পথ চলা ২

পথ চলা ২

“আরে জামাই বাবাজী। কোথায় যাইতেছ নাকি?” এ কথা বলে মামাশ্বশুর আমার দিকে চেয়ে চেয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলেন। আমার খুব বিরক্ত লাগলো। বাসা থেকে রিশিতার সাথে ঝগড়া করে আসলাম। তার সাথে মামাশ্বশুর নামক একটা বিরক্তিকর মানুষ আমার সামনে এসে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আমি মামা কে মনে মনে দেখি না দেখি না বলে চলে আসতে লাগলাম। কিন্তু তা আর করতে পাড়লাম না।
মামাশ্বশুর আবার বললেন ” আরে জামাই বাবাজী কোথায় যাচ্ছ?”
আমি আর মামাশ্বশুরের দিকে না থাকিয়ে পাড়লাম না।
মামাশ্বশুরের কাছে আসলাম। কাছে এসে নিজের দোষ টা গোপন করতে বললাম ” আরে মামা যে কখন আসলে?”
“এই তো আসলাম।”এ কথা বলে মামাশ্বশুর নিজের মিষ্টির ব্যাগ টা আমার হাতে দিলেন। আমার কি যে রাগ উঠেছিল তা শুধু আমি জানি। আমি আমতা আমতা করে বললাম ” মামা এখন তো আমার অফিস আছে। আমি বাসায় যেতে পারব না। আপনি বাসায় যান রিশিতা বাসায় আছে।” মামাশ্বশুর মুখটা কালো করে ফেললেন। এমন ভাবে করলেন যেমন নিজের বউ মারা গেছে।
আমিও এই সুযোগে মামা কে বিদায় জানিয়ে চলে আসতে লাগলাম। এমন সময় মামাশ্বশুর নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে
বললেন ” তাইলে আমি চলে যাই।”
আমি খুবই অবাক হলাম। মামাশ্বশুর কোথায় যাওয়ার কথা বলছেন। আমি টেনশন মুক্ত হয়ে বললাম ” কোথায় যাবেন মামা?
মামাশ্বশুর এবার আমার দিকে থাকিয়ে বললেন ” তোমাকে না জামাই বাবাজী। তোমার মামী কে বললাম। কানে হেডফোন আছে তো।”
আমি মামাশ্বশুর কে মনে মনে অনেক গালি দিলাম। ভুঁড়া বয়সে কানে আবার হেডফোন ব্যবহার করা লাগে।
আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম না। যদি দাঁড়িয়ে থাকি তাইলে আমার মাথা টা যাবে। এক তো বাসা থেকে ঝগড়া করে বের হয়ে আসলাম। আবার এখানে এসে মামাশ্বশুর এর সামনে এসে পড়লাম।
আমি হেঁটে হেঁটে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। অফিস বেশি দূরে না। এইতো কিছু সময় লাগে। আমি ভাবতে লাগলাম রিশিতা আমার সাথে এমন করল কেন?
আমি এমন কি করলাম। দ্যাত ভালো লাগছে না। রিশিতা মাঝে মাঝে এমন আচরণ করে আমার ভালো লাগে না। এই মেয়ে কে আমার পক্ষে বুঝা অনেক কঠিন। সকালে কি হয়েছে আমি আপনাদের বলছি।
সকাল বেলা আমার একটু বেশি ঘুমে ধরে। তাই একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু রিশিতা করল কি?
আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে ” বাবা তুমি কাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলে। যে মানুষ টা শুধু ঘুম আর খেতে ছাড়া কিছুই করতে পারে না।”
আমি সব শুনতে পেলাম। রাগে ঘুম থেকে উঠে বললাম ” কোন শান্তি নাই সংসারে।”
” শান্তি থাকবে কি করে। নিজে তো একটা বনমানুষ।” এ কথা বলে আমার মুখ বরাবর রিশিতা এসে দাঁড়াল।
আমি কিছু বললাম না। যদি এখন ঝগড়া করি তাইলে অফিসের দেরী হয়ে যাবে। তাই মুখে থালা দিয়ে চলে আসতে লাগলাম।
এসব ভাবতে ভাবতে অফিসে চলে আসলাম। কিন্তু অফিসে পা রাখতে না রাখতেই আমার সহকর্মী মিন্টু ভাই আমাকে দেখে হাসতে লাগলেন। আমি মিন্টু ভাই কে বললাম ” মিন্টু ভাই আজ কি অফিসে কিছু খুশির খবর আছে নাকি?”
>> আরে না ভাই। আপনার অফিসের ড্রেস কোথায়?
.
আমি তো থমকে দাঁড়ালাম। ঠিক ওই তো আমি তো অফিসের ড্রেস পড়ে আসে নি।
দ্যাত ভালো লাগে না কিছু। কেন যে রিশিতা গাঁয়ে পড়ে আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে। এসব ভাবতে ভাবতে দেখি আমার সামনে অফিসের ম্যাম দাঁড়িয়ে আছেন।
” কি হিমু সাহেব বউ এর সাথে ঝগড়া করে আসলেন।” আমি ম্যামের দিকে তাকালাম। দেখি ম্যাম আমাকে এ কথা বলে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি কিছু না বলে আমার চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লাম। কিছু সময় সেখানে বিশ্রাম নিলাম। তারপর অফিসের কাজে মন দিলাম। অফিসের কাজ করছি হঠাৎ দেখি রিশিতার ফোন আসছে। আমি ফোন ধরতেই-
>> তুমি আমার মামার সাথে এমন করলে কেন?
>> কি করলাম আমি?
>> কি কর নাই। মামাকে বাসার ভিতরে ঢুকিয়ে তুমি অফিস গেলে না কেন?
>> মামা কি কানা যে বাসার ভিতর যেতে পাড়বে না?
>> মামা কানা না। তুমি একটা হাদারাম। একটা গাদা। একটা বনমানুষ।
.
আমি একটু সময় চিন্তা করলাম। এতো গুলো বকা কেন রিশিতা আমাকে দিল। ও মনে পড়েছে। আমরা তো বাসা পালটাইছি। আগে থাকতাম ৬ নাম্বার বাসায় এখন থাকি ৮ নাম্বার বাসায়।
ইশ! কি না ভুলটাই না করলাম। এখন ৬ নাম্বার বাসায় একটা ভুঁড়ি বেডি থাকে। কি মারাত্মক বেডি। এই ভুড়ি বেডিটার দেখি তাকালে একেবারে রিনা খানের মতো লাগে। আমি একদিন ভুল করে আমার পুরাতন ৬ নাম্বার বাসায় কলিংবেল বাজালাম। এই ভুঁড়ি বেডিটা দরজা খুলেই আমাকে বলে ” হিমু রাতের বেলা কি এসব খাও? যে অন্যের বাসায় এসে কলিংবেল বাজাও।” আমি আর কিছু বলছিলাম না। যদি বলি তাইলে বাসার ভিতর নিয়ে মনে হয় আমাকে বেধে রেখে পুলিশ এনে আমাকে ধরিয়ে দিবে।
আমি রিশিতা কে ফোনে বললাম ” মামাকে কি বেধে রেখেছিলেন?”
>> বেধে রাখেন নি। তার আগেই আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে ছিলাম। তখন হঠাৎ দেখি মামা ৬ নাম্বার বাসায় কলিংবেল বাজাতে যাবেন তখন আমি চিৎকার দিয়ে মামাকে বলি “মামা।”
>> মামা তখন কি করলেন?
>> মামা আর কলিংবেল বাজান নি। আমার কাছে চলে আসলেন। তারপর সব কিছু মামাকে বুঝিয়ে বলি। মামা আমার সাথে চলে আসলেন।
>> ও খুব ভালো করেছ। এখন রাখি। অফিসের খুব বেশি কাজ পড়ে আছে। সব কিছু কাজ আজ করতে হবে।
.
তারপর ফোন টা কেটে দিলাম। নইলে রিশিতা ফোন রাখবে না। আমাকে শুধু দোষারোপ করবে। আর আমি মুখ বন্ধ করে সব কিছু শুনতে হবে। কারণ এইটা তো অফিস আমি ফোনে রিশিতার সাথে ঝগড়া করলে সবাই শুনে যাবে।
অফিসের কাজ করতে করতে রাত হয়ে গেল ৯ টা। বাসায় গিয়ে পৌঁছলাম ১০ টায়। সবাই দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সবাই বলতে মামা আর রিশিতা। আমি ফ্রেস হয়ে এসে খেতে বসলাম। কিন্তু রিশিতা আমার উপর অনেক অভিমান করে আছে মনে হয়। আমি বুঝতে পাড়ছি। কোনো কিছু না বলে আমাদের কে খাবার দিতে লাগলো। আমিও চুপচাপ খেতে লাগলাম। সারাদিন অফিস করে এসে কিছু ভালো লাগে না। খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমাতে গেলাম।
কিন্তু একটা জিনিষ আমি বুঝলাম না। আমার সাথে কি মামাও অভিমান করলেন। যে একটা কথাও বলেন নি।
যাই হউক এসব আর ভাবলাম না। ঘুমাতে লাগলাম । চোখ টা মুঝে ফেললাম।
“তোমার কি জ্ঞানকাণ্ড দিন দিন কমে যাচ্ছে?” এ কথা বলে রিশিতা কোমরে হাত দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
আমি চোখ টা খুললাম। দেখি রিশিতার চোখে আগুন ধরে আছে। আমি যদি এখন কথা বলি তাইলে আমাকে ইচ্ছা মতো বকা দিবে। আমি মন খারাপ করে আবার চোখ টা মুঝে ফেললাম। রিশিতার শ্বাসপ্রশ্বাস অনেক গতিতে আসছে। সম্ভবত রাগের পরিমাণ ৯৯%।
আমি একদম শান্ত ছেলের মতো করে ঘুমিয়ে গেলাম। এরপর আর কিছু বলতে পারি নি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেল। রিশিতা আমাকে আজ ডাকে নি। আমি বুঝতে পাড়ছি রিশিতা অনেক রাগ করেছে ।
তাই আমি অফিস থেকে আসার সময় একটা জিনিস নিয়ে এসেছিলাম । রিশিতার জন্য একজোড়া কানের দুল। আমি রিশিতা কে খুঁজার জন্য রান্নাঘরে গেলাম। রান্নাঘরে যাওয়ার পর দেখলাম রান্না করছে। আমিও লক্ষ্মী ছেলের মতো করে রিশিতা কে বললাম-
>> রিশিতা এ দিকে তাকাবে ?
>> না। আমি তাকাব না। আমি কে হই তোমার? তুমি আমার কথা একটি বারও ভাব না। তুমি শুধু তোমার অফিসের কাজ নিয়ে পড়ে থাকো।
>> কে বলছে আমি ভাবী না। দেখ না তোমার জন্য আমি কি নিয়ে আসলাম।
>> বলছি না আমি তাকাব না।
>> তাইলে আমি একটা জিনিস এখানে রেখে যাই। তুমি দেখে নিও।
.
এবার রিশিতা আমার দিকে তাকাল। মুখটা একেবারে কালো করে। বুঝতে আমার আর বাকী রইল না। যে আমার উপর অভিমান করে আমাকে আজ সকালে ডাকে নি। দ্যাত এখন নিজের উপর অনেক রাগ উঠে গেল। তাই একটা মুচকি হাসি দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে দুল টা বের করে রিশিতার কাছে গেলাম। নিজের হাতে কানে পড়িয়ে দিলাম। এমন সময় রিশিতা আমাকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই মামাশ্বশুর রান্নাঘরে আসলেন।
” ভাগ্নি কিছু কি হয়েছে?” এ কথা বলে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
রিশিতা ” হ্যা।” সূচক উত্তর দিল।
” তাড়াতাড়ি দে রে ভাগ্নি অনেক খিদা লাগছে।” এ কথা বলে মামাশ্বশুর নিজের পেটটা হাতাতে লাগলেন।
রিশিতা হাসি দিয়ে বলে ” মামা তুমি গিয়ে খাবার টেবিলে বসো। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আমি রিশিতা কে বললাম ” আমার টা কে দিবে? ”
রিশিতা চোখ টা মোটা করে মুখ টা লাল মরিচের মতো করে আমার দিকে তাকাল।
আমি আর কিছু বললাম না। সেখান থেকে চলে আসলাম।
সকালের নাস্তা শেষ করে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। এমন সময় দেখি অফিসের একটা কাগজ খুঁজে পাচ্ছি না। “ও রিশিতা।” বলে ডাক দিলাম। কিন্তু রিশিতার কোনো খুঁজ পাচ্ছি না। রিশিতা আবার কোথায় গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম। অনেক সময় হয়ে গেল রিশিতা আসছে না। তাই রিশিতা কে খুঁজতে ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতের উপর আরেক হাত রেখে। আমি চিন্তা করলাম আমি আবার কিছু করলাম কি না। কিন্তু আমি কিছু করি নি।
তাই আমি নিশিতার কাছে গিয়ে বললাম ” আমার অফিসের একটা কাগজ খুঁজে পাচ্ছি না।
>> সেটা আমার কাছে। অফিসের কাগজ খুঁজে পাচ্ছ না। সেটা আমাকে এসে জিজ্ঞাস করতে পারলে। কিন্তু আমি যে বাসায় একা থাকি সেটা কোনো দিন জিজ্ঞাস করেছ। যে আমি কি চাই।
>> তুমি তো বাসার মধ্যে থাকো। আমি কি আবার জিজ্ঞাস করবো?
>> ও। আমি বাসার মধ্যে থাকি। আমি কি চাই। আমি কোথায় যেতে চাই কিনা। সে কথা কোনো দিন জিজ্ঞাস করেছ?
.
আমি রিশিতা কে রাগানোর জন্য বললাম ” তুমি ভুঁড়ি হয়ে গেছো। তোমাকে কোথায় যেতে হবে না।
রিশিতা কেঁদে দিল। ভ্যাএএএএএ।
আমি রিশিতার কান্না থামানোর জন্য বললাম “আজ বিকালে নিয়ে যাব।”
“হিহিহিহি সত্যি নিয়ে যাবে।” আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। এই মেয়ে এই মাত্র দেখলাম কান্না করছে আবার এই মাত্র হাসি দিয়ে আমাকে বোকা বানিয়ে দিল।
” তুমি যদি বিকালবেলা আমাকে ঘুরতে নিয়ে না যাও। তাইলে আমি রাতে কিছু রান্না করব না।”
আমি “হ্যা।” সূচক উত্তর দিয়ে অফিসের কাগজ টা কোথায় আছে জিজ্ঞাস করলাম। রিশিতা আমাকে নিয়ে রুমের ভিতের গেল।
” এই নেও তোমার সম্পদ।” এই কথা বলে আমাকে ভেংচি দিয়ে চলে যেতে লাগলো।
আমি কোনো কথা না বলে বাসা থেকে চলে আসতে লাগলাম। অফিসে গিয়ে আজ ৫ দিনের ছুটি চেয়ে নিব। অনেক দিন হলো রিশিতা কে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাওয়া হয় না।
” কি ভাই অফিস যাচ্ছেন?” এ কথা টা কে বলল তা দেখতে পিছনের দিকে তাকালাম। দেখি আবির ভাই। আবির ভাই আমার খুব প্রিয় মানুষ। আমি আবিরের ভাইয়ের সাথে একজন মেয়ে দেখতে পেলাম। সম্ভবত উনার স্ত্রী হবে। আমিও কোনো কিছু না ভেবে ভাবী কে সালাম দিলাম। আবির ভাই আমার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলেন ” শুধু কি ভাবী কে সালাম দিলে হবে আমাকে সালাম দিবে না?” আমিও সাথে সাথে সালাম দিয়ে দিলাম।
” তোমার ভাবী কে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। অনেক দিন হলো বের হই নি।” এ কথা বলে ভাবীর দিকে তাকালেন। ভাবী একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের উড়নো টা ঠিক করলেন। আবির ভাই নিজের প্যান্টের পকেট থেকে বাদাম বের করে আমাকে কিছু বাদাম দিলেন। তারপর আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভাবী কে নিয়ে চলে গেলেন।
আমি অফিসে যাওয়ার পর ৫ দিনের ছুটি নিয়ে নিলাম। অনেক খুশি খুশি লাগছে মনটা কিছু দিন রিশিতা কে নিয়ে ঘুরতে পারব। অফিস শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম। রাস্তায় দেখি একটা পিচ্চি মেয়ে ফুল বিক্রি করছে। আমি ৫০ টা দিয়ে কিছু ফুল কিনলাম। রিশিতা আজ অনেক খুশি হবে। আমি জানি রিশিতা আমাকে খুব ভালবাসে। একটু একটু অভিমান করে আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য। আমাকে আপন করে পাওয়ার জন্য।
আমি বাসার গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই রিশিতা দরজা টা খুলতেই একটা ঘ্রাণ পেলাম। আমি নাগ দিয়ে সব ঘ্রাণ নিতে চেষ্টা করলাম। খুব ভালো লাগছে। রিশিতা যদি এই পারফিউম টা গাঁয়ে দেয় তাইলে আমি পাগল হয়ে যায়। এখনও আমি পাগল হয়ে গেছি। কিন্তু রিশিতা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?
আমিও আমার দিকে তাকালাম। এই তো আমি পেয়ে গেছি। রিশিতা আমার হাতের ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি রিশিতা কে বললাম ” তোমার জন্য ।”
রিশিতা রাগ করে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি বুঝলাম না রাগ করার কি আছে। দরজা টা আমার চোখের সামনে লাগিয়ে দিল। আমিও রাগ টা মিটাইতে পিছনের দিকে তাকালাম। ও বাবা রে এইটা আমি কি দেখলাম। জন্টুর বউ। জন্টুর বউ এখানে কি করে? নিজে কে প্রশ্ন করলাম। আমি মিনমিন করে বললাম “ভাবী কিছু দরকার নাকি?”
” তোমার ভাইকে একটা ফোন দিবে? আমার মোবাইলে টাকা নাই।” এ কথা বলে ভাবী দাঁড়িয়ে থাকলেন।
আমিও জন্টু ভাইকে ফোন দিলাম।
” হ্যালো হিমু।” এ কথা বলতেই আমি ভাবী কে ফোনটা দিয়ে দিলাম। ভাবী কিছু কথা বলে আমাকে ফোন টা দিয়ে দিলেন। যখন ফোন টা হাতে দিলেন তখন রিশিতা দরজা খুলেতেই দেখে ফেলে। কোমরে হাত দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবী এই সুযোগে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। রিশিতা আমার হাতে ধরে আমাকে ভিতরে নিয়ে যাই।
>> জন্টু ভাইয়ের বউ এর সাথে তোমার এতো পিরিতি কেন?
>> কিসের পিরিতি?
উনি তো আসলেন জন্টু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে।
>> আমি তো জন্টু ভাই কে তোমার সাথে দেখলাম না?
>> আরে আমার সাথে আসতে যাবেন কেন? ফোনে কথা বলছেন।
>> এই ফ্ল্যাটে আর কারো মোবাইল নাই? যে তোমার মোবাইল নিয়ে কথা বলতে ওই হবে ।
>> ভাবী খুব ভালো মানুষ।
>> জানি তো খুব ভালো। যাও ভাবীর কাছে যাও।
>> ৫ দিনের জন্য ছুটি নিয়ে আসলাম অফিস থেকে।
>> কি?
.
অফিস থেকে ৫ দিনের জন্য ছুটি নিয়ে আসলাম রিশিতা কে এ কথা বললাম যদি রিশিতা খুশি হয়ে ভাবীর সাথে যে কথা বলছি সেটা ভুলে গিয়ে কিছু টা খুশি হয়।
জন্টু ভাইয়ের বউ খুব সুন্দর। অনেক দিন রিশিতার সাথে ঝগড়া করে রিশিতা কে আমি বলেছি ” জন্টু ভাইয়ের বউ কত সুন্দর। আর কত ভালো। তোমার মতো ঝগড়াটে না।”
এরপর থেকে জন্টু ভাইয়ের বউ কে সহ্য করতে পারে না। ভাবী কে দেখলেই রিশিতার শরীর টা জ্বলতে থাকে। কিন্তু আমি তো মন থেকে বলে নি। রিশিতা কে রাগানোর জন্য বলি। এই পাগলী মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে চায় না।
” সত্যি তুমি ৫ দিনের জন্য ছুটি নিয়ে আসলে?” এ কথা বলে আমার গালে দুই হাত দিয়ে ধরল।
আমি মাথাটা সোজা নাড়িয়ে “হ্যা” সূচক উত্তর দিলাম। রিশিতা আর কিছু না বলে রানাঘরে চলে গেল। আমিও বেঁচে গেলাম। যাক বাবা রিশিতা খুশি হলো। এ কথা বলে বুকের মধ্যে হাত দিলাম।
” আজ কিন্তু সারাবিকাল সিলেট ঘুরব।” এ কথা টা বলতে বলতে রিশিতা টেবিলে খাবার রাখতে শুরু করল।
আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। দেখি ৫ টা বাজে। যাইহোক বেশি বিকাল হয় নি। কিছু সময় রিশিতা কে নিয়ে ঘুরতে পারব।
.
আমি তো বাইক চালাতে পারি। তাই একটা কাজ করলাম বন্ধুর বাইক টা আনলাম। রিশিতা কে বাইকে করে সিলেট শহর টা ঘুরব।
” তুমি বাইকে করে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে?” এ কথা বলে রিশিতা মুখ টা কালো করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি রিশিতার দিকে তাকালাম। রিশিতা মনে হয় খুশি হয় নি। রিশিতা বাইকে উঠতে ভয় পায়। আমি একটা বাইক কিনে ছিলাম অফিসে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা আর রিশিতার জন্য চালাতে পারে নি। বিক্রি করে দিয়েছিলাম। সেদিনের পর থেকে বাইক আর চালাই নি। আজ বন্ধুর বাইকটা আনলাম কিন্তু রিশিতা রাগ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। কি আর করব। বললাম ” ঠিক আছে বাইক নিয়ে ঘুরতে বের হব না। ”
“তাইলে বাইক টা গেটের ভিতর রেখে আসো।” আমিও রিশিতার কথায় বাইক টা রেখে আসলাম।
আমরা দু’জন হাঁটছি। খুব ভালো লাগছে। ” তুমি এখন আর আগের মতো করে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হউ না” এ কথা বলে রিশিতা সামনে হাঁটতে থাকলো। আমিও হাঁটছি। রিশিতা ঠিক ওই বলেছে। আগে খুব ঘুরাঘুরি করতাম। এখন ঘুরাঘুরি করতে পারি না।
” জানো আমিও তোমাকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে চাই। কিন্তু কি করব বলো সময় বের করতে পারি না।”
>> মিথ্যা বলো কেন?
তুমি ইচ্ছা করে আমাকে নিয়ে বের হতে চাও না। আমি বুঝি না। সব বুঝি আমি।
>> তুমি কি বুঝ গো?
যদি বুঝতে তাইলে এমন কথা বলতে না।
>> তাইলে সপ্তাহে এক দিন হলে তো আমাকে নিয়ে বের হতে পারতে। তাও তুমি করো না।
.
” ফুচকা খাবে।” এ কথা বলে আমি রিশিতা কে চমকে দিলাম। রিশিতা জানে আমি ফুচকা খাই না। আমি জ্বাল খেতে পারি না। অসহ্য লাগে আমার কাছে। রিশিতা চোখ দু’টা মোটা করে আমার দিকে চেয়ে খিলখিল করে হাসি দিল ” হিহিহি।”
আমি নিচের দিকে চেয়ে বলি ” তোমার জন্য সব খেতে পারব।”
” এতো কিছু করতে হবে না। শুধু একটু ভালবাসলে ওই হবে।” আমি বললাম “এখন কি করতে হবে?”
রিশিতা আমার দিকে তাকাল তারপর একটু সময় অপেক্ষা করে বলল ” একটা কদমফুলের মালা আমার মাথায় পড়িয়ে দিয়ে দিতে পারবে?
সামনে একটা ছেলে কদমফুল বিক্রি করছিল তাই রিশিতা বলল।
আমি বললাম “শুধু কদমফুল কেন। তুমি এখন যা চাইবে তা করে দিব। ” এ কথা বলে আমি কদমফুল এনে রিশিতার মাথায় পড়িয়ে দিলাম। রিশিতা কি খুশি। তা বলে বুঝাতে পারব না। শুধু একটা কথায় বলবো রিশিতা খুশি হয়ে আমার গাল টা দুই হাত দিয়ে টান দিয়ে ছিল। কি ব্যথা পেয়েছিলাম। কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে আসলাম।
.
বাসায় আসার পর আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাই রান্নাঘর থেকে গানের আওয়াজ আসছে। মনে হয় রিশিতা গান ধরেছে। আমি দেখতে রান্নাঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি ঠিক ওই রিশিতা গান গেয়ে যাচ্ছে। আমি নিরবে গান শুনতে লাগলাম। যখন রিশিতা বলল ” তুমি আমার চাঁদনি রাতের আলো।” তখন আমার কাঁশি উঠে যায়। রিশিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে তাকায়।
>> কি হলো? (হিমু)
>> তুমি কখন আসলে?
>> এই মাত্র আসলাম। তুমি গান বন্ধ করে দিলে কেন? গান টা খুব ভালো ছিল।
>> বললেই হলো। আমি জানি তুমি আমাকে পাম্প দিচ্ছ।
>> দ্যাত। এর জন্য ওই তোমাকে কিছু বলি না। বললেই বলো পাম্প দিচ্ছি।
>> এতো প্রশংসা করতে কে বলেছে তোমাকে?
>> আমি খুশি হয়ে করেছি।
>> এতো খুশি হয়ে আমাকে প্রশংসা করতে হবে না। যাও তো এখান থেকে।
.
আমিও মুখে রাগ নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম। এসেই টিভি টা ছাড়লাম।
খুব বেশি আওয়াজ দিলাম। যাতে সারাবাসা কেঁপে উঠে।
>> এই কি হলো? বাসা কি ভেঙে দিতে চাও নাকি? (রান্নাঘর থেকে)
>> নিশ্চুপ। (হিমু)
>> তুমি টিভির দিকে মুখ খুলে থাকিয়ে আছ কেন? (রান্নাঘর থেকে এসে)
>> মেয়েটা খুব সুন্দর।
.
রিশিতা এবার রান্নাঘর থেকে খন্তি নিয়ে আসলো। “কি বললে তুমি?” এ কথা বলে খন্তি নিয়ে আমার সামনে ধরল।
আমি শুনেছি অনেক স্বামী নাকি বউ এর হাতের অনেক বাদাম খাইছে। তাই বলে আমি রিশিতার হাতে খন্তির বাদাম খাব তা কিছুতেই হতে পারে না। আমি বললাম ” তুমি সুন্দর। টিভির মেয়ে তো ময়দা সুন্দরী।” এবার দেখি রিশিতার মুখে হাসি। আসলে মেয়েদের প্রশংসা করলে মেয়েরা গাছে উঠে যায়। তার প্রমাণ রিশিতা নিজে। রিশিতা কাপড় টা চিমটি দিতে দিতে বলে ” তোমার পছন্দের খাবার আজ আমি রান্না করেছি। ইলিশ মাছ।”
আমি মনে মনে বললাম ” মাথা মোটা ওই টা তো আমি ওই বাজার থেকে কিনে আনলাম।
.
রাতে খাবার খেয়ে আমি ঘুমাতে গেলাম। দেখি রিশিতা সাজসজ্জা করতাছে। আমি খুবই অবাক হলার এখন সাজসজ্জা করছে কেন?
একটু চিন্তা করলাম। জানালা দিয়ে থাকাতেই দেখি আজ আকাশে চাঁদ টা সারা আকাশ টা আলোতে ভরিয়ে দিয়েছে। তার মানে এই কারণ। রিশিতা চুল আছড়াতে আছড়াতে বলে ” চলো না ছাদে যাই।”
আমি কিছু বললাম না। নিরবে বসে থাকলাম। বসে বসে ভাবতে লাগলাম রিশিতা আমার জন্য একটা উপহার।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত