তিন লোভী বন্ধু ও হজরত ঈসা আ: -ইকবাল কবীর মোহন

তিন লোভী বন্ধু ও হজরত ঈসা আ: -ইকবাল কবীর মোহন

হজরত ঈসা (আ)-এর জামানার এক ঘটনা। একদিন তিন বন্ধু একসাথে দূরে কোথাও হেঁটে যাচ্ছিল। এরা বেশ দুষ্ট প্রকৃতির ছিল। হাঁটতে হাঁটতে তারা এক স্থানে এসে থমকে দাঁড়াল। রাস্তার ওপর পিন্ডের মতো একটা বস্তুর ওপর তাদের চোখে পড়ল। সূর্যের আলো পড়ে পিন্ডটি চিকচিক করছিল। এ জন্য বন্ধু তিনজন বেশ কৌতূহলী হয়ে উঠল। তারা পিন্ডটির কাছে আসতেই বিস্মিত হলো। এ যে স্বর্ণপিন্ড। তাই তাদের খুশি আর কে দেখে! একেবারে চকচকে সোনার পিন্ড হাতে পেয়ে বন্ধু তিনজন নেচে উঠল।

বন্ধু তিনজন ছিল অতিশয় লোভী। তাই স্বর্ণপিন্ড পাবার পর তিনজনই মনে মনে দুরভিসন্ধি আঁটতে লাগল। এরা সবাই স্বর্ণপিন্ডটি একাই আত্মসাৎ করার ফন্দি আঁটছিল। তবে কেউ কারো কাছে তার এ গোপন ইচ্ছা প্রকাশ করল না। বন্ধু তিনজন সামনে পথ চলতে লাগল। অনেক দূর পথ চলতে চলতে এক সময় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ইতোমধ্যে তাদের প্রচন্ড খিদেও পেল।

এদের একজন তো বলেই বসল, ‘ভাই। আর হাঁটতে পারছিনে। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। একটু থাম, পেটে কিছু দানাপানি দিয়ে নিই।’

এরপর দুই বন্ধু আরেকজনকে বলল, ‘ঠিকই বলেছ ভাই। খিদের চোটে আমাদেরও পেট জ্বলে যাচ্ছে। ঠিক আছে তুমি এখানে বস। সোনার পিন্ডটা তোমার কাছে যত করে রাখ। আমরা দু’জন বরং খাবার খুঁজে দেখি। আশা করি, ধারে কাছে কোথাও হয়তো খাবার পেয়ে যাবো।’

এ কথা বলেই দুই বন্ধু বেরিয়ে পড়ল। অনেক দূর পথ হাঁটল তারা। হাঁটতে হাঁটতে খানিক দূরে গিয়ে এক বাজারের সন্ধান পেল তারা। ওরা সেখানে খাবার কিনছিল আর নিজেরা স্বর্ণপিন্ড পাবার জন্য ফন্দি আঁটছিল। একজন বলল, ‘চল, আমরা খাবারে বিষ মিশিয়ে নেই। ফিরে গিয়ে বন্ধুটিকে বলব, আমরা খাবার খেয়ে এসেছি। তুমি এ খাবার খেয়ে নাও, বন্ধু। বিষ  মেশানো খাবার যেই না খাবে, আর অমনি সে মারা যাবে। তারপর আমরা দামি সোনার পিন্ডটি দু’জনে সমান সমান ভাগ করে নেবো।’

যেই ফন্দি সেই কাজ। বিষ মেশানো খাবার নিয়ে এরা বন্ধুর নিকট ফিরে এলো। এ দিকে তৃতীয় বন্ধুও এতক্ষণ বসে বসে একই কথা ভাবছিল। কিভাবে সোনার পিন্ডটি হাত করা যায়- এটা নিয়ে সেও নানা বুদ্ধি আঁটছিল। বন্ধুরা ফিরে আসার ফাঁকে সে ফন্দি ঠিক করে ফেলল। সে তার বন্ধু দু’জনকেই মেরে ফেলার কৌশল ঠিক করল।

ততক্ষণে বন্ধুরা খাবার নিয়ে ফিরে এলো। এসেই তারা বলল, ‘আরে বন্ধু, খুব যে দেরি হয়ে গেল। খিদেয় খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? গরম গরম খাবার এনেছি। এই নাও হালুয়া রুটি। নাও নাও, পেট ভরে তা খেয়ে নাও।’

বন্ধুদের কথা শেষ হতে না হতেই তৃতীয় বন্ধুটি পকেট থেকে একটি বিষাক্ত চাকু বের করল। কিছু একটা বোঝার আগেই সে চাকুটি একে একে বন্ধুদের পেটে বসিয়ে দিল। বিষাক্ত চাকুর আঘাতে সে বন্ধুদের কাবু করে ফেলল। দু’জনই ঝটপট মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগল। দেখতে দেখতে ক্ষণিকের মধ্যেই মারা গেল দুই বন্ধু।
এবার তৃতীয় বন্ধুটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। আহা! কী খাঁটি সোনারে, বলতে বলতে সে সোনার পিন্ডে চুমু খেতে লাগল। এদিকে খিদের জ্বালায় ওর পেটও যে জ্বলছিল। বন্ধুরা খাবার এনেছে। তাই বন্ধুদের আনা হালুয়া রুটি সে গপাগপ খেয়ে ফেলল। রুটি খেতে দেরি, খাবারের বিষের কামড় তার দেহে আক্রমণ করতে দেরি হলো না। নিমেষেই তার সারা শরীর বিষের আক্রমণে নীল হয়ে গেল। দেখতে দেখতে তার দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা গেল। তৃতীয় বন্ধুর নিথর দেহও পড়ে রইল মৃত বন্ধুদের পাশে। আর স্বর্ণপিন্ডটিও মৃত দেহের পাশেই পড়ে রইল।

সেই পথ দিয়েই কোথাও হেঁটে যাচ্ছিলেন হজরত ঈসা (আ)। তিন তিনটে লাশ ও স্বর্ণের পিন্ড তাঁর চোখে পড়ল। হজরত ঈসা (আ) ঘটনা দেখে অবাক হলেন। লোকগুলোর কান্ড দেখে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এবার তিনি তাঁর সঙ্গীদের বললেন,

‘দেখলে তোমরা, লোভের করুণ পরিণতি? তিন তিনটে লোভী লোক মরে পড়ে আছে। খুব দুঃখ হচ্ছে এদের লোভ দেখে। অথচ স্বর্ণখন্ড এদের কারো ভাগ্যেই জুটল না। কী হতভাগাই না এরা?’

কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।

গল্পের বিষয়:
শিক্ষনীয় গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত