জন্মদিন

জন্মদিন

তিন বন্ধু অামি, শুভ অার নিশান বসে কাগজ কাটছি। কাগজ গুলো একটা এক সাইজ করে কাটছি। এর জন্য বিশেষ কারণও অাছে। তাদের বৌ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তাদেরর দিয়ে অামার কাজ ভালো করে করিয়ে নিচ্ছি।

– বন্ধু তাড়াতাড়ি হাত চালা না। (অামি)
– করছিতো। (শুভ)
– তাড়াতাড়ি কর। তোদের বৌদদের ফোনের জ্বালায় বাচবো না
– তোর বৌ তো ফোন দেয় না তাইনা??
– তা না।
– বেটা অামাদেন দিয়ে কাজ করাচ্ছিস অার অামাদের বৌয়ের কথা বলিস। (নিশান)
– মাফ চাই, কাজ টা করেদে।

অাসলে কাগজ গুলো কাটা হচ্ছে অামার মহারাণীরর বার্থডের জন্য।
প্রতি বারের মত এবারও কিছু স্পেসাল জিনিস রাখি। যেটা হবে নিজেদের হাতে।

কাগজ গুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইমো বানানো হবে। অামরা ফেসবুকে যেগুলো ব্যবহার করে থাকি। অার এগুলো একটু বড় বড় করে কেটে রং করা হবে একটা এক রকম করে।

বেলুনের জায়গায় এই ইমো গুলো থাকবে। ব্যাপারটা অামার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। বন্ধুদের নিয়ে কাজ করার মাঝেও একটা অানন্দ অাছে। কারন এখানে একজন অরেক জন কে পচানো যায়।

.
অবশেষে কাগজ কাটা শেষ হলো। রাত দশটা বেজে গেছে, সবাই অফিস থেকে সোজা মামার দোকানে চলে এসেছে। অামি তাদের ফোন দিয়ে জরুরি কাজ অাছে বলে নিয়ে এলাম।

তাদের ফোন অামার কাছে কাছে ছিলো । সব গুলো এক জায়গায় রেখে কাজ শুরু করেছিলাম। একবার একটা বেজে ওঠে।
কাজ শেষে মোবাইল গুলো নিয়ে দেখি শুভর বাসা থেকে ১৫টা কল, নিশানের বাসা থেকে ১৩টা, অামার মোবাইলে ২৭ টা। যাহহ অাজ কপালে খারাপই অাছে।

অফিস ছুটি হয় সাতটায়, অার রাত দশটা পর্যন্ত অাজ বাইরে, তার মধ্যে একগুলা কল!! ব্যস হয়ে গেলো অামার দফারফা।

– দেখ তোদের বৌর চাইতে অামার বৌ কত ভালো। (অামি)
– ভালো তো বটেই। (নিশান)
– হবেনা অাবার (শুভ)
– হবে না কেন, বাসায় গিয়ে দেখ হয়তো ভাত নেই, নয়তো ঝাড়ু নিয়ে বসে অাছে। (নিশান)
– হাহাহা ঠিক। (শুভ)

কাগজ গুলো মামার দোকানে রেখে, সবাই যার যার মত বাসায় গেলাম, অাবার কাল অাসতে বললাম। কাল বাকী কাজ গুলো শেষ করতে হবে। পরশুদিন অনুষ্ঠান।

.
বাসার কলিংবেল চাপতে তনু দরজা খুলে দিলো। তনুশ্রী অামারর মহারাণীরর নাম। অামি ছোট করে তনু ডাকি। দরজা খুলে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। এতক্ষন কেথায় ছিলে বলে।

মাও কোনো দিন এক জোরে চিৎকার করেনি। মনে হচ্ছে অনেক বড় অপরাদ করে ফেলেছি। ব্যাচেলার জীবন যে কত মজার সেটা এখন টের পাচ্ছি।

– ঢুকতে দিবা নাকি??
– না, কোথায় ছিলা??
– কাজ করছি।
– কি কাজ?? ফোন কোথায়??
– অাছে।
– তো কি কানে সমস্যা??
– না।
– তো কল ধরনি কেন??
– এমনি।
– থাকে কোন মেয়ে ছিলো?
– কয়টা মেয়েকে চিনো??
– তার মানে তুমি মেয়েদের সাথে ফূর্তি করে বাসায় অাসছো??
– বাজে কথা বলবানা।
– তো কি? সত্যিই তো।
– ধূরর তুমিও না।
– একদম কথা ঘুরাবা না।
– উফফ কি জ্বালা।
– হুমম ভালো, এখন অামাকে জ্বালা মনে হবেই।

যত কথা বললবো তত কথা বাড়ড়বে তাই তনু কে দরজার কাছ থেকে কোলে করে সোজা বেড রুমে নিয়ে বসিয়ে দিলাম। অার কিছু বললো না,অামিও চাই না কথা বাড়াক।

একটা সামান্য কাজ করতে অামাদের অনেক সময় লেগে গেলো, তার জন্য কত বিরাট কান্ড ঘটে গেলো।

.
পরদিন অাবার সবাই এক জায়গায়।
– বন্ধু কাল বৌ ভাত দেয়নি (শুভ)
– কেন??
– হারামি কেন জানস না?? ( নিশান)
– অামারো অবস্থা খারাপ।
– তোর কি হইছে??
– কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে গেলো।
– যাবেই তো শালা অার জিনিস ইমো বানাবি বৌর জন্য।
অারে বেটা বৌয়ের অনেক প্রিয় জিনিস ইমো।
ভাবছি কেক টাও এমন বানাবো।
– তোর অারকি…
– দে দে তারাতারি কাজ কর নয়তো কালকের মত হবে।
– নাহহ ভাই মাফ চাই।
– অাচ্ছা তারাতারি।

অবশেষে রং করে ইমো গুলো সব ঠিকঠাক করে নিলাম। অবশেষে অামার প্রত্যাশিত দিন। অাফিস শেষ হওয়ার অাগে চলে এসেছি।
রুম তো সাজাতে হবে কিন্তু তনু কে বুঝতে দেয়া যাবে না কি হচ্ছে।

– তনু
– হুম
– তোমার তো অনেক দিন শপিং হয়নি। অাজ যাও শপিং করে অাসো।
– অাজ অাবার কি হলো?
– কই কিছু না তো।
– তাহলে হটাৎ করে এ কথা বলছো যে??
– অারে তোমায় শুধু প্যাঁচ।
– অাচ্ছা টাকা দাও।
– তারাতারি এসো কিন্তু
– অাচ্ছা

সে অাসতে অাসতে প্রায় অন্ধকার হয়ে যাবে, যেই টাইমে বের হয়েছে। শহরের জন্য এটা কিছু না।

তনু কে শপিং এ পাঠিয়ে অামি বাসা ঘুছাতে লাগলাম। নিশান অার শুভ কে ফোন বলেছিলাম তাদের বৌ নিয়ে অাসতে। তাদের ফোন দিয়ে নিয়ে অাসলাম। অার ইমো গুলো নিয়ে অসতে বললাম শুভ কে। অার কেক টা নিশান কে।

তারা চলে এলো। তাদের সমেত ঘর সাজাতে ব্যস্ত। ইমো গুলো বেলুনের মত ঝুলিয়ে দিলাম। কিছু কার্টুনের মত কাটা, সেগুলো দেয়ালে অটকিয়ে দিলাম।

সব সাজানো ঘোছানো হয়ে গেছে। এখন শুধু তনু অাসার অপেক্ষা।
সবাই কে বলে দিলাম লুকিয়ে থাকতে। তনু অাসার সময় হয়ে এলো।

কিছুক্ষণ পর কলিংবেল এর অাওয়াজ শুনতে পেলাম। বেডরুমের লাইট অফ করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। তনু কে মেইন দরজা খুলে দিলাম। সে অনেক শপিং করে নিয়ে এসেছে। অনবে না কেন বেতনের অর্ধেক যে নিয়ে গেছে।

– চলে এলে??
– হুমম
– কি কি কিনলে??
– অনেক কিছু।
– অামার জন্য??
– তুমি তোমার জন্য টাকা দিছো নাকি??
– এ্যায়য়য়?? কি নিষ্ঠুর।
– বেড রুমের দরজা বন্ধ কেন??
– সারপ্রাইজ অাছে।
– কিসের সারপ্রাইজ?
– অামার তো দিতে ইচ্ছা করছে না
– কেন??
– তুমি অামার জন্য কিছু অানোনি তাই।
– অাচ্ছা তাহলে অামার সারপ্রাইজ পাবো না?
– হুমম পাবে।
– তো??
– চল

দরজা খুলে লাইট জ্বালাতেই বুস্টার অার স্প্রেরে মারা শুরু করলো শুভ অার নিশান। সাথে সাথে সবাই বলতে লাগলাম “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”

তনু অাকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। ভাবতেই পারেনি এমন কিছু হবে। অথবা সে নিজেও জানে না তার বার্থডে অাজ। অামি কি ভূলে যেতে পারি?? একমাত্র বৌয়ের জন্মদিনের কথা।।

কয়েকটা ইমো না ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছি সেগুলো সবার মুখের সামনে দরে রাখছি। তনুর খুশিতে চোখের জল বের হয়ে যায়।
অামি একটা স্যাড ইমো মুখের সামমনে নিলাম। সাথে সাখে তনু এমন একটা হাসি দিলো যেন চলন্ত ঝর্ণা। এই হাসিটার জন্য সারা জীবন এমন দিন পালন করারা সম্ভব।

সবাই মিলে অনেক অানন্দ করলাম খাওয়া দাওয়া চললো ভালো ভাবে।
সকল কিছু শেষে বন্ধুদের বিদায় দিলাম। তারাও অামার জন্য অনেক কষ্ট করেছে।

তনু একটা প্যাকেট দিলো। খুলে দেখি পাঞ্জাবী।
– এটা তোমার জন্য
– অামার??
– তুমি কি ভাবছো??
শুধু অামার জন্য শপিং করবো??
– হাহাহা পাগলি।
– ভালোবাসি।

সত্যি বলতে স্ত্রী গুলো সব সময় এমনই হয়। যা কিছু করুক সেখানে স্বামীর জন্য কিছু না কিছু থাকবেই।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত