আমার সাজানো স্বপ্ন

আমার সাজানো স্বপ্ন

সারাদিনের কাজ শেষে ফোন টা হাতে নিয়ে মাত্র ফেসবুক টা লগ ইন করলাম তখনই ফোন টা বেজে উঠলো মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।
তার উপর অপরিচিত নাম্বার ভাবলাম কারো দরকারি ফোন ও হতে পারে এই ভেবে কল টা ধরলাম।
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
ফোনের ওই পাশ থেকে অপরিচিত একটা পুরুষ কন্ঠ বলল
–ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি কেমন আছেন?
–আলহামদুলিল্লাহ্।
আসলে আপনি কে তো চিনলাম না।কার কাছে ফোন করছেন?
–আপনি কি রজনী বলছেন?
জ্বি কিন্তু আপনি কে?
–আমাকে আসলে আপনি চিনবেন না।কিন্তু আপনার কি সময় হবে তাহলে কিছু কথা বলার ছিল।
পরিচয় দিন তাহলেই তো চিনবো, না দিলে কি করে চিনবো?
–তিনি বললেন আসলে পরিচয় দিলেও চিনবেন না কারণ আপনার সাথে আমি পরিচিত হই নি।এখন তাই পরিচিত হতেই কল দিলাম।আমি আকাশ।
আমি একটু রেগেই কথা বললাম কারণ মাত্র তখন ফ্রি হয়ে ফেসবুকে আসছি কোন কিছু দেখার আগেই ফোনটা চলে আসছে।এখন আবার বলছে পরিচিত নয়।
পরিচিত না হলে ফোন করছেন কেন? আর আপনার সাথে কেন ই বা আমি পরিচিত হবো।আমি কারো সাথে অযথা কথা বলি না।যদি কোন প্রয়োজন থাকে বলুন নয়তো ফোন রাখেন।
–আসলে আজ আপনাকে সবুজ কাকুদের ছাদে একনজর দেখছিলাম।তারপরেই তো পালিয়ে গেলেন।আমি সবুজ কাকুর কাছ থেকে আপনার ব্যাপারে সব খোঁজ- খবর নিয়েছি।
সেদিন দুপূরে আমার কাজিনের সাথে ছাদে রোদ পোহাচ্ছিলাম।আমি খুব একটা চুল ছেড়ে রাখি না,সেদিন ভেজা ছিল বলে ছেড়ে রাখছিলাম। আর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম আমি আর মিষ্টি দি।হঠাৎ কেউ আসার শব্দ শুনেই তাকিয়ে উনাদের দেখে আমি দৌড়ে সেখান থেকে সরে আসি।কিন্তু এই দাঁড়িওয়ালা হুজুর কেন আমার খোঁজ নিচ্ছে সেটাই তো বুঝতেছিনা আমি আবার কোন ভূল করলাম না তো চিন্তা শুরু হলো আমার।
ওহ আচ্ছা।তো আমি কি করবো আপনি আমার ব্যাপারে কেন খোঁজ নিচ্ছেন? আর আপনি সবুজ কাকার কে হন?
–আসলে আমি মনে মনে ভেবেছিলাম খোলা চুলে যে মেয়কে আমার ভালো লাগবে তাকেই আমি বিয়ে করবো।এক নজরেই আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেছে।আর সবুজ কাকুর বউ আমার খালামণি হন।
দেখুন আপনার পছন্দ হলেই তো হবে না।আমারও পছন্দ এবং আমার পরিবারের ও পছন্দ হতে হবে।
–জ্বি তা তো অবশ্যই।তাই তো আপনার ফোন নাম্বার টা নিয়েছি আপনার মতামত জানার জন্য।বলুন আপনার কেমন ছেলে পছন্দ।যদি আমার মধ্যে সেই গুণাবলি থাকে তবেই রাজি হবেন।নয়তো আমি আপনাকে জোর করবো না।
ধন্যবাদ। স্বামী হিসেবে আমি এমন কাউকে চাই যে ধার্মিক হবে,আমায় নিয়ে তাহাজ্জদ পড়বে,৫ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে জামায়াতে,গান নয় কোরআন তিলাওয়াত শুনাবে আমাকে।এমন একজন পুরুষ যে তার বউ কে সম্মান করবে ভালোবাসবে।সে তার মা ও বউয়ের মাঝে কখনো তুলনা করবে না,নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুজনকেই খুব ভালোবাসবে।খুব দামী কিছু নয় ছোট ছোট উপহার দিয়ে আমায় সারপ্রাইজ দিবে।রাতের আকাশের চাঁদ দেখবে,তারা গুনবে আমায় নিয়ে।মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যাবে।আর আমার মা-বাবা এবং ভাইদের নিজের বাবা-মা ও ভাইদের মতো করে ভালোবাসবে।আর আমিও তার পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে থাকবো,সবাইকে এত ভালোবাসবো যে তারা নিজের ছেলের থেকেও আমাকে বেশী ভালোবাসতে বাধ্য হবে।বলুন হতে পারবেন কি এমন??
–দেখুন রজনী আমি আপনার ব্যাপ্যারে আগেই খোঁজ নিয়েছি,আপনি ধার্মিক আর পর্দানশীন জেনেই আমি আপনাকে বিয়ে করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।কিন্তু সত্যি বলছি আপনি এত ভালো জানা ছিল না।আপনার মতো মেয়ে যেন সব ঘরেই জন্মায়।আর ইনশাআল্লাহ আমি আপনার সব শর্ত পূরণ করার চেষ্টা করবো,কেননা আপনি অন্যায় কিছু বলেন নি।আর যা কিছু পারবো না আপনি আমায় শিখিয়ে দিবেন।কি পারবেন না??
জ্বি ইনশাআল্লাহ। আমিও ভূল করলে আপনি আমাকে সঠিক টা শিখিয়ে দিবেন।
–আচ্ছা ঠিক আছে।আর আমি একজন প্রবাসী। চেষ্টা করবো কয়েক বছর পর দেশে চলে আসার। তারপর কোন একটা ব্যবসা করে দেশেই থাকবো ইনশাআল্লাহ। এতে কোন আপত্তি আছে কি আপনার??
জ্বি না।বাবা মা যদি রাজি থাকেন তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।
–আচ্ছা তবে আমি কালকেই মা-বাবা নিয়ে আপনার বাড়ি আসছি।সবুজ কাকু কে বলব আপনার বাড়িতে জানাতে।
ঠিক আছে।এখন তাহলে রাখি।আল্লাহ হাফেজ।আসসালামু আলাইকুম।
–জ্বি আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।ওয়ালাইকুমুস সালাম।
ফোনটা রাখার পর কেমন জানি অন্যরকম ফিল করতেছি। সত্যি মনের মতো এমন কাউকে পাবো কখনো ভাবতেই পারি নি।অনেক দিনের লালন করা স্বপ্ন টা আজ বাস্তব হতে যাচ্ছে এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।আবার কাল উনার বাবা-মা আমাকে দেখতে আসবেন,তাদের পছন্দ হবে তো কেমন যেন একটা টেনশন আর ভয় কাজ করতেছে মনের মাজে।খাওয়া -দাওয়া অফ হয়ে যায় আমার চিন্তায়।
অতঃপর আজ ২৩শে ডিসেম্বর আকাশ ও তার মা-বাবা এবং এক বোন আমাকে দেখতে আসছে।
আল্লাহর রহমতে সবার আমাকে খুব পছন্দ হয়।
আর তারা আজকেই বিয়ের দিন ফিক্সড করে ৩০শে ডিসেম্বর।
৩০শে ডিসেম্বর সুন্নত অনুসারে অল্প আয়োজনে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
আমি বাসর ঘরে বিছানায় একা বসে আছি।একটু পরেই আকাশ রুমে আসলো।আমি উনাকে সালাম দিলাম।
–ওয়ালাইকুমুস সালাম।শুনো রজনী ওয়াসরুমে গিয়ে এসব ভারি গয়না আর জামা-কাপড় ছেড়ে এই শাড়ী টা পড়ে অজু করে আসো।আমরা ২রাকাত শুকরিয়া সালাত আদায় করবো।
সেই মুহূর্তে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী আর সুখী মনে হলো।কারণ কিছু বান্ধবীদের থেকে তাদের প্রথম রাতের গল্প শুনে আমি খুব ভয়ে ছিলাম।আলহামদুলিল্লাহ্ যে আমার স্বামী তেমন নন।
আমি ওজু করে আসলাম।দুজনে মিলে নামাজ আদায় করলাম।
তারপর তিনি আমায় কোলে তুলে বিছানায় নিলেন আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ছিলাম।আমাকে বিছানায় বসিয়ে তিনি বললেন একটা কথা বলব রজনী কথা দাও রাখবে?
জ্বি বলুন নিশ্চয় রাখবো।
–তুমি কি এখনো আমাকে আপনি করে বলবা যাও বলব না।
হা হা হা…না আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।এখন লজ্জা লাগছে পরে বলব।
–ওরে আমার লজ্জাবতীরে এত লজ্জা কোথায় পাও গো!!
আল্লাহ দিছে কি করবো।
— হা হা… আচ্ছা শুনো পাগলী তোমার খোলা চুলের প্রেমে পড়েছি।আমার বউয়ের এই খোলা চুল যেন আমি ছাড়া আর কেউ না দেখে শুধু আমি দেখবো।কথা দাও।
জ্বি কথা দিলাম আপনি ছাড়া আমার খোলা চুল আর কেউ দেখবে না।আমার সব সৌন্দর্য শুধু আপনার জন্য।
তারপর তিনি আমায় নিয়ে বারান্দায় গেলেন খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন বারান্দাটা।একটা দোলনা ছিল বারান্দায় তিনি আমাকে নিয়ে সেখানে বসলেন।চুলের খোপা টা খুলে দিয়ে চুল নিয়ে খেলা করছেন আর দুজন মিলে রাতের আকাশের চাঁদ-তারা দেখছিলাম।
আমার মনটা কোন এক অজানা স্নিগ্ধাতা আর ভালোবাসায় ভরে গেল।এ আমার বহু প্রতিক্ষায় পাওয়া ভালোবাসা।স্বামীর ভালোবাসায় একজন নারীর জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠে। আজ তাই তাকে পেয়ে আমার জীবন পূর্ণতা পেল।আল্লাহর কাছে এটাই প্রার্থনা যেন তার ভালোবাসার পূর্ণ মর্যাদা আমি দিতে পারি।
আজ আমাদের বিয়ের ২০ বছর পূর্ন হলো।আমাদের দুটো সন্তান আছে।এই ২০ বছরে তিনি আমার দেওয়া একটা শর্ত ও অমান্য করেন নি।তিনি আমায় নিয়ে তাহাজ্জদ পড়েন।মসজিদে জামায়াতে সালাত আদায় করেন। আমাকে কোরআন তিলাওয়াত শুনান।
আর শ্বশুরবাড়ির সবাই তো আমাকে খুব বিশ্বাস করে,ভরসা করে ভালোবাসে।মাজে মাজে এই নিয়া আকাশ ও হিংসে করে বলে আমি নাকি জাদু জানি সবাইকে জাদু করেছি।
কিন্তু আকাশের এই হিংসে ভালোবাসার।সে মনে মনে খুব খুশি আমাকে সবাই এতো ভালোবাসে বলে।সবাইকে নিয়ে আমার আজ সোনার সংসার আমি ভালোবাসা দিয়েই জয় করেছি সবার মন জাদু দিয়ে নয় মি.আকাশ ও কিন্তু আমার আব্বু আম্মুর থেকে আমার চেয়ে বেশী ভালোবাসা পায় তার বেলা কিছু না তবু আমায় হিংসে করে,খুনসুটি করে আমার সাথে।
এই ২০বছরে কিন্তু তাই বলে কম ঝড় আসে নি আমাদের জিবনে।কিন্তু আমাদের একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসার জোরেই আমরা সব ঝড় কে জয় করেছি।
একে অন্যের ভূল গুলো শুধরে দিয়েছি রেগে নয়,ভালোবেসে।
আজ ২০ বছর পরও আকাশ আমায় নিয়ে রাতের আকাশে চাঁদের জোসনা দেখে,তারা গুণে, ছোট ছোট উপহার আর সারপ্রাইজ দিয়ে আমাকে আজও অবাক করে।সুযোগ পেলেই আমার প্রিয় নদীর পাড়ে নিয়ে যায় আমাকে।
আজও তার চাই রজনীর সেই খোলা চুল।
চাওয়ার থেকে অনেক বেশী পেয়েছি আকাশের রজনী হয়ে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ এই সুখ নিয়েই যেন মরতে পারি বিধাতার কাছে এই প্রার্থনা করি।
(বিশ্বাস,বন্ধুত
্ব,ভালোবাসা,কিছু প্রতিশ্রুতি একটা সুন্দর জীবন উপহার দিবে আপনাকে। তাই সকলকেই বলব সৎ পথে থাকুন মানুষকে ভালোবাসুন দেখবেন চারপাশ টা ভালোবাসায় ভরে যাবে।আর হিংসা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে।হিংসা করে জিবনে সুখী হওয়া যায় না সুখী হতে হয় ভালোবেসে।)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত