হুর পরী

হুর পরী

-আজ আমার আর জেনিয়ার তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী!পাগলীটা আজ খুব সাজবে,এই একটা দিন জেনিয়া একটু সাজে।তাও সেটা রাতে।তাছাড়া কখনোই সাজেনা।জীবনটা যে কতটা সুন্দর,সেটা জেনিয়া আমার লাইফে না আসলে বুঝতেই পারতাম না।আজকে শুধু আমাদের বিবাহ বার্ষিকিই না।আজকে আমাদের কলিজা আমাদের বাবুটার বয়স এক বছর পূর্ন্য হলো! আমরা এক সুন্দর হাঁসি খুশি ফ্যামিলি! খুব কম মানুষের জীবনে এরকম সুখি কম হয়।তবুও মনের মধ্যে একটু কষ্ট!যা হয়তো আমার সুখের চেয়ে বেশি না।তবে কারণ হচ্ছে জেনিয়া কথা বলতে পারেনা! তবুও আমি অনেক খুশি জেনিয়ার মতো স্ত্রী পেয়ে!খুব ভালো ও খুব লক্ষী একটা মেয়ে।আমার অল্প বেতনের অল্প পুঁজিতেই খুব সুন্দর করে সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছে।আর আমাদের বাবুটার ভবিষ্যতের জন্যেও কিছু জমাচ্ছে।জেনিয়া
আমার জীবনে আসার পর আমার জীবনটাই কেমন জানি পাল্টে যাই।এইতো কয়েক বছর আগের ঘটনা ।

তখন আমি উত্তরাতে একটি কোম্পানিতে চাকরী করি! মার্স্টাস শেষ করেছিলাম অনেক আগেই।কিন্তু বেকার
দিন কাটাচ্ছিলাম কোন চাকরী ছিলোনা! মা খালু আর টাকার জোড় না থাকলে যা হয় আরকি।অনেক জায়গাতে চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়েছি।সবাই শুধু বলে আপনার কোয়ালিফিকেশন ভাল।কিন্তু আপনি আবার চেষ্টা করোন। এই চেষ্টা করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছি দুই বছর। চাকরী অনেক খুজেছি কিন্তু পাইনি! হঠাৎ একদিন আমার মেজু মামা ঢাকা উত্তরাতেই যেখানে থাকি। সেখানে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দেই!মামা বললো কোম্পানীটা ভালো।হাসি পাইলো মামার জোড়ে চাকরী হলো

-কোম্পানিটাও আমার বাসা -কোম্পানিটাও আমার বাসা থেকে খুব বেশি দূর ছিলোনা!মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা হেঁটে গেলেই হই! তাই সবসময় হেঁটেই যেতাম!আমার বাসা থেকে কিছু দূর যেতেই প্রায় দেখতাম একটি মেয়ে সবসময় বেলকোনিতে বসে থাকতো!কখনো চুলে তেল দিতো, কখনো চুল আচরাতো!কখনো চুলগুলো বেনি করতো। কখনো ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে দুষ্টুমি করতো!বেলকনিতে একটা ময়না পাখি আছে তার সাথেও দুষ্টুমি করতো।
আমি প্রায়ই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম!আমার অদ্ভত ভাল লাগতো।আসলে আমি মেয়েটার দুষ্টুমি দেখতাম নাহ, মেয়েটাকে দেখতাম! অসম্ভব মায়াবি চেহারা তার। হাঁসিটা ছিলো অদ্ভুদ, হাঁসলে দুগালে টুল পরতো!এক কথাই ডানা কাটা পরি!আমার অফিসটা ছিলো ১০টা থেকে! কিন্তু আমি ৯:১৫ হলেই চলে আসতামমেয়েটাকে দেখার জন্য!
তাদের বাসার ঠিক সামনে ছোট একটা চায়ের দোকান ছিলো! আমি সেখানে বসে ৩০ মিনিটের ভেতরে ৪/৫ টা চেয়ে খেয়ে নিতাম! আসলে চা খাওয়াটা উদ্দেশ্য ছিল না,উদ্দেশ্য ছিলো নাম না জানা মায়াবতীটাকে দেখতে।চা খাওয়ার বায়নাতে প্রতিদিন মেয়েটাকে দেখতাম!মেয়েটাকে দেখার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকতাম।মনে হয় তার প্রেমে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি। আস্তে আস্তে মেয়েটাকে ভালোবেসেও ফেলি! যতক্ষণ চায়ের দোকানে থাকতাম ঠিক ততক্ষণ আমার দৃষ্টি থাকতো ঐ মেয়েটার দিকে!কিছুদিন যাবার পর দেখি মেয়েটাও তাকিয়ে থাকে! মাঝে মাঝে চোখা চোখি হতো! আর মেয়েটা ঠুট বাকা করে একটা হাঁসি দিতো!ওহ কি ঠোঁঠ বাকানো হাসির ঝলক।আমি যেন খুন হয়েছি এই হাসিতে।এভাবে প্রাই অনেক দিন কেটে গেলো। আমি শুধু দেখেই চলছি! কিন্তু আজকাল মনটা অনেক ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য! খুব ভালবেসে ফেলিছি ঐ মেয়েটাকে!প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ভাবি

কেমনে মেয়েটার সাথে কথা বলবো! ঘুমাতে গিয়ে দেখি স্বপ্নে তার সাথে কথা বলছি! তখন মনটা খুব  ভালো থাকে! কিন্তু যখনি ঘুম ভেঙ্গে যাই ঠিক তখনি মনটা খারাপ হয়ে যাই!তখন প্রাই অস্থিরতা বিরাজ করে মনে।কেন স্বপ্নটা ভেঙে গেল।তারচেয়ে বেশি অস্থিরতা কাজ করছে, কারণ ইজও সরাসরি মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারলাম না।এভাবে আরো প্রাই একমাস চলে গেল। মেয়েটাকে ঐ চায়ের দোকানে বসেই দেখে যাচ্ছি! মনে হয় তার সাথে যেন চোখে চোখে কথা বলি!এভাবেই কাটতেছে আমার দিন মেয়েটার কথা ভেবে ভেবে!আর ভাবছি কবে কথা বলবো,কবে মনের ভেতর জমানো কথা গুলো বলবো।”যে মায়াবতী তুমি বলতে আমি বিভোর তুমি কি তা জানোনা।তুমি কোন গগণের চাঁদ,যা অনন্য।কোন বাগানের ফুল যার এতো সুভাস।ভালবাসি তোমাকে খুব বেশি ভালবাসি।কিন্ত কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। বলতে পারিছিনা মনের কথাগুলো।হঠাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি,অফিস থেকে ছুটি নেই।কিছুদিন আর ওদিকে যেতে পারিনাই। মনের ভেতর এক অস্থিরতা কাজ করছে।অনেক দিন দেখিনা। সুস্থ হয়ে গেলাম ঐখানে।আজ পুরাই অবাক হলাম।যে উপরের বেলকনির পরীটা আজ উপর থেকে নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে!একদম হুর পরীর মত লাগছে।স্বর্গ যদি একটু খোঁজ নিতে পারতাম।তাহলে হয়তো জানতে পারতাম সেখানে একটা হুর পরী কমে গেছে।পরীটার সাথে আরেকটি ছোট মেয়ে মনে হয় বোন হবে!ভাবছি কথা বলবো সেটা যেমনেই হউক নাহ কেনো!

-আগে চায়ের দোকানে গেলাম প্রতিদিনের মতো না আজ মাত্র একটা চা খেলাম! আর দেখছি মেয়েটা যেন না চলে যাই! মনে মনে সিদ্বান্ত নিলাম এখনেই কথা বলবো হুর পরীটার সাথে! আস্তে আস্তে মেয়েটার সামনে এগিয়ে গেলাম

-সামনে গিয়ে, সালাম দিয়ে বললাম একটা কথা বলার ছিল।কিন্তু আমার সালামের কোন প্রতি উত্তর এলোনা।হুর পরীটা নিশ্চুপ,যেন অবাক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আবারো বললাম, এইযে একটা কথা বলবো শুনবেন। এবারও আমার না হওয়া হুর পরীটা নিশ্চুপ।তার চোখের ভাষায় আমাকে যেন কিছু বলতে চায়।বলতে চায় তার না বলা কথাগুলো।যেগুলো আমার অজানা।আমি আবার বললাম আপনার সাথে একটা কথা বলার ছিলো।কিন্তু না এবারও কোন কথা নেই,আমি নিরাশ হলাম।আমার ভালবাসার কমতি আছে।না হয় ,হয়তো এতদিনে তাকে বুঝাতে পারিনি সে আমার হৃদয়ের কতটা জোড়ে আছে।এই কয়দিনে মনের মন্দিরে তার জন্যে যে জায়গা করেছি,সে জায়গা তো অন্য কাউকে দেওয়া যাবেনা।আমি হতাশা মন হুর পরীটার চোখের দিকে একবার তাকালাম।পানি টলমল করছে তার চোখ।কিন্তু তার চোখে তো পানি থাকার কথা না।তবে কেনো এমন,না প্রশ্নের উত্তর আমি পাব না।হতাশা মন নিয়ে পিছনে ফিরে হাটতে লাগলাম।কিছু পথ আসার পরেই ছোট মেয়েটি ডাক দিলো “ভাইয়া

আপনার সাথে কিছু কথা ছিল “।আমি পিছন ফিরে তাকালাম,দেখি হুর পরীটা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।চোখটা মুছছে।আমি একটু এগিয়ে এসে বললাম “বল কি কথা বলবে। এই কথা বলার সাথে সাথে ছোট মেয়েটা আমার দিকে একটা খাম তুলে ধরলো! আর ছোট মেয়েটা বললো ভাইয়া খামটা বাসায় গিয়ে খুলবেন!আমি এই খামের রহস্য বুঝতে পারছিনা।বা বুঝার চেষ্টাও করছিনা,আমার হুর পরীটা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো আমাকে পছন্দ হয়নি। তাই এমন করছে আমি চলে আসলাম ছোট মেয়েটার কথা শুনে! মনটা ভাল নেই বলে কোম্পানিতে না গিয়ে বাসায় চলে আসলাম!বাসাতে এসে খামটা খুললাম, দেখলাম বাজ করা একটা চিঠি! চিঠিটা খুললাম! পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু পড়তে পারছিনা! কারণ চিঠির প্রথম দুই লাইন পড়ে আর পড়ার ইচ্ছে হচ্ছেনা। চিঠির ভাষা ছিলো ঠিক এই রকম!

-আসসালামু আলাইকুম! আশা করছি ভালো আছেন! আমিও ভালো আছি! কিছু কথা বলার ছিল। হ্যা আসলেই আমি বোবা! কথা বলার মতো শক্তি আমার নেই! কথা বলার মতো শক্তি আমি আরও পাঁচ বছর আগেই হারিয়ে ফেলেছি! তখন আমি দশম শ্রেনীতে পড়তাম! স্কুল হতে বনভোজনের আয়োজন করা হয়! বান্ধবিদের অনুরোধে আমিও বনভোজনে যাই!আনন্দ নিয়েই বনভোজ শেষ করি।কিন্তু আসার পথে আমাদের বাসটা পথে এক্সিডেন্ট করে! সেই এক্সিডেন্টে আমার গলাতে প্রচুর আঘাত পাই! আর সেই আঘাতের পর ডাক্তার বলেছে আমি আর কথা বলতে পারবোনা! কথা বলার শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি! আমি জানি আপনে আমাকে ভালবাসেন! যদি ভালো নাই বাসতেন তাহলে প্রতিদিন আমাদের বাসার নিচে চায়ের দোকানে বসে আমাকে দেখতেন না।চা খাওয়ার বাহানাতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন না।একটু পর পর উকিয়ে দিয়ে দেখতেন না,আমি ছাদে আছি নাকি রুমে চলে

আসছি।জানেন প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো।খুব বিরক্তিবোধ করতাম।চাইতাম না কেউ আমার সাথে জড়িয়ে ঝাক। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি ফিল করি,আপনার উপস্থিতি আমার মনে ভাল লাগা সৃষ্টি করে।আপনার চাউনির মাঝে কি যেন একটা আছে।আস্তে আস্তে খুব বেশি ফিল করতে থাকি। অবসর সময়ে মিস করি।মনে মনে চাইতাম আপনি যেন সারাক্ষণ ঐ চায়ের দোকানে বসে থাকেন।আপনার এই উপস্থিতি আমার মনে আপনার প্রতি ভাললাগা আর ভালবাসার সৃষ্টি করেছে।কিন্তু হঠাৎ আপনি উদাও হয়েগেলেন।আমি যেন ঠিক পাগলের মত হয়েগেলাম।আপনাকে মনে মনে খুজেছি,বিষন্নতায় দিন কেটেছে।আমি তো কথা বলতে পারিনা, তাই চিঠি লিখেছি।আর আমিও আপনাকে না দেখে থাকতে পারাটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আমি আর পারছিনা, তাই আপনার জন্য আমার এই চিঠি!তবে আপনাকে একটা কথা বলবো, আপনে আমাকে ভুলে যান! আর আমিও ভুলে যাবো! আপনি আর কখনোই আমার বাসার সামনে আসবেন নাম কারণ আমার এই বোবা জীবনের সাথে আপনার সুন্দর জীবন জরানোর কোন মানেই আসেনা! আপনে আপনার সুন্দর জীবনে ভালো একটা মানুষ খুজে নিবেন! যে আপনার সাথে সবসময় সুন্দর করে কথা বলতে পারবে,ভাল ভাল কথা বলে আপনার মুখে হাসি ফুঁটাবে।ভালো থাকবেন!আমাকে আমার মত থাকতে

দিন প্লিজ আর আসবেন না এখানে। এই কথা গুলো পড়ার পড় দেখছি আমার চোখ হতে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে।! হয়তো এটাই ভালোবাসা! সারাদিন ভাবলাম কি করবো! তারপর একটা সিদ্বান্ত রাতে নিয়েই নিলাম এই মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো! কারণ আমি তাকে ভালবেসেছি তার কন্ঠ শুনে নয়।তার প্রেমে মুগ্ধ হয়েই ভালবেসেছি।!আর ভালবাসার কাছে এটা কোন বড় বিষয় নাহ!তার পরের দিন মা বাবাকে বুঝলাম।তারা রাজি হতে চাইনি।কিন্তু আমি সুখে থাকব বলে রাজি হয়ে যায়।মা বাবাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাটালাম তাদের বাড়ি! অতঃপর দুই পরিবার, আমার এবং জেনিয়ার সম্মতিতে বিয়ে হয় আমাদের। অবশ্য প্রথমে জেনিয়া রাজি ছিলোনা কারণ তার ভাষ্য সে কথা বলতে পারেনা।আর এই বোবা জীবন আমার সাথে জড়িয়ে আমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করতে চায় না। তারপর আমিও একটা চিঠি দিয়ে তাকে বুঝায় এবং সে রাজি হয়!আজ আমাদের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী আমরা এখন অনেক সুখি ।এখন আর কোন কিছু লিখে বুঝাতে হয় না। সবকিছু এমনিতেই বুঝে যায় ,আমার কখন কি লাগবে।অনেক ভালবাসি জেনিয়াকে আর জেনিয়াও অনেক ভালবাসে আমাকে! আর আমরা দুজন ভালবাসি আমাদের ঐ ছোট বাবু তানজিমকে! সবমিলিয়ে অনেক ভালোই আছি আমি আমার জেনিয়া ও তানজিমকে নিয়ে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত