আদিবার জন্য আদি ভালবাসা

আদিবার জন্য আদি ভালবাসা

আদি কলেজে নতুন। ফেন্ড সার্কেল নেই।
সারাদিন একা একা বসে থাকে।
সময় যেনো তার কাটে না।
কিছু করবে কিন্তু কি করবে ভেবে কুল পাই না সে।
সময় কাটানোর জন্য তাই সে একটা ফ্যাক আইডি খুললো। কিন্তু কাল্পনিক কাহিনির মত তার লাইফেও একটা কাহিনি ঘটলো।
যে মেয়ের ছবি দিয়ে ফেইক আইডি খুললো ভাগ্যক্রমে সেই মেয়ের আইডি থেকে রিকুয়েস্ট আসলো আদির ফেইক আইডিতে।
আদি তো পুরোই অবাক।
সামান্য ক্রাস খেয়েছিলো আদি মেয়েটার পিক দেখে।
তার জন্যই ফেইক আইডিতে পিক টা দিয়েছিলো। সেই মেয়েটাই নাকি তার আসল আইডি দিয়ে তাকে ফেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে।
নিজের ভাগ্যের জন্য একবার শুকরিয়া জানাতে ভুল করলো না আদি। মেয়েটার আইডির নাম আদিবা চৌধুরি।
ফেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলো আদি।
অনেক ইচ্ছা আর আবেগ নিয়েই মেয়েটিকে মেসেজ দিলো আদি।
যতটা আবেগ ছিলো তার মেসেজ এ ততটাই হতাশ হলো যখন কোনো রিপ্লে আসলো না আদিবার আইডি থেকে। হতাশা নিয়ে বের হয়ে এলো।
আদি চিন্তা করে দেখলো এই ফেইক আইডি দিয়ে আদিবার সাথে চ্যাট করতে পারবে সে কিন্তু সেই চ্যাট বেশি দুর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
তাই আদি ফেসবুকে ঢুকে ফেইক আইডির নাম বাদে সব কিছু চেন্জ করে ফেললো।
.
নাম চেন্জ করতে গিয়ে পড়ে গেলে সমস্যায়। ৬০ দিনের আগে কোনো ভাবেই নাম চেন্জ সম্ভব না।
কিন্তু ৬০ দিন তো আর বসে থাকতে পারে না বিশেষ করে যেখানে আদিবার সাথে চ্যাট করা টা জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। তাই অনেক চেষ্টা করে টাকা দিয়ে নামটা চেন্জ করেই ফেললো আদি।
.
চেন্জ করে আবার ম্যাসেজ দিলো আদিবাকে কিন্তু ফলাফল সেই আগের মত। হতাশা ছাড়া যেন কিছু তার ভাগ্য নেই।
.
পুরো ২ সপ্তাহ এভাবেই ম্যাসেজ দিলো আদি কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি আদিবার।
.
শেষ একটা সিদ্ধান্ত নিলো আদি, লাস্ট আর একবার ম্যাসেজ দিবে সে।
যেই চিন্তা সেই কাজ, ম্যাসেজ টা সেন্ড করে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলো কোনো ভাবে যেনো ম্যাসেজ টা সিন করে আর রিপলে টা আসে।
ভাগ্য টা যেনো তার সহাই হলো, মেসেজ রিপ্লে আসলো আদিবার কাছ থেকে।
আনন্দে আদির মন টা ভরে গেলো। অনেকটা আক্ষেপের পরি সমাপ্তি হলো তার। সেই শুরু আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি আদির।
ধিরে ধিরে চ্যাট থেকে ফ্রেন্ডশিপ এ পরিনত হয় তাদের সম্পর্ক।
.
আদির যে আদিবাকে পছন্দ করে সে কথা টা অনেক বার আদিবাকে বলেছে আদি। আদিবা কথা গুলা খুব বেশি পছন্দ না হলেও কখনো ইগনোর করে নি আদি কে। সেই সুযোগ টা কাজে লাগিয়েছে আদি। ধিরে ধিরে চ্যাট করতে করতে মাহির বুঝতে পারলো যে আদিবাও তাকে পছন্দ করে। তাই প্লান করলো দেখা করবে আদিবার সাথে। যেই ভাবা সেই কাজ, আদিবার কাছ থেকে কৌশলে ঠিকানা টা নিয়ে রওয়ানা হলো খুলনার পথে।
৭ ঘন্টা পর গিয়ে পৌছালো খুলনায়। পৌছে আদিবা কে একটা মেসেজ দিলো আদি
>> কই তুমি
>> বাসায়, কেন
>> যদি বলি তোমাদের এলাকায় ঘুড়তে আসছি
>> আমাদের এলাকায় মানে
>> হুম আমি এখন খুলনা
>> কখন আসলে
>> কিছুক্ষন আগে
>> কিন্তু কেনো
>> তোমার সাথে দেখা করতে
>> আমার সাথে দেখা করে কি হবে
>> কি হবে সেটা তো আসলেই বুজতে পারবে
>> এখন আসতে পারবো না
>> আমি কিন্তু রৌদ্রে দাড়িয়ে আছি, যদি না আসো এমনেই দাড়িয়ে থাকবো
>> পাগল নাকি তুমি, রৌদে দাড়িয়ে থাকবে কেনো, ছায়ায় বসো, আমি আসছি
>> ওকে
৩০ মিনিট পর,
.
অনেক ক্ষন ধরে রাস্তার এপাশ ওপাশ করে খুজতেছিলো আদি। সে জানে না কোন দিক দিয়ে আসবে আদিবা। হঠাৎ রাস্তার ডান দিকে চোখ পড়তেই স্তব্ধ হয়ে যায় আদি।
এ দেখি এক সাথে দুটো আদিবা, কোনটা আসল কোনটা নকল। চিন্তায় মাহিরের কপালে ভাজ পড়ে গেলো।
চিন্তার অবসান হলো যখন আদিবা এসে ডাক দেই আদি কে,
>> কি হয়ছে তো
>> হেলুসিনেসন
>> মানে
>> আমি তোমাকে দুটো দেখছি
>> মানে দুটো দেখবে কেনো আমি তো একাই
>> তাই তো বললাম হেলুসিনেসন হচ্ছে, তুমি প্লিজ আমার হাতে একটা চিমটি কাটো তো
>> চিমটি কাটতে হবে না, ও আমার বোন টুম্পা। আমরা জমজ।
>> সত্যি নাকি টুম্পা
>> জ্বি ভাইয়া
আদি এবার কিছুটা শান্ত হলো আর বললো
>> চলো বসি
>> হুমম
আদিবা : তা হঠাৎ খুলনায় কেনো
আদি : বললাম না তোমার সাথে দেখা করতে
>> ও ও, দেখা তো হয়ে গেলো, তাহলে আমি চলি
>> সত্যিই যাবে
>> যদি তুমি না আটকাও
>> আমি তো আর হাত পা বেধে রাখতে পারবো
>> ঠিক আছে বসলাম বলো
আদি কথা গুলা বসার সাহস করতে পারছে না, ভয়ে শরীর ঘেমে যাচ্ছে, কি ভাবে কি বলবে সেই ভাষা যেনো ভুলে গেছে সে,
>> কি হলো তোমায় এমন অস্থির লাগছে কেনো
>> না তেমন কিছু না
>> তবে
>> আমি তোমাকে ভালবাসি
>> মানে, আমি বলতে চাচ্ছি এভাবে কেউ প্রপোজ করে নাকি।
>> কেনো ভালবাসা কি প্রপোজে প্রকাশ পায় নাকি
>> তা না তবে তুমি ভালবাসার প্রতি কতটা এডিকটেড সেটা বোঝা যেতো
>> ভালবাসা মনের ব্যপার, উপলব্ধির ব্যাপার, বিশ্বাসের ব্যাপার যা প্রপোজের মাধ্যমে ফুটো তোলা সম্ভব না, বিশেষ করে আমার পক্ষে সম্ভব না
>> হয়তো,
>> এখন বলো তুমি আমাকে ভালবাসো কিনা
টুম্পা এবার জোড় গলায় বললো, আপু একসেপ্ট করে নে, তাছাড়া ভাইয়া টাকে আমার অনেক পছন্দ হয়ছে, যদি তোর আগে আমার সাথে ওনারর দেখা হতো আমি ওনার সাথেই প্রেম……
>> হইছে তোর পাকনা কথা বাদ দে
>> আদিবা আর দেরি করলো না, বলেই ফেললো আদিকে ভালবাসার কথা
আদির ও যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না
অবাক সুরে বললো
>> সত্যি
>> আরে সত্যিই বলছি
>> আদিবা জানো আমার সত্যিই আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে
>> তো করো না মানা করছে কে।

এই শুরু তাদের ভালবাসার। এর পর থেকে আর পিছে ফিরে ততাকাতরতাকাতে হয়নি তাদের। আদি মাঝে মাঝেই চলে যেতো খুলনা, গিয়ে দেখা করতো আদিবার সাথে, ঘুড়তো ফিরতো। আবার বাসায় চলে আসতো
কিন্তু মজার ব্যাপার ছিলো একটাই আদি মাঝে মাঝে বিপাকে পরে যেতো কে আসলে আদিবা আর কে টুম্পা। আদিবা আর টুম্পা ও এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আদিকে নিয়ে মজা নিতো। তবে সেটা সাময়িকের জন্য।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত