ফুলের বাগানে সাপ

ফুলের বাগানে সাপ

রবিন ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে। ওদের বাসার কাছেই একটা স্বপ্ন শপিং মল আছে। রবিন মাঝে মাঝে যেতো। একদিন শান্ত বিকালে কেনাকাটা করছিলো। হটাৎ পাশে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর।
– ভাইয়া দুই কিলো টমেটো দিন তো।’
চমকে পিছন ফিরে তাকালো রবিন। যা দেখলো অবিশ্বাস্য।
অসাধারণ অপ্সরী একটা। এতো সুন্দর মেয়ে হতে পারে কল্পনাও করতে পারিনি ও। অসম্ভব মায়াবতী।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কিছুটা সময়। বার বার পিছনে তাকানোও ঠিক না। আবার যখন তাকালো কাউকে দেখতে পেলো না।
দ্রুত সামনে এগিয়ে গেলো। রবিনের চোখ দু’টো তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরছে ওকে। নাই কোথাও কেউ নাই। একেবারে হাওয়া। রাস্তায় নেমে এসেও কোথাও দেখা মিললো না অপ্সরীর।
তারপর পরপর সাতদিন স্বপ্নের আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে থাকলো।
৮ম দিন বিকেল পাঁচটা বেঁজে পয়তাল্লিশ মিনিট।
রবিন স্বপ্ন শপিং মলে কাঁচা বাজার করেছে।
হটাৎ সেই কন্ঠস্বর। চমকে ফিরে তাকালো রবিন। আজও সেই কালো সানগ্লাস পড়া, সাথে নয় দশ বছরের একটি মেয়েটি। কেনাকাটা শেষে বেড়িয়ে গেল রপবতী কন্যা।
রবিন দ্রুত ওর পিছু পিছু হাঁটা ধরে। ফলো করে বনানী দুই নাম্বার রোডের তেপ্পান্ন নম্বর বাসায় ঢুকতে দেখলো ওদেরকে।
জানুয়ারীর শীত। বনানী দুই নাম্বার সড়ক। রোদের তাপ শরীরে খারাপ লাগছে না। তা ছাড়া দুপুরে এই পথে তেমন পথচারী না থাকায় হাঁটতে ভালোই লাগছে।
রবিনের নজর কিন্তু তেপ্পান্ন নাম্বারে। গত কয়েক দিন যাবৎ ওর ডিউটি হয়ে দাড়িয়েছে এ পথে হাঁটাহাঁটি। কিন্তু নীল ডুমুরের ফুলের দেখা মেলায় কঠিন।
হটাৎ ভাগ্যদেবী আজ প্রসন্ন হলো। বাসা থেকে বেড়িয়ে শপিং মলের দিকেই হাটছে মেয়েটি। সাথে রয়েছে বাচ্চা মেয়েটি এবং চোখে সেই কালো সানগ্লাস।
যে করেই হোক আজ কথা বলতেই হবে। রবিন ডিটারমাইন্ড। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির পাশাপাশি হাটতে লাগলো সে।
– এক্সকিউজ মি!’ বললো রবিন।
– আমাকে বলছেন?’ সেই অপ্সরীর কন্ঠ।
– জীঁ, আশে পাশে তো আর কেউ নেই।’
– আমি তো জানিনা কেউ আছে কিনা’
– আচ্ছা আপনি সব সময় কালো গ্লাস পড়ে থাকেন কেন?’
– আপনি কি আমাকে চেনেন?’
– না। মাঝে মাঝে স্বপ্নতে দেখেছি।’
– মানে!
– মানে স্বপ্ন শপিং মলে!
– ও আচ্ছা! কিছু বলবেন?’
– না, মানে আপনি অনেক সুন্দর!’
মেয়েটি হেসে ফেললো। অবাক করা মোহনীয় সে হাসি।
বিস্মিত হলো রবিন। মানুষ এতো সুন্দর করে হাসতে পারে। সাথে আরেকটা কিউটের ডিব্বা।
– হাসলেন কেন?’
– আপনি বোধহয় খেয়াল করেন নাই, আমি অন্ধ।’
চমকে উঠলো রবিন। একটা হার্টবিট মিস করলো ও।
আগেই বোঝা উচিত ছিলো ওর। বড্ড বোকা বোকা লাগছে । পরক্ষণেই সামলে নিলো নিজেকে।
– দেখুন আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।’
– তো! আমি কি করতে পারি।’
-আমরা কি বন্ধু হতে পারি না? ‘
-একটা অন্ধ মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব! মতলব কি আপনার? কি করেন, থাকেন কোথায়?’ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বললো মেয়েটি।
– আমি রবিন, চার নম্বরে থাকি অর্নাস সেকেন্ড ইয়ার।’
-ও! কাছেই। কি হবে বন্ধুত্ব করে? ‘
– আপনাকে ভালো লেগেছে! নামটা বলবেন তো?
– আমি ইহিতা, ইহিতা ফাইজা।’
– বড় অদ্ভুদ নাম তো।’
ইহিতা হাসে। প্রজাপতির ডানার মতো মাথা দুলিয়ে হাসে। হাসির সাথে ওর চুল গুলো বাতাসে ওড়ে।
কথা বলতে বলতে শপিং সেন্টারে ঢুকে পড়ে ওরা। একটা সময় ইহিতার প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলো রবিন। সারারাত মোবাইলে কথা হতো। অন্ধ মেয়েটির প্রতি সহানুভূতি থেকেই ভালোবাসার এই গভীরতা বেড়ে গেছে। মেয়েটির চোখের চিকিৎসা চলছে। একজোড়া কর্নিয়া পাওয়া গেলেই চোখ ভালো হয়ে যাবে। ইহিতা সব সময় বলে যেদিন আমি তোমাকে দেখতে পাবো সেদিনই আমরা বিয়ে করবো। কিন্তু কর্নিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। রবিন পাগলের মতো ছুটোছুটি করে কর্নিয়ার সন্ধানে। অবশেষে পাওয়া গেল, কেউ একজন দান করলেন।
অপারেশন শেষ হলো। ইহিতা তার দৃষ্টি ফিরে পেল।
রাতের পর রাত মোবাইলে কথা, প্রেমালাপ চলতে থাকলো।
একটু সুস্থ্য হলে দেখা হবে ওদের। হবে চার চোখের মিলন।
ফেব্রুয়ারীর চৌদ্দ তারিখ। বিকেল চারটা বেঁজে তেতাল্লিশ মিনিট। হাতির ঝিল, ঢাকার নতুন প্রেম কানন। শুক্রবারের কারণে চারিদিকে মানুষ গিজগিজ করছে। মনে হচছে কমলাপুর রেল স্টেশন।
একগোছা লাল গোলাপ হাতে অপেক্ষা করছে রবিন।চোখে কালো চশমা।
ওই তো ইহিতার হাসি শোনা যাচ্ছে। মুখে মুক্ত ঝরা হাসি নিয়ে এগিয়ে আসছে।
– হাই! কেমন আছো রবিন?’
– ভালো।’
– এই মেঘলা দিনে কালো চশমা পড়েছো কেন বাবু?’
অবাক হয়ে বললো ইহিতা। ঠোটের কোণে মৃদু হাসি দেখা গেল রবিনের।
– আমি তো অন্ধ।চোখে দেখি না তাই।’
অবাক বিস্ময়ে চমকে উঠলো মায়াবতী।
– কি বলছো রবিন। আগে তো বলোনি তুমি অন্ধ। তুমি অন্ধ এটা কি করে সম্ভব। তোমার অভিনয় আমি বুঝতে পারলাম কেন।’
– ইহিতা আমি আর পারছি না। তুমি বলছিলে যেদিন চোখ মেলে আমাকে দেখতে পাবে সেদিনই আমরা বিয়ে করবো। চলো বিয়ে করে ফেলি।’
– এটা ঠিক হবে না বোধ হয়। আই হ্যাভ মাই আই সাইট নাউ, বাট ইউ আর স্টিল ব্লাইন্ড। উই হ্যাড নেভার বি হ্যাপি। আমরা সুখী হতে পারবো না রবিন। আমি দুঃখিত। তুমি আমাকে ভুলে যাও, প্লিজ।’
ভীষণ কান্না পেলো রবিনের। ওর পৃথিবীটা আরো অন্ধকার হয়ে এলো। অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করলো ও।
– আমি বুঝতে পারছি ইহিতা। হয়তো আমারই ভুল ছিলো। আমি চাই তুমি সব সময় ভালো থেকো। তোমার খুশিই তো আমার খুশি।’
গোলাপের তোড়া টা হাত থেকে কখন যেন পড়ে গেছে।
ইহিতা চলে গেছে। রবিনের দান করা চোখের দৃষ্টিতে নতুন পৃথিবীর খোঁজে। হাতির ঝিলের একটা নির্জন জায়গায় বসে কান্না থামাতে পারছে না রবিন।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত