জয়ের দ্বারপ্রন্তে

জয়ের দ্বারপ্রন্তে

মাামর কম্পিউটার শোরুমে বসে আছে রাফিত।অনার্স শেষ করেছে সে।এখন মামার শোরুমের অস্থায়ি মালিকও সে।মানে বিষয়টা হল রাফিতের মামা কাজের জন্য প্রায়ই বাইরে থাকে।তখন শোরুমের দেখাশোনা সে করে।
আনমনে বসে আছে রাফিত।কারণটা হলো বাড়ি ছেড়ে এসে এখানে থাকতে একটুও ভালোলাগেনা তার।কিন্তু কিছুই করার নেই তার।
–ভিতরে আসতে পারি?(মেয়ে কন্ঠ)
–আসুন (মাথা নিচু করা অবস্থায় জবাব দিল রাফিত)
মেয়েটা রুমে ঢুকে দাড়িয়ে আছে।এবার মাথা উচু করলো রাফিত।রাফিত চুপ হয়ে গেল কাকে দেখছে সে।এটা রাইসা না।হ্যা তাইতো।নাহ কোনো ভূল দেখছে না সে।
–বসতে পারি?(রাইসা)
–হ্যা…হ্যা…বসো।(রাফিত)
–তুমি এখানে?(রাইসা)
–হ্যা আমি।এখানের মালিক আপাতোতো আমি।(রাফিত)
–কেমন আছো?(রাইসা)
–বেঁচে আছি।তুমি কেমন আছো?(রাফিত)
–আমিও তোমার মতই বেঁচে আছি।ওসব কথা বাদ থাক।(রাইসা)
–আচ্ছা। তা হঠাৎ এখানে কি কাজে?(রাফিত)
–আসলে আজ আমার চাকরির ইন্টারভিউ ছিলো এখানে।(রাইসা)
–আচ্ছা।দাও তোমার কাগজ পত্র দেখি।(রাফিত)
রাইসা কাগজ পত্র গুলা রাফিতকে দিল।রাফিত আগেই সব জানতো রাইসার বিষয়ে।এটা এখন শুধু অফিসিয়ালি কাজ মাত্র।
–আচ্ছা সব ঠিক আছে।তুমি কাল থেকে জয়েন করো।আমি ম্যানেজারকে বলে দিচ্ছি।(রাফিত)
–ওকে(রাইসা)
রাইসা রুম থেকে বের হয়ে গেল।রাইসার কাছে বিষয়টা অবাক হওয়ার মতো।যে ছেলে ছিল বেকার,সে কিনা আজ এখানে মালিক হয়ে বসে আছে।আর তার জবটাও দিল।কিভাবে সম্ভব।রাইসা ভাবতে ভাবতে জয়েনিং লেটারটা নিয়ে চলে গেল।
রাফিত চেয়ারে বসে আছে।গভির চিন্তায় মগ্নসে।আসলে এই রাইসাই ছিল একসময় রাফিতের সব চাইতে কাছের।ভাবনার সাগরে ডুব দিল রাফিত।ফিরে গেল ৫ বছর আগে…….
.
আজ রাফিতের ১ম কলেজ দিন।অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর এটাই তার ১ম কলেজে আসা।গেইট দিয়ে ঢুকতেই ধাক্কা খেল রাফিত।
–চোখে দেখেননা।সুন্দরি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছা করে?(একটা মেয়ে)
আসলে মেয়েটার সাথেই রাফিতের।
–ওই আপনার চোখ কি আকাশে ছিল নাকি। আপনি চোখে দেখেন না?(রাফিত)
–জি না আমার চোখ জায়গা মতই ছিল।(মেয়েটি)
–তাহলে দেখে ইচ্ছা করে ধাক্কা খেয়েছেন?(রাফিত)
মেয়েটি আর কথা না বলে রেগে মেগে চলে গেলো।ক্লাস রুমে যেয়ে রাফিম একটা বেন্সে বসলো।একটু পরেই সেই মেয়েটি দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লাস রুমে ঢুকলো।কিছু না বলেই রাফিনের পাশে খালি থাকা ছিটটাই বসলো।আসলে আশে পাশে আর কোনো ছিট ফাকা নেই।
–আমি দুঃখিত আসলে তখন আমি আপনাকে দেখে ধাক্কা দিইনি(রাফিত)
–আসলে আমিও দুঃখিত।তখন কি বলতে কি বলেছি।(মেয়েটি)
–আমরা পরিচিত হতে পারিতো(রাফিত)
–অবশ্যই।আমি রাইসা।আপনি?(রাইসা)
–আমি ফয়েজ আল রাফিত।আমাকে রাফিত বলেই ডাকতে পারেন।(রাফিত)
–আমরা।বন্ধুতো নাকি?(রাইসা)
–হ্যা।(রাফিত)
–তাহলে এখন থেকে আর আপনি না।তুমি করে বলতে হবে(রাইসা)
–ওকে।তুমিও বলবে(রাফিত)
এভাবেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু হয়।আস্তে আস্তে ভাললাগা এর পর ভালবাসায় রুপ নেয়।রাইসায় আগে রাফিতকে ভালবাসার কথা বলে।রাফিতও রাইসাকে ভালবাসতো।তাই আর দেরি হয়নি তাদের।প্রায় ১ নছর চলে তাদের সম্পর্ক।এরপর রাইসার বিয়ের প্রস্তাব আসে।রাইসা রাফিতকে সব খুলে বলে।রাফিত রাইসাকে বলে সে কিছু একটা করবে।কিন্তু কিছুদিন পর
–রাফিত দেখ আমার বাবা মা আমার বওয়েটা প্রায় পাকা করে ফেলছে।(রাইসা)
–কি বলো তুমি(রফিত)
–তুমিতো বলছিলা কিছু একটা করবা।কিন্তু তুমি এখনো বেকার।(রাইসা)
–কিন্তু আমরা এখনো পড়ছি।এখনে কিছু করাটা একটি কষ্টের।আচ্ছা তাও আমি চেস্টা করবো।(রাফিত)
–কয়টাকার জব করবা তুমি।তুমি জানো যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে অনেক টাকা বেতন পায়।(রাইসা)
–কিন্তু আমরাতো একল অপরকে ভালবাসি।(রাফিত)
–আমি আমার বাবা মার কথা ফেলতে পারবোনা।আর তুমি বা আমাকে কেমনে সুখে রাখবে।আমাকে ভূলে যাও।আমি আসি বাই(রাইসা)
রাফিত অনেক চেস্টা করেছিলো রাইসাকে আটকাতে।কিন্তু সে পারেনি।অনেক কষ্টে কেটেছে রাফিতের জীবন।এখন আর পিছে ঘুরে তাকাতে হয়না তার।
–স্যার…..(পিয়ন)
পিয়নের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরলো রাফিত।অফিস থেকে বাসায় আসলো রফিত।নাহ এখন আর মামার অফিসে থাকা হবেনা মনে হয়।রাইসা ওখানেও চলে এসছে।গত দুইদিন রাইসার সাথে অফিসে কথা হয়েছে রাফিতের।রাফিত জানতে পারছে যে রাইসার সাথে ওর স্বামীর ছাড়া ছাড়ি হয়েগেছে।রাফিতের মামা আসলো বাসায়।ও ওর মামাকে বলে নিজের একটা শোরুম খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।আসলে কখনোই ভাবতে পারেনি রাফিত যে এই রাইসাকেই জব দিবে সে।যে রাইসা তার স্বামীর টাকা নিয়ে তার কাছে অহংকার করেছিলো আজ সেই রাইসার এই অবস্থা।সেইদিনের পর থেকে রাফিত চাইতো নিজে অনেক টাকার মালিক হবে।
.
আজ সে জয়ের দ্বার প্রন্তে দাড়িয়ে আছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত