নিশ্চুপ ভালোবাসা

নিশ্চুপ ভালোবাসা

ছেলেটা আজ কাঁদছে, খুব কাঁদছে। কিন্তু তার কান্না টা
কারো নজরে পরছে না। ছেলেটা একেবারে হাউমাউ
করে
কাঁদছে , কিন্তু তার কান্নার আওয়াজ আশেপাশের
কোনো ব্যক্তির কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। কারন এখন
প্রায় শেষরাত অতিবাহিত হতে যাচ্ছে , এ সময় সাধারণত
প্রায় সকলেই গভীর নিদ্রায় স্বপ্নের সাগরে ভাসতে
থাকে। ইনোও প্রতিদিন এই সময় অনলাইনকে good night
বলে অফলাইন হয়ে যায়। কিন্তু আজ সে চোখের জলে
নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির ফোটা গুলিও কেমন
তার চোখের পানি কে আড়াল করে ফেলছে। . . . . . . . . .
,
প্রায় ছয়মাস আগে ইনোর সাথে তাশুর বন্ধুত্ব হয়। ওরা
একি ভার্সিটিতে পড়ে। ক্লাসমেট হবার সুবাদে ওরা খুব
তারাতারি নিজেদের মধ্যে বেস্ট ফ্রেন্ডের সম্পর্ক গড়ে
তোলে। গল্পের সুত্র পাত সেদিন থেকে , যেদিন ইনো
যানতে পারে তাশুর জীবনে কেউ একজন আসতে চলেছে।
একদিন তাশু এসে ইনোকে বলছেঃ . . . . . . .
,
__কিরে দোস্ত , আমি এই রোদের মধ্যে তোকে খুজতে
খুজতে কালা পেত্নী হইয়া গেলাম। আর তুই এনে বইসা
বাদাম চাবাইতাছস।
__বাদাম চাবামু নাতো কি তর মতো সারাদিন মুরি
চাবামু। আর খোজা লাগবো কেন ফোন দিলেইতো
পারতি।
__দোস্ত আমি তো ভাবছি তুই ক্যাম্পাসেই থাকবি , তাই
আর ফোন দেইনাই।
__হে তুমিতো একেবারে নোবেল পুরুষ্কার পাবার মত
একটা কাজ করছো।
__হে তা তো অবশ্যই , ইভা বলে কথা। আচ্ছা বাদ দে ,
আমি না একটা কাজ করে ফেলছি।
__ওমা সেকি , আপনি কাজও করেন। আল্লাহ, আগে
কখনো শুনিনাই তো , আপনি অকাজ ছাড়া কোনো কাজ
করছেন।
__অফফ বাদ দে তো তর আজাইরা টিটকারী , ঠিক
অকাজি করছি , কিন্তু অকাজ শব্দ টা কেমন জেনো
সম্মানে লাগে।
__ওহহহ আচ্ছা , কি সম্মানিত ব্যক্তি আপনি তাইনা।
আচ্ছা আপনার সেই মহামূল্যবান অকাজ থুক্কু সেই কাজ
টা কি, বলেন শুনি. . . . .
__আমি না অন্তুকে আমার ফোন নাম্বার দিয়ে দিছি।
আসলে আমি দিতে চাইনাই , কিন্তু এমন ভাবে প্লিজ
প্লিজ বলবো আমার মায়া লাগছিলো তাই দিয়ে দিছি।
__খুব ভালো কাজ করছিস , এখন আমায় বলতে আসলি কেন,
যা না ফোন দিয়া মিট কর্। এইসব আজাইরা ফালতু আলাপ
আমারে শোনাস কেন? ধুর আমি গেলাম।
__এই আজিব কই যাস। আমি একা কি করমু , আমার জন্য
দাড়া , এই ইনো। . . . . . . . . . . . .
,
ইনো কখনো তাশুর সাথে অভিমান করে থাকতে পারেনা।
দোষটা ইনোরই , বড্ডো বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে
তাশুকে। তাশুও ইনো কে খুব ভালোবাসে , কিন্তু তাশুর
ভালোবাসাটা শুধুই বন্ধুত্বের্। . . . . . . . . . . . .
,
ইনোর অদ্ভুত অভিমানের জন্য নিজেকে দায়ী করা ছাড়া
অন্য আর কোনো অপশন নেই। তাই নিজেকে নিজেই
সান্তনা দিতে সে তাশু কে কল করে। কল করার পর ইনো
যেনো আকাশ থেকে পরলো। এতো রাতে এই প্রথম বার
তাশুর ফোন ওয়েটিং , কয়েকবার try করার পরেও যখন
তাশুর সাথে কথা হলো না, তখন অভিমানের অশ্রু গুলি
ইনোর গাল বেয়ে পরতে থাকে। . . . .
,
পরদিন ইনোর ভার্সিটিতে একদমই মন বসছে না। কারন আজ
তাশু ক্লাসে আসেনি। কয়েকবার কল করা হয়েছিলো but
তাশু বার বার ইনোর কল কেটে দিচ্ছিলো।
ইনো ভাবলো হয়তো সেদিনের ঘটনাটার জন্যই তাশু এমন
করছে। কিন্তু ইনো যানে তাশু ইনোর সাথে অভিমান করে
বেশিদিন থাকতে পারেনা। এর আগেও ওদের এইরকম
ঝগড়া হতো। ইনোর বিশ্বাস কাল তাশু এসে ইনো কে sorry
বলবে। . . . . এইসব ভাবতে ভাবতে ইনো বাড়ি চলে যায়। . . .
. . পরদিন ইনো মনমরা হয়ে ক্যাম্পাসে বসে আছে। পেছন
থেকে কে যেনো ইনোর গাল টা টেনে দিলো। ইনো পেছন
ঘুরে দেখে তাশু। তাশুকে দেখে ইনো মুখ সরিয়ে নিয়ে চুপ
অরে বসে আছে। তাশু বললোঃ . . . .
,
__কিরে দোস্ত কি হইছে কথা কবি না।
__সর সর তুই আমার সাথে আর জীবনেও কথা কবি না।
__আরে আজিব কি করলাম সেইটাত বলবি।
__ইসস এমন ভাব ধরতাছে মনেহয় কিছুই যানেনা ,
একেবারে নিষ্পাপ বাচ্চা।
__হ আমি তো বাচ্চাই , হিহিহি পিচ্চি আমি। কি মজা।
__হুর পিচ্চি যা , এনতে।
__অফফ রাগ করস কেন , কইবি ত কি হইছে। ওই আমি তর
দোস্তে না। আমারে কইবি না হু।
__কাল সারাদিন কই ছিলি ফোন ধরস নাই কেন?
__আরে তুই ফোনের কথা বাদ দে। কাল অন্তুত সাথে দেখা
করতে গেছিলাম। জানিস ছেলেটা কত্তো কিউট। কত্তো
ভালো ভদ্র লাজুক একটা ছেলে।
__অহ আচ্ছা খুব ভালো। তুই ওকে ভালোবাসিস তাই না।
রিলেশন করতেছিস ওর সাথে তাই না।
__নাহ ঠিক তা না , but মনেহয় কিছুদিনের মাঝেই করবো।
তুই কি বলিস , , , ,
__হে খুব ভালো হবে কর , খুব ভালো ছেলে , করেফেল
ভালো হবে।
__সত্যি বলছিস ? but ও যদি প্রপোজ না করে তাইলে
কেমনে কি আমি কি প্রপোজ করবো নাকি।
__হে ও লেট করলে তুই করে ফেল তোর তো আবার লজ্জা
শরম কম।
__কি বললি কুত্তা, হারামি, বান্দর , সাপ , ঘোড়া , ইন্দুর . .
. . . . . . . . .
__হইছে হইছে তুই তো আমায় টারজান বানাই দিবি। . . . .
,
সেইদিন ইনো তাশুর সাথে প্রান ভরে মজা করে নেয়।
কারন হয়তো আর কখনো এইভাবে দুষ্টুমি করার সময় তাশুর
হবেনা। কারন কিছুদিন পর তো আরেকজন কে তাশুর সময়
দিতে হবে। ইনো অভিনয় করাটা কে খুব অপছন্দ করতো।
কিন্তু আজ পরিস্থিতি ইনোকেই অভিনেতা বানিয়ে
দিয়েছে। বুকের মাঝে শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও তাশুর
সাথে হাসিমুখে কথা বলতে হয় ইনোর্। সেদিন রাতে তাশু
ইনো কে কল করে। তাশুর মুখে এতো খুশি এর আগে কখনো
ইনো ফিল করেনি। তাশু ইনো কে বললোঃ . . . . . . .
,
__দোস্ত কি হইছে জানস।
__না কইলে কেমনে জানমু।
__অফফ আচ্ছা কইতাছি তো , জানস অন্তু এখন আমায়
প্রপোজ করলো। wow কি লাজুক ছেলে , I love u বলেই
ফোন কেটে দিছে। আর এত্তো ভদ্র তোকে কি বলবো। I
just love him.
__wow দোস্তে কাল তাইলে পার্টি হবে।
__না রে দোস্ত কাল হবে না। কাল ওর সাথে দেখা করতে
যেতে হবে।
__অহ আচ্ছা , নো প্রবলেম। আচ্ছা দোস্ত রাখি তাহলে
তোর ও আবার ওয়েটিং এ পেলে মাইন্ড করতে পারে।
__আচ্ছা রাখ ও কিছুক্ষনের মধ্যেই ফোন দিবে হয়তো ।
,
ইনো এই প্রথম নিজ ইচ্ছায় তাশুর সাথে কথা বলতে
চাইলো না। মায়া বারিয়ে কি লাভ। কিছু কিছু সময় মায়া
কাটানো শিখতে হয়। যা নিজের নয় , তাকে আপন
ভাবাটাও পাপ। সেই পাপের ফল টাই এখন সে পাচ্ছে।
আচ্ছা তাশু কি কখনো ইনোর ভালোবাসা বুঝেনি নাকি
ইনো বুঝাতে অক্ষম। এই সকল চিন্তা ভাবনা ইনো কে
যেনো প্রতিমুহুর্তে আরোবেশি কষ্ট দেয়। . . .
,
ওদের রিলেশনের প্রায় দুমাস হয়ে গেছে। ইনোও
নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে , একদম নতুন ভাবে। অন্তু ইনোর
ভাগের কিছু সময় নয়। সম্পূর্ণ সময় টুকুই দখল করে নিছে।
তাশু এখনো ইনোর সাথে সময় কাটায় , হঠাৎ একদিন , তাও
সর্বচ্চ ৫ মিনিটের জন্য। তাশুর সাথে ইনোর সময়
কাটানোর কথা ভাবাটাও এখন আকাশ কুসুম কল্পনাতে
পরিনত হয়ে গেছে। তবুও খারাপ না , মাঝে মাঝে হলেও
দেখাত হয়। এই সব কথা ভেবেই সে নিজেকে সান্ত্বনা
দেয়। . . . . .
,
দুমাস পর হঠাৎই ইনো একদিন লক্ষ্য করলো তাশুর মাঝে
কিছুটা চেঞ্জ আসছে। তাশু আবার ইনো কে সময় দিতে
লাগলো। সব যেনো আগের মতো হয়ে গেলো। এই দুমাস
যেনো কিছুই হয়নি। এ যেনো আগের তাশু। ইনো কিছুদিন
পর যানতে পারলো , ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে ওদের ব্রেকাপ
হয়ে গেছে। এতে ইনো খুশি না হোলেও বেজার ও হয় নি।
কারন ইনো তার আগের তাশু কি ফিরে পেয়েছে। তাশুর
সেই আগের মত কথা বলা , সময় কাটানো , কেয়ার নেওয়া,
এতে যেনো ইনো আবার নতুন করে তাশুর প্রেমে পরে
গেছে। তাশুও যেনো এই কয়েক দিনে অন্তু কে একদম ভুলে
গেছে। ইনো ঠিক করলো সামনে তাশুর Birthday তে ইনো
তার মনের কথা সব বলে দিবে। . . .
,
দেখতে দেখতে তাশুর জন্মদিন এসে পড়েছে। ইনোর কাছে
খুব বেশী টাকাও নেই যা দিয়ে ইনো তাশুকে বড় ধরনের
সারপ্রাইজ দিতে পারবে। কিন্তু জন্মদিনে কিছুতো
একটা দিতেই হবে। তাই ইনো ৫০ টি বাগান থেকে ১০০ টি
গোলাপ চুরি করেছে। এবং নিজ হাতে গোলাপ গুলি
দিয়ে খুব সুন্দর করে ফুলের তোরা বানিয়েছে। . . . . .
,
আজ আর ইনো ক্লাসে যায়নি। ফোনটাও অফ রেখেছে ,
যাতে তাশুকে রাতে ইনো খুব ছোট হোলেও সারপ্রাইজ
করতে পারে। সারাটা দিন ইনো কিভাবে কি বলবে তাই
নিয়ে ভেবেছে। রাত ১২ টা বাজে ইনো ঠিকি তাশুর
বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির্। ইনো তাশুকে ফোন করে
বাহিরে আনলো। তাশু বাহিরে আসতেই ইনোকে বললোঃ
__কিরে দোস্ত তুই এতো রাতে আমার বাড়ির সামনে কেন?
__তুই এতো রাতে এখনো জাইগা আছিস কেন। আমিতো
ভাবছি তরে ফোন দিতে দিতে অজ্ঞান হই যামু। এখন
দেখি , না ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ , কার জন্য
w8 করছিলি। আমার জন্য?
__ইসস আমার তো আর কাজ নাই তর জন্য বইসা থাকমু। কেন
আইছিস তাই বল।
__(পেছন থেকে গোলাপের তোরাটা সামনে এনে) দোস্ত
Happy Birthday.
__অহ এর জন্য আসছিস , থ্যাংকিউ।
__দোস্ত তুই খুশি হসনাই।
__এতে খুশি হবার কি আছে , জন্মদিনে ফ্রেন্ড রা wish
করতেই পারে এতে তো অবাক হবার মত কিছু নাই তাই না।
__তোর কি হইছে , তুই এমন কইরা কথা বলতেছিস কেন। কি
হইছে আমায় বল।
__আমার আবার কি হবে কিছুই হয় নাই। আমিতো খারাপ
আমার কি হইলো না হইলো এতে কার কি যায় আসে।
আমি খারাপ বইলাই তো অন্তু আমারে ছাইড়া চইলা
গেলো। আজকে আমার জন্মদিন আর আজকেও একটা ফোন
করলো না, আমার খবর নিলো না।
__(ইনো লক্ষ্য করলো তাশু কাদছে , তাশু গলাটাও কেমন
যেনো ভাড়ি ভাড়ি শোনা যাচ্ছে) দোস্ত তুই অন্তুকে খুব
ভালোবাসিস তাই না।
__(মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক শব্দ বললো)
__আরে দোস্ত তুই কান্তেছিস কেন। হয়তো ওয় ও তরে খুব
ভালোবাসে খুব মিস করতেছে তরে , but ভয়ে তোকে
ফোন দিতেছে না। তুই ফোন করে দেখ না , সব আবার
আগের মত হয়ে যাবে।
__সত্যি বলতেছিস তো , সব ঠিক হয়ে যাবে তো।
__আরে হে , সব ঠিক হবে।
__থ্যাংকস দোস্ত তুই বাসায় চলে যা। মনেহয় বৃষ্টি
আসবে। আমি বাসায় গিয়ে ফোন দিবো ওকে।
,
(ইনো পেছন ঘুরে হাটতে শুরু করলো , তখন পেছন থেকে
তাশু ডাক দিয়ে বললোঃ )
__এই ইনো , অন্তু কল করছে।
__All the best দোস্ত।
__Thank u দোস্ত।
….…………………………
ইনো এখন একা , খুব একা , তার পাশে আজ কেউ নেই।
বৃষ্টি পরছে। বৃষ্টি পথে ইনো হেটে যাচ্ছে। এ যেনো
উদ্দেশ্য হীন যাত্রা। ইনো যানেনা সে কোথায় যাচ্ছে।
কিন্তু আজ সারারাত সে বৃষ্টিতে ভিজেছে আর
হেটেছে। ইনো আজ কাঁদছে, খুব কাঁদছে। কিন্তু তার
কান্না টা কারো নজরে পরছে না। ইনো একেবারে
হাউমাউ করে
কাঁদছে , কিন্তু তার কান্নার আওয়াজ আশেপাশের
কোনো ব্যক্তির কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। কারন এখন
প্রায় শেষরাত অতিবাহিত হতে যাচ্ছে , এ সময় সাধারণত
প্রায় সকলেই গভীর নিদ্রায় স্বপ্নের সাগরে ভাসতে
থাকে। ইনোও প্রতিদিন এই সময় অনলাইনকে good night
বলে অফলাইন হয়ে যায়। কিন্তু আজ সে চোখের জলে
নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির ফোটা গুলিও কেমন
তার চোখের পানি কে আড়াল করে ফেলছে। ইনো হাটতে
হাটতে এক ব্যাস্ত রাস্তায় এসে উঠেছে। রাস্তার
মাঝখান দিয়ে পাগলের মত সে হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ
একটা ধাক্কার সাথে গল্পের সমাপ্তি ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত