ভালোবাসার তালা

ভালোবাসার তালা

“পাগল তোর জন্য রে পাগল এ মন পাগল, মুখে বলি দূরে যা মন বলে থেকে যা, দূরে গেলে মন বুঝে তুই কত আপন।”
গানটি শুনছে লাউডস্পিকার দিয়ে রাহেম। পাশেই বসে আছে ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু মিলন। গানটি শুনে মিলন বলে উঠলো: দোস্ত আর
কতদিন অপেক্ষা করবি তুই বল তো? প্রশ্ন শুনে রাহেম গানটি বন্ধ করে
উত্তর দিল: জানি না রে।
-দোস্ত দেড় বছর ধরে হৃদিতাকে বলে আসতেছিস যে তুই ওকে কত ভালোবাসিস। ওই মেয়ে তো তোকে পাত্তাই দেয় না।
-দোস্ত ভালোবাসা এমন করেই শুরু হয়। তুই দেখিস একদিন ও আমাকে ঠিকই ভালোবাসবে। হয়তো সেদিন আমি থাকবো না।
-দোস্ত এটা অসম্ভবপ্রায়। আমার একটা কথা শুন ভাই বাংলাদেশে অনেক মেয়ে আছে। এইটা বাদ দে না।
-হুম ঠিকই বলেছিস দোস্ত। বাংলাদেশে অনেক মেয়ে আছে কিন্তু ওর মত আর কেউ নেই। ও একজনই।
-কেন? কি আছে ওর মধ্যে?
-ওর মধ্যে আছে এমন চোখ যা হয়তো অন্যকারো চোখে নেই। চোখটা দেখলেই বুঝা যায় ও কতটা সরল মন। আর তুই তো জানিস মানুষের চরিত্র বা মন
কেমন তা চোখ দেখলেই বুঝা যায়। যেদিন ওকে প্রথম ভার্সিটিতে দেখি সেদিন ও একটা নীল শাড়ি পড়ে আসছিলো (বলতে বলতেই দেড়
বছর আগের ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেল রাহেম)।
রাহেম প্রতিদিনের মত সেদিনও ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেল একজনকে দেখে। মেয়েটাকে
দেখে তাকিয়েই আছে রাহেম। ওর কোন দোষ নেই মেয়েটার চোখটা এতই সুন্দর যে রাহেম চোখ ফিরাতেই পারছে না। তার উপরে নীল শাড়ি
পড়ে আসছে বলে মেয়েটাকে পরীর মত লাগছে। কপালে ছোট কালো টিপ টা যেন সোনায় সোহাগা। আর সেই চোখের নিচের কাজলটা যেন
মেয়েটার সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিল। ব্যাস সেখানেই রাহেমের হৃদয় এনকাউন্টার হয়ে গেল। তবে সেটা কেউ টের পায় নি।।

মেয়েটার ব্যাপারে খোজ নিতে বন্ধুদের আশ্রয় নিল। তারপর মেয়েটার ব্যাপারে খোজ নিতে বন্ধুদের তিনদিন সময় লাগলো। কিন্তু এই
তিনদিনে একফোটা শান্তি পেল না রাহেম। চোখ মেলে রাখলে মেয়েটার চোখ তার চোখে ভাসে। আর চোখ বন্ধ করলে মেয়েটাকে
আরো কাছে পাওয়া যায়। তিনদিন পর মেয়েটার খোজ পাওয়ার পর মেয়েটার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করে রাহেম। কিন্তু
মেয়েটা কথা বলে না। খুব কষ্ট হত তখন রাহেমের। এভাবেই দেড় বছর পার করলো রাহেম।
-ওই দোস্ত কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?
বন্ধু মিলনের কন্ঠে যেন চরম ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো রাহেম এবং পরক্ষনে বলল: কোথাও না দোস্ত। এখনো চোখ বুঝলেই হৃদিতার চোখ
যেন আমার একদম কাছে চলে আসে। এরই মধ্যে যেই দোকানে বসে ছিল ওরা দুজন সেই দোকানদার বলে
উঠলো: মামারা একটা কথা কই?
মিলন বলে উঠল: বলেন মামা।
-আসলে অনেক রাত হইছে তো তাই দোকানটা বন্ধ করতাম। আপনারা যদি…..
-আরে ঠিক আছে মামা। আমরা যাচ্ছি তুমি বন্ধ করো। বিল কত হল?
-২২ টাকা।
মিলন পকেট থেকে টাকা বের করতে না করতেই রাহেমের দিকে তাকালো দেখলো রাহেম কাঁদছে। তাড়াতাড়ি তাকে ধরে বাইরে
বের করে জিজ্ঞেস করলো: কি হয়েছে রে বন্ধু কাঁদছিস কেন? রাহেম কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠল: দোস্ত ওকে খুব ভালোবাসি রে
কিন্তু ওকে বুঝাতে পারছি না। মিলন অনেক গভীর একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল: জানি দোস্ত। তুই হৃদিতাকে ফোন করলেই তো
পারিস।
-কতবার চেষ্টা করেছি কিন্তু আমার নাম শুনলেই ফোন কেটে দেয়।
-তাহলে তুই এক কাজ কর। হৃদিতাকে ভালো কোনো রোমান্টিক গিফট দে।
-যে আমার নাম শুনতে চায় না তাকে গিফট দেওয়া কি ঠিক হবে?
-অবশ্যই হবে। দেখ বন্ধু অনেক মেয়েরা এরকম হয় যে তারা সহজে প্রেমে পড়ে না। কিন্তু একবার যদি লাইনটা ধরতে পারিস তাহলে
সেইসব মেয়েরাই লাইফটাইম থাকে।
-হুম। তাহলে আমি কি করতে পারি।
-তুই ওকে ভালোবাসার কথা বলবি কিন্তু অন্য স্টাইলে।
-কি স্টাইলে?
-সেটা আমি কি জানি? আমি কি হৃদিতার প্রেমে পড়েছি নাকি? তুই পড়েছিস সো, তুইই চিন্তা কর।
-হুম।
-আচ্ছা বন্ধু এখন যা তাহলে অনেক রাত হল
-আচ্ছা ঠিক আছে। যা যেতে যেতে মিলন বলে উঠল: আর শুন কান্নাকাটি করবি না একদম। বলতে বলতেই চলে গেল যার যার
বাসার দিকে।


হৃদিতা খুব কনজারভেটিভ পরিবারে বড় হয়েছে। বাবা-মা খুব কড়া নজরে রাখে তাকে। বাবা- মা এর একটাই কথা বিয়ের আগে কোনো প্রেম নয়।
প্রেম হলে হবে বিয়ের পর। এটাই নিয়ম। তাই আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকেই একপ্রকার বলতে গেলে চান্স দেয়নি। কিন্তু তার ভাবতে খুব
ভালো লাগে। ভাবনাগুলো ডায়েরিতে লিখতে খুব ভালোবাসে সে। আজো ডায়েরি লিখছে সে: “জীবনে এমন একজন আসুক
যে কিনা আমাকে মুক্ত করে আকাশে পাখা মেলাতে শিখাবে। এমন একজন আসুক যার দেওয়া স্মৃতিগুলো নিয়ে কাটানো

যাবে যুগের পর যুগ। জীবনে এমন একজন আসুক যে কিনা আমাকে দেখার জন্য তার চোখ বন্ধ করবে এবং আমিও আমার চোখ বন্ধ করবো আর চোখ বন্ধ
করে আমার কানের কাছে এসে বলবে “খুব ভালোবাসি তোমায়” লিখতে লিখতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে হৃদিতা আর সাথে সাথেই
দেখলো রাহেমের চেহারা। রাহেমের চেহারা দেখে আতংকে চোখের পলক খুলে গেল। আবার আস্তে করে চোখ বন্ধ করে দেখল আবার রাহেমের চেহারা
এবার যেন দেখছে রাহেমেরও চোখ বন্ধ আর হৃদিতার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলছে “খুব ভালোবাসি তোমায়।”আবার আতংকে চোখ এমনি খুলে গেল।
কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না হৃদিতা। এরকম হওয়ার মানে কি? আর বেশি না ভেবে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে ডায়েরী কে বিছানার বালিশের নিচে রেখে
ঘুমিয়ে পড়ল হৃদিতা।


ওদিকে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেই ঘুমাতে যাবে ওমনি মাথায় একটা আইডিয়া এলো রাহেমের। ফোন দিল মিলনকে
-দোস্ত কালকে একটু আমার সাথে বের হবি প্লিজ। অনেক ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে। (রাহেম)
-হুম অবশ্যই কোথায় যেতে হবে?
-সেটা সকালেই বলবো। এখন ঘুমা। ফোন রেখে দিল রাহেম। ওদিকে মিলন খুব খুশি হল এই ভেবে “যাক রাহেমের মনটা তো ভালো
হয়েছে।” এখন দেখি সকালে কোথায় যায় সে?
রাহেম সারারাতও ঘুমায় না। কি যেন ভাবছে সে। ভাবতে ভাবতেই কখন যে ফজরের আজান দিয়ে দিল কখন যে এতগুলো সময় পার হল কিছুই
বুঝে উঠতে পারলো না রাহেম। সে নামাজ পড়ে নিলো। এরপর


সকাল ৭টা। ফোন দিলো মিলনকে রাহেম। ২, ৩ বার রিং হওয়ার পর ধরল মিলন। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল: হ্যালো
-দোস্ত ঘুমাস নাকি? (রাহেম)
-না রে দোস্ত লুডু খেলছি। সাপ লুডু। খেলবি?
-জলদি আয় বাইরে যাবো তো।
-উফফ sorry দোস্ত একদম ভুলে গেছি। তুই দাড়া আমি আসতেছি। ৯ মিনিট।
-৯ মিনিট!!!! বাবার জনমেও শুনিনাই কেউ কাউকে ৯ মিনিট দেয়। আচ্ছা আয় জ্বলদি।
-ওকে।
ঠিক ২২ মিনিট পর এলো মিলন। আসার সাথে সাথেই রাহেম বলল: স্যার আপনি জানেন কত মিনিট হইছে?
-কত আর হবে ১১ মিনিট!
-না। পুরা ২২ মিনিট।!!!
-আচ্ছা চল কোথায় যাবি? আর কি ব্যাপার দোস্ত এত খুশি লাগতেছে কেন আজকে?
-বলছি। চল।


কিছুক্ষন পর। রাস্তার পাশ ধরে হেটে যাচ্ছে রাহেম ও মিলন।
-আমার বাপ দাদার ১৪ গুষ্টিও দেখে নাই এমনকি শুনেও নাই এমন গিফট এর কথা। (মিলন)
-কোন গিফট?
-তুই যেটা দিবি।
-ওহ! ওইটা।
-হুম। জীবনের প্রথমবার শকড খেয়েছিলাম কবে জানিস?
-কবে?
-কিছুদিন আগে একটা বই বের হইছিল
“গল্পদূত” ওইখানে একটা লেখকের লিখা ছাপা হয়েছিল
“ভালোবাসার সেফটিপিন।” ওইটা
পড়ে। আর আজকে শকড খাইলাম।
-ওইটা আমিও পড়েছি রে। অসম্ভব রোমান্টিক।
-সেফটিপিন পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু তুই তো ওর রেকর্ড ভেঙে ফেলছিস।
“তালা”!!!! কেউ কাউকে তালা গিফট করে আজ সেটা জীবনের প্রথমবার দেখছি।
-সেফটিপিন এর কথা মনে হয় আগে থেকে জানতি তুই?
-না সেটা জানতাম না। কিন্তু এইটা জানতাম না যে তুইও এতো বেশি রোমান্টিক হতে পারস। গিফট টা কিভাবে দিবি শুনি?
-সেটা সময় আসলেই দেখবি।
-দোস্ত সাসপেন্স জিনিষটা অনেক খারাপ লাগে।
-সাসপেন্স না থাকলে মজাও পাবি না। চুপ থাক। রিক্সা নে। বাসায় যাবো।
-এই রিক্সা দাড়াও।
রিক্সায় উঠলো দু’জন। রাহেম কানে হেডফোন লাগালো। এই মাত্র একটি গিফট এর অর্ডার দিয়ে এলো সে। সেটার জন্যই কাল রাত্রে ঘুম হয়নি
তার। কিন্তু মিলনের কথাও ঠিক কিভাবে দিবে গিফট?




হৃদিতার ভার্সিটি নেই। তাই আজ সারাদিন বাসার কাজকর্মে ব্যাস্ত সে। কখনো রান্না করছে, কখনো থালা বাসুন মাজছে। মোট কথা,
বাসার যাবতীয় কাজ করছে সে। এসব কাজের মধ্যে সে যেন কি একটা আনন্দ খুজে পায় সে। আনন্দ শেয়ার করার জন্যেও কাউকে পায় না সে।
কিন্তু কিভাবে শেয়ার করবে সে? ভাবতে ভাবতেই চোখের এক ফোটা পানি ব্রেসিংয়ের উপর পড়ে। এটা কোনো দুঃখের পানির ফোটা নয়
এটা হল একরাশ স্বপ্নের, আশার, এক আলাদা অনূভুতির চোখের পানি। কে ভালোবাসবে তাকে? ভার্সিটতে তো শুধু ওই রাহেম ছাড়া
আর কেউই তার সাথে কথা বলে না। ভাবতেই অবাক লাগে যে ছেলেকে কোনোদিন পাত্তা পর্যন্ত দেয়নি সেই ছেলে নাকি
এখনো তার পিছনে আঠার মত লেগে আছে। কিন্তু আঠা হোক কিংবা সুপার গ্লু বিয়ের আগে কোনো ছেলের সাথে প্রেম অসম্ভব। ভাবতে
ভাবতে আবার বাস্তব জীবনে চলে আসে সে।



রাত ১২টা।
রাহেম তার গিফট এর প্যাকেট টা  নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ল। আজ প্রথম সে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে।


ওদিকে হৃদিতাও আজ আর ভাবনাগুলো ডায়েরীর পাতায় আকছে না। সকালে ক্লাস আছে তাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ভাগ্যে বোধ
হয় অন্য কিছু লিখা ছিল।

সকাল ৭টা। রাহেম ভার্সিটি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ওদিকে হৃদিতাও। ঠিক ৮:৩০ এ দুজনের রিক্সাই একদম দু’জনার সামনাসামনি দাঁড়াল। রাহেম
হৃদিতাকে দেখে যথারীতি চোখ ফেরাতে পারছে না। আর হৃদিতা রাহেমকে দেখেও না দেখার ভান না করে পারছে না। রাহেম
দেখলো হৃদিতা চলে যাচ্ছে। দৌড়ে হৃদিতার একদম সামনে গিয়ে হৃদিতার পথ আটকালো। আজ পর্যন্ত সে যেটা করেনি সেটাই করছে।
-এক্সকিউজমি, একটু শুনো মুখে বিরক্তের ছাপ স্পষ্ট। তাই মুখটা মাটির নিচে করে বলছে হৃদিতা: জ্বি বলেন।
পকেট থেকে সেই কাংখিত গিফট বের করে বলল রাহেম: এটা তোমার জন্য। একটু বেশিই অবাক হয়ে হৃদিতার উত্তর: এটা কি?
-গিফট।
-sorry. আমি গিফট নেই না।
-আমি কি নিতে বলেছি? জাষ্ট আমার গিফট টা আমার সামনে খুলো এখনই।
-কিন্তু আপনার গিফট আমি খুলবো কেন? আপনি প্লিজ সরুন তো আমার ক্লাস আছে।
-তুমি খুলবে কিনা বলো। না হলে আমি scene create করবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে দিন।
অতঃপর গিফট বক্স হাতে নিয়ে সেটা খুলল হৃদিতা। ভিতরে দেখলো চকলেট কালারের একটা তালা। এরকম তালা কখনই দেখেনি
সে। অদ্ভুতরকমের সুন্দর একটা তালা। আর চকলেট কালার টাও খুব বেশি পছন্দ যে তাও নয় হৃদিতার কিন্তু এ কেমন তালা? তাই তো অবাক হয়েই
জিজ্ঞেস করল: এটা কি তালা?
-হুম।
-ওয়াও! খুব ই সুন্দর।
-এটা কিছুই না। (একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে) এই তালার সবচেয়ে সুন্দর পার্ট কি জানো?
হাত দিয়ে তালা নেড়ে নেড়ে দেখছে আর বলছে: কি?
-এই তালাতে না আছে কোনো চাবি না আছে চাবি দিয়ে খুলার মত কোনো সিস্টেম। শুনে বিশ্বাস করতে পারলো না
হৃদিতা। পরক্ষনে ভালো করে নেড়ে চেড়ে দেখে বলল: ও হ্যা তাই তো। এটা কেমন তালা?
-এটা হল আমার ভালোবাসার তালা। হৃদিতার এবার মুখ গোমরা হয়ে গেলো। সে কোনো কথাই বলছে না। ওদিকে রাহেম বলে যাচ্ছে: এই
তালার একটি বিশেষ গুন আছে। তালাটি হাতে ধরে বলো “খুব ভালোবাসি তোমায়” তাহলেই খুলে যায়। আর এটাই আমি তোমাকে
দেড় বছর ধরে বলতে চেয়েছি। হৃদিতা চাইলেও কিছুই বলতে পারছে না। শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেই চকলেট
কালারের তালার উপর। সেদিন দু’জনের আর কেউই কথা বলল না। এমনকি ক্লাসও করলো না। হৃদিতা সেই গিফট টা বাসায়ও নিয়ে
এসেছে। খুব স্বযত্নে রেখে দিয়েছে সে। আর ওদিকে



রাহেমও মিলনকে সব বলল।
-দোস্ত যা করছিস তা তো ইতিহাস হয়ে থাকবে। (মিলন)
-কোথায় কি করলাম?
-শালার নাতি যা করছো তো করছোই তার উপর দিয়ে আমাকে ট্রিটও দিলি না।
-ওলে আমার মটু রে। বল কি খাবি?
-দেখ দোস্ত মটু বলে আমাকে অসম্মান করবি না।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-হৃদিতার মুখের এক্সপ্রেশন কি ছিল রে দোস্ত।
-দোস্ত মুখের এক্সপ্রেশন বলতে পারবো না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই আমার প্রতি ভালোবাসা জাগাচ্ছে।
-আরে বেটা মেয়েটার দম আছে কিন্তু বলতে হবে তা না হলে তুই যেই  শকড মেয়েটাকে দিছিস ও তো হার্ট এটাক হবার কথা।
-আচ্ছা বন্ধু বল না। ও আমাকে ভালোবাসবে তো।
-বাসবে। যদি মিলনের গোল্ডেন টাচ পায় তোর ভালোবাসা।
-কি!!!!! আচ্ছা বন্ধু তোর যেটা খুশি কর।
-ঠিক আছে। কাল থেকে তুই ভার্সিটি যাবি না।
-ওই হারামজাদা মোটকা। তুই কি ব্রেকাপ করাবি?
-বলতেছি না যাবি না।
-ঠিক আছে যা যাবো না।
ঠিকই তারপর দিন থেকে আর ভার্সিটি গেল না রাহেম। কিন্তু এ কি হল হৃদিতা এখন রাহেমকে হন্য হয়ে খুজছে। আর সেটার দিকে কড়া
নজর রেখেছে মিলন। কয়দিন পার হল তাও রাহেমের খোজ নেই। হৃদিতা যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি আর দেখা পাবে না এই অদ্ভুত
ছেলেটার। কিন্তু গিফট টা দেওয়ার পর থেকে হৃদিতার ঘুম কেড়ে নিয়েছে সে। তার উপর দিয়ে আবার তার কোনো খোজ নেই। তার
অবস্থা এখন অনেকটা কাচা রসুনের মত। ভিতর দিয়ে জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু বাহিরটা ঠিকই আগের মতই আছে।…


কিছুদিন পরের কথা।
-মোটকা রে আর কত তুই আমাকে কষ্ট দিবি। (রাহেম)
-কই কষ্ট দিলাম? তুই মেয়ের জন্য যেইপরিমান কষ্ট করছিস যেই চোখের পানি ফেলেছিস আমিও চাই
হৃদিতা তোর জন্য ওর চোখের পানি ফেলুক।
-মোটকা আর ভালো কিছু পেলি না?

হঠাৎ মিলনের চোখ কার উপর যেন পড়ল। সে রাহেমকে ডাক দিয়ে বলল: বন্ধু ওইটা কে রে? দেখ তো।
রাহেম যেই চোখ ঘুরালো ওমনি চমকে উঠল। কারণ সেটা আর কেউ ছিল না। ছিল হৃদিতা। ওমনি মিলন তাকে
ধরে বলল: বন্ধু এবার আমার লাস্ট দাবার চাল দেবো। তুই বাসায় যা।
-কি বলিস চাল টাল? আরে শত হলেও আমাদের এলাকায় প্রথমবার আসছে। ওকে তো স্বাগতম জানানো দরকার।
-হুম। স্বাগতমই জানাবো। যাতে আর কোনো দিন যেতে না পারে। তুই যা তো বাসায় যা।
-মোটকার বাচ্চা মোটকা যদি উল্টো কিছু করেছিস তাহলে তোর পেট বের করে আমি ফুটবল খেলবো।
-আচ্ছা খেলিস তুই এখন বাসায় গিয়ে শুয়ে থাক। আর শোন….. (কানে কানে কিছু একটা বলল)
চলে গেল রাহেম। কিছুক্ষণ পর আপনা আপনি হৃদিতা মিলনের কাছে এসে বলল: আচ্ছা রাহেমের বাসা কোনটা বলতে পারেন?
-কেন? আপনি কে?
-ওর খুব কাছের বন্ধু আমি। ওর সাথে আপনাকে কয়েকবার দেখেছি তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম। নিশ্চই
আপনি জানেন। প্লিজ জানলে বলুন। খুব উপকার হবে।
-আসলে রাহেম তো এক্সিডেন্ট করেছে। এতদিন হাসপাতালে ছিল কাল নিয়ে আসলাম।
-কি!!!!! ও এক্সিডেন্ট করেছে!!!!!! কবে? কখন? কোথায়?
-সে অনেক লম্বা কাহিনী। আপনাকে গিফট দেওয়ার পর থেকে ও কিছুই খায়নি আর। জোড় করেও খাওয়াতে পারছিল না কেউ। আমরা
প্ল্যান করেছিলাম ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। কিন্তু যেই বাইক ও ড্রাইভ করছিল সেটার ব্রেক ছিল না। আমরাও জানতাম না। পরে ও বাইকে
চড়ার পরই এক্সিডেন্ট করে। কথাগুলো শুনে হৃদিতার বুক ধরপর করতে লাগল। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো। আর
বলতে লাগল কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে: সব আমার জন্যই হল। প্লিজ আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলুন। প্লিজ। আমি আর পারছি না। প্লিজ।
মনে মনে খুব হাসছে মিলন। কিন্তু মুখে অন্য কথা: (কান্না কান্না সুরে) ঠিক আছে চলুন।


বাসায় ঢুকলো মিলন ও হৃদিতা। ঢুকেই দেখে রাহেম ডান কাধ হয়ে শুয়ে আছে। হাতে বেন্ডেজ করা। মাথায়ও বেন্ডেজ করা। মনে মনে
মিলন বলল “শালার নাতি এত চালু কেন” কিন্তু মুখে সে পরক্ষণে হৃদিতাকে বলল: ওই দেখো শুয়ে আছে।

হৃদিতা রাহেমের অবস্থা দেখে আরো কান্না কান্না অবস্থায় এক পা, দু পা, করে রাহেমের দিকে এগুচ্ছে। বসলো একদম রাহেমের
কাছে। আর ওদিকে সবই টের পাচ্ছে রাহেম। তার বুক ও ধরপর করছে। এরপর হৃদিতা বলে উঠল: সেদিন ওই ‘ভালোবাসার তালা’ টা না
দিলে আমি হয়তো কখনোই বুঝতাম না ভালোবাসা কি জিনিষ। প্রিয় মানুষের সাথে একটু কথা বলতে যে কি সুখ পাওয়া যায় তা হয়তো
কখনোই বুঝতাম না। আরে পাগল তো আমি যে তোমার দেড় বছরের ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর প্রতি মূহুর্তেই
তোমার মত একজনকেই অনুভব করতাম। কিন্তু আজ অনুভবগুলো বাস্তবে পরিনত হয়েছে আর তাই তোমার মত আমিও
তোমাকে আমার ভালোবাসায় তালায় বন্দি করতে এসেছি। (অতঃপর ব্যাগ থেকে সেই দেওয়া তালাটি বের করে বলতে লাগল) “খুব
ভালোবাসি তোমায়” সাথে সাথে বন্ধ করা তালাটি খুলে গেল। আবার তালা বন্ধ করে আবার বলছে হৃদিতা “খুব খুব খুব ভালোবাসি
তোমায়”। এরপর



হৃদিতা যখন আবার বলল “খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমায়” তখন বন্ধ করা তালাটি আর খুলল না। অবাক হল হৃদিতা! অবাক হল মিলনও। “ব্যাপার
কি?” (মনে মনে মিলন) একই প্রশ্ন হৃদিতার মনে। এবার রাহেম উঠে বসলো। তারপর হৃদিতার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হেসে বলতে
লাগল: একটা কথা তো বলাই হয়নি। “খুব ভালোবাসি তোমায়” শব্দটি শুধু ৩ বারের জন্য সেট করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৩ বারই হয়ে গেছে। এবার
একটা টুইস্ট শুনো। এই তালা যদি ভালোবেসে খুলতে যাও তাহলে আমাদের দু’জনকে একসাথে বলতে হবে “খুব ভালোবাসি তোমায়”।

হৃদিতা এতক্ষণ মন দিয়ে কথা শুনছিল। কিন্তু পরক্ষনে লক্ষ্য করলো রাহেম ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে। অবাক হল হৃদিতা। জীবনের প্রথম কাউকে
ভালোবেসেছে। প্রথম প্রেমেই এত বড় নাটক। এত বড় মিথ্যা। পরক্ষনে চোখ বেয়ে পানি পড়তে চাইলেও সে আটকে রাখে। কেমন যেন চিনচিনে
ব্যাথা অনুভব করছে সে। কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কাউকে কিছু না বলেই চলে যেতে উঠলো হৃদিতা। হাতে থাকা “তালা” টি
রেখে উঠেও পড়লো সে। পরক্ষনে রাহেম হৃদিতার হাত ধরে ফেলে আর বলে: তোমাকে হারাবার জন্য এই নাটক করিনি হৃদিতা
ভালোবেসে করেছি। “হাত ছাড়ুন” (রাগী কন্ঠে হৃদিতা)। “না ছাড়বো না। আমার মিথ্যেটা চোখে পড়লো আর আমার
ভালোবাসা?” “মাফ করবেন আমাকে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম মানুষ এত স্বার্থপর হয় যে তার স্বার্থ পুরোন করতে সে সব করতে পারে।

প্লিজ হাতটা ছাড়ুন। আমাকে যেতে দিন।” “ঠিক আছে যাও বাধা দিবো না।” (হাত ছেড়ে দিয়ে বলল রাহেম) পরক্ষনে সেখান থেকে চলে গেল
হৃদিতা। তার যাওয়ার রাস্তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে রাহেম।

সারা রাস্তায় সে কেঁদে কেঁদে বাসায় এসেছে। “মানুষ এতো স্বার্থপর কেমন করে হয়?” সারারাত জেগে কাটিয়ে দেয় হৃদিতা। কেন
যেন ঘুম আসছিলো না তার।

আর ঐদিকে রাহেমেরও একই অবস্থা। সারারাত জেগে শুধু ভেবেছে “আমি তো সত্যিই অন্যায় করে ফেলেছি ওকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি

এখন একটাই উপায় ওকে sorry বলতে হবে। কখনো কখনো ১টা sorry মানুষের জীবন বদলে দেয়। কিন্তু
মেয়ে মানুষ বলে কথা ঝাটকা না দিলে দূর্বল হবে না। এখন sorry কিভাবে বলি তাকে?” ভাবতে ভাবতে ভেবেই নিলো কি করে
sorry বলবে সে হৃদিতাকে।


পরদিন সকালবেলা। হৃদিতা সারারাত ঘুমায়নি বলে সারাদিন ঘুমিয়ে নিচ্ছে। ভার্সিটি যায়নি। গিয়ে কি আর
করবে কেউ তো আর নেই। একজন ছিল কিন্তু সেও অন্য মানুষের মত স্বার্থপর হল। তাই ভেবে ঘুমিয়ে নিচ্ছে।

আর ঐদিকে রাহেম তার sorry গিফটনিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটরসামনে। কিন্তু হৃদিতার কোনো পাত্ত্বাই নেই। “কি যে করা যায়।”
তাই ভেবে পাচ্ছে না রাহেম। হঠাৎ মিলন বলে উঠলো: দোস্ত আমি কিছু করি? মিলনের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো রাহেম তাই তাকে
উদ্দেশ্য করে বলছে: জ্বি না মটু সাহেব। আপনি আমার অনেক হেল্প করছেন। এমন হেল্প করছেন যে আমার
ভালোবাসার মানুষ আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। প্লিজ আপনি চুপ থাকুন। কথাটি শুনে মিলন বলল: দেখিস
একদিন এই মটুই তোকে তোর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবে। কথার উত্তরে রাহেম বলল: আর সেইদিনটি কোনোদিনও আসবে না।
তুই যাতো যা আমার চোখের সামনে থেকে। চলে গেল মিলন। সে হয়তো জানে এর সমাধান। কিন্তু এখন কিছুই বলবে
না সে। তাই নিরবে চলে গেল। ওদিকে গিফট নিয়ে দাঁড়িয়েই আছে রাহেম। সন্ধ্যা হতে চলল। কিন্তু হৃদিতা এখনো আসলো না। তাই সেও
মন খারাপ করে চলে গেল বাসায়।

আজ সারাদিনই হৃদিতা ঘুমিয়েছে। ওর মন খারাপ থাকলে সারাদিনই ঘুমায় মেয়েটা। ঘুম নাকি মানুষের দুঃখকে নিস্তেজ করে দেয়। তাই
সে ঘুমায়। কিন্তু মন যে কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। তাই মনকে শান্ত করার জন্য অন্য মনুষ্ক হতে হবে ভেবে পড়তে বসল কিন্তু তবুও যেন মন ভার
হয়ে আছে তার। ব্যাগ থেকে বই বের করার সময় খেয়াল করল ব্যাগে সেই “তালা”টি। “তালা”টি নিয়ে আবার সে অন্যমনুষ্ক হয়ে যায়।
হারিয়ে যায় “ভালোবাসার তালা” দেওয়ার সময় যে কথাগুলো বলেছিল রাহেম সেই কথায়। ভাবতে
ভাবতে রাত পার করে দেয় সে।

মিলনের খোজ নেই অনেকদিন। কোথায় যে গেছে কিছুই বুঝতে পারছে না রাহেম। বেস্ট ফ্রেন্ডের একটাই ঝামেলা থাকলে
জ্বালাবে আর না থাকলেও জ্বালাবে। শুধু পার্থক্য হল না থাকাকালীন তাদের জ্বালাতন গুলোই মিস করে মানুষ। রাহেমের
ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বাসায় গিয়ে খোজ করলো তাও নেই। খুবই মেজাজ খারাপ। এমনি ৩ দিন ধরে হৃদিতার কোনো খোজ নেই তারউপর
আবার মিলনকেও পাচ্ছে না মনের কথা বলবার মত।।

হৃদিতা ৩ দিন ধরে ভার্সিটি যাচ্ছে না। ছেলে পক্ষ আসবে তাই ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তার বাবা-মা। কিন্তু হৃদিতার মন থেকে এখনো যে
রাহেমকে মুছতে পারেনি। প্রতিক্ষনেই শুধু তার হৃদয় টা বলে “এখানে রাহেম থাকলে কত ভালো হতো” এই মনটাও বেঈমান। থাকে
একজনের মধ্যে আর কাঁদে আরেকজনের জন্যে। কি করবে কিছুই ভেবে পায় না হৃদিতা। এরই মধ্যে একটা ফোন আসে হৃদিতার
ফোনে। অবাক হল হৃদিতা। কারণ তাকে ফোন করার মত তো কেউ নেই। ধরবে কি ধরবে না এভাবে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই ধরে ফেলল
-হ্যালো। (অপাশ থেকে)
-হ্যালো কে বলছেন?
-আমি…………………………….

পরদিন সকাল ৮টা।
বুকটায় অনেক বেশি টান অনুভব হচ্ছে হৃদিতার। আবার একদিকে খুশিও সে। টানটা রাহেমের জন্য। আর খুশিও রাহেমের জন্য। কাল রাতে ফোন
দিয়েছিল মিলন। সে যা বলল তাতে করে রাহেমের জন্য ভালোবাসা যেন আরো বেরে গেল। সে যা বলেছিল: “আমি মিলন। আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।
জীবনে ১টা sorry খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ জীবনটাকে নতুন চান্স দেওয়ার জন্য। এই আমাকে দেখুন। আমার আজ থেকে ৮ বছর আগে ১টা ভালোবাসার মানুষ
ছিলো কিন্তু তাকে আমি কোনোদিনও পাত্ত্বা দিতাম না। কারণ মেয়েটি ছিলো কুচকুচে কালো। মেয়েটি টানা ৬ বছর পর আমাকে সবার সামনে প্রপোজ করে।
আমি মেয়েটিকে অপমান করি। তারপর থেকে মেয়েটিকে আর দেখিনি। কিন্তু মেয়েটি চলে যাবার পর বুঝেছি সে কতটা ভালোবেসেছিলো আমায়। আমি
তো তাকে ভালোবাসিনি। আমি তো তাকে sorry বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজও তাকে বলতে পারিনি। কারণ সে চলে গেছে অনেক দূরে। সেখান থেকে
আর ফিরেও আসবে না। আপনি হয়তো ভাবছেন এইগুলো নাটক। ভাবতেই পারেন। কারণ ভাবনাটা আপনার। কিন্তু এগুলো বাস্তব। আমি আপনাকে
ফোন না করলেও পারতাম। আমি ফোন দিয়েছি এরজন্য যাতে আর নতুন করে কেউ মিলনের জন্ম দিতে না পারে।”
কথাগুলো শোনার পর ঘুমন্ত মানুষও জেগে উঠতে বাধ্য। আর সেটাই হয়েছে হৃদিতার ক্ষেত্রে। সাথে সাথেই মিলনকে বলে: আপনি প্লিজ
আগামীকাল রাহেমকে নিয়ে আসবেন। বোটানিক্যাল গার্ডেনে। প্লিজ। আর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে গভীর ঘুম থেকে
জাগ্রত করার জন্য। সত্যি আমি খুব খুশি আজ। প্লিজ কাল ওকে নিয়ে আসবেন।


সেই জন্যই বট গাছের নিচে অপেক্ষা করছে হৃদিতা।

ওদিকে সকাল সকাল মিলন গিয়ে রাহেমকে বলল: এবার চল দোস্ত তোকে আর কেউ থামাতে পারবে না। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে বোটানিক্যাল গার্ডেনে।
-কিসের সারপ্রাইজ? আগে বল তুই
এতদিন কোথায় ছিলি?
-তোর সারপ্রাইজ রেডি করছিলাম। এখন চল দেরি করলে কিন্তু সারপ্রাইজ চলে যাবে।

রেডি হয়ে মিলনের সাথেবোটানিক্যাল গার্ডেনে গেল রাহেম। মিলন রাহেমকে একটি বট গাছ দেখিয়ে বলল: ওই জায়গায় যা দাড়া আমি আসছি।
-কোথায় যাবি তুই? সারপ্রাইজ কই? মিলন যেতে যেতে বলল: তুই যা আমি আসছি।

রাহেম বট গাছের নিচে যেতেই দেখল হৃদিতা তার সামনে এসেছে। রাহেম যেন চমকে গেল। এ কি দেখছে সে? এইটাই কি সারপ্রাইজ।
রাহেম কিছু বলার আগেই হৃদিতা বলে উঠল

: কি দেখছো এমন করে? তুমি কি ভাবছো তোমাকে মাফ করে দিয়েছি? তোমাকে জীবনেও মাফ করবো না। কেন জানো আজ পর্যন্ত

আমাকে sorry বলছো তুমি? একটা জিনিষ তোমাকে দেখাই (ব্যাগ থেকে তালাটি বের করে) এইখানে একসঙ্গে বলার কোনো
প্রয়োজন ছিল না। সেই সময় এই তালার ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই তালাটি খুলে নি তখন। আজ বলছি “খুব ভালোবাসি
তোমায়” বন্ধ তালাটি খুলে গেল মুহুর্তেই। কিন্তু আমি তোমাকে এখনো মাফ করিনি। আগে আমাকে sorry বলো।

রাহেম যেন অপেক্ষা করছিল এই দিনটার জন্য তার পকেট থেকে আরেকটি সেই রকমবন্ধ তালা বের করে পরক্ষনে বলল: sorry (তালাটি
খুলে গেলো)। হৃদিতা অবাক হল। সত্যিই তালা দিয়েও মানুষের মনের ভাব প্রকাশ পায় আজ সেটা শিখেছে হৃদিতা। বটগাছের পাশেই একটি চেয়ার।
তার পাশে বসে আছে রাহেম ও হৃদিতা। আহ! কি পরম শান্তিতে রাহেমের কাধে মাথা রেখেছে হৃদিতা।
পরক্ষনে হৃদিতা বলে উঠল: আচ্ছা মিলন ভাই কোথায়? তাকে তো ধন্যবাদ জানানো হয়নি। তাকে বলছিলাম তোমার সাথে আসতে।
রাহেম বলতে লাগল: হ্যা ও তো সাথেই এসেছিলো। পরে বলল যে বটগাছের নিচে দাড়াতে। কিন্তু ধন্যবাদ কেন দিবা?
“কেন তুমি জানো না?” অতঃপর সব কথা বলে হৃদিতা। বলার পর বলে সত্যি সে যদি না থাকতো তাহলে আজ হয়তো আমরা এক হতে পারতাম না।

অবাক হল হৃদিতার মুখে এসব কথা শুনে রাহেম। দৌড়ে খুজতে লাগলমিলনকে। অতঃপর দেখল সে চায়ের দোকানে বসে মোবাইলে গেমস
খেলছে। পাশে গিয়ে বসল রাহেম
আর বলল: THANKS  রে দোস্ত। তুই না থাকলে হয়তো হৃদিতাকে পেতাম না। কিন্তু তুই আগে কখনোই তো বলিসনি তোর কষ্টের কথা।
-থাকলে তো বলবো (মিলনের মুচকি হাসির জবাব) রাহেম অবাক হয়ে: মানে!!!!!
-মানে সব মিথ্যা।!!!
-কি!!!! সব মিথ্যা!!!!!
-হুম রে দোস্ত।
-তাইলে তোরে আমি বাসায় পেলাম না কেন মটু?
-আরে দোস্ত আমি প্ল্যান করতেছিলাম। আর তাছাড়া হৃদিতার নাম্বারও তো যোগাড় করতে হইছে তাই না। তাই একটু আউট অফ
নেটওয়ার্ক হয়ে গিয়েছিলাম।
-সালার নাতী রে। যদি হৃদিতা জানতে পারে?
-জানতে পারলে কি? sorry বলবি। শেষ। আর এইবার না তালা দিও না। চাবি দিও। ওকে?
-তুই মানুষ হবি কবে?
অতঃপর আবার হৃদিতার কাছে চলে আসে। দেখে হৃদিতা হাতে নিয়ে বসে আছে সেই “তালা।” কিন্তু তালাটি বন্ধ করা।সামনে গিয়ে
বসলো হৃদিতার। তারপর রাহেম বলতে লাগল: খুব ভালোবাসি তোমায়। (তালাটি খুলে গেল) এবার তালাটি হাতে নিল রাহেম। বন্ধ
করলো তালাটি। এবার হৃদিতা বলে
উঠল: খুব ভালোবাসি তোমায়। (আবার তালাটি খুলে গেল)। ২বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর তাদের বিয়ে হয়। আর আজ তারা ভার্সিটির শ্রেষ্ঠ দম্পতি।।।।।।

(বিঃদ্রঃ মনে রাখবেন, যাকে ভালোবাসবেন তার পিছন কখনো ছাড়বেন না। চালিয়ে যান আপনার মত আপনি। সময় ও ভাগ্য যদি ঠিক
থাকে তাহলে দুনিয়ার কোনো শক্তি আপনার ভালোবাসাকে আটকে রাখতে পারবে না। এটাই ছিল এই গল্পের মূল উদ্দেশ্য।)

……………………………………….সমাপ্তি………………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত