বাতাসে লাশের গন্ধ

বাতাসে লাশের গন্ধ

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে—
এ-দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?

বাতাশে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে। রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মাটির ললাট ছয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো,
জীর্ন জীবনের পুজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার।
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা–একি তবে নষ্ট জন্ম?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?

জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন।

বাতাসে লাশের গন্ধ—
নিয়ন আলোয়। তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংশের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ—
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়।

এ-চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না—
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুন চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,
মুভুহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বীভৎস শরীর
ভেসে উঠে চোখের ভেতরে— আমি ঘুমুতে পারি না, আমি
ঘুমুতে পারি না

রক্তের কাফনে মোড়া–কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে,
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্ৰিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা— সে-আমার স্বজন হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন,
স্বাধীনতা— সে-আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।

ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা ৷

গল্পের বিষয়:
কবিতা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত