ভালোবাসার নীলিমা

ভালোবাসার নীলিমা

ঠিক সন্ধ্যার সময়.. ঘড়ির কাটায় ৭ টা বাজে.. গলির আধো আলো রাস্তায় হেটে যাচ্ছে হিজাব পরা একটি মেয়ে. গলিতে তখন

কেউ ছিলো না. শুধু একটু দূরে নির্বাক ল্যাম্পপোস্ট গুলো ছাড়া. এমন সময় পেছন থেকে একটা ছেলের গলা শুনে থমকে যায়

মেয়েটি.. অনেক টা ভয় পেয়ে যায় তাই পেছন দিকে না তাকিয়ে জোরে হাটতে থাকে. সে কিছুক্ষণ এর মধ্যে বুঝতে পারে

ছেলেটি দৌড়ে তার কাছে চলে আসছে. মেয়েটি প্রচন্ড ভয় পাই. তখন ছেলেটি চিৎকার দিয়ে বলে( নীলিমা ) একটু দাঁড়াও সেই

কখন থেকে তোমাকেকে ডাকছি. মেয়েটি প্রথম বার পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে. ছেলেটি হাপাতে হাপাতে বলছে. আমাকে চিনতে

পারো নি? আমি (আকাশ) আমি তো এক প্রথম দেখাই তোমাকে চিনে ফেলেছি.. মেয়েটি ভয় গ্রস্থ থাকায় চুপ হয়ে আছে..সে

ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ছেলেটি চোখ ছল ছল করছে আর সে মিথ্যা বলছে না( হয়তো পৃথিবীতে এমন

মানুষ আছে যাদের চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায় সত্যি আর মিথ্যে টা কি. তাই না) আকাশ বলছে নীলিমা কে. তুমি এতো দিন

কোথাই ছিলে? আমি তোমাকে কত খুজেছি জানো? মেয়েটি আকাশ কে বললো.. আমাকে কেনো খুজছেন কি দরকার

আমাকে?? আকাশ বললো তুমি তো আমার সব. তুমি তো বলেছিলে. তুমি আমাকে ছাড়া বাচবে না. তুমি আমার সাথে সারাজীবন

থাকতে চাও তাহলে আজ কেনো চিনতে পারছো না আমাকে? মেয়েটি বললো. আমি আপনাকে এর আগে কখনো দেখিনি. আর

আমার মনে হয় আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে. আর আমার নাম নীলিমা না আমার না চাঁদনী. আকাশ বলে হতেই পারে না তুমি

আমার নীলিমা.. চাঁদনী বলে প্লিজ ডিস্টার্ব করবেন না আমার এমনি তেই অনেক দেরি হয়ে গেছে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি.

আকাশ বললো ও বুঝতে পারছি. তুমি চাও আমি আগে তোমাকে ঐ কথাটি বলি তাই না.? কোন কথা.?

যে কথাটি শুনতে চাও তুমি. একটু অপেক্ষা কর আমি বলছি. চাঁদনী বলে ওকে তাড়াতাড়ি প্রায় দুই মিনিট. দাঁড়িয়ে থাকার পরেও

আকাশ বলার সাহস পাইনি. চাঁদনী বলে ওকে ফাইন বলতে হবেনা আমি যাচ্ছি.. আকাশ বলে প্লিজ ১ মিনিট আমি বলছি.. বুকের

ভেতর এক রাস নিশ্বাস টেনে নিয়ে বললো.. বললো নীলিমা I love U. চাঁদনী বললো আমি আগেই বলেছি আমার নাম চাঁদিনী

নিলিমা না. আর আপনি যাকে কথাটি বলছেন সে হয়তো আমি নই. প্লিজ আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না.. চাঁদনী খেয়াল

করলো. আকাশ চোখ দিয়ে পানি ঝরিয়ে কাদছে আর চুপ করে কথা গুলো শুনছে.. চাঁদনী কথা বলা শেষ করে. চলে গেলো.. আর

আকাশ খোলা আকশের নিচে একটু ল্যাম্পপোস্টের আধো আলো আর গলির ভেতরে আকাশের বুক চিরে বেরিয়ে আসা চাদের

আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে.. চাঁদনী যখন হেটে বহুদূর দৃষ্টি সিমানার বাহিরে চলে গেলো. আকাশ তখন আকাশের পানে তাকিয়ে

চিৎকার দিয়ে বললো নীলিমা. তুমি এমন করলে কেনো? কিছুক্ষণ পর বিষন্ন মন নিয়ে পাড়ার মোড়ের ক্যাফে তে এসে বসে

পড়লো আকাশ. এই ক্যাফে তে দিন রাতের অনেকটা সময় পার করে. আকাশ ও তার বন্ধুরা. আকাশ কে বিষন্ন দেখে. তার ফ্রেন্ড

রা বললো. কি হইছে তোর এই রকম লাগতেছে কেনো তোকে কোথাই গিয়েছিলি. অনেকক্ষণ ধরে বলার পর আকাশ হেসে দিয়ে

বললো নীলিমা আমাকে চিনতে পারেনি. জানিস তোরা? আর আমি ওর জন্য. এই বলে অজ্ঞান হয়ে যায় আকাশ সাথে সাথে বাড়ি

নিয়ে যায়. তার বন্ধুরা আকাশ কে. (কারণ তারা জানে আকাশ এখন কেনো এমন করেছে আর কেনো আজ্ঞান হয়ে গিয়েছে..

আমরাও জানবো. আকাশ এর এমন অবস্থা হওয়ার কারণ) এ দিকে চাঁদনী নামের মেয়েটির মনের ভেতর আকাশের বলা কথা

গুলো বার বার প্রশ্ন বিদ্ধ করছে. সে বুঝতেই পারছে না. ছেলেটি কেনো সেদিন এমন করলো? কেনো সে এমন করে আমালে বার

বার নীলিমা বলে ডাকছিলো? ওর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওর প্রতিটা বাক্য জীবন্ত.. প্রায় ৩ দিন চলে গেলো এই সব চিন্তা ভাবনা

করতে করতে. চাঁদনী ভাবলো. ছেলেটার একটু খোজ নেওয়ার দরকার. কিন্তু আধো আলোতে ছেলেটিকে. সে ভালো করে দেখেনি

তাই চেহারা টা ঠিক করে মনে নাই. সে শুধু তার উচ্চতা আর নামটা জানে. আর এই শহরে সে কোথাই তাকে খুজবে কারণ সে

নতুন এসেছে এই শহরে বাবা সরকারি চাকরি করেন সেই সুবাদে এই খানে আসা.. তবুও দোকানে দোকানে ঘুরে ছেলেটির নাম

আর তার শারীরিক বর্ণনা দিয়ে খুজতে থাকে চাঁদনী. কিন্তু পাই না. একদিন কলেজে যাওয়ার পথে এক গলির বাকে একটি ক্যাফে

তে খোজ নিতে গেলো চাঁদনী. ক্যাফেতে বসে থাকা অনেক গুলো ছেলের কাছে গিয়ে বললো ভাইয়া আমাকে একটু হেল্প করবেন.

ছেলে গুলো মেয়েটির দিক তাকিয়ে ক্যাফে থেকে বের হতে লাগলো. চাঁদনী বললো কি হয়েছে ভাইয়া কিছু না বলে চলে যাচ্ছেন.?

চাদনী তাদের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে বললো কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি উত্তর দেন. ছেলে গুলোর মাঝ থেকে রিফাত নামে

একটি ছেলে বললো. যদি পারো এই এলাকা ছেড়ে দাও তাহলে হয়তো একটি জীবন জীবন্ত লাশ হয়ে থাকলেও বেচে থাকবে.

চাঁদনী বললো আপনারা এই সব কিবলছেন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না. তখন তাদের মধ্যে থেকে আরেকজন বললো ওকে

সব বলে দে দোস্ত. না হলেকিছুই বুঝবেনা. চাঁদনী বললো কি বলবেন ভাইয়া? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা. তখন তারা সবাই মিলে

বললো আচ্ছা ক্যাফের ভেতরে এসে বসো. সব বলছি.চাঁদনী বললো ওকে চলেন.তখন তাদের মধ্য থেকে রিফাত বললোআমি সব

বলছি. রিফাত বললো. তুমি কিজানতে চাও সেটা আমরা জানি. চাঁদনীবললো মানে? তুমি আকাশ কে খুজছো তাই না.? চাঁদনী

বললো হ্যা, কিন্তু আপনারা কিভাবে জানেন? রিফাত বললো আকাশ আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড এই ক্যাফেতে বসে আড্ডা দি আমরা.

কিছু দিন আগে হসপিটাল থেকে ফিরে একটু সাভাবিক হয়েছে আর তখন ই আপনাকে দেখে. আর বলে দোস্ত ঐ টা নীলিমা না?

তখন আমরা ও আপনার দিকে তাকাই দেখি একদম নীলিমার মত দেখতে. আমরা ওকে বলি না রে দোস্ত নীলিমা না. এই বলে

আরো কত কথা বলে ওকে সাভাবিক করি. এর পরে. প্রতিদিন আপনাকে লুকিয়ে দেখতো ক্যাফেতে বসে এই ভেবে যে তুমি তার

নীলমা.আর সেদিন আমাদের কাওকে কিছু না জানিয়ে. তোমার পিছু পিছু চলে যায়.. আমাদের কোনো কথা না শুনে. তার পরে

যখন ফিরে আসে ওকে বাড়ি নিয়ে যায় অজ্ঞান অবস্থায়। চাঁদনী বলে নীলিমা হসপিটাল আমার মাথায় কাজ করছে না.. নীলমাটা

কে? আর আকাশ হসপিটালে কেনো? কি হইছে ওর. তখন রিফাত বললো.হুম বলছি সেই সব কথা. আজ থেকে দেড় বছর

আগের কথা. তুমি যে কলেজে পড়ো ঐ কলেজে. নীলিমা নামে একটি মেয়ে ভর্তি হয়. তুমি ঠিক তার মত দেখতে প্রথম দিন

তোমাকে দেখে আমরাও চমকে গিয়েছিলাম. কিভাবে সম্ভব এক চেহারার মানুষ কিভাবে. নীলিমা ছিলো খুব সুন্দরী. ঠিক তুমি

যেমন. সে কলেজে অনার্স পড়ার জন্য ভর্তি হয় ওর বাবা অনেক বড় লোক. আর ওর বাবার কথায় পুরো শহর চলে. একটি মাত্র

মেয়ে তার. আর নীলিমা হলো সে. অনেক আদর করে বলে মেয়েকে ভার্সিটি

তে না পড়িয়ে ন্যাশনাল কলেজে ভর্তি করিয়েছে. যাতে সব সময় চোখে চোখে রাখতে পারে. আর আকাশ ছিলো ঐ কলেজের

অনার্স শেষ বছরের ছাত্র. মা বাবার এক মাত্র ছেলে. আকাশের বাবাও মোটামুটি বড়লোক বলা চলে. প্রতিদিন আকাশ আমদের

সাথে এই ক্যাফেতে বসে. আড্ডা দিতো. গান গাইতে খুজ ভালোবাসতো তাই সব সময় গিটার নিয়ে ঘুরতো. আমরা সবাই এক

সাথে নদীর পাড়ে কলেজের ক্যাম্পাসে গান করতাম. লেখা পড়ার দিক দিয়ে অনেক ভালো ছাত্র ছিলো আকাশ. একদিন

ক্যাফেতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই মিলে এমন সময় নীলিমা যাচ্ছিলো ওর ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিতে.দিতে. চাঁদিনী চুপ

করে শুনছে রিফাতের কথা. আর রিফাত শুরু থেকে বলেই চলেছে. বাকিরা সবাই চুপ. আড্ডার মাঝে নীলিমার ভুবন জয়ী হাসি.

কাজল কালো চোখ. এক নিমিষেই আকাশের মন. কেড়ে নিলো. আকাশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলিমার দিকে নীলিমা চলে

যাওয়ার পর আকাশ বললো দোস্ত. পেয়ে গেছি. আমরা সবাই বলি কি পাইছিস? আকাশ বলে আমার মনের মানুষ. আমক্রা সবাই

বলি কে সে? কি নাম? আকাশ বলে একটু আগে যে মেয়েটি হিজাব পরা কাজল কালো চোখ এই খান দিয়ে গেল সেই মেয়েটি.

আমরা বললাম তাহলে আর কি. মেয়েটিকে বলে দে. আকাশ বলে দেখ আমি যাকে ভালোবসবো তাকে সিরিয়াস ভাবে বাসবো.

কারণ তার সাথে কিছু দিনের নয় সারাটাজীবন টাই পাস করতে চাই. আর তাই তাকেও অবশ্যই আমাকে ভালোবাসতে হবে. আর

আমি অবশ্যই তাকে জোর করতে চাই না সে যদি সেচ্ছায় রাজি হয় হবে না হলে.. আমরা বলি না হলে? আকাশ বলে বাদ দে. চল.

বাড়ির দিক. এই ভাবে প্রতিদিন ক্যাফেতে কলেজেত ক্যাম্পাসে. লুকিয়ে দেখতো আকাশ. আস্তে সব জানতে পারে নীলিমার

সম্পর্কে.তার কোনো bf নেই. আর মেয়েটি কোথাই যাই না বাসা টু  কলেজ তা যাওয়া আসা. এই ভাবে লুকিয়ে দেখা শোনা. প্রায় ২

মাস. তারপর জুনিয়র এক ছোট বোনের মাধ্যমে. প্রথমবার সামনা সামনি হয়. কথা হয় আকাশ নিলীমার. প্রথম কাছ থেকে দেখা

চোখ দুটো সরছিলো না আকশের. এর পরে একে অন্যের সাথে অনেক কথা হলো. এই ভাবে মাঝে মাঝে না না বাহানা খুজে কথা

বলতো. আকাশ নীলিমার সাথে.. মনে মনে এতো গুলো ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে যা ৩ মাস আগে. ছিলো খুব খুদ্র. এখন তো মনে

হয়. নীলিমা কে না দেখলে ওর দিন কাটেনা. আমাদের সাথে আড্ডা কম দিতো. সারাক্ষণ নীলিমা আর নীলিমা.. আমাদের শুধু

বলতো নীলিমা আজ এই করেছে ঐ করেছে পুরো পাগল. এতো ভালোবাসা তবুও মুখ ফুটে বলার সাহস হয়না আকাশের. আর

এই জন্য মনে মনে রাগ হতো. আকাশের. আর সে বলতো আমি যে ওকে এতো ভালোবাসি এতো পাগলামি করে ও কি কিছুই

দেখেনা? ও কি একটুও বোঝেনা? সারাদিন যে নীলিমা নীলিমা করে কেটে যায় আমার. ঘুমাতে উঠতে বসতে সব খানে নীলিমা

আর নীলিমা. এই আকশের বুকে যে নীলিমা ছাড়া আর এক বিন্দু জাইগা কারো জন্য নেই. সে কি তা জানেনা. তাই একদিন সাহস

করে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে নিলিমাকে প্রপোস করে. ক্যাম্পাসে অনেক মানুষের মধ্যে.

আকাশের এমন কথা শুনে নীলিমা চমকে যায়. সে আকাশ এর গালে চড় দিয়ে বলে আমি আপনাকে শুধু আমার কলেজের

সিনিয়র ছাড়া আর কিছু ভাবিনা আর তার প্রতিদান আপনি এই ভাবে দিলেন? আপনি যানেন আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে.? এখন

যদি ছেলে পক্ষ জানে এই সব কথা আমার বিয়েটা কি হবে? আপনি বলেন.. আকাশ নীলিমার কথা শুনে হাটু গেড়ে বসে. হাত

জোর করে বললো. আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে. আমি সত্যি বলছি আমি জানতাম না. তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে

গেছে. যদি জানতাম তাহলে এমন আচারণ কখনো করতাম না.. আমি কথা দিচ্ছি. আজকের পর থেকে এই আকাশের জন্য

কখনো কোনো সমস্যা হবেনা তোমার (রিফাত কথা গুলো বলেই চলেছে আর চাঁদনী এবং বাকী সবাই শুনছে) এই বলে সেদিন যে

আকাশ চলে গেলো অনেক দিন. বাড়ি থেকে বের হয় না ফোন দিলে ফোন ধরে না. তাই আমরা সবাই মিলে ওর বাড়ি গেলাম.

যেয়ে দেখি মন মরা হয়ে বসে আছে. চুল গুলো উসকো খুসকো. আন্টি বললো আজ কয়দিন খাওয়া দাওয়া তেমন একটা করে না.

 

সারাদিন এই ঘরে বসে থাকে. সেদিন আমরা জোর করে বাইরে নিয়ে যায়. তারপর নানা ভাবে বোঝাই. আকাশ কে. এই ভাবে

দিনরাত বোঝানোর পরেও কোনো লাভ হয়নি ও ওর মত করে থাকতো আমরা প্রতিদিন ওর বাড়ি যেতাম. বলতাম চল আবার

আড্ডা দি. গান বাজনা করি.. কিন্তু ও চুপ করে থাকতো. হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছিলো. কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি. কিছু দিন

পর বাড়ির দারোয়ানের কাছে একটি কার্ড দিয়ে.. এক ছেলে. আর বলে এই কার্ড টি শুধু মাত্র আকাশ ভাই কে দিবেন.. দারোয়ান

আকাশের রুমে যেয়ে বলে আপনার জন্য একটি কার্ড এসেছি. আকাশ বলে টেবিলের উপর রেখে চলে যান. দারোয়ান কার্ড টি

রেখে চলে যায়. আকাশ শুয়ে আছে. কয়েক ঘন্টাপর. উঠে টেবিলের কাছে যায়. দেখে সুন্দর ডিজাইন করা. একটি বিয়ের কার্ড..

বিয়ের কার্ড টি খুলে দেখে নীলিমার বিয়ের কার্ড সাথে ছোট একটা চিঠি. চিঠিতে লেখা ছিলো “আকাশ তুমি যদি আমাকে

ভালোবেসে থাকো আমার বিয়েতে তোমাকে আসতেই হবে আমি অপেক্ষাই থাকবো” আকাশ কার্ড আর চিঠিটা ধরে বসে আছে..

সকালে আমাদের সবাই কে ফোন দিলো. দিয়ে বললো. তোরা সবাই রেডি হ. রাতে নীলিমার বিয়ে বিয়েতে যেতে হবে. আমরা

সবাই অবাক হয়ে যায়. ও কি পাগল হয়ে গেলো. সারাদিন ফোন দেই নি. বিকালে আবার ফোন দিলো.. বললো তোরা সব

ক্যাফেতে আই. তার পর এক সাথে যাবো. ওর কথা মত. ক্যাফেতে সবাই এক জাইয়া হই. ওকে খুশী খুশী লাগছিলো. জানিনা  কত

কষ্ট লুকিয়ে হাসছিলো. ওর একটা বিশেষ দিক ছিলো এতো কষ্টের মধ্যেও এক ফোটা চোখের পানি ঝরাতে ওকে আমরা কখনো

দেখিনি. যাই হোক ও বললো সুন্দর একটা গিফট কিনে নিয়ে যেতে হবে. ওর কথা মত. একটা নীল শাড়ি কিনে সন্ধ্যায় বিয়ে

বাড়িতে ডুকলাম. ঝমকালো আলোকসজ্জা. চারি দিকে আলো. আর ২ ঘন্টা পর নীলিমা অন্য কারো হবে. তার বিয়েতে কিনা

আকাশ এসেছে wish করতে সত্যি মানতে পারছিলাম না. ১০ মিনিট ঘোরা ঘুরির পর. একটা ছোট মেয়ে এসে বললো তুমি কি

আকাশ Uncle. আকাশ বললো হ্যা.  কিন্তু কি হয়েছে বাবু? কিছু বলবা? জি আপনাকে নীলিমা. আন্টি ছাদে যেতে বলেছে. এখনি

আপনি যেয়ে দেখা করে আসুন… আকাশ ভাবলো বিয়ে বাড়ি ভরা লোক. যাওয়াটা ঠিক না. কি করবো. তারপরেও সবার চোখ

ফাকি দিয়ে চলে গেলো. ছাদে চলে গেলো আকাশ.. যেয়ে দেখে. নীলিমা বিয়ের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ নীলিমাকে ডাক

দিলো  নীলিমা পেছন ফিরে আকাশের কাছে বললো তুমি এসেছো. আমি ভেবেছিলাম শেষ দেখাটা বুঝি হবেনা.আকাশ বললো

শেষ দেখা মানে.? নীলিমা বললো. আজ তো আমার বিয়ে বিয়ে হয়ে গেলো আর দেখা হবেনা. তার হবু জামাই তাকে নিয়ে

আমেরিকা চলে যাবে. আকাশ বললো ওহ. তা আমাকে ডাকলে কেনো? কিছু বলবা? নীলিমা বললো বলতে তো অনেক কিছু চাই

কিন্তু সময় নেই. আচ্ছা একটা অনুরধ করি. আকাশ বললো কি? নীলিমা হাত ধরে নিয়ে গেলাও ছাদের কিনারে. তারপর বললো

এই কিনারে পা ঝুলিয়ে বসবো আমি আর তুমি. আকাশ বললো তুমি কি পাগল হইছো বাড়ি ভরা মানুষ কেউ দেখলে কি হবে?

একটু পরে তোমার বিয়ে. নীলমা বললো প্লিজ এইটা আমার অনুরধ মনে করো এইটা আমি তোমার কাছে আমার বিয়ের গিফট

হিসেবে চাচ্ছি দিবানা.? আকাশ বললো ঠিক আছে. দুজন পা ঝুলিয়ে ছাদে বসে আছে. আকাশ ভরা তারা আর চাঁদের জোছনা

বিলাসি রাত. চাঁদের আলোয় নীলিমা কে অনেক বেশি সুন্দর লাগছিলো. নীলিমা আকাশের কাছে এসে বসে. আকাশ একটু সরে

বসে. নীলিমা বললো প্লিজ সরে যেওনা. আর হয়তো বসা হবেনা. চাইলেও যে বসতে পারবো না. আকাশ চুপ নীলিমা আকাশের

কাধে মাথা রাখে. আকাশ বললো এই সব কি করছো তুমি আমি চলে যাবো. নীলিমা বললো একটু থাকতে দাও না খুব শান্তি

লাগছে. মানে? I love U আকাশ.. আকাশ বললো. এখন কেনো? তোমার একটু পরে বিয়ে এই সব পাগলামি করো না. আমি চাই

তুমি সুখে থাকো. তাই তো দূরে সরে গিয়েছি. নীলিমা বলে আকাশ আজ আমি শুধু আমি কথা বলবো তুমি শুনবা. হয়তো আর

কোনো দিন সুযোগ হবেনা বলার.. আকাশ বললো তুমি বার বার একই কথা বলছো কেনো.. নীলিমা বললো জানিনা. আকাশ তুমি

জানো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি. ঐ আকাশের চেয়েও বেশি. তোমাকে অনেক আগে থেকেই আমার পছন্দ আমি

জানতাম তুমি আমাকে প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে. আকাশ বললো. এই সব তুমি কি করে জানো.? নীলিমা বললো যাকে

ভালোবাসি তার খোজ রাখবোনা সেটা কি হয়. নীলিমা আকশের ঘাড়ে মাথা রেখে.. বললো আমি না সব সময় চাইতাম আমাকে

কেউ অনেক ভালোবাসুক. এই চার দেওয়ালে বন্দি জীবন ভালো লাগেনা. কেউ আমাকে নিয়ে ভাবুক. আমি ও তাকে নিয়ে ভাবতে

চাই আমার ইচ্ছে গুলো কাওকে জানাতে ইচ্ছে করতো. কিন্তু জানাতে পারতাম না. তুমি যখন আমার আশে পাশে থাকতে. তখন

 

মনে হত পৃথিবীটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে. কিন্তু কখনো বলার সাহস হয় নি. পারিবারিক কারণে আমার বাবা অনেক কঠিন

মনের মানুষ উনি কখনো এই সব মেনে নিতেন না. উলটা তোমার ক্ষতি করতো. তাই সেদিন তুমি যখন আমাকে প্রপোজ করলে.

সেদিন. আমার ভেতর টা চিৎকার করে বলছিলো আকাশ আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি. কিন্তু বলতে পারিনি. তোমাকে

রাগা রাগী করার পর. বাড়ি ফিরে অনেক কেদেছি. ক্যাম্পাসে এসে অনেক খুজেছি ক্যাফেতে গিয়েছিলাম পাই নি. জানো আমার

খুব ইচ্ছা ছিলো. আমার ভালোবাসার মানুষ টির সাথে এক সাথে চাঁদ দেখবো ঠিক এই ভাবে কিন্তু সেটা আর সারাজীবনের জন্য

হলো না. আকাশ চুপ করে আছে. নীলমা বললো. আকাশ আমাকে কথা দাও তুমি ভালো ভাবে থাকবা আমি চলে যাওয়ার পরেও

কোনো প্রকার. খারাপ কাজ করবানা ঘুমের ওষুধ, নেশা করবানা আমাকে কথা দাও. আকাশ বললো কেনো কথা দেবো? তুমি তো

আমার হবেনা অন্য কারো হয়ে যাবা তাই সুখে থাকার জন্য না হলেও. ভালো থাকার জন্য হলেও। এই গুলো করে বেচে থাকতে

হবে. নীলমা বললো. উঠে দাঁড়াও আকাশ বললো কেনো? নীলিমা বললো ওঠো তারপর বলছি. আকাশ উঠে দাড়ালো. নীলিমা

আকাশ কে জড়িয়ে ধরে আকাশের ঠোটে একটা চুমু দিয়ে দিলো আর বললো তোমার ঠোটে নীলিমার ছোয়া দিয়ে গেলাম এইবার

তুমি আর কিছুই করতে পারবে না. আকাশ বললো কেনো এমন করলে তুমি. তুমি তো অন্য কারো হয়ে যাবে আমাকে কেনো এই

স্মৃতীর জালে জড়িয়ে দিলে? নীলিমা বলল কাছ থেকে তো আর কাছ পাওয়া হলো না তাই দূর থেকে তোমাকে নিজের করে রেখে

দিলাম. নীলিমা চোখের পানি ঝরিয়ে. আকাশের বুকে মাথা দিয়ে বললো. আকাশ আমাকে তোমার বুকে রেখে দাও আমি কোথাও

যেতে চাই না আমি শুধু তোমার হয়ে থাকতে চাই. আকাশ বললো এখন আর সেটা সম্ভব না. তুমি ভালো থেকো আর আমিও

ভালো থাকার চেষ্টা করবো. হয়তো মরে যাবোনা কিন্তু জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে থাকবো কথা দিলাম তোমাকে. এই বলে নীলিমাকে

রেখে চলে এলে আকাশ নীলিমা কান্নার সুরে অনেক বার ডেকেছিলো আকাশ কে কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিলে হয়তো ফিরে যেতে

মন চাইতো না তাই ভালোবাসাটাকে বুকের মাঝে সমাধি করে চলে আসে নিচে. নিচে এসে আমাদের সবাই কে ডেকে কাছে এনে

হাসতে হাসতে বলে. আমার ভালোবাসা হেরে যাই নি নীলিমা আমাকে ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসা নিয়ে আমি বেচে থাকবো.

এই বলে বিয়েটা না দেখেই চলে আসলাম বিয়ে বাড়ি থেকে. আকাশ সারা রাত জেগে ছিলো শেষ রাতে ঘুমের মাঝে ছিলো. তখন

আমি মানে রিফাত ফোন দিলো আকাশ কে আর বললো দোস্ত একটু নিচে আই তাড়াতাড়ি. ব্যস্ত আকাশ ব্রাশ টা মুখে নিয়ে নিচে

নেমে এলো. বললো কি হইছে রে? আমরা সবাই রিফাত কে জড়িয়ে ধরে বললাম ভাই নীলিমা..? আকাশ বললো হুম নীলিমা কি

হইছে ওর? নীলিমা মারা গেছে. আকাশ আমাদের ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো সকাল সকাল মজা একদম ভালো লাগেনা. নীলিমা

কেনো মরবে? ওর তো বিয়ে হওয়ার কথা. তোরা এই সব ফায়ুল কথা কেনো বলিস? এই তোরা আমার বন্ধু. আমরা সবাই ওকে

শান্তনা দিয়ে বলি ভাই তুই চল আমাদের সাথে তাহলে বুঝতে পারবি. আকাশ হাত মুখ ধুয়ে চলে সবাই কে সাথে নিয়ে নীলমার

বাড়ির দিকে যায়. আকাশ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না নীলিমা আর বেচে নেই. নীলিমার বাড়ির কাছে যেতেই দেখে খাটিয়া

করে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে. আকাশ একজন এর কাছে জিজ্ঞাস করলো এইটা কার লাশ? লোকটি বললো নীলিমার.

গতকাল রাতে বীষ খেয়ে মারা গেছে.. ছাদে ওর লাশ পাওয়া যায়. আকাশ কথাটি শুনে রাস্তায় বসে পড়লো. তার পরে অজ্ঞান. ২

দিন পর জ্ঞান ফিরে আসে. জ্ঞান ফিরে নীলিমা নীলিমা বলে ডাক দেই. কেমন অন্য রকম আচারণ করতে থাকে. ডাক্তার বলে

 

ওনার ব্রেনের স্কান করে বুঝতে পারলাম ওনার মস্তিষ্কে অনেক বড় শক লেগেছে যার জন্য মস্তিষ্কে ইনজুরি হয়েছে.. আর এই

কারণে উনি মানুষিক  ভারসাম্য হারিয়ে ভেলেছেন. তবে চিন্তার কারণ নেই ওনাকে ঠিক ঠাক দেখা শোনা করলে.উনি আবার সুস্থ

হবেন, কিন্তু, সুস্থ হবার পরে এই রকম ইনজুরি যদি আবার পান তাহলে কি হবে বলতে পারবো না. হসপিটাল এ আকাশ এডমিট

ছিলো প্রায় ৫ মাস. তারপর ও যখন সাভাবিক হয় ওকে বাড়ি নিয়ে আসে. আমরা ওকে নিয়েঘুরতে বের হই. আড্ডা বাজি করি

আস্তে আস্তে সাভাবিক হয়ে যায়. আমরা সবাই পুরোনো দিনের মত আবার. ভালো সময় পার করতে থাকি. আর এই ভালো

সময়ের মাঝে তোমাকে দেখে রাস্তা দিয়ে যেতে. তোমাকে দেখতে নীলিমার মত হওয়াই আকাশ ভাবে নীলিমা আবার ফিরে

এসেছে. তাই সেদিন সন্ধ্যায় নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারেনি. তাই তোমার কাছে যেয়ে ঐ রকম পাগলামি করেছে. কথা গুলো

চাঁদনী শুনে চোখের পানি আটকাতে না পেরে কেদে দিলো. আকাশের বন্ধু রাও কেদ্র দিলো.. চাঁদনী বললো. আকাশ এখন

কোথাই আছে? আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবেন.? রিফাত বললো. সেদিন তোমার সাথে কথা বলে ক্যাফেতে আসে আকাশ.. এসে

 

বলে নীলিমা কেনো আমাকে এই শর্তটা দিয়ে গেলো? আমি যে মরতে চাই কিন্তু নীলিমাকে কথা দিয়েছি. যাই হোক না কেনো

আমি মরবো না শত কষ্টের মাঝেও বেচে থাকবো. এই বলে কেমন জানি করতে থাকে.. তার পর অসুস্থ হয়ে যায়. আকাশ.. আমরা

সবাই ধরে. ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়. ডাক্তার বলে ওনার মস্তিষ্কের ইনজুরি টা এইবার বেশি লেগেছে হয়তো আর কখনো উনি

ভালো হবেন না. আবার হতেও পারে. কিন্তু না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি. চাঁদনী রিফাত কে থামিয়ে দিয়ে বলে. ভাইয়া প্লিজ আমাকে

আকাশের কাছে নিয়ে যান. রিফাত বললো ওকে চলো ও হাসপাতালে আছে হাসপাতালে যেয়ে দেখলো. আকাশ সাদা কাগজ ভরে

লিখছে শুধু একটি মাত্র নাম নীলিমা. নীলমা.নামটা লিখছে আরর হাসতেছে. চাঁদনী সেটা দেখে চোখের পানি থামিয়ে রাখতে

পারেনা. সে ভাবে এতোটা ভালোবাসা কি কাওকে করা সম্ভব. সত্যি আমি যদি নীলিমা হতে পারতাম. এই ভালোবাসা আমার জন্য

হতো. আরো কত কিছু না ভাবতে থাকে. চাঁদনী কিন্তু কি লাভ ভেবে. আকাশ যে নীলমার মাঝে হারিয়ে গেছে. যেখান থেকে ফিরে

আসাটা আর সম্ভব না..

 

চাঁদনী প্রতিদিন. আকাশ কে দেখতে হাসপাতে যায়.. কিন্তু. সামনে যেতো না. যদি আকাশ আরো অসুস্থ. হয়ে যায় সেই কথা

ভেবে. প্রতিদন লুকিয়ে দেখতো আকাশ কাগজে নীলিমার নাম লিখছে. কখনো বা আকাশের পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে

আছে.মনে হয় কি যেনো খুজছে. হয়তো তার নীলিমা কে খুজছে. ঐ নীল আকাশের মাঝে..

 

এই ভাবে প্রায় ১৫ দিন পার হয়ে গেলো. হঠাৎ আকাশের অবস্থার. খারাপ হয়ে গেলো. সে আগের থেকে বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়.

কেউ সামনে আসলে সহ্য করতে পারেনা. ডাক্তার রা বলে. ওর মানুষিক অবস্থা এতো খারাপ ওকে এই খানে চিকিৎসা করা

যাবেনা.. ওকে মানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে. ডাক্তার দের এমন কথা শুনে. আকাশের মা-বাব দুজনে. ভেঙে পড়ে.

আকাশের বন্ধু রাও. কেদে দেই. সেই দিন দুপুরে কলেজ শেষ করে. চাঁদনী আসে. হাসপাতালে. হাসপাতালে এসে আকাশের বন্ধুর

কাছ থেকে. সব জানতে পারে. চাঁদনী মনে মনে ভাবে মানুষিক হাসপাতালে গেলে আকাশ হয়তো কখনো ভালো হবেনা. কি করা

যায়. অনেক ভেবে.. চাঁদনী ঠিক করলো আর আড়ালে নয়. এইবার আকাশের সামনে দাঁড়াতে হবে. চাঁদনী হয়ে নয়. নীলিমা হয়ে.

 

চাঁদনী আকাশের বাবা- মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললো. আপনার ছেলেকে ভালো করার দায়িত্ব এখন থেকে আমার. আমাকে কি

আপনারা দায়িত্ব টি দিবেন? আমি আপনাদের কাছে আকাশ কে ভালো করার দায়িত্ব টুকু ভিক্কা চাইছি. আকাশের মা-বাবা

আকাশের বন্ধুদের কাছ থেকে চাঁদনী সম্পর্কে সব জানলো. তখন তার বললো. হয়তো তুমি পারবে  আমার ছেলে টাকে. আবার

ভালো করতে. এটা বলে চাঁদনী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আকাশের মা. চাঁদনী ও চোখের পানি আটকাতে পারেনি. সেদিন

বিকালেই আকাশ কে. হাসপাতাল থেকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে. বাড়ি নিয়ে আসা হলো. চাঁদনী আকাশ কে বাড়ি পৌছে দিয়ে

নিজের বাড়িতে চলে গেলো. পরের দিন সকাল সকাল চাঁদনী হাজির হয়ে গেলো আকাশের বাড়ি. এক কাপ চা নিয়ে আকাশের

রুমে ডুকে. আকাশ কে ডাক দিলো. আকাশ ঘুম থেকে উঠে. চাঁদনী কে দেখে. বলে নীলিমা. তুমি এখানে? চাঁদনী বলে তোমকে

ছেড়ে থাকতে পারলাম না তাই চলে এলাম. আকাশ কথাটি শুনে কেমন উত্তেজিত হয়ে গেলো. আর জোরে জোরে বলতে

লাগলো. তুমি মিথ্যা বলছো তুমি নীলিমা নও. তুমি অন্য কেউ. আমার নীলিমা তো অনেক দূরে চলে গেছে. অনেক দূরে. ঐ

আকাশের টার উপরে চলে গেছে আমার নীলিমা. কথাটি বলা শেষ করে বিকট শব্দ করে হাসতে লাগলো. আকাশ. চাঁদনী

আকাশের এমন অবস্থা দেখে. চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরিয়ে কাঁদতে লাগলো. কিছুক্ষণ পরে. আকাশ শান্ত হয়ে. শুয়ে পড়লো বাচ্চা

ছেলের মত. আর মুখে একটাই নাম নীলিমা নীলমা. চাঁদনী. আকাশ কে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে. কলেজের চলে গেলো. কলেজে

 

সম্ভব না. ওকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে.. তাহলে হয়তো কিছুটা লাভ হতে পারে. কলেজ থেকে ফেরার পথেই. আকাশের সব

 

নীলমা. এই বলে ক্যাফের ভেতর থেকে দৌড় দেই আকাশ. দৌড়ে রাস্তায় এসে. দেখে. কিছু নেই আকাশ রাস্তায় বসে পড়ে আর

হাসতে হাসতে বলে নীলমা কোথা থেকে আসবে সে তো অনেক দূরে অনেক দূরে. কথাটি শেষ করেই. আবার হাসতে লাগলো.

সবাই আকাশ কে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো. আকাশের এমন অবস্থা দেখে. চাঁদনী ভেবে নিলো. তাকে নীলিমা হতে হবে

নীলিমার মত চলতে হবে. নিজেকে আকাশের সামনে. নীলিমা করে উপস্থাপন করতে হবে.(আবাক করা কথা তাই না ১ মাস

আগে চাঁদনী আকাশ কে চিনতো না. আর এখন চাঁদনী আকাশের জন্য সব পারে. হয়তো এটার নাম ভালোবাসা.)
.
চাঁদনী আকাশ কে বাড়ি পৌছে দিয়ে নিজের বাড়ি চলে গেলো.. বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো. চাঁদনীরর বাবা চাঁদনী কে

জিজ্ঞাস করে. অনেক দিন ধরে দেখছি. তুমি বাড়ির বাইরে বেশি থাকো. দেরি করে বাড়ি ফেরো. কোথাই যাও কি করো? তোমার

কলেজ তো দুপুর হলে ছুটি হয়ে যায়. এতো সময় কোথাই যাও? চাঁদনী কখনো তার বাবাকে মিথ্যা বলেনি কিন্তু আজ বলছে. বাবা

আমি এক্সট্রা ক্লাস করি আর ক্লাস শেষে. কোচিং যাই তাই দেরি হয়. এই বলে ঘরে চলে যাই চাঁদনী.. চাদনীর বাবা সন্দেহ ঠিক ই

করে কিন্তু. কিছু বলেনা. আর এই ভাবে লুকোচুরি চলতে থাকে. চাঁদনী প্রতিদিন আকাশ কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়. একদিন আকাশ

কে নিয়ে. ঘুরতে বের হয় চাঁদনী. আজ সে প্রথম বার আকাশের সাথে একা ঘুরতে বের হয়েছে. আর আসার সময় আকাশের

গিটার টা সাথে করে. নিয়ে এসেছে চাঁদনী দুজনে নদীর পাড়ে যেয়ে বসলো. আকাশ এই কয়দিনে একটু সাভাবিক হয়েছে. কিন্তু

কথা কম বলে. আর মাঝে মাঝে কি জেনো ভেবে হেসে ওঠে. চাঁদনী আকাশ কে বললো. আচ্ছা আকাশ. আমি জানি তুমি খুব

ভালো গান গাও. তো তোমার নীলিমার জন্য একটা গান গেয়ে আমাকে শুনাবে? আকাশ বললো. নীলিমা নেই তাই গিটারের ছয়টি

তারে আর কোনো সুর নেই. চাঁদনী একটু ধমক দিয়ে বলে. আজ থেকে আমি তোমার নীলিমা. আকাশ. চাঁদনী র মুখের দিকে

 

তাকিয়ে বলে.তুমি আমার নীলিমা. কখনো হতে পারবেনা. এই বলে হেসে দেই আকাশ. চাঁদনী বুঝতে পারে. এই টাই বুঝি সত্যি

ভালোবাসা. মানুষিক ভাবে বিদ্ধস্থ হওয়ার পরেও আকাশ নীলিমা কে ভোলেনি. হয়তো ভুলবেও না. চাঁদিনী আকাশের দিকে

তাকিয়ে কেদে দেই. আকাশ.চাঁদনীর চোখে পানি দেখে. নীলিমার কথা মনে পড়ে যায়. আর চাঁদনী র চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে.

বলে নীলিমা কেদোনা এই তো আমি আছি. তোমার চোখে আর পানি আসতে দেবোনা
.

হয়তো চাঁদনীর চোখে পানি দেখে. আকাশ ওকে নীলিমা ভেবে নেই. আকাশ চাঁদনী কে নীলিমা ভেবে বলে. তুমি না গান শুনতে

চেয়েছিলে.আমি তোমাকে গান শোনাবো. প্লিজ কেদোনা.. অনেক মাস পরে. গিটার হাতে নিয়ে আকাশ নদী আর আকাশের

দিকে তাকিয়ে গান গাইছে..
” চোখের মাঝে কিসের ব্যথা?

এই তো আছি আমি পাশে আমার কাধে তোমার মাথা রেখে দেখো দুঃখ যাবে ভেসে দেবোনা জল আসতে চোখে কথা দিলাম আজ

ছিলাম তোমার থাকবো তোমার নীলিমার আকাশ”
.

গানটি শেষ করে হাসতে থাকে আকাশ. গিটার টি জড়িয়ে ধরে আকাশ. আকাশের কন্ঠে গান শুনে চাঁদনীর মন খুশিতে ভরে যায়.

সেদিন কার মত. আকাশ কে বাড়ি পৌছে দিয়ে. টাইম মত ওষুধ খায়িয়ে. আকাশের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে বাড়ি চলে আসে

চাঁদনী. চাঁদনী সেবা যত্ন দেখে আকাশের মা বলে আকাশ যদি সুস্থ থাকতো এই মেয়েটির সাথে আমার আকাশ কে বিয়ে দিতাম.

এই পারে আমার আকাশ কে আগলে রাখতে. কিন্তু, ভাগ্য টাই এমন যে সেটা আর হবেনা. এই ভেবে চোখের পানি ছেড়ে কাদতে

থাকে. এই ভাবে অনেক দিন কেটে গেলো. চাঁদনী আকাশ কে নিয়ে প্রতিদিন ঘুরতে বের হয় অনেক জাইগাই নিয়ে যাই আর

ভালো দেখাশুনা করার জন্য. আকাশ আস্তে আস্তে সাভাবিক হতে থাকে. কিন্তু, হঠাৎ হেসে ওঠা চুপ চাপ থাকাটা কমেনি. চাঁদনী

আকাশের বন্ধুদের কাছ জানতে চাই. আকাশ কে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি. ওকি কখনো কাঁদেনি? বন্ধুরা বললো. নীলিমার

মৃত্যুর সংবাদ শুনেও আকাশ কাঁদেনি. চাঁদনী বুঝতে পারে. কষ্ট গুলো আকাশের মনে বসে গেছে. যদি আকাশ সেদিন কাঁদতো.

তাহলে হয়তো আজ ওর এই অবস্থা হতো না. যেহেতু সেদিন ও কাদেনি তাই ও এমন হয়ে গেছে. চাঁদনী ভাবে কিভাবে আকাশ কে

কাঁদানো যাই? যাতে ওর ভেতরের জমানো কষ্ট গুলো বের করা যায়. চাঁদনী একটা উপাই বের করলো. আকাশ কে নীলিমার

কবরের কাছে নিয়ে যেতে হবে. নীলিমার কবর দেখে আকাশ হয়তো কাঁদবে. পরের দিন. আকাশ কে নিয়ে নীলিমার কবরের

কাছে গেলো চাঁদনী. চাঁদনী আকাশ কে বলে জানো এইটা কার কবর? আকাশ হাসতে হাসতে বলে. না. চাঁদনী বলে এইটা তোমার

নীলিমার কবর. ও এই খানে. ঘুমিয়ে আছে আকাশের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো. হাটু গেড়ে কবরের পাশে বসে পড়লো. আকাশ আস্তে

আস্তে ডাকে নীলমা? নীলিমা? ও নীলিমা? তুমি কি শুনয়ে পাচ্ছ তোমার আকাশ তোমাকে ডাকছে? জানো আমি না তোমাকে

অনেক মিস করেছি. তুমিও নিশ্চয় আমাকে মিস করেছো? আমাকে ক্ষমা করে দাও অনেক দেরি করে ফেলেছি আসতে,, কিন্তু,

আর যাবোনা তোমাকে ছেড়ে. এই আকাশ এখন থেকে সব সময় নীলমার পাশে থাকবে. আচ্ছা নীলিমা আমি এতো কথা বলছি

তুমি কিছু বলছোনা কেনো? I love U বলবানা? মাটির সাথে কান পেতে শুয়ে পড়ে আকাশ. আকাশ বলে কই বলো?? নীলিমা.

প্লিজ একবার বলো. কিন্তু, কোনো সাড়া না পেয়ে আকাশ চুপ করে কবরের পাশে বসে,পড়ে. চাঁদনী আকাশের কাজ দেখে

কেদেই চলেছে আর ভাবছে এতোদিন তোমার পাশে আছি নীলিমা হওয়ার কত চেষ্টাই না করেছি কিন্তু, তোমার সত্যি ভালোবাসার

সামনে. আমার সব কিছু হেরে গেছে. তুমি ঠিক বলেছিলে আমি কখনো তোমার নীলিমা হতে পারবো না.. আকাশ হঠাৎ কবরের

বেড়া ধরে নীলিমা বলে চিৎকার দিয়ে কেদে ওঠে এই প্রথম বার চোখের পানি. আকাশ কাদছে. কবরের বেড়া ধরে চিৎকার করে

কাদছে আর বলছে নীলিমা প্লিজ একবার বলো I love U এই নীরব যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না আমার. কেনো শর্ত দিয়েছিলে

আমাকে? বেচে থেকেও যে আমি মৃত লাশ হয়ে গেছি. আমিনা পারি বাচতে না পারি মরতে. এই কথা গুলো বলে ল মাটির বুকে

কয়েকবার থাবা দিয়ে আকশের পানে মুখ তুলে চিৎকার দিয়ে বলে নীলিমা ফিরে আসো. প্লিজ ফিরে আসো. ও বিধাতা. তুমি

আমার নীলিমাকে একবার আমার কাছে ফিরিয়ে দাও. এই দিকে চাঁদনীও কাদতে শুরু করে কিন্তু সে. আকাশের কান্না থামানোর

জন্য.. এগিয়ে যায় না. কারণ, আজ আকাশের কাদতে হবে. মনের জমানো কষ্ট গুলো. সব বের করে দিতে হবে. চাঁদনী মনে মনে

বলে. কাদো আকাশ জোরে জোরে কাদো. আকাশ কাদতে কাঁদতে এক সময় বেহুশ হয়ে যায়. চাঁদনী সাথে সাথে ওকে

হাসপাতালে নিয়ে সবাই কে হাসপাতালে. আসার জন্য বলে. ডাক্তার আকাশের ব্রেনের স্কান করে.. আকাশের মামা- বাবা চিন্তায়

পড়ে যায় জটিল কিছু হলো কিনা?? কিন্তু, ডাক্তার হেসে দিয়ে বলে এইটা তো পুরো মিরাক্কেল. আকাশের মাথার যে ইনজুরি টা

হয়েছিলো. সেটা এখন আর নেই বললেই চলে. ও ১০-১২ দিনের মধ্যে পুরো সুস্থ হয়ে যাবে. চিন্তার কোনো কারণ নেই. কথাটা

শুনে বাইরে এসে চাঁদনী কে জড়িয়ে ধরে. কেঁদে দেই আকাশের মা. আর বলে চাঁদনী মা. তোমার. জন্য আমার ছেলেটা নতুন

জীবন পেলো তুমি না থাকলে হয়তো ও কোনো দিন ভালো হতো না. তোমার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবোনা. চাঁদনী

বলে আমি আমার কথা রেখেছি. এই বলে হেসে দিলো চাঁদনী. সারাদিন আকাশের পাশে বসে ছিলো চাঁদনী. ডাক্তার আকাশ কে

গুমের ইনজেকশন দিয়েছে. সেদিন অনেক দেরি করে. বাড়ি ফিরলো চাঁদনী. চাঁদনীর বাবা বললো. চাঁদনী কে ডেকে বললো তুমি

মিথ্যা বলেছো আমাকে. তোমার ক্লাস দুপুরে শেষ হয় আর তোমার কোনো এক্সট্রা ক্লাস হয়না. আর কোনো কোচিং তুমি করোনা.

তাহলে. এতো টা সময় তুমি কোথাই থাকো? চাঁদনী চুপ করে আছে. চাঁদনী বাবা ধমক দিয়ে বলে উত্তর দাও. চাঁদনী বলে. আমার

পক্ষে উত্তর দেওয়া সম্ভব না. আপনি যে শাস্তি দিবেন আমি মেনে নিবো. চাঁদনীরর বাবা বলে. কাল থেকে তোমার কলেজ যাওয়া

বন্ধ. আর তোমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে খুব তাড়াতাড়ি তোমার বিয়ে দিয়ে দিবো. ছেলে খুব ভালো. ছেলের পরিবার ঘরোয়া ভাবে

বিয়ে করবে. কোনো আনুষ্ঠানিকতা তার করবে না। আশা করি আমার মতের বিরুদ্ধে তুমি কিছু বলবেনা.৫ দিন পর ছেলে পক্ষ

তোমাকে দেখতে আসবে. আর সেদিন বিয়স হবে. ছেলে তোমাকে ছবিতে দেখে পছন্দ করেছে. আর এই নাও ছেলের ছবি. চাঁদনী

ছবিটা নিয়ে মাথা নিচু করে. চলে যায়. ছবিটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে. বালিশে মুখ লুকিয়ে চিৎকার করে কান্না গুলোকে. নিরবতাই

পরিণত করছে. চাঁদনী. তার যে কিছুই  বলার নেই.. আর এইভাবে ঘরে বসে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের কথা ভাবে নিজের

ভাগ্যের কথা ভেবে কান্ন করে. চাঁদনী. আকাশের বন্ধুদের যে ফোন দিয়ে বলবে তার এই অবস্থা. ফোন টাও চাঁদনীর বাবা নিয়ে

গেছে. কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না. চাঁদনী. এই দিকে. ২ দিন পরে আকাশ অনেক টা সুস্থ হয়ে গেছে. আকাশের মা

আকাশের বন্ধুদের বাড়ি ডাকে. তার সবাই বাড়ি আসে. আকাশের মা. রিফাত কে ডেকে বলে বাবা রিফাত চাঁদনী যে সেই গেলো

আর তো এলোনা বাবা তুমি কিছু জানো? ও কোথাই আর কেমন আছে? মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে আকাশের জন্য. ওকে একটু

আসতে বলো. আর নয়তো ওর বাড়ির ঠিকানা দাও আমি নিজে যেয়ে নিয়ে আসবো. আকাশ যেহেতু. এখন সুস্থ তাই ভেবেছি ওর

সাথে  আকাশের বিয়ে দিবো. রিফাত বলে হুম ভালো তো. চাঁদনী আকাশ কে অনেক ভালোবাসে আর সেই জন্য ওর এতো সেবা

যত্ন করেছে. আর আমিও জানিনা ও কোথাই আছে ফোন দিলে ফোন বন্ধ বলে. কোনো খোজ নাই. তারপরেও আন্টি আমি

দেখছি. কি করা যায়. আচ্ছা বাবা একটু দেখো আর যাও আকাশের রুমে. দেখো আকাশ. ঘুম থেকে উঠছে. সব বন্ধুরা মিলে

আকাশের রুমে যেয়ে দেখলো আকাশ রুমে বসে আছে. বন্ধুদের সবাই কে. ঘরে ডুকতে দেখে. আকাশ. উঠে সবাইকে জড়িয়ে

ধরলো. বন্ধুরা বললো. এই তো আমাদের রিয়েল আকাশ. চল বের হই ক্যাফেতে আড্ডা হবে. আকাশ বললো ঠিক আছে চল.

সবাই ক্যাফেতে যেয়ে বসে আড্ড দিচ্ছে আর আকাশ. কাচের দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নীলিমাকে ভাবছে. “সেই চেনা পথ

জাইগা আছি আমি নেই  শুধু তুমি. শুধু হাহাকার ধূ ধূ প্রান্তর চাই এক ফোটা বৃষ্টির পানি নীলিমার মন থেকে আকাশের মন

জমিতে কোথাই তুমি নীলিমা??” কথা গুলো ভেবে চোখ ছল ছল করে উঠলো আকাশের. এমন সময় চাঁদনীর কথা মনে,পড়লো

তার. বন্ধুদের বললো. আচ্ছা চাঁদনী কই?? ও আমাকে অনেক হেল্প করেছে. ওর কাছে আমি কৃতজ্ঞ. কথাটি শুনে রিফাত চাঁদনীর

মনের কথা আকাশ কে বলে. সে কতটা ভালোবাসে. আর বলে আকাশের মায়ের কথা. সে চাঁদনী কে বৌমা বানাতে চাই. আকাশ

কথা গুলো শুনে বলে সেটা সম্ভব নয়. এই মনে এই শরীর জুড়ে. শুধু নীলমার অস্থিত্ব যার ভাগ কাওকে দিতে পারবো না. কখনো

না. এই বলে ক্যাফে থেকে বের হয়ে যায়. আকাশ. ক্যাফে থেকে বের হয়ে সোজা নীলিমার কবরের সামনে যেয়ে বসে চোখের

পানি ঝরাতে থাকে. আর বলে. তোমাকে ছাড়া থাকা যায় না. তোমাকে ছাড়া নিশ্বাস গুলো অর্থহীন. নীলিমা ছাড়া এই আকাশের

কোনো মূল্য নেই. তাই তো তুমি ছাড়া আর কাওকে জাইগা দিতে পারবোনা. এই বলে কাদছে আকাশ. আর বলছে.. তুমি কি

শুনছো নীলিমা. তুমি ছাড়া আর কাওকে জাইগা দেওয়া সম্ভব নয়. এই বলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়. আকাশ. এই ভাবে

পুরো একটা দিন কাঁদতে থাকে আকাশ. এই দিকে. চাঁদনী ও আকাশের কথা ভেবে কাদছে না পারছে বলতে না পারছে সইতে.

রিফাত আর বাকিরা চাঁদনীর খোজ নেওয়ার চেষ্টাই তার এক বান্ধবিকে চাঁদনীর বাসাই পাঠালো. চাঁদনীর বাসাই গিয়ে চাঁদনীর সাথে

দেখা করে সব জানলো. যে কাল সন্ধ্যায় তার বিয়ে. আকাশ যেমন নীলমাকে না পেয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে গেছে. তেমনি. আমিও

আকাশ কে না পেলে জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে থাকবো. চাঁদনীর বান্ধবী কথা গুলো রিফাত কে বললো. রিফাত কথা গুলো আকাশ

কে জানালো. আকাশ বললো. তার কিছু করার নেই. নীলমা ছাড়া সে আর কাওকে ভালোবাসতে আপন করতে পারবেনা. আকাশ

কে অনেক বোঝালো তার বন্ধুরা কিন্তু লাভ হলো না. আকাশ সারাদিন নীলমার কথা ভাবছে. আর ভুল খেয়ালে চাঁদনীর কথা

ভাবছে সেই মেয়েটি যে তার সব কিছু সহ্য করে তার নতুন জীবনে ফিরেয়ে দিলো. আজ সে কষ্ট পাচ্ছে. আমার জন্য. কিন্তু আমি

কিছু করছিনা. কি বা করবো ওকে আমি বিয়ে করলে. ও কখনো সুখী হতে পারবেনা এই ভেবে আকাশ নিজেকে শান্তনা দেই. সেই

দিন রাতে আকাশ যখন ঘুমিয়ে গেছে. সপ্ন মাঝে নীলমা আসে. আর আকাশ কে বলে আকাশ. তুমি চাঁদনী কে কষ্ট দিও না ওকে

আপন করে নাও. ও তোমার  অনেক খেয়াল রাখবে. যে গুলো আমি করতে পারিনি ওর মধ্যে থেকে আমাকে করতে দাও আকাশ

. চাঁদনী র মাঝে তোমার নীলমাকে খুজে নিও. আর আমি না হয় চাঁদনীরর মাঝে থেকে তোমার হয়ে রয়ে যাবো. আকাশ চাঁদনী

আমার মত পারিবারিক চাপে বিয়ে করছে তুমি ওকে হারাতে দিও না আকড়ে ধরো আকাশ.. আকাশ ঘুমের ঘরে ছটফট করে

নীলমা নীলমা বলে ডাকতে থাকে.. এক সময় নীলিমা বলে চিৎকার দিয়ে ডাক দেই. সাথে সাথে আকাশের মা রুম থেকে চলে

আসে বলে কি হইছে আকাশ?? এমন করছিস কেনো?? বল কি হইছে? আকাশ বলে চাঁদনী মা চাঁদনী. হ্যা চাঁদনী কি হইছে

চাঁদনীর? মা ওর আজকে বিয়ে. ওর বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে. আমি তো আমার নীলমাকে বাচাতে পারলানা. আমি

চাঁদনী কে মরতে দিতে পারবোনা. র তখন ই বন্ধুদের ফোন দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি বের হ চাঁদনী দের বাসাই যাবো. সবাই রিতিমত

হাজির. আকাশের বাবা- মা ও আকাশের সাথে গেলো. তাড়াতাড়ি. চাঁদনীরর বাসাই পৌছে চাঁদনী দের বাড়ি ডুকে গেলো আকাশ.

বাসাই ডুকে নীলিমা নীলমা বলে ডাকতে লাগলো. ভেতর থেকে চাঁদনীর বাবা বের হয়ে আসলো. এসে বললো কে তুমি কি চাও?

আকাশ বললো আমি নীলমাকে নিতে এসেছি. কিন্তু নীলিমা নামে এই বাড়ি কেউ থাকেনা. হুম জানি চাঁদনী তো থাকে তাই না? হ্যা

থাকে কিন্তু কি হয়েছে? ওকে আমি নিতে এসেছি.. আমার নীলিমাকে আমি আবার মরতে দিবোনা. চাঁদনীর বাবা বলে কি নীলমা

কি সব বলছো কিছুই বুঝতে পারছিনা. এই দিকে আকাশের গলার আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে আসে চাঁদনী.আকাশ চাঁদনী

কে দেখে বলে এই তো আমার নীলিমা. নীলমা আমি তোমাকে নিতে এসেছি তুমি চলো. চাঁদনীরর বাবা বলে কি ব্যাপার কিছুই

বুঝতেছিনা. প্লিজ কেউ কিছু বলুন. তখন আকাশের বাবা-মা বন্ধুরা সব কিছু খুলে বলো আকাশের ব্যাপারে. নীলমার ব্যাপারে.

চাঁদনীরর ব্যাপারে. কথা গুলো শুনে চাঁদনীর বাবা. ও দুঃখ পেলো. তিনি চাঁদনী কে ডেকে বললো মা তোর যে পছন্দ ছিলো তুই

বলিস নি কেনো.? চাঁদনী বলে তোমাকে কষ্ট দিতে চাই কি বাবা আর তুই কষ্ট পেলে বুঝি আমি ভালো থাকতাম. এই বলে মেয়েকে

জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো. এর পর বলে আকাশ তুমি তোমার চাঁদনী দুঃখীত তোমার নীলমাকে নিয়ে যাও. কিন্তু ওকে কখনো কষ্ট

দিবা না কথা দাও. আকাশ বসে পড়ে কেদে দিয়ে বলে যতদিন বাচবো আপনার মেয়েকে ভালোরাখার সুখী করার শেষ চেষ্টা

করবো. আর এই ভাবে দুই পরীবারের হ্যা সূচক বাক্য দিয়ে চাঁদনী সরি আকাশ নীলমার বিয়ে হয়ে গেলো. আকাশ নীলমার কবর

জিয়ারত করে বাড়ি ফিরে এল সেদিন রাতে আকাশ চাঁদনী কে বললো ছাদে যাই. আকাশ চাঁদনীকে নিয়ে ছাদে গেলো ছাদের

কিনারে দুজন পা ঝুলিয়ে বসে আছে. আকাশ চুপ করে বসে চাঁদনী বলে কি নীলিমার কথা মনে পড়ছে?? আকাশ বলে হ্যা. এই

ভাবে শেষ বার বসে কথা বলেছিলাম নীলিমার সাথে. চাঁদনী বলে যদি আমার ও শেষ বার হয় তাহলে আকাশ চাঁদনীর মুখ চেপে

ধরে বললো. কখনো না আমি আমার নীলিমাকে আর হারাতে দেবোনা. সারাজীবন আগলে রাখবো কথা দিলাম. এই ভাবে চাঁদনী

সরি নীলমা আকাশ সুখে তাদের জীবন পার করতে লাগলো. আকাশ এখন চাঁদনীর মাঝে নীলমাকে খুজে নেওয়ার চেষ্টা করছে.

ভালো থাকুক আকাশ নীলিমা অমর হোক তাদের ভালোবাসা..
.
( প্রথম ভালোবাসা চাইলেও ভোলা যায় না.আকাশ ও ভুলতে পারবেনা. চাঁদনীর মাঝে হয়তো সে নীলামাকে খুজছে আর চাঁদনী

নীলমার মত আকাশ কে আগলে রাখার চেষ্টা করছে. তারা অবশ্যই সফল হবে. গল্পের শেষ অংশ টা এতো বড় হওয়াই আমি ক্ষমা

চাচ্ছি. কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন. আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষাই রইলাম. ভালো থাকবেন সবাই.

ধন্যবাদ)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত