দেখা হবে

দেখা হবে

আকাশটা আজ মেঘলা দেখাচ্ছে মনে হয় বৃষ্টি হবে।এই বর্ষাকালে বুঝা মুশকিল কখন বৃষ্টি হয় আর কখন রোদ ওঠে।

দেখা যাচ্ছে অনেক রোদ তারই মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি আবার রোদেলা আকাশে হঠাৎ ই বৃষ্টির হাতছানি।

সবকিছুই ওপর আল্লাহর হাতে কখন কি হয় বুঝা মুশকিল।

মনে দুটানা ভাব রেখেই রাহাত সাইকেল নিয়ে বের হলো রাজ্জাক স্যারের কোচিং সেন্টারের দিকে।

যেতে তো তাকে হবেই কোচিং শেষে যে হৃদয় ও নিলয়কে পড়িয়ে আসতে হবে।
,
মাস শেষে এ থেকে যা পায় তা দিয়েই রাহাতের রুম ভাড়া,খাওয়া-দাওয়ার সকল খরচই নিজেকেই বহন করতে হয়।

যেদিন থেকে অর্নাসে ভর্তি হয়েছে সেদিন থেকেই নিজের সম্পূর্ন খরচের দায়ভারটা নিজেকেই সামলাতেই হয়।

কৃষিকাজ করে বাবা আর কতো দিবে,সংসারটাও তো চালাতে হয়।এই তো এভাবেই চলছে রাহাতের জীবন।
,
মেঘলা আকাশ দেখে রাহাত সঙ্গে ছাতাটা নিয়ে নিলো।যাওয়ার সময় বৃষ্টির দেখাই পেলো না।

কোচিং,প্রাইভেট শেষে সাইকেলে করে রাহাত বাড়ি ফিরছিলো আর ভাবছে শুধু শুধু ছাতাটা বোঝা বয়ে নিয়ে এলাম বৃষ্টি তো এলোই না।

একথা বলতে না বলতেই প্রচন্ড বেগে বাতাস বয়তে শুরু করলো আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আসা শুরু করলো।

মাথার ওপর ছাতাটা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে ওঠেছে তাই কোনো উপায়ন্তর না দেখে রহিম চাচার বারান্দায় ওঠলো।

একটু পরেই অটো রিক্সায় করে একটা মেয়ে এসে এই বারান্দায়ই ওঠলো।আধা ঘন্টা হয়ে গেলো বৃষ্টি যেনো থামছেই না।
,
রাতও তো ভালোই হলো আটটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।

এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সহজে ছাড়তেও চায় না তবে বাতাসের পরিমানটা অনেকটাই কমেছে।
ঐ দিকে মেয়েটা দাঁড়িয়েই আছে।রাহাত মেয়েদের সাথে তেমন কথাও বলে না।তাই কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলার লোভটা যেনো রাহাতও আজ সামাল দিতে পারলো না।

হঠাৎ করে রাহাত বলেই ওঠলো ,
-আপনি কোথায় যাবেন?
-জি, এই তো চেয়ারম্যান বাড়ি।ঐটা আমার মামার বাড়ি।
-ও আচ্ছা। যদি কিছু মনে না করেন, আমার ছাতাটা নিয়ে যেতে পারেন।
– আপনি কিভাবে যাবেন?
-আমার বাড়ি সামনেই আমি যেতে পারবো।আর কালকে না হয় আমি গিয়ে ছাতাটা নিয়ে আসবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।ধন্যবাদ আপনাকে।,
পরের দিন রাহাতের মনেই নেই ছাতাটার কথা।তাই আর যাওয়া হয়নি।
রাহাতের সামনে অর্নাস ৩য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা।তাই তো পরীক্ষার দু’মাস আগেই মেসে ওঠে পড়লো।

সেখানে দেয়া তার বড় ভাইয়ের দুটো টিওশনি করেই কোনোরকমে নিজের খরচটা চালাতে পারে রাহাত।

হঠাৎ ই রাহাতের নাম ধরে কে যেনো ডাকছে।পিছন ফিরে দেখে সেই মেয়েটা।
-আপনি !!
-হ্যাঁ,আর আপনি আমার নাম জানলেন কি করে ?
-রিক্সা ওয়ালা মামার কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম সেদিন।
-ও আচ্ছা,
-আপনি সেদিন ছাতা নিতে গেলেন না কেনো ?
– আসলে আমার মনেই ছিলো না
-ওহ। আপনি এই ভার্সিটিতেই পড়েন নাকি
– হ্যাঁ, একাউন্টিং এ আপনি
– আমি বাংলায়
-ওহ, ভালো।
-আপনি কোন মেসে থাকেন ?
-এইতো শান্ত ভিলাতেই আর আপনি
-আমি তো তার বিপরীতে মায়া-কাননে।
তাহলে তো পাশাপাশিই দেখা হবেই।
-হুমম।আপনার নামটা
-নোভা ।
-সত্যিই ! আপনি অনেক সুন্দর।
-কিছু বললেন।
-তেমন কিছু না।
-আচ্ছা, আজ আসি তাহলে।
-ঠিক আছে।
,
এভাবেই তাদের পরিচয় হয়।মেয়েটি নিজে থেকেই মাঝেমধ্যে রাহাতের সাথে কথা বলতো।

রাহাত কখনো নিজে থেকে কথা বলতো না।নিজে থেকে কথা বলার মতো মন-মানসিকতা এবং সাহসিকতা কোনোটাই তার হয়ে ওঠেনি।

তবে রাহাত মেয়েটির সব খবর রাখতো, কোথায় যায়, কি করে, কি পছন্দ করে।প্রায় সবকিছুরই খবর রাখতো।

এমন কি মেয়েটি যে কবিতা আবৃত্রি করতো সেটাও।হয়তো মনের রং তুলিতে সেই মেয়েটার ছবি রং পেন্সিলে আঁকা হয়ে গেছে।
,
কিছুদিন পর রাহাত শুনতে পায় মেয়েটির বিয়ে।

আর অন্যদিকে রাহাত যে মেসে থাকে সে মেসের খরচ বেশি হওয়ায় অন্য একটি মেসে চলে যেতে হচ্ছে।

মেসটি নোভার মেস থেকে ভালোই দূরে।হয়তো আর প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে দেখা হবে না।
রাহাত তার বেডিংপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্রগুলো অটো রিক্সায় তুলছিলো। এমন সময় নোভার দেখা
-আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন
-হ্যাঁ, এই মেসের চেয়ে ঐ মেসের খরচটা পাঁচশত টাকা কম তো।
-হুমম।আপনি তো বফ ডিলানের ফ্যান, তাই না।
-কিভাবে জানলেন
-পড়তে দেখে
,
-হ্যাঁ ছোট বেলা থেকেই ভালো লাগে।আবৃত্রিও ভালো লাগে যদিও আবৃত্রি করার অভ্যাসটা আমার নেই।
-কবিতা পড়ার অভ্যাস আছে জানি
-ওহহ।আপনাকে অভিনন্দন।
-কেনো?
-আপনার বিয়ে তাই।বুদ্ধদেবের কবিতা পড়া শেষ হলে জয় ঘোষেরটাও পড়তে পারেন।
-আপনার দাওয়াত রইলো কিন্তু
-কিসের
-বিয়েতে
-মিস করবো না, আসার চেষ্টা করবো।
-হুমম।আপনার টিওশনি কেমন চলছে।
-ভালো।
,
প্লিজ,,
-হ্যালো আপু
-হ্যাঁ, তুই কবে বাড়ি আসতেছিস।
-এই তো পরশু দিন।
-ওহ।তাড়াতাড়ি চলে যায়।
-ঠিক আছে।
,
আমার বড় আপুর সাথে কথা বললাম, অনেক সুন্দর দেখতে।আমরা পিঠাপিঠি।সবাই ভাবে ও আমার ছোট।

সামনে সপ্তাহে ওর ই বিয়ে।দাওয়াত রইলো।
-সরি আমি তো একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।আমি ভেবে ছিলাম আপনার বিয়ে।
-আর হ্যাঁ বিয়েটা কিন্তু মামার বাড়িতেই হচ্ছে।বাবা ছোট বেলায় মারা যাওয়ার পর থেকে মামাই আমাদের দেখাশুনা করেছেন।

তাই বিয়েটা ওই খানেই হচ্ছে।
-ওহহ
,
-জয় ঘোষের বইটা আমাকে দেওয়া যাবে।
-নিশ্চয়।কিন্তু বইটা তো প্যাক করা হয়ে গেছে।আজ দেওয়াটা একটু…..
-পরশু দিলেই চলবে।পরশু তো আমি মামা বাড়ি যাচ্ছি।রাত সাড়ে আট টায় ঐ একই জায়গায়।

শুধু একটু কষ্ট করে আমাকে আপনার সাইকেলে করে বাড়ি পৌছে দিবেন।
-আমি কিন্তু ঠিক সাড়ে আট টায় ই থাকবো।
-আসি তাহলে।
দেখা হবে…..।

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত