ভুল থেকে শেখা

ভুল থেকে শেখা

টমাস আলভা এডিসন গবেষণা করছেন, তিনি বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবন করার চেষ্টায় রত। বালবের ভেতরের তারটা কিসের হবে, তিনি সেটা নিয়ে মত্ত। একটার পর একটা ধাতু, যৌগ, সংকর দিয়ে তিনি ফিলামেন্ট বানাতে লাগলেন। দুই হাজার রকমের তার বানানো হলো। একটাও কাজে লাগল না।

তাঁর সহকারী বলল, আমাদের এত দিনের চেষ্টা পুরোটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে গেল। আমরা কিছুই শিখতে পারলাম না।

এডিসন বললেন, আমরা অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি যে দুই হাজার রকমের তার দিয়ে ভালো বৈদ্যুতিক বাতি হয় না।

জীবন কী?

একজন শিক্ষক তাঁর ক্লাসরুমে পড়াচ্ছেন। তিনি একটা খালি বয়াম টেবিলের ওপরে রাখলেন। তারপর তার ভেতরে ঢোকালেন কতগুলো বড় পাথরের টুকরা। বয়ামটা ভরে গেল। তিনি বললেন, ‘ছাত্ররা, দেখো তো, আর কোনো পাথরখণ্ড ঢুকবে কি না?’ ‘না, স্যার।’ ‘তাহলে বয়ামটা ভরে গেছে, কী বলো?’ ‘জি, স্যার।’ এবার শিক্ষক কতগুলো ছোট নুড়ি বয়ামটাতে ঢালতে লাগলেন। নুড়িগুলো পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে গেল। তিনি বললেন, ‘এবার ভরেছে। কী বলো?’ ‘জি, স্যার।’ তিনি এবার বালু ঢালতে লাগলেন। পাথর আর নুড়ির ফাঁকে ফাঁকে বালু ঢুকতে লাগল এবং বয়ামটাকে পূর্ণ করে তুলল। শিক্ষক বললেন, ‘আচ্ছা, এবার আমরা পুরো ব্যাপারটাকে উল্টো করে করি। প্রথমেই আমরা যদি বালু দিয়ে বয়ামটা পূর্ণ করে ফেলি, তাহলে কী হবে?’ তিনি বালু দিয়ে পাত্রটা পূর্ণ করলেন। তারপর আর নুড়ি কিংবা পাথর ঢোকানোর জায়গা রইল না। তিনি বললেন, ‘এ থেকে আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস শিখব। এই যে পাত্রটা দেখছ, এটা হলো আমাদের জীবন। এই যে বড় বড় পাথরখণ্ড, এগুলো হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদের পরিবার, বাবা-মা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের শিক্ষা। আর নুড়িগুলো হলো আমাদের বিষয়সম্পত্তি, আমাদের গাড়ি-বাড়ি, আমাদের টেলিভিশন, আমাদের টেলিফোন, আমাদের বাগান। আর বালু হলো বাকি সবকিছু, আমাদের জীবনে আর যা যা করতে হয়। প্রথমেই যদি আমরা ছোট ছোট জিনিস দিয়ে জীবনটাকে ভরে ফেলি, তাহলে বড় কাজগুলো করা হবে না। কাজেই সব সময় পরিবারকে সময় দেবে, বাবা-মায়ের যত্ন নেবে, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে, লেখাপড়া করবে। তারপর গাড়ি-বাড়ি, কম্পিউটার-টেলিফোন এসবের দিকে নজর দেবে।’

এক ছেলে দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার, বয়ামটা এখনো ভরেনি। আপনি যদি এর মধ্যে পানি ঢালেন, পানি ভরবে।’
ঠিক তাই। তিনি পাথরখণ্ড, নুড়ি আর বালুভরা পাত্রটিতে এক কাপ কফি ঢাললেন। কফিটা পাত্রে ঢুকে গেল।
‘এই কফিটা হলো আনন্দ। মানুষের জন্য কিছু করা। সেবার ব্রত। তুমি যা-ই করো না কেন, জীবন আনন্দময়। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য সর্বদাই কিছু না কিছু করার সময় তুমি বের করতে পারবে। মানুষের উপকারে আসতে পারবে। তাতেও তুমি অনেক আনন্দ পাবে। জীবনটাকে যত আঁটোসাঁটো মনে হোক না কেন, যতই তুমি ব্যস্ত থাকো না কেন, জীবনকে উপভোগ করো। আর যেন সবচেয়ে ভালোভাবে জীবনটাকে আনন্দপূর্ণ করে তোলা যায়, অপরের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে।’
আশা কোরো না, চেষ্টা করো
জন বিমানবন্দরে গেছে। তার এক বন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাতে। বন্ধুর ফ্লাইট আসবে আরও খানিকক্ষণ পরে। জনকে অপেক্ষা করতে হবে। সে একটা চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছে। এই সময় এক ভদ্রলোক দুটো ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলেন। তিনি এগিয়ে গেলেন, বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর পরিবারের দিকে। তিনি প্রথমেই একটা চার-পাঁঁচ বছরের ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘বাবা, কেমন আছ?’
ছেলে বলল, ‘বাবা, আমরা তোমাকে খুব মিস করেছি।’
বাবা বললেন, ‘আমিও খুব মিস করেছি তোমাদের।’
এরপর তিনি বছর দশেকের একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। বাবা, তুমি কেমন আছ।
ভালো আছি বাবা। তুমি এসেছ, আরও ভালো থাকব।
এরপর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলার কোলের বাচ্চাকে নিজের কোলে তুলে নিলেন। চুমু দিলেন অনেক কটা।
তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে বললেন, ‘শেষটা কিন্তু কম নয়। এইটাই আসল। আই লাভ ইউ।’
জন তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভদ্রলোকের সঙ্গে তার চোখাচোখি হলো। জন সলজ্জ ভঙ্গিতে বলল, ‘আপনাদের সুখী পরিবারটিকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি আশা করি, আমার পরিবারটাও এই রকম সুখের হবে।’
ভদ্রলোক হেসে বললেন, ‘আশা করলে হবে না, তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ডোন্ট হোপ, ডিসাইড।’

সুন্দর করে কথা বলো
এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি রোদ-ঝলমলে এক সকালে একটা সুন্দর ভবনের সিঁড়িতে বসে আছেন। তাঁর সামনে একটা কাগজে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘আমি অন্ধ, আমাকে একটু সাহায্য করুন।’ মার্কেটিংয়ের একজন লোক সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন। তিনি দেখলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিটির সামনের হ্যাটটায় মাত্র একটা আধুলি পড়েছে।
তিনি ভবনের কাজ সেরে ঘণ্টা দুয়েক পরে নামলেন। দেখলেন, ওই একটা আধুলিই পড়ে আছে টুপিতে। তিনি তখন কাগজের বোর্ডটা হাতে নিয়ে নিজের পকেট থেকে মার্কার কলম বের করে কাগজের উল্টো পিঠে লিখলেন, ‘আজকের দিনটা খুব সুন্দর। কিন্তু আমি তা দেখতে পারছি না।’
তিনি কাজে বেরিয়ে গেলেন। ঘণ্টা দুয়েক পরে ফিরে এসে দেখলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিটির টুপিটা টাকায় টাকায় ভরে গেছে।

ওপরের গল্পগুলো ইন্টারনেট থেকে নেওয়া। উপদেশমূলক গল্প। বিউটিফুল স্টোরিস সার্চ দিয়ে আমি এসব পেয়েছি। গল্পগুলো আমার ভালো লেগেছে, তাই আমি আপনাদের সঙ্গে ‘শেয়ার’ করলাম। আমরা হয়তো আমাদের নিজেদের জীবনে এগুলো থেকে কোনো না কোনো শিক্ষা নিতে পারব।

আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এ থেকে যেসব শিক্ষা নেবেন বলে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি:

১. আমরা কোনো ভুল করি না, কাজেই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনো কিছু নেই।
২. জীবন একটা পাত্র, যেটাতে যা যা পারা যায়, সবই ভরতে হয়। ক্ষমতায় থাকার পাঁচ বছর তাই চোখ-কান বন্ধ করে খালি ভরো আর ভরো। এখন ভরার সময়। উপভোগের সময় পরেও পাওয়া যাবে।
৩. আশা করে থেকে কোনো লাভ নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং করো।
৪. সুন্দর করে বলে কোনো লাভ নেই। বিলবোর্ড দখল করে কালো কালো ডিজাইন দিয়ে ভরে দাও। ধমকের সুরে কথা বলো।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত