চোর সমাচার

চোর সমাচার
তরুণদের নিয়ে সাময়িকীর পুরোটা ‘ইত্তেফাক’ মাঝে মাঝেই করছে। তারই ধারাবাহিকতা এ আয়োজন। প্রাণময়-সৃজনশীল নতুনরা এসে সাময়িকী

 

আরও উর্বর করে তুলুক এটাই প্রত্যাশা

 

সুন্দর করে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। মঞ্চের চারপাশে লাল নীল হলুদ রঙের কাগজ লাগানো, গেটে ফিতা বাঁধা। প্রধান অতিথির জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে সবাই এসেছে। কারণ আজকের অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটা অনুষ্ঠানই নয়, সকলের জীবিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

 

মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, আমন্ত্রিত চোর মহোদয়গণ, আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের কুখ্যাত চোর জনাব আবুল কালাম ওরফে কালু চোরা আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন। আপনারা সবাই করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানাবেন।

 

ঘোষণা শেষ হওয়ামাত্র কালু চোরা উপস্থিত হলেন। তার সঙ্গে বেশকিছু সাঙ্গপাঙ্গ আছে। সবারই একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। তা হলো মাথায় গামছাবাঁধা এবং সারা গায়ে চুপচুপে তেল। কালু চোরার হাতে কাঁচি তুলে দিল মজনু চোরা। কাঁচিটা বেশ পুরনো। তা দিয়ে ফিতা ঠিকমতো কাটছে না। মজনুকে ফিসফিস করে বলল, একটা ধারালো কাঁচি জোগাড় করতে পারলে না?

 

– ওস্তাদ, ভালো একটা কাঁচি এনেছিলাম। কিন্তু ওটাই চুরি হয়ে গেছে। মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে অনেক কষ্টে ফিতা কাটল কালু চোরা। মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার আরেক চোর ডালিম, সে ফুলের মালা পরিয়ে দিল কালু চোরার গলায়। সামনের সকল দর্শকের করতালিতে সমাবেশ মুখরিত হলো। সবার দিকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে অতঃপর আসন গ্রহণ করল সে।

 

মাইকে কালু চোরাসহ সকল চোরদের উদ্দেশে কিছু কথা বলছে। কালু চোরা সেদিকে মন না দিয়ে পাশের সিটের ডালিম চোরাকে জিজ্ঞেস করল, খরচ কেমন হয়েছে?

 

– ওস্তাদ, দেখতেই তো পাচ্ছেন। বেশ আয়োজন করা হয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের

 

স্পেশাল টিম চুরি অপারেশন চালিয়ে খরচের টাকা তুলে এনেছে। কিছু টাকা চোর কল্যাণ ফান্ডে জমা করেছি।

 

– সেখান থেকে আবার চুরি হয়ে যাবে না তো?

 

– না, ওস্তাদ। চোর কল্যাণ ফান্ডের ক্যাশিয়ার হচ্ছে সত্ চোর।

 

– ও আচ্ছা। আসলেই ও খুব ভালো চোর। আমাদের চোর জাতির অহংকার সে।

 

মজনু চোরা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ডালিম চোরাকে কিছু বলার জন্য ডাকল। হাসি হাসি মুখে মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে ডালিম চোরা তার বক্তব্য পেশ করা শুরু করল, উপস্থিত মাননীয় প্রধান অতিথি, অত্র জেলার কুখ্যাত চোর, যিনি ছিঁচকে চোর থেকে আজ চোরদের সরদার হয়েছেন, যার হাতে শতশত চোর সৃষ্টি হয়েছে, সেই মহান ব্যক্তি জনাব কালু চোরা, অন্যান্য এলাকা থেকে আগত বিভিন্ন চোর এবং নতুন পুরাতন সকল চোরদের জানাই আমার গ্রামের সকল চোরদের পক্ষ থেকে চুরিকরা লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। আপনারা জানেন, আমি ডালিম চোরা এক সময় ছিঁচকে চোর ছিলাম। হাটে বাজারে আলু, পটল, পেঁয়াজ, রসুনসহ সকল সবজি চুরি করতাম। তারপর একদিন ধরা পড়ে হাটের মানুষ আমাকে ধরে হাটে হাড়ি ভেঙে দিল। তারপর চলে গেলাম শহরে। সেখান থেকে আমাদের সবার প্রিয় ওস্তাদ কালু চোরার কাছে ট্রেনিং নিলাম। এখন আমি এই গ্রামের সবচেয়ে বড় চোর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ আমাদের গ্রামের সকল চোর ঠিকমতো চুরি করতে পারছে না। চুরি করতে গেলে ধরা পড়ে। ধরা পড়ার পর পালাতে পারে না, মাইর সহ্য করতে পারে না। এর একটাই কারণ সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব। তাই আমি এলাকার সকল চোরদের পক্ষ থেকে ওস্তাদ কালু চোরাকে অনুরোধ করছি যে আমার এলাকায় একটা ‘চোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হোক এবং সেই সঙ্গে অনুরোধ করছি তিনি যেন প্রতি মাসে দুইবার করে আমাদের সকল প্রশিক্ষণার্থী চোরদের প্রশিক্ষণ দেন।

 

জনতার মধ্যে তুমুল সাড়া পড়ল। সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাল ডালিম চোরাকে।

 

উপস্থাপক এবার বললেন, ধন্যবাদ ডালিম চোরাকে। এবার আমাদের মাঝে বক্তব্য দিতে আসবেন বিশেষ অতিথি জনাব রমিজ উদ্দিন ওরফে রমিজ চোরা।

 

রমিজ চোরাও মঞ্চে উঠে প্রথমে সবাইকে সালাম দিলেন। কিছুক্ষণ কালু চোরার চরিত্রের বিশেষ বিশেষ গুণের বর্ণনা দিলেন। কালু চোরা খুব খুশি। এরকম সমাদর সে পাওয়ার যোগ্য। সে জীবনে অনেক সংগ্রাম করে এই পর্যন্ত এসেছে।

 

ভাইয়েরা আমার, আজ অতীব আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের মাঝে আমাদের শ্রদ্ধেয় গুরু, ওস্তাদ কালু চোরা উপস্থিত। আপনারা সবাই জানেন বাংলাদেশ একটা চোরের দেশ। কিন্তু এদেশে আমাদের মতো চোরদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়া হয় না। আমরা কী চুরি করি? গরু, ছাগল, ধান, পাট, গম হাসমুরগি ইত্যাদি। কিন্তু এদেশে অনেক বড় বড় নেতারা দেশের জনগণের জীবন চুরি করে। তবুও তারা অনেক সম্মান পায়। আমরা জীবিকার জন্য চুরি করি। কিন্তু ভদ্রসমাজের অনেকে অন্যায়ভাবে চুরি করে। চাকরিজীবিরা তাদের কাজে ফাঁকি দেয়, ওটাও চুরি। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের ঠিকমতো পড়ায় না, ওটাও চুরি। কিন্তু ‘চোর কল্যাণ সংঘ’-এর প্রতিটা চোর একেকটা আদর্শ। আমাদের মধ্যে আছে সত্ চোর যে সত্ভাবে চুরি করে। গরুচোর, মুরগিচোর এরা এগুলো ছাড়া অন্যকিছু চুরি করে না। সততার সাথে চুরিবিদ্যাকে কাজে লাগায়। আমি চাই এদেশের প্রতিটা চোর আদর্শ চোর হোক। জাতির সম্মান বৃদ্ধি করুক। আর সরকারের কাছে অনুরোধ, সরকারি চোরদের যেমন চুরি করার অধিকার আছে, আমাদের মতো স্বাধীন চোরদেরও সুযোগসুবিধা দেওয়া হোক। এই বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 

হাততালিতে আবার মুখরিত হলো সমাবেশ। উপস্থাপক মাইকে ঘোষণা করল, সুপ্রিয় দর্শকচোরা, এবার আপনাদের সামনে মূল্যবান বক্তব্য নিয়ে আসছেন আজকের প্রধান অতিথি জনাব আবুল কালাম ওরফে কালু চোরা।

 

মাইক্রোফোন হাতে নেওয়ার আগে সামনের সকল চোরদের উদ্দেশে আরেকবার হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। গলা খাঁকারি দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করলেন, আজ এখানে উপস্থিত অত্র এলাকার সকল চোর, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ডালিম চোরাসহ সবাইকে আমার ভালোবাসা রইল।

 

আপনারা আমাকে সম্মান দিয়ে আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি তার জন্য খুবই আপ্লুত, আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ।

 

 

চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড় ধরা। জ্ঞানীগুণীজন বলে গেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ বেশিরভাগ চোর চুরি করে ধরা পড়ে প্যাঁদানি খায়, যা চোরদের সম্মানহানি ঘটায়। আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে ‘চোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ তৈরির জন্য। আমি কথা দিলাম, এই বছরের মধ্যেই এই এলাকায় একটা চোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গঠন করব। আমি প্রতি মাসে একদিন এসে প্রশিক্ষণ দিব। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক চোর এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসবে। এবং কথা দিচ্ছি সরকারের পক্ষ থেকে এই চোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনুমোদন পাইয়ে দিব।

 

দর্শকের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা কাজ করছে। সবাই হইহই করে উঠল। হাত নেড়ে তাদের শান্ত করে আবার বলা শুরু করল কালু চোরা, আমি সত্যিই গর্বিত যে আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার খরচ চুরি করে ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা চোর, আমাদের সবকিছুর মধ্যে চুরি থাকতে হবে। ভাবছি আমার চোর জীবনের কাহিনি নিয়ে আত্মজীবনী লিখব। আমি একসময় ছিঁচকে চোর ছিলাম। কারও বাড়ির পেয়ারা, বাজারের কোনো দোকান থেকে বিস্কুটের প্যাকেট চুরি করতাম। কোনোদিন ধরা পড়িনি আমি। আপনারা জেনে অবাক হবেন, পৃথিবীতে অনেক মহাপুরুষ, বিখ্যাত লোক আছেন, যারা জীবনে চুরি করেছেন। এবং তাদের চুরির কথা অকপটচিত্তে স্বীকার করেন। ভারতের মহাত্মা গান্ধী একবার তাঁর বাবার পকেট থেকে চুরি করেছিলেন। বাংলাদেশের একজন বড় নেতা নিজের বাড়ির গোলার ধান চুরি করে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দেন। চোররা খারাপ নয়, চুরিবিদ্যা খারাপ নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করার পর বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি।’

 

সাধারণ জনগণের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করে নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু আমাদের মতো আদর্শ চোরদের পালিয়ে বেড়াতে হয় পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু আফসোসের বিষয় বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে অনেক চোর আছে। এবং এরা হচ্ছে ছ্যাঁচড়া চোর।

 

দেশের আনাচেকানাচে যতপ্রকার চোর আছে, সবাইকে এক ছাদের নিচে দেখতে চাই। সারাদেশের সকল চোর ‘চোর কল্যাণ ফান্ড’-এর জন্য ট্যাক্স দিবে এবং কেউ যদি না দিতে চায়, তাহলে তার বাসা থেকে চুরি করা হবে। কোনো চোর বিপদে পড়লে অন্যান্য চোর তাকে টেনে তুলবে, সাহায্য করবে। আর আইনি সমস্যায় পড়লে আমি তাকে সাহায্য করব।

 

তবে একটা দুঃখের কথা, দুঃখের সাথে বলতে হয়, বাংলাদেশে এখন একধরনের মুখোশধারী চোর আছে। তারা প্রকাশ্যে চুরির কথা স্বীকার করে না। তারা হলো সাহিত্য চোর। আমি একসময় লিখতাম। কিন্তু আমার লেখাও চুরি হয়ে যায়। সেই লেখা ডায়েরি দিয়ে বাংলাদেশের একজন কবি বিখ্যাত হয়েছেন। আমার সেই কবিতা দেশ-বিদেশের অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।

 

যা-ই হোক, বক্তব্য আর দীর্ঘ করব না। আজকের অনুষ্ঠানের স্লোগান, সকল চোর এক হোক।

 

উপস্থাপক বলল, ধন্যবাদ ওস্তাদ কালু চোরাকে। এবার প্রধান অতিথি কালু চোরা এলাকার বিশেষ

 

কিছু চোরদের হাতে পুরস্কার তুলে দিবেন। প্রথমে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি সেচার নান্টু মিয়াকে।

 

কাঁচুমাচু করে মঞ্চে উঠল নান্টু মিয়া। তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিল কালু চোরা। উপস্থাপক জিজ্ঞেস

 

করল, আপনি কী চুরি করেন এবং কীভাবে চুরি করেন?

 

নান্টু মিয়া বলল, আমি মানুষের টাকাপয়সা, সোনাদানা, জিনিসপাতি চুরি করি না। আমি শুধু ভাত

 

চুরি করি। আমার পরিবার-পরিজন নেই। আমাকে কেউ কোনো কাজকাম দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে

 

রাতের অন্ধকারে মানুষের বাড়িতে গিয়ে রান্নাঘর থেকে ভাত চুরি করে খাই। খাওয়ার পর

 

থালাবাসন ধুয়ে রেখে দেই। পরেরদিন গেরস্থের বাড়ি গিয়ে বলে আসি যে আমি ভাত চুরি করে

 

খেয়েছি।

 

– বাহ, দারুণ তো। কোনো মজার ঘটনা ঘটেছে আপনার চুরি জীবনে?

 

– একবার এক বাড়িতে চুরি করে ভাত খাচ্ছি। তখন একটু শব্দে বাড়ির মহিলা উঠে চলে এলেন।

 

তারপর আমি বললাম যে তিনদিন ধরে না খেয়ে আছি। উনি আমাকে নিজের হাতে ভাত বেড়ে

 

দিলেন। খাওয়া শেষ করে বললাম, মিথ্যা বলেছি। তিন দিন না, দুই দিন ধরে না খেয়ে ছিলাম। এটাই

 

জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা।

 

– কখনো ধরা পড়ে মাইর খেয়েছেন?

 

– মাইর খাই নাই তবে একটা কুত্তার তাড়া খেয়েছিলাম।

 

– ধন্যবাদ। এবার পুরস্কার নিতে আসবে বিশিষ্ট গরুচোর নারায়ণ।

 

মঞ্চে উঠে এল বয়স্ক নারায়ণ। তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দিল কালু চোরা। উপস্থাপক জিজ্ঞেস করল,

 

আপনি কতগুলো গরু চুরি করেছেন?

 

– চুরি করি কিন্তু হিসেব করি না। তয় প্রায় পঞ্চাশটার বেশি চুরি করেছি।

 

– সব ধরনের গরু চুরি করেন?

 

– না। আমি গাইগরু চুরি করি না। গাইগরু মায়ের জাত। আর গরিবের বাড়িতে চুরি করি না।

 

– কোনো মজার ঘটনা?

 

– চুরি করার সময় খেয়াল করে দেখি যে ওটা গাইগরু নাকি ষাঁড় নাকি বলদগরু। তো একবার চুরি

 

করে আনার পর দেখলাম ভুল করে গাইগরু চুরি করেছি। পরদিন গেরস্থের বাড়ি গিয়ে ফেরত

 

দিলাম। বললাম যে আপনার গরু ছুটে আমার বাড়ি চলে এসেছে। ফেরত দিতে এসেছি।

 

– কখনো মাইর খেয়েছেন?

 

– একবার একটা ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি। ষাঁড়টা খারাপ ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর ষাঁড়টা

 

আমাকে গুঁতা দিল। তাড়া খেয়ে গেরস্থের বাড়ি চলে আসি। গরুর মালিক বুঝে ফেলে যে আমি চুরি

 

করতে এসেছি। তারপর লোকজন ডেকে কী যে মাইর দিল! এখনো অমাবস্যা পূর্ণিমা এলে গা ব্যাথা

 

করে।

 

– ধন্যবাদ। এবার মঞ্চে পুরস্কার নিতে আসবে বউচোর রোমিও।

 

বউচোরের নাম শুনে অবাক হলো কালু চোরা। অবাকের রেশ কাটার আগেই মঞ্চে উঠে এল

 

বউচোর। পুরস্কার নেওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, বউ চুরি করে কীভাবে?

 

– আসলে বউচুরি বলা ঠিক হবে না। বলতে পারেন ভাগিয়ে নিয়ে যাই।

 

– কীভাবে?

 

– কারও বউকে ভালো লাগলে তার সাথে প্রেম করি। সুযোগ বুঝে তাকে নিয়ে পালিয়ে যাই।

 

– এই পর্যন্ত কয়জনের বউ চুরি করেছেন?

 

– তেইশ।

 

– সবগুলো আছে?

 

– না। তার মধ্যে তিনটারে আমার কাছ থেকে অন্যরা চুরি করে নিয়ে গেছে। দুইটা তার বাপের বাড়ি

 

চলে গেছে।

 

– কোনো মজার ঘটনা?

 

– প্রতিটা চুরিই আমার কাছে মজার।

 

– বিশেষ কারও বউ চুরি করেছেন?

 

বউচোর রোমিও এদিকওদিক তাকিয়ে বলল, আজকের প্রধান অতিথি জনাব কালু চোরার দ্বিতীয়

 

বউকে চুরি করেছিলাম। সে এখনো আমার সংসার করছে।

 

কালু চোরা লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল। চোর হয়েছে তবুও লজ্জার মাথা তো খায়নি।

 

উপস্থাপক বলল, ধন্যবাদ। এবার মঞ্চে পুরস্কার নিতে আসবে সিঁধেলচোর ধলা মিয়া।

 

তেল চুপচুপে শরীরে মঞ্চে উঠল সিঁধেলচোর ধলা মিয়া। গায়ের রঙ কুচকুচে কালো। সেই কালো

 

মুখে চকচকে হাসি। অর্থাত্ চকচক করা দাঁতের হাসি বের হয়ে আছে। কালু চোরার হাত থেকে

 

উপহার নেওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, চুরি জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?

 

– একবার এক বাড়িতে চুরি করার জন্য ঢুকেছি। হঠাত্ শুনি ওই বাড়ির স্বামীস্ত্রী দুজনে ঝগড়া করছে

 

মাঝরাতে। কী বিপদ! নড়াচড়া করতে পারছি না। তাদের ঝগড়া থামল ফজরের আজানের পর।

 

তখন চুরি করে পালানো সম্ভব না। তাই চুরি না করেই চলে গেলাম।

 

– কখনো কোনো সমস্যা হয়েছে?

 

– এখন তো বেশি চুরি করতে পারি না। কারণ প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে এখন পাকা মেঝে। সিঁদ কাটতে

 

পারি না।

 

– ধন্যবাদ। এবার মঞ্চে আসবে জমজ দুই ভাই। একজন ছাগল চোর, আরেক জন মুরগিচোর।

 

 

দুই ভাই একসঙ্গে এসে উপহার নিয়ে সাক্ষাত্কার দিয়ে চলে গেল। এভাবে আরও বেশকিছু

 

চোরকে পুরস্কার দেওয়া হলো।

 

এরপর সমাপনী বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বায়ক মঞ্চে উঠল। বেশ গুরুগম্ভীর ভাষণ দেওয়া শুরু

 

হলো। সকল চোর ভাইদের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বলতে চাই, চুরি করা একটা শিল্প। আর প্রত্যেকটা

 

চোরই একেকজন শিল্পী। এই শিল্পীদের কদর করা উচিত। ধন্যবাদ সবাইকে।

 

এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে এক শিল্পী গান গাইতে উঠল। সেও গান চোর।

 

বিভিন্ন শিল্পীদের গান চুরি করে। এমনকি কণ্ঠও নকল অর্থাত্ চুরি করে। মঞ্চে উঠে সে গান ধরল

 

নচিকেতার বিখ্যাত গান—

 

ভিড় করে ইমারত আকাশটা ঢেকে দিয়ে চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ

 

ছোটছোট শিশুদের শৈশব কেড়ে নিয়ে গ্রন্থকীটের দল বানায় নির্বোধ।

 

এরপর চুরি গেলে বাবুদের ব্রিফকেস

 

অথবা গৃহিণীদের সোনার নেকলেস

 

সকলে সমস্বরে একরাশ ঘৃণা ভরে

 

চিত্কার করে বলে চোর চোর চোর!!!
গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত