নিস্বার্থ ভালোবাসা

নিস্বার্থ ভালোবাসা

– রিনি দাড়াও (আমি)
– হুমম বলো?(রিনি)
– আই লাভ ইউ?(আমি)
ভাবছিলাম চড় মারবো কিন্তু মারলো না। ভালোই হইছে মারে নাই। কিন্তু এটা কি ও তো লাঠি নিয়া আসতাছে? কি করবো বুঝতাছি না। দাড়িয়ে থাকবো নাকি দৌড় দিবো।
দশ সেকেন্ড সময় নিলাম ,
নাহ আমার ভালোবাসার দরকার নাই। জুতাটা হাতে নিয়া দিলাম দৌড়। পেছন থেকে,
– কই যাস আয় তোরে ভালোবাসা দেই।(রিনি)
– দরকার নাই তোর ভালোবাসার তুই থাক।(আমি)
দুইদিন পর আবার যাইতাছি,
আজকে মনে হয় কপালে শনি আছে,
ওই দিকে রিনি বসে আছে ,ওর কাছে গেলাম। কিন্তু নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে যাতে পালাতে পারি।
– রিনি(আমি)
– হুমম বল?(রিনি)
– রেগে আছিস?(আমি)
– না বল?(রিনি)
– রেগে নাইতো? (আমি)
– না বললাম তো?(রিনি)
– আই লাভ ইউ?(আমি)
আজকে একটা চড় মারলো বাম গালে,
– রিনি? (আমি)
– এই দিকে আয়? (আমি)
– কি? (রিনি)
– দেখতো ডান গালে কি যেন হইছে না।(আমি)
– কই দেখি। কিছু নাই তো?(রিনি)
– এই গালে একটা থাপ্পড় মার।(আমি)
– কেন?(রিনি)
– আম্মু বলছে এক গালে থাপ্পড় মাড়লে বউ মরে।( আমি)
ঠাসস করে একটা চড় মেরে রিনি চলে গেল।
,
ওহ আমি সানভি আহমেদ সাকিব। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।
আর ও হলো রিনি । অনেক রাগি একটা মেয়ে, সবাই ভয় পায় কিন্তু আমি পাই না। আমি তো ওকে ভালোবাসি তাই ভয় পাইনা। মাঝে মাঝে অবশ্য একটু ভয় পাই তখন দৌড় দেই।
তারপর দুইদিন কলেজ যাইনা তখন ওর আর রাগ থাকেনা।
আবার তখন একটা কান্ড বাধিয়ে ফেলি।
,
পরেরদিন আবার কলেজ গেলাম,
রিনিরে দেখলাম এদিকেই আসতাছে,
– রিনি আই লাভ ইউ?(আমি)
– তোর কি এইটা ছাড়া আর কোনো কথা নাই। (রিনি )
– আছে তো?(আমি)
– কি? (রিনি)
– আগে আমার কথার উত্তর দে?(আমি)
– আই হেট ইউ।(রিনি)
– আচ্ছা যা আর তোরে আই লাভ ইউ কমুনা।(আমি)
– সত্তি??(রিনি)
– হুমম।(আমি)
রিনির চোখে খুশির আভাস দেখতে পেলাম।মনে হয় অনেক খুশি হইছে। কিন্তু আমি তো তোরে খুশিতে থাকতে দিবোনা ।
,
পরেরদিন,
– রিনি আই লাভ ইউ?(আমি)
– ধুরর।(রিনি)
– বিরক্ত হচ্ছিস।(আমি)
– অনেক বিরক্ত হচ্ছি?(রিনি)
– তাহলে আমি আরো বিরক্ত করবে?(আমি)
রিনি দুইটা চড় মেরে উঠে গেল। সেইদিনের পর থেকে মারলে দুইটা করে মারে। একটা খেলে আরেকটা বিনামূল্যে।
কেন যে বলতে গেছিলাম।
,
বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল নটায় ঘুম ভাংলো।
আজকে খাইছে প্রোপোস করতে পারুম না মনে হয়।
তারাতারি খেয়ে কলেজে আসলাম,
রিনি ক্লাসে চলে গেছে আজকে আর হইলো না। খারাপ লাগতাছে।
ক্লাস শেষে বাইরে এসে,
– কিরে মন খারাপ নাকি?(রিনি)
– এতোক্ষন ছিলো তবে এখন ভালো হয়ে যাবে?(আমি)
– কিভাবে/?(রিনি)
– আই লাভ ইউ।(আমি)
অতঃপর আরো দুইটা চড় খেয়ে আমার গালটা লাল হয়ে গেল।
– রিনি?(আমি)
– কি?(আমি)
– আর ছটা হলে হাফ সেন্চুরি? (আমি)
– কিসের হাফ সেন্চুরি? (রিনি)
– চড়ের।(আমি)
রিনি মুচকি হেসে চলে গেল। আমি আবারো খাইলাম। ক্রাশ খাইলাম আরকি।
এই হাসিটা দেখার জন্য সারাজিবন চড় খাইতে পারি?
তারপর আরো দুইবার প্রোপোস। কিন্তু কপাল খারাপ চড় ছাড়া আর কিছু জুটে নাই কপালে?
তবুও ভালোবাসি। কি করবো এখন আর। তুই বু্ঝলি না।
যদি ভালো নাই বাসে তাহলে ডিরেক্ট বলে না কেন?
,
দুইদিন পর আবার কলেজ গেলাম। কিন্ত রিনি কোথাও নাই।
ফোন দিলাম, ফোন বন্ধ। টেনশন হচ্ছে? কি হলো মেয়েটার কলেজ তো কখনো মিস দেয়না। কলেজের অলি গলি ক্লাস রুম সব খুজে দেখলাম কোথাও নাই। ওর বান্ধবিদের কাছে খোজ নিলাম নাহ কেউ কিছুই জানে না বলতাছে।
শেষমেশ ক্লান্তু হয়ে বসে পড়লাম পুকুর পাড়ে।
কিছুক্ষণ পর খিলখিল করে হাসির শব্দ পেলাম। দেখলাম
রিনি আর তিনজন মেয়ে হাসতাছে আমার অবস্থা দেখে,
আমাকে বোকা বানানো হইছে,
তবুও ভালো লাগতাছে সামনে দেখতে পেয়ে।
রিনি আর মেয়ে তিনটা আমার কাছে আসলো?
– খুব মজা না?(আমি)
– হুমম। অনেক মজা?(রিনি)
– খুব ভালোবাসিস আমাকে তাইনা?(রিনি)
– হুমম খুব বেশি ভালোবাসি?(আমি)
ভাবলাম এবারে কাজ হবে?
– কিন্তু আমি তো বাসি না।(রিনি)
– জানি তো?(আমি)
– তাহলে কেন ভালোবাসিস।?(রিনি)
– ভালোবাসি তাই।(আমি)
– আমার খালাতো বোন। শিমু, রিহা ,নিশাত। আর ও হলো সানভি।আমাকে প্রতিদিন প্রোপোস করে আর প্রতিদিন কি পায় জানিস।
ওরা তিনজন বলে উঠলো – কি? ??
রিনি আমার কাছে আসলো তারপর এক গালে একটা চড় মেরে চলে যেতে লাগলো।
– রিনি?(আমি)
– কি?(রিনি)
– এই গালে দিয়ে যা?(আমি)
– রিনি কিছু বললো না এগিয়ে এসে আরেকটা চড় মেরে চলে গেল।
এতটা অপমান না করলেও পারতো ।ওর বোনদের সামনে এভাবে অপমান করলো? ভালোবাসলে পারতো না । ও তো আমাকে ভালোই বাসে না আর কি পারবে না। তবুও এমনি মারে ঠিক আছে কিন্তু ওদের সামনে ?? তবুও ভালোবাসি।
,
বাসায় এসে ভাবতাছি ,
আমি কি এতটাও খারাপ নাকি?আমি কি দেখতে এতোটাও খারাপ যে এতটা অপমান করলো? আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি আর নিজেকে দেখতাছি। আমি তো দেখতে এতটা খারাপ না।তাহলে কেন ভালোবাসলো না আমাকে।
,
যাকগে যা হইছে হইছে আমিও আর যাইতাছি না ওর সামনে।
আমার নিজের ও একটা মান সম্মান আছে। আমার নিজের ও যোগ্যতা আছে।
একটু বেশি ভালোবাসছিলাম তো তাই বুঝলো না। বুঝবে একদিন ঠিকই বুঝবে?
,
তারপর কিছুদিন কলেজ যাওয়া বন্ধ। নিজেকে শক্ত করতাছি যাতে ওকে সামনে পেলেও কথা না বলতে পারি।
পনের দিন পর ,
আজকে কলেজ যাইতাছি ।মনে হাজারো প্রশ্ন উকি মারতাছে। কি বলবে দেখা হলে নাকি আবার অপমান করবে? ভাবতে ভাবতে কলেজে এসে গেছি।
রিনি আমাকে দেখা মাত্রই এগিয়ে আসলো,
আমি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু বৃথা চেষ্টা।
– আমি সরি আসলে সেদিন বেশি খারাপ ব্যাবহার করেছি তোর সাথে? (রিনি)
– না ঠিক আছে। আমি তো ওটার ই যোগ্য।আমিই সরি তোকে এতোদিন ডিস্টার্ব করার জন্য।(আমি)
বলেই চলে আসলাম। আমার তো ভালোবাসার ও অধিকার নাই। থাকলে আজকে জড়িয়ে ধরে বলতো ভালোবাসি। শুধু সরি বলে সব কিছু শেষ করে দিতোনা।
,
ভাবছিলাম আর কলেজ যাবোনা। যাই ও নাই ছয় মাস।
কিন্তু পরিক্ষা শুরু হয়ে গেল তাই আবার যেতে হলো,
প্রায়ই দেখা হয় পরিক্ষার মধ্যে। আগে গেলে কথা বলতে হবে ওর সাথে তাই ৫ মিনিট লেট করে যাই। তাহলে আর কথা বলতে হয়না। আবার পরিক্ষা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগেই খাতা জমা দিয়ে চলে আসি যাতে আর দেখা না হয়। কারন আমি জানি যতই ভুলে থাকতে চাইনা কেন ভালোবাসি এখনো। কিন্তু ও তো বাসে না। হয়তো এখন বাসে কিন্তু সময় চলে গেছে।
শেষ পরিক্ষার দিন কলেজ থেকে জানালো সবাই মিলে পিকনিক এ যাবে। পিকনিক এ যাবার কারনটা আমি। কারন আমি খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে ।যে ছেলে সারা কলেজ মাতিয়ে রাখতো সেই ছেলে আজ কারো সাথে কথা বলে না। বলতে গেলে বোবা হয়ে গেছে?
আমাকে পিকনিক এর কথা বলায় আমি সরাসরি না করে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার আমার মাকে ফোন দিয়ে রাজি করায়। তবুও আমি না করি কিন্তু মা শোনেনা। আমাকে যেতেই হবে তাই নির্দিষ্ট দিনে যথার্থ প্রস্তুতি নিয়ে গেলাম।বাস ছাড়ার আধা ঘন্টা আগে সবাই উপস্থিত শুধু রিনি ছাড়া।
যাক ভালোই হইছে দেখা হবেনা। বাসে উঠে সবাই যার যার জায়গা নিয়েছে শুধু আমার পাশের সিটটা খালি। বুঝতে পারলাম এই সিটটাই রিনির। কিন্তু আমার পাশেই কেন?
বাস ছাড়ার ৫ মিনিট আগে রিনি এসে উপস্তিত।বাসে ঢুকতেই আবার ক্রাশ খেলাম কিন্তু ক্রাশ টা খেতে দিলাম না ।মনটাকে
স্থির করলাম আর না। আমার পাশে বসলো রিনি।
– স্যার, (আমি)
– হ্যা বলো(স্যার)
– আমি আমার সিটটা বদল করতে চাই?(আমি)
– কেন?(স্যার)
– প্রবলেম আছে স্যার। ,(আমি)
– কিন্তু এখন তো চেন্জ করা যাবেনা।(স্যার)
– আচ্ছা?(আমি)
কি আর করা এখন এভাবেই যেতে হবে?
– আমাকে এতো ইগনোর করছো কেন?(রিনি)
– আপনাকে কেন ইগনোর করবো?(আমি)
– ওই আপনি কে তুমি বলবি??(রিনি)
– সরি পারবো না??(আমি)
– কেন পারবি না?(রিনি)
– আপনি আমার কে হন যে আপনাকে তুমি বলতে হবে?(আমি)
– আমি সরি সত্তি বলতাছি তুমি চলে যাওয়ার পর বুঝসি তুমি কি ছিলা। আমি সত্তি তোমাকে ভালোবাসি?(রিনি)
– যখন সময় ছিলো তখন বুঝেন নাই এখন বলে কি লাভ। (আমি)
– সময় কি চলে গেছে? (রিনি)
– হুমম চলে গেছে?(আমি)
– তাহলে কেন ভালোবাসতে বাধ্য করলা? কেন শত অবহেলা অপমান চড় খাওয়ার পর ও ভালোবাসি বলে পেছন পেছন ঘুরতা।কেন কিছু না বলা সত্তেও ভালোবাসি বলতা।এখন আমি ভালোবাসছি তাই চলে যাচ্ছ।(রিনি)
– আমি কাউকে বাধ্য করিনি । ভালোবাসতাম তাই পিছনে ঘুরছি কিন্তু তখন সে দাম দেয় নাই এখন আর কি?(আমি)
– আমি তোমাকে ভালোবাসি। কথা দিতাছি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবোনা। আমাকে একটা সুযোগ দাও তোমাকে ভালোবাসার।(রিনি)
বলেই আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।আর কাদতে লাগলো।
এখন আর আমার সাধ্য নেই ওকে সরিয়ে দেওয়ার।
চাইলেই ওকে অপমান করতে পারতাম কিন্তু করি নাই।কারন ভালোবাসছিলাম তো সরি ভালোবাসি?
,
আসলে ছেলেরা এমনই শত অবহেলা শত অপমান সত্তেও নিস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে যায়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত