ভালোবাসার জয়

ভালোবাসার জয়

-স্যার দেখেন অনি পিছনে বসে আমার চুল টানতেছে(অনন্যা)

হঠাৎ কইরা ঘোর ভাঙগ,এতক্ষন ঘুমে ছিলাম তো তাই হুশ ছিলোনা,

–কি ব্যাপার অনি তুমি অনন্যার চুল ধরে টানছিলা কেন?(স্যার)

–ডাহা মিথ্যা কথা স্যার,আমি তো এমনটা করতেই পারি না স্যার,,আপনি তো জানেন আমি কত ভদ্র।
,
[আবার স্যারের কাছে ফাসাইয়া দিল অনন্যা শুধু শুধু,ওর সাথে কি যে শত্রুতা বুঝি না,সুযোগ পেলেই আমার উপর ঝাপিয়ে

পারে।]

–তা তুমি ভদ্র আর যাই হও না কেন অনন্যা কি তাহলে মিথ্যা কথা বলবে?

–না স্যার বিশ্বাস করেন আমি তো ঘুউউউম না না হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো টানছিলাম ওর চুল,কি লম্বা লম্বা চুল,দেখলেই টানতে ইচ্ছা

করে।(আমি)[ঘুমের কথা বললে স্যার তো আস্তো রাখবে না, তাই যে অপকর্মটা করিনজ সেটা স্বীকার করাই ভালো]

–ক্লাসের পড়া বাদ দিয়া চুল টানা হচ্ছে,বেদ্দপ ছেলে।ফের কখনো শুনলে ক্লাস দিয়ে বের দিব বলে দিলাম।
.
–অনন্যার দিকে তাকিয়ে দেখলাম হাসতেছে, একেবারে সাকচুন্নির মতো লাগতাছে,হাসো হাসো প্রান খুলে হাসো,ক্লাস থেকে বের

হও একবার দেখাচ্ছি মজা।ইচ্ছা করতেছে সব চুল টাইনা ছিরে ফেলি।
.
–ক্লাস শেষ হওয়ার পর ক্যাম্পাসে গেলাম,,ঐ হারামি!!আস্তে আস্তে গিয়া পিছন থেকে চুল টেনে ধরলাম।

–এই এই ছাড় বলতেছি অনি,,ভালো হবে না কিন্তু(অনন্যা)

–কেন খুব লাগতেছে না,লাগুক আরো ভালোভাবে লাগুক,ক্লাসে তখন আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিলি কেন?এখন সব চুল

ছিড়ে ফেলবো,দেখ কেমন লাগে!!

–ছাড় বলতেছি ছাড়,,তোকে এখন একটা আস্তো বার্গার খাওয়াবো।

–সত্যি খাওয়াবি তো?[ক্ষুধাও লাগছিল একটু]

–আরে হ্যাঁ খাওয়াবো খাওয়াবো আগে ছাড়।
.
ছেড়ে দিলাম,,তারপর হাঁটতে হাঁটতে গেলাম ওর সাথে।
.
–এই যে মামা দুইটা বার্গার দেন।

অর্ডার দিয়ে বসলাম দুজনে।

–ঐ তোর কি আমারে না জ্বালাইলে পেটের ভাত হজম হয় না?(আমি)

–না রে,তোরে না জ্বালাইতে পারলে সারাদিন কেমন জানি মন খারাপ থাকে।এই জ্বালানোর মজা অনেক যেটা বার্গার খেয়ে পাবি

না।

–হইছে হইছে বার্গার নিয়া আসছে আগে খেয়ে নেই,
.
খাওয়া শেষে অনন্যা বলে টাকাটা দিয়া আয়।

–কিহহহহহহহহ?আমি কেনো দিবো,তুই খাওয়াবি বলছো,আমি দিব না।

–হ্যাঁ খাওয়াবো বলছি কিন্তু টাকা যে আমি দিব সেটা তো বলি নাই।আর অর্ডারটাও তুই দিছো খেয়াল করে দেখো(পেত্নী মার্কা হাসি

দিয়ে)

–এই সারছে,,এতোই খিধা লাগছিল যে আমিই ভুলে অর্ডারটা দিয়ে দিলাম।।

ফাইসা গেছি মাইনকা চিপায়।
.
কি আর করার টাকাটা দিয়া বেরিয়ে আসলাম।
.
–ঐ আমি বাসায় গেলাম, তুইও যাহহ,বেশি ঘোরাফেরা করিস না।(অনন্যা)

–আরেহ যাহ,,যেখানে খুশি সেখানে না,,তুই না থাকলেই একটু ভালো থাকবো।যাহ ভাগ!!
.
সব বন্ধুবান্ধব বিজি ১৪ ফেব্রুয়ারি নিয়ে,কে কি করবে,প্রিয় মানুষটার সাথে কোথায় ঘুরবে।কিন্তু আমার মতো সিঙ্গেলদের আবার

১৪ তারিখ।ভাবছি ঐদিন বাসা থেকেই বের হবো না।
.
পরদিন কলেজে গেলাম,ক্লাস করলাম কিন্তু অনন্যার কোনো খোজ নাই,কি হইলো ওর,আজকে আমাকে জ্বালাতে আসলো না

ভাব্বার বিষয়,সারা ক্যাম্পাস ঘুরলাম তারপরেও কোথাও পেলাম না।

ফোনটাও অফ কইরা রাখছে।আরো কিছুক্ষন খুজে তারপর বাসায় চলে আসলাম।কেঁটে গেলে ৩-৪ দিন।কিন্তু অনন্যার কোনো

খোজ নাই।ওর সব বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না।আজ অনেক খারাপ লাগতেছে,কোনো কিছুতেই

মন বসছে না।কতদিন ওর সাথে ঝগড়া করি না,চুল ধরে টানি না।
.
রাতেও ঘুম আসছে না,বারবার ওর কথা মনে পরছে।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল,দেখি অনন্যা ফোন দিছে।তারাতারি ফোনটা

রিসিভ করলাম,

–কালকে ওমুক পার্কে দেখা করতে পারবি?তাহলে ৪:৩০ এ চলে আসিস।
–আচ্ছা চলে আসবো,কিন্তু তুই কই?
–কালকে দেখা করার পর সব বলছি।
.
লাইনটা কেটে গেল।অনেক্ষন হলো চুপচাপ বসে আছি।কোনোকিছুই ভাল্লাগতেছে না।কালকে কি বলবে ও?

নিশ্চয়ই কোনো সিরিয়াস ব্যাপার,আমি কি কিছু করছিলাম!!না,সব গুলিয়ে যাচ্ছে।কালকে দেখা করার পরই বোঝা যাবে।

অনেককিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরছি খেয়াল করি নি।
.
পরদিন বিকাল ৪ টার সময়ই যথা স্থানে উপস্থিত হলাম।মনটা বড্ড ছটফট করতেছে।ঘরির সময় দেখতে দেখতে অনন্যা চলে

আসল।

আজকে নীল সাড়ি পরছে,কপালে টিপ,হাতে রেশমি চুরি।চোখ সরাতে পারছি না ওর থেকে।

–কিরে এভাবে ফ্যালফ্যাল করে ভ্যাবলাকান্তর মতো তাকিয়ে আছিস কেন?

–না এমনি দেখছিলাম,,কোথায় ছিলি এই কদিন?যাবি যা বলে তো যাবি?জানো আমার কতো একা একা লাগছিল?

–গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম, আর আমিও তোকে অনেক মিস করছি,,আমি তোকে কিছু কথা বলতে চাই।

–বল তাইলে,, এতো ইয়ে করার কি দরকার।

–লাভ ইউ অনি!!

আমি এই কদিন শুধু তোর কথাই ভেবেছি।সারাদিন মিস করছি।সবসময় তোর মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

আর এগুলার মানে আমার কাছে ভালোবাসাই মনে হইছে।

তোকে সারাজীবন জ্বালানোর অধিকার দিবি না?
.
কথাগুলো শুনে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।এই মুহুর্তে মনে পরে গেলে অরিজিৎ সিং এর গাওয়া একটি গান,

# ঠিক এমন এভাবে,

তুই থেকে যা স্বভাবে…

আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই,

আর তুই ছাড়া গতি নেই।।
.
–আমি আস্তে ওর হাতটা ধরে কানেকানে ফিসফিস করে বললাম,

“ভালোবাসি”
.
সেদিন সারা বিকাল আমরা অনেক ঘুরছি।

দিন যতই যাচ্ছিল ততই আমাদের ভালোবাসা যেন বেড়েই যাচ্ছিল।কিন্তু একদিন অনন্যা ফোন দিয়ে বলে বাবা আমার বিয়ে ঠিক

করে ফেলছে।জলদি কিছু কর নাহলে আমি মরে যাবো।হঠাৎ এরকম কথা শুনে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।তখন আমার

ফ্রেন্ড শুভকে সবকিছু বলি এবং প্লান অনুযায়ী অনন্যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর শুভর সাহায্যে আমরা বিয়ে করে নেব।

সব ভালোয় ভালোয়ই হইছে।আমাদের বিয়েও হয়ে গেল।কিন্তু অনন্যার বাবা মা কিছুতেই মেনে নিবে না।অনন্যা তখন খুব ভেঙে

পরছিল।কিন্তু আমার বাবা মা ওকে মা বাবার অভাব বুঝতে দেয় নি।
.
বিয়ের ২ বছর পর পূর্ন হলো।

আজকে দিনটা আমাদের দুজনের জন্যই অনেক স্পেশাল।

–আজকে একটু তারাতারি অফিস থেকে ফিরবে কিন্তু।একটা খুশির খবর আছে।(অনন্যা)

–আচ্ছা ঠিকাছে,এটা বলতে হবে না আমার মাথায় আছে।
.
অফিস থেকে সোজা বাড়ি গেলাম,আজকেও অনন্যা আবার সেজেছে,সাড়ি পরছে,কপালে টিপ আর হাতে রেশমি চুরি,আবার

চোখে কাজলও দিছে।চোখ যেন সরতেই চাচ্ছে না।

ইটস সং টাইম,

# কি তোমার রূপের ঝলক,

পরে না চোখের পলক।

আর মনে নাই,,আজকে আমরা দুজনে পূর্নিমার চাঁদ দেখবো।ওহ বলাই তো হয় নি আজকে পূর্নিমা।ছাদে গিয়ে দুজনে

বসলাম,আমার কাধে ও মাথা রেখেছে।অনেক ভালোই লাগছে।

–কই তোমার খুশির খবরটা শোনাবে না?(আমি)

–ইশশশ আমার লজ্জা লাগতেছে।(অনন্যা)

–আরে বলো না লজ্জা কিসের।

–তুমি বাবা হতে চলছো!!
.
কথাটা শুনে কি যে খুশি হলাম,ইচ্ছে করতেছে খুশিতে নাচতে।খবরটা ওর বাবা মাও জানলো এবং তারা ফোন দিয়ে আমাদের

দুজনকে তাদের বাড়িতে যেতে বললো।কতোদিন আর নিজের মেয়েকে পর করে রাখবে!!শেষপর্যন্ত মেনেই নিল।এখন আমরা

অনেক সুখে আছি।
.
[জীবনে সুখ দুঃখ,ভালো খারাপ সময় আসবেই,এটাই নিয়ম,তবে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে]

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত