তবুও দমে যায়নি হেলেনা

তবুও দমে যায়নি হেলেনা

ওদের স্বপ্নের জানালার পরিধি কতটুকুই বা বিস্তৃত? তবে আর দশটা শিশুর মতো ওরও স্বপ্ন আছে। ওতো স্বপ্ন দেখতেই পারে। কিন্তু ওদের স্বপ্নের জানালার ফুটো দিয়ে আর কতটুকু আলোই বা পৌঁছায়? কতটুকু আলো ওদের স্পর্শ করতে পারে?

তারপরেও বুকভরা দম নিয়ে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। নিরন্তর প্রচেষ্টায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে হেলেনা খাতুন এগিয়ে যাচ্ছে। জন্মগতভাবে দুই পা অচল। তবু দমে যায়নি হেলেনা খাতুনের স্বপ্ন। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনো মায়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে চড়ে নিয়মিত স্কুলের ক্লাস করেছে।

হেলেনা এ বছর গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার বাড়ি গফরাগাঁও উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। আর দশটা শিশুর মতো সে হাঁটতে পারে না। হেলেনার মনে কষ্টের পাহাড়। সে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারে না। দৌড়াতে পারে না। খেলতে পারে না। তার অন্য সব সহপাঠীরা যখন স্কুল মাঠে খেলা করে, সে তখন চেয়ে চেয়ে দেখে। তার চোখের কোণে তখন বিন্দু বিন্দু নোনাপানি এসে জমা হয়। তবু সে দমেনি।

হেলানা পরীক্ষা দিচ্ছে গফরগাঁও পৌর শহরের খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। তার আসন দু-তলার ২০৭ নম্বর কক্ষে। গতকাল শনিবার গণিতপরীক্ষা শেষে দেখা গেছে হেলেনা হামাগুড়ি দিয়ে দু-তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। পেছনে তাঁর প্রবেশপত্রসহ প্রয়োনীয়কাগজপত্র হাতে আছেন তার মা ফজিলা খাতুন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে কক্ষের জানালা দিয়ে দেখা যায় নিবিষ্ট মনে উত্তর লিখে যাচ্ছে। ছোটবেলায় থেকেই তার পা দুটি অচল। বড় হওয়ার পরও শক্তি ফিরে আসেনি পায়ে।

স্কুলের যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। শারীরিক অক্ষতার জন্য পরিবার-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও হেলেনার কখনো মনে হয়নি সে পারবে না। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে স্কুল। শুরুর দিকে মাফজিলা খাতুন কোলে করে নিয়ে যেতেন। একটু বড় হওয়ার পর হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয় পরিবার। হুইল চেয়ারে করে একা একা স্কুলে যাওয়ার বায়না করলেও মা কখনো একা ছাড়েনি। হুইল চেয়ারের হাতলে সব সময় থাকতো মায়ের হাত।

এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়ি থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে। বাড়ি থেকে ইজি বাইকে করে আসে। কেন্দ্রে প্রবেশের পর হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে খুব দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যায় নিজের আসনে। অনেকেই তাকিয়ে দেখে অদম্য হেলেনার মনের জোর। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ হেলেনার। নিজের জীবনের স্বপ্ন কী জানতে চাইলে বেশ লজ্জা পায়। স্বপ্ন যদি পুরণ না হয়- এমন আশঙ্কায় বলতে চায় না নিজের স্বপ্ন। মুখেটিপে হেসে হেসে বলে, এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতে চাই। আপাতত এটুকুই স্বপ্ন।

হেলেনার মা বলেন, মেয়ে পড়াশোনায় বেশ ভালো। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়াতার স্বপ্ন। বড় হয়ে ডাক্তার হবে মেয়ে। আবার মায়ের শঙ্কাও হয়। দেড় বছর আগে মারা গেছেন হেলেনার বাবা। ছয় ভাই-বোনের সংসারে হেলেনার স্বপ্ন পূরণের পথে কোনো বাধা আসে কি না- এই শঙ্কা মায়ের মনে।

অদম্য মেধাবী হেলেনাকে দেখে মনে হয়েছে উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সে ভালো ফলাফল করবে বলে মনে হয়। যা অন্য সব শিক্ষার্থীর জন্য অনুকরণীয়।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত