সোলায়মন ঈশ্বরের মন্দির তৈরী করেন

সোলায়মন ঈশ্বরের মন্দির তৈরী করেন

রাজা সোলায়মন তার রাজত্বের চতুর্থ বছরে ঈশ্বরের জন্য একটি ঘর অর্থাৎ ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণ করতে শুরু করলেন।
বড় বড় পাথর কেটে আনা হল মন্দিরের ভিত্তি ও দেয়ালের জন্য। এছাড়া সোলায়মন এরস কাঠের দরকার ছিল। সবচেয়ে ভাল এরস কাঠ ইস্রায়েলে পাওয়া যেত না, পাওয়া যেত সোর দেশে। সেটি ছিল ইস্রায়েল দেশ থেকে উত্তরে রাজা হিরমের রাজ্যে। তাই রাজা সোলায়মন রাজা হিরমের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেন। এরপর এরস গাছ কেটে তা ভেলার মত বানিয়ে সমুদ্রে ভাসিয়ে ইস্রায়েল দেশে নিয়ে আসা হল।
এই মন্দির খুব যে বড় ছিল তা নয় কিন্তু রাজা সোলায়মন সবচেয়ে সুন্দর করে তা তৈরী করলেন। সেখানে দু’টি কামরা ছিলঃ প্রথম কামরাটি একটু লম্বা আর দ্বিতীয়টি চারদিকে সমান। দুই রুমের মাঝখানে ছিল দুই পাল্লার দরজা।

দ্বিতীয় কামরাটিতে কোন দরজা ছিল না বলে এটি ছিল শব্দহীন ও অন্ধকার।
এখানে থাকত ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুক, যার মধ্যে ছিল ঈশ্বরের আইন-কানুন ও এর উপরে ছিল দু’টি পাখা মেলে দেওয়া স্বর্গদূত। এই স্বর্গদূতগুলো জলপাই কাঠ দিয়ে তৈরী করা ও সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো ছিল। এটি ছিল ঈশ্বরের বিশেষ ঘর। কেউ এখানে ঢুকতে পারত না- শুধুমাত্র মহাপুরোহিত বছরে একবার প্রায়শ্চিত্তের দিনে সেখানে ঢুকতে পারতেন।
প্রথম কামরাটিতে ছিল একটি বেদি ও দশটি বাতিদান। এটি গীর্জা ঘর বা ক্যাথিড্রালের মত ছিল না। সাধারণ লোকেরা এর ভিতরে যেতে পারত না। শুধু পরোহিতেরা সেখানে যেতে পারতেন কারণ ঐটি ছিল ঈশ্বরের ঘর।

মন্দিরের দেয়াল ছিল একেবারে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত এরস কাঠ দিয়ে ঢাকা। এর গায়ে স্বর্গদূত, খেজুর গাছ ও ফুলের ছবি খোদাই করা ছিল। মন্দিরের ভিতরে পুরো অংশটা সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো, এমনকি, মেঝেও সোনার পাত দিয়ে ঢাকা ছিল।
মন্দিরের বাইরে একটি বারান্দা ছিল যেখানে লোকেরা তাদের পশু নিয়ে এসে পুরোহিতদের দিত যেন তারা ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করতে পারে।
সোর দেশ থেকে নাম-করা শিল্পীদের আনা হয়েছিল মন্দিরের সামনে ব্রোঞ্জের দুটি থামের কারুকাজ করার জন্য। সেখানে একটি বড় ব্রোঞ্জের পাত্র তৈরী করে সেটিকে বারোটি ব্রোঞ্জের গরুর পিঠে বসানো হয়েছিল।
অনেক মজুরেরা সাত বছর ধরে কাজ করে ঈশ্বরের মন্দির তৈরী করে সুন্দর করে সাজাল। এক সময় মন্দিরের সব কাজ শেষ হল। এটি দেখতে খুবই সুন্দর ছিল! ঈশ্বরের উপাসনার জন্য সেটি সবচেয়ে সুন্দর একটি ঘর ছিল।

এরপর সোলায়মন সব লোককে সেখানে একত্র করলেন। পুরোহিতেরা সেখানে ঈশ্বরের কাছে বিশেষ আরাধনা অনুষ্ঠান করল। তারা নিয়ম-সিন্দুকটি, যেটির মধ্যে ঈশ্বরের আইন-কানুন রয়েছে, সেটি নিয়ে এসে ভিতরের কামরাতে রাখল। তখন ঈশ্বরের উপস্থিতির মহিমা স্বর্গ থেকে নেমে এসে সেই মন্দিরকে ঢেকে ফেলল।
এরপর রাজা সোলায়মন লোকদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তিনি প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তোমার মত মহান আর কোন ঈশ্বর নেই, যিনি তাঁর লোকদের মধ্যে বাস করেন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞা সকল রক্ষা করেন। তোমার এই মন্দির তুমি নিজেই দেখাশুনা কর। তুমি তোমার লোকদের প্রার্থনা শোন। তাদের পাপ ক্ষমা কর ও সব সময় তাদের সাহায্য কর।’
এরপর তিনি লোকদের বললেন, ‘ঈশ্বর যেমন আমাদের পিতৃ পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন তেমনি সব সময় আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকুন। আপনারা সব সময় ঈশ্বরের কাছে বিশ্বস্ত থাকবেন ও তাঁর সব আদেশ মেনে চলবেন।’
অনুষ্ঠানের পরে তিনি একটি মহাভোজ দিলেন। তাদের এই উৎসব একটানা সাত দিন ধরে চলল। এরপর লোকেরা যে যার বাড়ী চলে গেল।

সমস্যা

ইস্রায়েলীয়দের জন্য সোলায়মনের রাজত্বকাল ছিল স্বর্গযুগ। তার ব্যবসায়ীরা অনেক দূও দেশে গিয়ে ব্যাবসা-বাণিজ্য করত। তিনি অনেক জাহাজ তৈরী করলেন। সেসব জাহাজে করে অনেক মূল্যবান জিনিস অনেক দূর দেশে নিয়ে আসা হতো। সারা দেশে অনেক নতুন নতুন দালান ও অনেক বড় বড় প্রাসাদ তৈরী করা হল।
কিন্তু সবকিছুই যে ভাল চলছিল তা নয়। দালান তৈরীর কাজে অনেক টাকা ও লোকের প্রয়োজন পড়ল। তাই লোকদের বেশী বেশী র্ক দিতে হতো। অনেক লোককে জোর করে রাজার জন্য কাজ করতে পারত না।
সোলায়মন অনেক বিদেশী রাজকন্যাকে বিয়ে করলেন। এটি ব্যবসার জন্য হয়ত ভাল ছিল এবং তাতে শান্তিও বজায় থাকত। কিন্তু সেসব রাজকন্যারা তাদের দেবতাদের মুর্তি সঙ্গে করে নিয়ে এল। তারা ইস্রায়েলদের

ঈশ্বরের উপাসনা করত না। সোলায়মন যখন বুড়ো হয়ে গেলেন তখন তার ঐসব স্ত্রীরা তাকে তাদের দেবতাদের উপাসনা করতে বাধ্য করল। তিনি আর ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত রইলেন না যেমন তার বাবা দায়ূদ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন।
ঈশ্বর সোলায়মন সঙ্গে কথা বললেন:
‘যেহেতু তুমি আমার আদেশ পালন কর নি, তাই তোমার রাজ্য তোমার ছেলের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।’

ঈশ্বরের কথা সত্য হল।
সোলায়মন মারা গেলেন। তিনি মারা যাবার পরপরই ইস্রায়েল রাজ্য দু’ভাগ হয়ে গেল। সোলামনের ছেলে রহবিয়ামের অধীনে দক্ষিণের অংশে যিহূদা রইল। কিন্তু উত্তরের দশ বংশ বিদ্রোহ করে যারবিয়াম নামে সোলামনের এক কর্মচারীকে রাজা করল। যারবিয়াম উপাসনার জন্য দু’টি ষাঁড়ের মূর্তি তৈরী করলেন। তিনি তার একটিকে দক্ষিণের বৈথেলে শহরে এবং অন্যটি উত্তরের দান শহরে রাখলেন। ঈশ্বরের লোকেরা উপাসনা করতে যেন যিরূশালেমে যেতে না পারে সেজন্য তিনি এই ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু তিনি যা করলেন তা ছিল মারাত্মক পাপ। এই ব্যবস্থা ঈশ্বরেরর লোকদের ভীষণ বিপদের দিকে ঠেলে দিল।

গল্পের বিষয়:
ধর্মীয়
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত