বয়স যখন একুশ

বয়স যখন একুশ

আম্মুকে বললাম, এলাকার পোলাপান তো বয়স একুশ হওয়ার আগেই বিয়ে করে ফেলছে? তাই বলে আমি বুঝাতে চাচ্ছিনা যে আমার বয়স কিছুদিন পর একুশ হয়ে যাবে। আম্মু আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন,
-তাহলে কি বুঝাতে চাচ্ছিস?
-এমনি বললাম, কোন কিছু বুঝানোর উদ্দেশ্যে নয়। তাছাড়া দেশে বর্তমানে দিন দিন ভাল মেয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যা আছে তাও আজকালের ভিতর ছেলেরা বিয়ে করে নিয়ে নিচ্ছে। তারমানে এই নয় যে, সামনে ভাল মেয়ে পাওয়া যাবেনা বলে আমাকে এখনি বিয়ে করিয়ে দিতে হবে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছি।
-তাহলে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছিস?
-কিছুর না, বর্তমানে কাজের মেয়েদের যে সংখ্যা কমে যাচ্ছে সেটা জানো কি? এখন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে খোঁজে ৫/৭ হাজার টাকা খরচ করেও রাত দিন কাজ করবে এমন লোক পাবেনা বরং ভাল করে খোঁজ করলে হয়ত বঙ্গ দেশে কাজের মেয়ের পরিবর্তে এলিয়েন পেয়ে যেতে পার। তাই বলে এটা বুঝাচ্ছিনা যে কাজের মেয়ের সংকট কাটানোর জন্য ছেলেকে বিয়ে করানো অত্যাবশ্যকীয়।
-ফাহিম, তুই আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছিস সেটা বল?
-আসলেই আম্মু আমি কিছুই বুঝাতে চাচ্ছিনা। সেইদিন সিয়ামের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন সিয়ামের বউ সিয়ামকে ফোন করে বলল, তাড়াতাড়ি স্যালাইন নিয়ে বাসায় আসো আম্মার পেট খারাপ করেছে। অবশ্য আমি এটা বলতে চাচ্ছিনা যে…
-হারামজাদা তুই যদি এখন আমার সামনে থেকে না যাবি তাহলে তরে আমি খুন করে ফেলব।
খুন করা পুলিশ আর সাংবাদিকের জন্য সুখবর হলেও আমার জন্য দুঃখের খবর সুতরাং আম্মুর কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম। মনের মধ্যে খচমচ করে উঠল, আহ! রূপা তোমাকে মনে হয় সারা জীবন প্রেম করেই কাটাতে হবে।
.
রূপা আমার দিকে তাকিয়ে গলার স্বর কঠিন করে বলল,
-বিয়ে করতে পারবা না যখন তখন প্রেম কেন করেছো?
আমি একটু খুক খুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করে বললাম,
-আসলে বিয়ে তো তোমাকে করব সেটা জানি হয়ত দেরী হবে। তবে ব্যাপার না হবে একদিন ঠিকি। আম্মুর কাছে আবেদন করেছিলাম কিন্তু তিনি সেটা গ্রহণ করেন নি, বাতিল করে দিয়েছেন। পদ্ধতি ঠিক ছিল কিন্তু তিনি বুঝতে ব্যার্থ হয়েছেন। অসুবিধা নেই আমাদের হাতে সময় আছে, মাথায় বুদ্ধি আছে, সমাধান বের করে ফেলব তারপর ধুমধাম করে বিয়ে হবে।
-সেটা কবে, আমাকে অন্য কেউ বিয়ে করে নিয়ে যাবার পর কি?
-আহা! তুমি আবার মাঝ দিয়ে তৃতীয় পক্ষ ঢুকিয়ে দিচ্ছো কেন? তুমি হয়ত ভুলে গেছ আমার দাদা প্রেম করেছিলেন? যদিও সেই প্রেম ব্যার্থ হয়েছে। আমার বড় চাচা প্রেম করেছিলেন, যদিও তিনার দাঁড়ি ঠিক মত গজার আগেই কন্যার বিয়ে হয়ে গেছিল। আমার মেজো চাচা প্রেম করেছিলেন, প্রেম করে প্রেমিকা দেশে রেখে গিয়েছেন, এসে পেয়েছেন প্রেমিকার সাথে এক হালি আন্ডা বাচ্চা তারা আবার চাচাকে মামা বলেও ডেকেছে। শেষে করলেন আমার আব্বু প্রেম এমন প্রেম যে কোন রিস্ক না নিয়ে ডাইরেক্ট বিয়ে অতঃপর তিনি সফল। তোমার বুঝা উচিত আমি হচ্ছি খান্দানি প্রেমিক বংশের ছেলে এবং একজন সফল প্রেমিকের ছেলে। তোমার ভয় কি? তোমাকেই বিয়ে করব। অবশ্য আমার আব্বু যেভাবে প্রেম করেছিলেন সেটা ছিল, ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের অন্যদিকে আমাদের টা হয়েছে ইতিহাসের সব থেকে লম্বা টেস্ট ম্যাচের মত যেটা ১০ নাকি ১১তম দিনে থেমেছিল ভুলে গেছি।
-হয়েছে এসব লেকচার বন্ধ কর। এখন আমাকে উঠতে হবে আর দয়া করে বিয়ের জন্য আমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাও বাকীটা আমি সামলে নিব।
-রূপা তুমি কি জানো সার্টিফিকেটে আমার বয়স ৩বছর কমানো? কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে বলবেন, ছেলের তো বিয়ের বয়স হয়নি!
-হারামজাদা ফাজলামি করছ একদম ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলব।
-তোমার মুখের কথা গুলা কমলার মত নরম ছিল, একদম মোলায়েম। হঠাৎ মোলায়েম কমলার ভিতর থেকে বাঁশ বেরিয়ে আসল কিভাবে?
-উফফ! আমি এখন যাচ্ছি যা বললাম মনে থাকে যেন।
.
রূপা রিকশা করে চলে গেল। আমি যেখানে বসেছিলাম সেখানেই ঝিম মেরে বসে থাকলাম। অনেক্ষণ পর সেখান থেকে ধীরে ধীরে বাসায় ফিরলাম। রাত ১০টার দিকে তামিমের বাপ ফোন করে বললেন,
-বাবাজি তোমার সাথে কি তামিম রয়েছে?
-জ্বী না আনকেল, কেন কি হয়েছে?
-সত্যি তোমার সাথে নেই তো।
-না আনকেল, তামিমের সাথে গত ৪/৫দিন আগে দেখা হয়েছিল এরপর আর হয়নি।
-হারামজাদা তো উদাও আজ দুইদিন ধরে। তারপর একা উদাও হয়নি পাশের বাসার বান্দর চেহারার রিনকি নামের যে মেয়েটা আছে তারে নিয়া উদাও হয়েছে। মান সম্মান বলে আর কিছু বাকী থাকল না।
-বলেন কি আনকেল, তামিম এইরকম কাজ কেমনে করল? আমারে একবার ও এসব বলে নাই।
-আচ্ছা বাবা তুমি কোন খোঁজ পেলে বলিও ওর জন্য আমার বাসার দরজা সারাজীবনের জন্য বন্ধ।
-অবশ্যই বলব শুধু দরজা কেন আপনি দরজার সাথে জানালাটাও বন্ধ করে রাখুন। বলা তো যায় না, আপনি বাপ হয়ে দরজা বন্ধ করে রাখলেন অন্যদিকে আন্টি মা হয়ে জানালা খুলে দিলেন। সেই জানালা দিয়ে হারামজাদা তামিম শুধু একটা ঢুকবেনা সাথে বান্দরনিও ঢুকাবে।
.
তামিমের গোপন নাম্বারে কল করেও তাকে পাওয়া গেল না, ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তবে রূপাকে ফোন দেয়ার সাথে সাথে রিসিভ হয়ে গেল,
-হ্যালো রূপা।
-হুম বল।
-তামিম তো বান্দর নিয়ে ভেগে গেছে।
-মানুষ টাকা-পয়সা, সোনা-দানা নিয়ে ভেগে যায়, এই প্রথম শুনলাম বান্দর নিয়ে ভেগে গেছে।
-আরে বান্দরনি মানে রিনকি নিয়ে ভেগেছে।
-রিনকি তাহলে বিয়ে করেই ফেলল।
-তবে ব্যাপার হল তামিম এভাবে রিনকি নিয়ে হাওয়া হল কিভাবে?
-বুকে সাহস ছিল, মনে জোর ছিল, গায়ে শক্তি ছিল তাই হাওয়া হয়ে গেছে।
-তুমি কি আমাকে বুঝাতে চাচ্ছো তোমাকে নিয়ে আমিও পালিয়ে যাব। তোমাকে আগেই বলেছি, আমি হচ্ছি খান্দানি প্রেমিক বংশের ছেলে। আমি বিয়ে করব সারা এলাকা জানিয়ে।
-আমি কিছু বুঝাতে চাচ্ছিনা কাল ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে।
-দেখে চলে যাবে চিন্তার কিছু নেই।
-তার মানে বুঝাতে চাচ্ছো আমি সুন্দরী নই, আমাকে তাদের পছন্দ হবেনা।
-অদ্ভুত! তাদের পছন্দ হলে কি হবে? তোমার না হলেই হবে।
-আমার ও হবে। বাই।
.
বাই বলার সাথে সাথে লাইন কেটে গেল। এখন আর ফোন দিয়ে লাভ হবেনা, মেডাম হয়ত ফোন বন্ধ করে জেগে থাকবেন। মধ্যরাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলবেন, আমি জেগে আছি, তুমি ঘুমাচ্ছো কেন? ফোন অফ করেছি বলে কি সেটা অন করব না। দুইদিন পরের কথা তামিম হারামজাদাকে পাওয়া গিয়েছে, সে বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে সাথে রিনকিও রয়েছে। আনকেল দরজা খুলে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন কিন্তু আন্টি জানালা খুলে তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এজন্য আগেই আনকেল কে বলেছিলাম, শুধু দরজা বন্ধ করলে হবেনা সাথে জানালাটাও বন্ধ করতে হবে। এখনকার যুগে জানালার গ্রীল কাটা কিছুই না।
.
এখন রূপার সাথে হাত ধরাধরি করে হাটছি। রুপাকে ছেলে পক্ষ দেখে পছন্দ করে গেলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ে বাতিল হয়েছে, বলতেই হবে জিনিয়াস মেয়ে। এই নিয়ে ৯খানা বিয়ে বাতিল হল। রূপা ফিসফিস করে বলল, দশ নাম্বার টা কিন্তু আমি ভাঙ্গব না। আমি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললাম, ভাঙ্গতে হবেনা কারণ দশ নাম্বার টা আমি থাকব। রূপাও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল, দেখা যাবে। আমিও মনে মনে বললাম, দেখা তো যাবেই আম্মু আমাকে যে আমাকে ঝাড়ু নিয়ে এলাকা ছাড়া করছেন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত