প্রথম দিনেই- প্রথম বিয়ে-কপাল বটে মানিক ভাইয়ের!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত