ডাক্তারের মেয়ে

ডাক্তারের মেয়ে

:-এই মিতু হলো তোমার?(আমি)
:-হুম..আর একটু অপেক্ষা করো আসছি(মিতু)
:-দ্রুত আসো..নয়ত চলে যাবো
:-আচ্ছা..

আমি চয়ন..এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি..মিতু হলো আমার বউ..এবার অনার্স ফাইনাল দিয়েছে..দেখতে তেমন ভালোনা..মোটা আবার শ্যামলা..তবে ওর ভিতরে একটা বিশেষ গুন আছে..ও খুব ভদ্র।।কারো মুখের উপর কথা বলেনা..আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৫মাস..আমাদের বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়েছে..বিয়ের ১ঘন্টা আগেও কেউ কাউকে দেখিনি..এমনকি জানতাম না আজ আমাদের বিয়ে..

৫মাস আগের ঘটনা…

বাবা প্রচন্ড অসুস্থ..বড় একটা অপারেশন করাতে হবে..তার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন..কিন্তু ওত টাকা জোগার করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব..তবুও সারাদিন টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করে ব্যার্থ হলাম..তারপর সন্ধায় অল্প কিছু খাবার কিনে হাসপাতালে গেলাম..যেতেই মা আমার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো…

:-কিরে টাকা জোগাড় করতে পারলি?
:-নাহ..
:-শোন বাবা এত টাকা এভাবে জোগাড় করা সম্ভব নয়..
:-তাহলে কি করবো?
:-একটা উপায় আছে..
:-কি উপায়?
:-আজ ডাক্তারবাবু এসেছিলেন..তিনি বলেছেন তোর বাবার অপারেশনের সব টাকা দিবেন..তবে…
:-তবে কি?
:-তবে তার মেয়েকে তোর বিয়ে করতে হবে
:-মানে কি?ডাক্তারবাবু তার মেয়েকে আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের সাথে কেনো বিয়ে দিবে?

:-আসলে মেয়ে খুব সুন্দরী না..আর একটু মোটা।।আর ডাক্তারবাবু তোর দায়িত্ববোধ দেখে খুব সন্তুষ্ট হয়েই এই প্রস্তাব দিয়েছে..এখন যদি তোর বাবাকে বাচাতে চাস তাহলে বিয়েটা করেনে..তবে তোকে জোর করবোনা..

:-আচ্ছা..আমাকে একটু ভাবতে দাও।
:-ঠিক আছে..

অনেক ভেবে দেখলাম..১বছরেও আমি বাবার অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে পারবোনা..বরং বিয়েটা করে নিলেই বাবার অপারেশনটা করানো যাবে..

:-মা আমি রাজি..
:-ঠিক আছে তুই বস এখানে..আমি ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে আসি..
:-আচ্ছা..

অতঃপর আমি মা রুমের বাইরে চলে গেলেন..আর আমি বাবার বেড়ের পাশে বসে বাবাকে দেখাশোনা করছিলাম..বেশ কিছুক্ষন পর মা ফিরে এলেন..

:-চয়ন আয় আমার সাথে..
:-কোথায়?
:-ডাক্তারবাবু বললেন আজই বিয়েটা দিবেন..
:-আজই?

:-হ্যা আজকে বাইরে থেকে ডাক্তার আসবে..সেজন্য আজ বিয়েটা হয়ে গেলে..তোর বাবার অপারেশনটা করানো যাবে

:-আচ্ছা ঠিক আছে..
:-হুম চল..

অতঃপর মা আমি আর ডাক্তার বাবু..হাসপাতাল ছেড়ে একটা বিবাহ রেজিস্ট্রি আফিসে আসলাম…
কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর দেখলাম একটা গাড়ি এসে থামলো..গাড়ি থেকে আমার হবু বৌ,শালি,শাশুড়ি আসলো।শালীটা দেখতে অপূর্ব..কিন্তু বউটা আটার বস্তা..কিন্তু গায়ের রংটা আটার মতো নয়..আবার কয়লার মতোও নয়..আটা আর কয়লার মাঝামাঝি পর্যায়..
যাহোক রেজিস্ট্রি বিয়েটা করার পর..সবাই একটা মন্দিরে আসলাম..সেখানে ধর্মীয় মতে বিয়ে করলাম..

:-বেয়াইন চলেন হাসপাতালে যাই..আপারেশনের সময় হয়ে যাচ্ছে..(শ্বশুর আমার মাকে বললেন)
:-হ্যা চলুন…চয়ন তুই বৌমাকে নিয়ে বাড়িতে যা(মা)
:-কেনো?আমিও হাসপাতালে যাই..বাবার অপারেশনের সময় আমি থাকবো..
:-না তার দরকার নাই..সবেমাত্র বিয়েটা করলি।।বৌমাকে নিয়ে বাসাতে যা..ওদিকটা আমি সামলে নিবো..
:-হ্যা বাবা..তুমি মিতুকে নিয়ে বাসাতে যাও(শ্বশুর)
:-ঠিক আছে..

অতঃপর আমি আমার নতুন বৌকে নিয়ে বাসাতে আসলাম..প্রচন্ড ক্ষুধাও লেগেছে..

:-এই যে শুনেন কিছু রান্না করতে পারেন?
:-জ্বি..না(মিতু)
:-অহ..তাহলে রুমে গিয়ে চেজ্ঞ করেন..আমি খাবার তৈরি করছি..
:-আমি হেল্প করবো আপনাকে?
:-নাহ..আপনি শাড়িটা চেজ্ঞ করে রেষ্ট নিন
:-আমিতো পোশাক আনিনি..তাহলে চেজ্ঞ করবো কিভাবে?
:-আসুন আমার সাথে..মায়ের শাড়ি দিচ্ছি।চেজ্ঞ করে ওটাই পরেন..কাল নতুন পোশাক কিনে দিবো..
:-আচ্ছা..
মিতুকে নিয়ে আমার রুমে এলাম..তারপর আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে ওকে দিলাম..
:-এই নিন শাড়িটা চেজ্ঞ করে এখানেই রেষ্ট করুন..আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি..
:-আচ্ছা..

অতঃপর মিতুকে রুমে রেখে আমি রান্নাঘরে এলাম..মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ার কারনে কিছু রান্নাবান্না শিখেছি তবে সব কিছুই আলুকে ঘিরে..যেমনঃআলু ভত্তা,আলু প্রস্থ,আলু ভাজি,আলুর দম ইত্যাদি আর ডাল.. তাড়াতাড়ি ডাল,ভাত..আর আলু ভাজি রান্না করে টেবিলে রাখলাম..এবার মিতুকে ডাকার জন্য রুমে

আসলাম..নিজের রুম চিনতেই পারছিলাম না..১ঘন্টার ভিতরে রুমের দৃশ্য চেজ্ঞ..রুমটা অনেক পরিপার্টি করে সাজানো..

:-রুমটা গোছালো কে?
:-জ্বি..আমি
:-ওহ..আচ্ছা খেতে আসুন..
:-জ্বি..

মিতু আর আমি খেতে আসলাম..দুজন সামনাসামনি বসলাম..

:-আজকে ডাল আর আলুভাজি খেতে হবে..খেতে পারবেন?অবশ্য না খেলেও এখন কিছু করার নেই
:-জ্বি..খেতে পারবো..
:-নিন..তাহলে শুরু করুন.

অতঃপর আমি আর মিতু খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম..আজকে আমাদের নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে..সেজন্য একে অপরকে জানা খুব জরুরি…

:-দেখুন আজ আমাদের নতুন জীবনের শুরু..তাই আমাদের আগে একে অপরের সম্পর্কে জানাটা জরুরি..আমার মনেহয় আমাদের ভিতরে এখনই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা উচিত নয়..এখন বরং বন্ধু হয়ে থাকি?(আমি)

:-জ্বি..আপনার যা ভালো মনে হয়
:-ওকে..আচ্ছা আমার একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে..
:-কি?
:-আপনিতো অনেক বড়ঘরের মেয়ে..কিন্তু আমার মতো মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হলেন কেনো?
:-আসলে..ছোট থেকেই বাবা,মা আমাকে অনেক যত্নে বড় করেছে..যখন যা দরকার তাই দিয়েছে..তাই আমার মনে হয়েছে আমার বাবা আমাকে ঠিক জায়গাতেই বিয়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে..

:-ওহ..আপনি আমাদের মধ্যবিত্তদের মতো চলতে পারবেন?
:-হুম..পারবো

:-ওকে..তাহলে ঘুমান।।

বলেই বালিশ নিয়ে ফ্লোরে নামছিলাম..তখনই মিতু ডাক দিলো..

:-এই কোথায় যাচ্ছেন?বিছানাতে ঘুমান..
:-আপনার অসুবিধা হবেনা?
:-অসুবিধা হবে কোনো?আপনি আমার স্বামী আমার সাথে একই বিছানাতে শোয়ার অধিকার আপনার আছে..
:-আচ্ছা..
:-আর একটা কথা..এখন থেকে তুমি করে বলবে।ঠিক আছে..
:-আচ্ছা..

অতঃপর আমি বিছানাতে কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম..তখন মিতু বললো..

:-আপনি চাইলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারেন..
:-না..দরকার নাই।
:-না থাকলে নাই..তবে ইচ্ছা হলে জড়িয়ে ধরতে পারেন..

আমি লজ্জা ভেঙ্গে মিতুকে জড়িয়ে ধরলাম..যাক বাসর রাতটা একেবারে নিরামিস হয়নি..

পরেরদিন সকালে মিতুর ডাকে ঘুম ভাঙলো

:-এই উঠো..উঠোনা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করবে চলো(ধাক্কাতে ধাক্কাতে)

এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসলাম..

:-নাস্তা?কে বানালো?
:-কেনো?আমি বানিয়েছি
:-বাব্বাহ বড়লোকের মেয়েরা রান্না করতে পারে এই প্রথম শুনলাম..
:-আমি সংসারের সব কাজই পারি..
:-ভালো..চলো নাস্তা করি।
:-হুম ফ্রেশ হয়ে আসো..

অতঃপর ফ্রেশ হয়ে দুজনে নাস্তা সেরে নিলাম..

:-মিতু রেডি হও…
:-কেনো?কোথাও যেতে হবে?
:-হুম..হাসপাতালে বাবাকে দেখতে যাবো।তারপর তোমার জন্য শপিং
:-আরে শপিং এর কি দরকার?অযথা টাকা নষ্ট করার..আমি বাবাকে বলবো বাসা থেকে আমার কাপড়চোপড় পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য..

:-ওহ..তাহলে তুমি আমার কিনে দেওয়া জিনিস নিবেনা?
:-আরে এমন না..
:-চুপ….
:-অচ্ছা শপিংএ যাবো..এবার খুশিতো?
:-হুম

বাসা থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে গেলাম..তারপর বাবাকে দেখে শপিংমলে আসলাম..কিছু কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলাম তখন এক বন্ধর সাথে দেখা..

:-দোস্ত যে..কেমন আছিস?
:-ভালো..তুই?
:-এইতো চলছে..শুনলাম বিয়ে করেছিস?এইটা কি ভাবি?
:-হুম..এটাই তোর ভাবি
:-দোস্ত খুবতো বলতি তোর বউ খুব সুন্দর হবে..কিন্তু এখন?
:-কি?আমার বউয়ের মনটা অনেক সুন্দর..আমিতো কখনো বলিনি আমার বউ দেখতে সুন্দর হবে..
:-দোস্ত তোর সাথে কথাতে পারা খুব মুশকিল..এখন আসি।আর ভাবি আমি একটু মজা করলাম কিছু মনে করবেন না..ভালো থাকবেন

:-আচ্ছা..

বন্ধুকে বিদায় দিয়ে আমরা বাসাতে ফিরে আসলাম..
বাবার আপারেশন করার পর বাবা এখন সুস্থ..আর বিয়ের ৫মাস হলো মিতু ওদের বাসাতে যাইনি..এমনকি আমিও এখনো পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে যাইনি..তাই আজ প্রথম বারের মতো শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি..সেইটা প্রথমেই বলেছি..

:-এই আমি রেডি..চলো বেরিয়ে পড়ি।(মিতু)
:-হ্যা চলো..কিন্তু আমিতো তোমাদের বাসা চিনিনা..যাবো কিভাবে?
:-আমিও জানিনা কিভাবে যেতে হয়..আচ্ছা এক কাজ করি বাবাকে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলি?
:-আচ্ছা বলো..

অতঃপর মিতু শ্বশুর মশাইকে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বললেন..আমরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম..তারপর একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো..তারপর আমরা গাড়িতে ওঠে রওনা দিলাম..কিছুক্ষন বাদে গাড়িটা একটা বড় বিল্ডিং এর সামনে এসে থামলো..এটাই মিতুদের বাড়ি।গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে গেলাম..খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষন রেষ্ট নিলাম..তারপর সন্ধায় মিতু আর রিতু(শালি)কে নিয়ে ছাদে আসলাম..

:-জিজু আপনি অনেক কিউট..আপনাকে ওই মটকুর সাথে মানায় না..কেন যে বাপি আপনাকে ওর সাথে বিয়ে

দিলো..আপনাকে আমার সাথে বেশি মানাতো..

:-কি করবা এখন?বিয়েটাতো হয়েই গেছে..এখন কিছু করার নাই..

:-একটা উপায় আছে..আপনি ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করেন..

:-রিতু এ কেমন কথা?নিজের বোনের সামনে কেউ এমন কথা বলে?
এদিকে মিতু রিতুর কথা শুনে কাদতে কাদতে নিচে চলে গেছে..তাই আমিও নিচে চলে আসলাম..দেখি মিতু ঘরে এসে কাদছে..

:-এই পাগলি কাদছো কেনো?আমিতো মজা করছিলাম..

মিতু দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো..

:-চয়ন প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা..
:-আর পাগলি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবোনা..
:-সত্যিতো?
:-হুম..পাগলিটাকে অনেক ভালোবাসিতো..ছেড়ে থাকবো কিভাবে বলো..

:-আমিও অনেক ভালোবাসি পাগলেটাকে.. বলেই মিতু আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো.

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত