শিয়াল পণ্ডিত, বাঘ এবং কাঠুরিয়ার গল্প

শিয়াল পণ্ডিত, বাঘ এবং কাঠুরিয়ার গল্প

অনেক অনেকদিন দিন আগের কথা। তখন বাঘ, শিয়াল আর মানুষেরা একি ভাষায় কথা বলত। একদিন শিয়াল পণ্ডিত দেখে এক কাঠুরিয়া বনের মাঝে বসে কাঁদছে আর মাথা হাত দিয়ে চাপড়াচ্ছে। শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘কাঠুরিয়া ভাই, কি হয়েছে?’

কাঠুরিয়া কাঁদো কাঁদো মুখে বলে, ‘কি আর বলব ভাই, আমার ছেলেটার হয়েছে মরণ জ্বর। কবিরাজ মশাই বলেছে এই অসুখের মাত্র একটা ওষুধই আছে।’

একথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে কাঠুরিয়া।

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘কি সেই ওষুধ?’

কাঠুরিয়া বলে, ‘আমি বলতে পারব না, এই ওষুধ আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘বলই না ভাই, যে করেই হোক সেই ওষুধ আমি এনে দেবই।’

কাঠুরিয়া বলে, ‘তাহলে শোন ভাই। এ অসুখের একমাত্র ওষুধ হচ্ছে বাঘের দুধ। বাঘ মামার কাছে যদি আমি এই আবদার নিয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত ঘাড় মটকে দেবে আমার। আবার না গেলে আমার ছেলেটা মরে যাবে।’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘তুমি চিন্তা করো না, কালকেই তুমি বাঘের দুধ পেয়ে যাবে।’

কাঠুরিয়া মনে আশা নিয়ে বাড়ি ফিরল।

এদিকে শিয়াল পণ্ডিত বাঘ মামার কাছে যেয়ে বলে, ‘বাঘ মামা, বাঘ মামা! শুনেছ কি ঘটনা

ঘটেছে?’

বাঘ মামা বলে, ‘নতুন আবার কি ঘটল রে ভাগ্নে?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা শুনলাম, এক কাঠুরিয়ার নাকি একটা খুব সুন্দর মেয়ে আছে। মেয়েটার নাকি বিয়ে দেবে কিন্তু বিয়ের জন্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। তুমি বিয়ে করে ফেল মামা। মেয়েটা নাকি সেইরকম রূপবতী। পুরো রাজ্যে মেয়ের রূপের গুণ-গান।’

বাঘ মামা বলে, ‘কি যে বলিস, কত বীর আছে এরকম রূপবতীকে বিয়ে করার জন্য!’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘দেন মোহরের কথা শুনে বীরেরা সব পালিয়েছে মামা। তোমার মত বীর কি এ জগতে আছে মামা?’

বাঘ মামা বলে, ‘কি এমন দেন মোহর রে হতচ্ছাড়া?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘বাঘের দুধ মামা।’

বাঘ মামা বলে, ‘তাই বলি। তাহলে বিয়েটা এবার করেই ফেলি, কি বলিস?’

শিয়াল পণ্ডিত ভাবল, এইতো সুযোগ।

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘এমন সুন্দরী মেয়ে আর পাবে না মামা, এবার বিয়েটা করেই ফেল। তবে মামা দেন মোহর কিন্তু কালকেই দিতে হবে।’

বাঘ মামা বলে, ‘ও তুই চিন্তা করিস না ভাগ্নে। কালকেই পেয়ে যাবি।’

পরেরদিন শিয়াল পণ্ডিত বাঘ মামার কাছে যেয়ে দেখে বাঘ মামা ঠিকই বাঘের দুধ জোগাড় করে রেখেছে। শিয়াল পণ্ডিত সেই দুধ নিয়ে কাঠুরিয়াকে দিয়ে আসে। বাঘের দুধ খেয়ে কাঠুরিয়ার ছেলেও সুস্থ হয়ে উঠল।

এদিকে শিয়াল পণ্ডিত লাপাত্তা। বাঘ মামাতো তাকে বাগেই পাচ্ছিল না। তাই একদিন বাঘ মামা শিয়াল পণ্ডিতের বাড়িতে গিয়ে হাজির।

শিয়াল পণ্ডিতকে বাঘ মামা বলে, ‘কি রে হতচ্ছাড়া, দেন মোহর নিলি, আমার বিয়ে কবে দিবি?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘চল মামা আজকেই চল।’

বাঘ মামাকে সাথে নিয়ে শিয়াল পণ্ডিত কাঠুরিয়ার বাড়িতে রওনা দিল। কাঠুরিয়ার বাড়ির আঙিনায় কাছে গিয়ে শিয়াল পণ্ডিত দেখে কাঠুরিয়ার ছেলে খেলা করছে।

আর কাঠুরিয়া হাতে কুঠার নিয়ে রাগে ফুঁসছে আর বলছে, ‘এ কি হয়ে গেল আমার! হতচ্ছাড়া বাঘের দুধ খেয়ে আমার সুন্দরী মেয়েটা ছেলে হয়ে গেল। হতচ্ছাড়া বাঘটা আসুক। আজকে বাঘের একদিন না হয় আমার একদিন।’

বাঘ মামাতো এ কাণ্ড দেখে শিয়ালকে নিয়ে এক ছুটে বনে চলে গেল।

বাঘ মামা হাঁপাতে বলে, ‘কি হয়ে গেল রে ভাগ্নে? কাঠুরিয়া তো আমাকে মারার জন্য খুঁজছে।’

শিয়াল পণ্ডিতও হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘বাঘের দুধ মামা, বাঘের দুধ। বাঘের দুধের যে এত শক্তি তা তো জানতাম না।’

বাঘ মামা বলে, ‘আমিও জানতাম না রে হতচ্ছাড়া।’

………………………………………সমাপ্ত …………………………………….

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত