স্বপ্নের নীলাদ্রী

স্বপ্নের নীলাদ্রী

রাত প্রায় ১২:৫৬ মিনিট। নিস্বব্ধতায় ঘেরা আমাদের বাসার চারপাশটা। যদি ও এটা শহরের কোন স্বনামধন্য এলাকা জুড়ে না।
আবার বস্তি এলাকাও না,
আর বাসার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সরু রাস্তা।
প্রায় প্রতি রাতেই মানুষের আনাগোনা শোনা যায় এই রাস্তায়।
কিন্তুু আজ কেনো জানি মানুষের চলাচলের সময়টা জেনো ফুরিয়ে গেলো।

মানুষের হাটা চলার এবং কথা বার্তার কোন শব্দ নেই,যদিও একটু বিশ্মীত হয়ে চিন্তা করলাম,

তার পরে আর কোন চিন্তা না করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।

কিন্তুু ঘুম আসছে না,

ফোনটা হাতে নিয়ে বরাবরের মতোই ডাটা কানেক্ট অন করে ফেবুতে গিয়ে রেডিও মুন্না পেজটাতে পোস্ট হওয়া একটি গল্প পড়লাম।

গল্পটা সুন্দর নাহ্ তবে অসাধারন লেগেছে।

আর কেনই বা লাগবে না বর্তমানে মানুষের মনে ওপর ডিপেন্ট করেই তো

লেখকরা তাদের চিন্তা চেতনাকে সঠিক রুপে প্রয়োগ করেন।
গল্পের নাম”সন্ধ্যা বেলার প্রদীপ ”
লেখা”Sabiha Islam Mou.
গল্পটা পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। এবং গল্পের রাজকন্যাকে নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলাম,

যদি এমনটা আমার জীবনে হতো,মনে হয় আমার মতো সুখি কোনো ব্যক্তি থাকতো না।
মনের মধ্যে গুজে থাকা কন্যার ছবিটি যেনো আমার বুকে গেঁথে রয়েছে।
এখন সকাল হলো,এতোক্ষন যাকে নিয়ে এতো চিন্তা-ভাবনা ও মনের গভীর থেকে ভালোবেসে ফেলেছি

তাকে তো বাস্তবে পেলাম না,শুধু স্বপ্ন দেখেছি।
.
অনেকক্ষন যাবৎ তো বকবক করেই যাচ্ছি এবার না হয় নিজের পরিচয়টা দেই,
আমি হাবিব আদনান। এবার অনার্স ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত। হরেগঙ্গা কলেজ,মুন্সিগঞ্জ।
.
সকাল ১০:৪৫ মিনিট। যদিও ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে,সকাল বেলার শান্তিময় ঘুমটা যেনো আমার ছাড়ছে না।

হঠ্যাৎ ফোনের তাকানো মাত্রই মনে হলো আজ আমায় ক্লাসে যেতে হবে,তাই দুচোখের ঘুমটাকে সজোরে ফেলে দিয়ে ওঠে পড়লাম।

ওঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে বরাবরের মতোই একটি বেনসন সিগারেট ধরিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে

কুঁড়েঘর এ্যালবাম থেকে একটি গান বাজালাম”দিল দিয়া যারে ভালোবাসিলাম,

সে হইলো না আপন”আর রাস্তায় ফুটপাত ধরে হেটে চলেছি।
.
কিছু সময় পর ভার্সিটিতে পৌছালাম।ভার্সিটির গেট দিয়ে ডোকা মাত্রই একটি লোকের সাথে ধাক্কা, দাড়িয়ে পড়লাম আমি।

আর ধাক্কাটা লাগা মাত্রই হাত থেকে বইগুলো মাটিতে পড়ে গেলো।

কোন চিন্তা না করে সাথে সাথে মাটিতে পড়া বই গুলো তুলে দিয়ে বললাম আই এম রেলি সরি….!!!!
.
আর যার সাথে ধাক্কাটা লেগেছে তাকে দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক।

একটি অসম্ভব সুন্দর,মায়াবি চোখের অধিকারী রাজকন্যা।

যে আমার মনের রাজ্যের রাজকুমারি। যাকে সারা রাত আমার বুকের মধ্যে লালন করেছি।

হঠ্যাৎ যেন আমার খুশিতে দম বন্দ হয়ে আসছে,এই পরীবিবি এখানে কিভাবে, আর কিছু চিন্তা না করে চলে আসলাম বাসায়।
এখন তো আর কোন কিছুই ভালো লাগছে না,তাকে দেখায় জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে চিন্তাবিদ মনটা।
দিন শেষে রাত আসলে তাকে নিয়ে আবারও স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।

মাঝ রাতে স্বপ্নের গোর কেটে গেলে মনটা আর মানছে না,মনে হচ্ছে এক্ষুনি ভার্সিটে গিয়ে বসে থাকি।

তার পরেও চিন্তক মনটাকে ক্লান্তিজনক না করে একটু ঘুমানোর চেষ্টায় সকাল হলো।
আজ সকাল সকাল ফ্রেস হয়ে নাস্তা শেরে বাসা থেকে বাহির হলাম,আজ অনেকটা সময় নিয়েই ডুকে পড়লাম ভার্সিটিতে।

ক্যাম্পাস এর প্রথম ব্যাঞ্চ টিতে আমি,শাহিন আর কিসলু বসে আছি, যদিও আমরা তিনজন একটি জুটি এবং ভালো বন্দুও বটে।
আজ আমার মানবী পরীর খোজে আসা। অনেকক্ষন যাবৎ বসে আছি,অপেক্ষার প্রহর যেনো আর শেষ হচ্ছে না।

তার পরে বসে রইলাম।

কিছু সময় পর দেখা মিললো মানবীর, মানে আমার কল্পনাকারী।
.
-শাহিন,কিসলু তোরা একটু বসে থাক। আমি আমার মনের রাজ্যের কুমারিকার সাথে দেখা করে আসি (হাবিব আদনান)
.
-আচ্ছা ঠিক আছে যা, তয় পরিক্ষায় পাশ করলে কিন্তুু আমগো নিয়া ভরপুর একটা পার্টি দিতে অইবো (কিসলু)
.
-আরে বেটা তুই আছোছ পার্টি নিয়া,আগে দোয়াটাও তো করবি(শাহিন)
.
আস্তে আস্তে মানবীর সামনে গিয়ে নিচুস্বরে বললাম, এই যে আপু শুনছে। বলা মাত্রই থমকে উঠলো,

যেনো সে অচেনা এক মাফিয়ার ডনের সামনে পড়েছে। নিশ্চুপ হয়ে কিছু সময় অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে..
-জ্বী,আমাকে বলছেন?(মানবী পরী)
-হ্যা,আপনাকেই। আপনার নামটা বলা যাবে কি?(হাবিব আদনানা)
-জ্বী,আমার নাম নীলাদ্রী।
-ওয়াও,অসাধারন তো আপনার নামটা..!!
-ধন্যবাদ।
-আপনি কিসে পড়েন?
-অনার্স প্রথম বর্সে।
-আপনি?
-৩য়।
আচ্ছা এভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কতোক্ষন কথা বলা যায় চলুন না একটু বসে কথা বলি…!!!
-না নাহ্,আমি পরবো না।
-প্লিজ প্লিজ একটু চলুন না..!!!
-………….চলুন।
.
চলে গেলাম ক্যাম্পাস এর লাস্ট ব্যাঞ্চটিতে বসে আছি,নিস্তব্ধতায় ঘেরা আজকের লাস্ট ব্যাঞ্চটি।
একটু অপোলোক মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
একটু লজ্জামাখা মুখে…
-এভাবে কি দেখছেন?(নিলাদ্রী)
-তোমার পিছনের পড়ে থাকা গাছগুলো দেখতে কতই না সুন্দর,ডালপালায় ভরপুর।

তার ওপর পাখি বসে কিচির মিচির করে মিষ্ট স্বরে গান করছে।

(যদিও তার চোখের মায়ায় পড়ে আছি,তার চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলছি)(হাবিব)
-ওহ হু,তাইতো।
-হুম।
আচ্ছা তাহলে ওঠি
-জ্বী আচ্ছা।
.চলে গেলেন আমার মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পরী,আর এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। বুকের মধ্যে মনে হয় মুচড়ে ফেলে দিচ্ছে সব।

চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়েছে। মনে চাচ্ছে তার সাথে সারাদিন বসে বসে কথা বলি, কিন্তুু কি করে সম্ভব।

তাকে তো এখনো আমার ভালোবাসার কথাটাই বলতে পারলাম না।

নিজেকে একটু কন্ট্রোল এ রেখে একটা রিক্সায় করে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে অনেক কষ্টে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমাতে দিচ্ছে না,আমার চিন্তাকুল। তাকে নিয়ে সারা রাত ভাবিয়ে তুলেছে আমায়।
রাত শেষে হয়ে সকাল ঘনিয়ে আসলো।
তাকে দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে, চলে গেলাম আগের গন্তব্যপথে,

পৌছালাম ভার্সিটিতে।বসে আছি সেই লাস্ট ব্যাঞ্চটিতে তার অপেক্ষায়। কোন কিছুই আজ নিজের কাছে ভালো লাগছে না।
শুধু তাকে পাবার আশায়।
.
আমার চোখ পড়ে আছে শুধু ভার্সিটির গেটের ওপর,কখন নীলাদ্রী ভার্সিটিতে ডুকবে।
হঠ্যাৎ গেটের পাশ কেটে চলে আসতে লাগলো,আমি চিনেও মনে হয় চিনতে পারলাম না।

তার ওপর মনে হচ্ছে আবার ক্রাস খেলাম। হলুদ ড্রেস আর গোলাপি রঙের প্রলেপ তার ঠোঁটে।

যদিও হলুদ ড্রেস আমার অনেক পছন্দের।
তার সামনে গিয়ে দাড়ানো মাত্রই…
-হাবিব ভাইয়া কেমন আছেন?(নীলাদ্রী)
-এতোক্ষন ভালো ছিলাম না,এখন অনেকটা ভালো(হাবিব আদনান)
-কেনো?
-নাহ্,এমনি।
-ওহ।
-চলো একটু বসে কথা বলি।
-আচ্ছা চলেন।
-মনে মধ্যে জমে থাকা কথাটা কিভাবে যে বলি ভেবে চিন্তে পাচ্ছি না,ওকি আমায় ভালোবাসবে(মনে মনে চিন্তা করছে)
-হাবিব ভাইয়া কিছু বলছেন না যে?
-ও হ্যা তাইতো, কিছু বলছি না কেনো
-আচ্ছা নীলাদ্রী আমি কি তোমার বন্দু হয়ে থাকতে পারি তোমার পাশে?
-য়ুম…বন্দু… বন্দু….(একটু চিন্তা করে)ওকে ঠিক আছে।
-ধন্যবাদ।
এখন থেকেই চলতে শুরু করছে তাদের বন্দুত্বের সম্পর্ক।
ক্যাম্পাসে একসাথে আড্ডা,খুনশুটি এবং দুজনের কথা দুজনার কাছে শেয়ার করা।
একজন যদি ভার্সিটিতে না আসে তাহলে যে ভাবেই হোক ভার্সিটিতে নিয়ে আসা,যদিও প্রয়োজনে মিথ্যা বলা।
এতোটাই গভিরত্ব হয়েছে তাদের বন্দুত্ব একজন কে ছাড়া যেনো আরেক জনের পথ চলা বন্দ হয়ে যায়।
আর রাগ করে বেশি সময় নিয়ে থাকাটা যেনো দুজনেরই অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তারই মাঝে আমি তাকে প্রচুর পরিমানে ভালোবেসে ফেলেছি।
তাকে অনেক বুঝানোর চেস্টা করেছি আমি তাকে ভালোবাসি,হয়তো বুঝেও না বুঝার ভান ধরে বসে আছে।
.
আজ শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়ে বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রায় নিলাম।

ওহ বলতেই তো বুলে গিয়েছিলাম, এরি মাঝে আমাদের কিছুকিছু রাত যেতো সারারাত কথা বলতাম।

টাকা শেষ হয়ে গেলে বিকাশ একাউন্ট থেকে ফ্লাক্সিলোড করে নিতাম। তার পরেও কথার যেনো জুড়ি নেই।
বিকাল প্রায় ৫ :১৩ মিনিট।ফোন দিয়ে বললাম বট তলায় দেখা করার জন্য।

যদিও সেখানকার স্থানটা নির্জন পরিবেশ, নিস্তব্ধতায় ঘেঁরা সেখানকার পরিবেশটা।
আমি যাওয়ার সময় হাতে করে একগুচ্ছো গোলাপ নিয়ে নিদিষ্ট স্থানে পৌছে গেলাম।
কিছু সময় পর মহারানীর আগমন।
তাকে দেখেই আমার মনের মধ্যে ধুপধাপ আওয়াজ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং

সেই সাথে শুরু হয়েছে নীল আকাশে রাশি রাশি ধোয়ার মিল বন্দন।
কাছে এসে বসা মাত্র নীলাদ্রী বলে ওঠলো…
-এই সময়ে এখানে কেনো ডেকেছো?(নীলাদ্রী)
-কেনো আসতো তোমার সমস্যা হয়েছে বুঝি(হাবিব আদনান)
– নাহ্,তা হয়নি।
-তাহলে এভাবে বলছো কেনো?
আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, দয়া করে আপনি ক্ষমা করে দেন…!!!
-নীলাদ্রী আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, তোমার ছাড়া আমার একটি মহুর্তও ঠিক ভালোভাবে কাটাতে পারি না।

তোমাকে আমি আমার সারা জীবন এর জন্য পাশে পেতে চাই…!!!(একদমে নিচের দিকে মাথা লুটিয়ে)
-নিশ্চুপ….
-কি হলো, কিছু বলবে না তুমি?
-তুমি এদিকে তাকাও,
-সাহস হচ্ছে না।
-(এবার নীলাদ্রী আমার দুই গালে হাত রেখে আস্তে করে মাথাটা ওপরে তুলে)

পাগল একটা আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি তুমি কেনো বুঝোনা।
-তুমি তো কখনো বলো নি?
.
এবার আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীলাদ্রী তার মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা না বলা কথাটি বলে দেয়,

হাবিব আমি তোমাকে অন্নেক ভালোবেসে ফেলেছি।
-আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম আমি তোমাকে ভালো বাসি। আই লাভ ইউ নীলাদ্রী।
-আই লাভ ইউ টু…!!!
.
পরে এক রিক্সায় করে নীলাদ্রীকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে আসলাম।
আর এদিকে বাবা/মা ও আমার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।যদিও আগে রাজি ছিলাম না,

এখন বলে দিয়েছি আমি রাজি।তবে আমি একজন কে ভালোবাসি।
পরে নীলাদ্রীর বাসার ঠিকানা নিয়ে তাকে দেখতে গিয়ে আমার পরিবারের সবার পছন্দ হয়।বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেছে।
…..
….
আজ নিদিষ্ট তারিখের বিয়ের দিন।
বিয়ের ঝামেলা শেষ করে নীলাদ্রীকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাত প্রায়১১ টা।আামর বউটা না জানি আমার ওপর রাগ করে বসে আছে। সেই কখন থেকে একা একা বসে আছে।
বাসর ঘরে ডোকা মাত্রই আমার ওপর যেন তার রাগের নিশানা টার্গেট করে বসে আছে।
তার পাশে গিয়ে বসে তার দুই গালে হাত দিয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে কপালে একটি পাপ্পি একে দিলাম।

সব রাগ নিমিশেই শেষ হয়ে গেলো……!!!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত