অফুরন্ত ভালোবাসা

অফুরন্ত ভালোবাসা

:-আমি চলে যাচ্ছি।ভালো থেকো,নিজের খেয়াল রাখবে।আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিও।
এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো মৌ।
এই কথাগুলো শুনতেই,আমার বুকের বামপাশে চিনচিনে ব্যথার অনুভব করলাম।
জবাবে আমি কিছু না বলে মাথানিছু করে থাকলাম।
চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইলেও,কোন রকমে কান্নাটা আটকে রাখলাম।
:-আচ্ছা,আমি তাহলে যাচ্ছি।
এই বলে বাসে গিয়ে উঠলো,মৌ।
বাস ছাড়তে আরও পনেরো মিনিটের মত বাকি আছে।
আমি আর ওখানে দাড়িয়ে থাকলাম না।
কি দরকার ওখানে দাড়িয়ে থেকে ওর প্রতি আমার মায়া বাড়ানোর?
যে চলে যাবার সে তো চলে যাবেই।
এসব ভেবে রওয়ানা দিলাম বাসার উর্দেশ্য।

যতই বাসার দিকে এগুচ্ছি,ততই আমার বুকের বামপাশের ব্যথাটা তীব্রতর হচ্ছে।
বুকের মাঝে সৃষ্টি হলো হাহাকার।
যেন জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিসটা হারিয়ে ফেলতেছি।

বাসায় এসে আমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফ্লোরে ধপাস করে বসে পড়লাম।
ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলাম।
মনে পড়তে লাগলো মৌ এর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের কথা।
মেয়েটাকে যে,আমি মনের অজান্তে এতটুকু ভালোবেসে পেলেছি,সেটা আমি কখনো জানতাম না।
এখন আমি তা টের পাইতেছি।

:-আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।
বাসর ঘরে ডুকতেই,নববধুর মুখ থেকে এই কথাটা ভেসে এলো আমার কানে।
:-আমিও আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না।(আমি)
:-তাহলে তো ভালই হলো।(বউ)
:-আমার ও ভালো হলো।
:-তাই নাকি?আচ্চা,আপনার কি ভালো হলো?
:-তার আগে আপনি বলুন আপনার কি ভালো হয়?
:-সত্যি বলতে কি?আমাকে আমার পরিবার থেকে আমার অমতে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।তাই আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।
:-শুধু এই কারণ?
:-না।আরেকটা কারণ আছে,সেটা হলো আমি একজন কে ভালোবাসি।
ওর মুখে এই কথা শুনে আমার হতবাক হয়ে যাই।
:-ওহ,(আমি)
:-হুমম,আচ্ছা আপনার কি ভালো হয়েছে?
:-আমার?আসলে আমি আপনার কাছ থেকে এই কথাগুলো জানতে চেয়েছি।
:-ও,তারমানে আপনার ভাল হয়নি।
:-আসলে তা না।
:-আচ্ছা আপনি কি আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারবেন?
:-হুমম,কেনো নয়?অবশ্যই।

এরপর থেকে আমি আর মৌ বন্ধু হিসেবেই ছিলাম।স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নয়।
সত্যি বলতে কি,আমি আজ পর্যন্তও মৌ এর ভালোবাসার মানুষটির নাম বা চেহারা শুনিও নাই,দেখিও নাই।
শুধু আজ তিনমাস ধরে এই কথাটাই বলে আসছে মৌ।

:-একি মৌ,তুমি কাপড়-ছোপড় গুছাচ্ছ যে?
অফিস থেকে আসার পর রুমে গিয়ে দেখি মৌ কাপড়-ছোপড় গুছাচ্ছে।
:-আমাকে যে আগামীকাল চলে যেতে হবে।(মৌ)
:-মানে?
:-মানে আগামীকাল আমি আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে চলে যাবো।
:-………(আমি)
:-তোমার তো আগামীকাল থেকে বেশ কয়েকদিন অফিস বন্ধ আছে।তুমি আমাকে আগামীকাল একটু এগিয়ে দিয়ে আসবে।
:-………(আমি)
:-তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি খাবার রেডি করছি।
এরপর খাওয়া-দাওয়া করে আমি ঘুমাতে গেলাম।
সারারাত সামান্য ঘুমও হয়নি,মৌ কে হারানোর ভয়ে।

আর আজকে মৌ,আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে,তার ভালোবাসার মানুষের কাছে।
আমি কিছুই করতে পারছি না।
কাঁদতে কাঁদতে শার্ট টা ভিজে গেলো।
তারপরেও চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বেয়ে পড়ছে।

:-মৌ,আমার টাই টা দেখেছো?
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।কিন্তু টাই টা খুঁজে পাচ্ছিলাম,না।
কিছুক্ষন পর মৌ টাই নিয়ে আসলো।
:-তুমি এইরকম মন ভুলো কেন?
টাই টা আমার গলায় বেঁধে দিতে দিতে বললো,মৌ।
:-……(আমি)
:-আমি না থাকলে তোমায় এসব খুঁজে দিতো কে?
:-তুমি আছো বলেই তো খুঁজে দিয়েছো।তুমি না থাকলে আমিই খুঁজে নিতাম।
:-কচু খুঁজে নিতে।

এসব কথা ভেবে ভেবে চোখ দিয়ে পানি ধরধর করে পড়ছে।
তখনই বাসার কলিংবেলটা বেজে উঠলো।
আমি তাড়াহুড়ো করে ফ্লোর থেকে উঠে পড়লাম।
চোখ মুছতে মুছতে দরজা খুললাম।
:-কাকে চাই?
মাথানিছু করা অবস্থায় বললাম,আমি।
কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি মৌ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
:-মৌ,তুমি?(আমি)
:-হুমম।আমি।(মৌ)
:-তুমি এখানে যে?
:-সরি।
:-কেন?(অবাক হয়ে)
:-তোমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
:-মানে?
:-মানে হলো,আমি এতদিন ধরে তোমার সাথে নাটক করেছি।আসলে আমি জানতে চেয়েছি,তুমি আমার প্রতি কেমন ভালোবাসা অনুভব করো।আর আজকে ছিলো,আমার নাটকের শেষ ধাপ।
:-তা,এইরকম নাটক করে কি বুঝলে?
:-বুঝলাম,এই পাগলটা আমাকে কতখানি ভালোবাসে।
:-তাই নাকি?তাহলে তুমি বাসে করে কোথায় যাওয়ার জন্য উঠেছিলে?
:-কোথায় আবার?আমার বাবার বাসায়।ভেবেছিলাম,আমার নাটকের শেষ ধাপ শেষ হলে তোমাকে নিয়ে যাবো।কিন্তু তুমি ওখান থেকে চলে এলে,তাই আমিও চলে আসলাম।
এই বলে মৌ আমার দিকে দুটো টিকিট বাড়িয়ে দিলো।
আমি আর কিছু না ভেবে মৌকে জড়িয়ে ধরলাম।
:-কি দরকার ছিলো,তোমার এসব করার?(আমি)
:-এসব না করলে তো,আমি বুঝতেই পারতাম না,এই পাগলটা আমায় কতটুকু ভালোবাসে।
আমি আর কিছু না বলে মৌ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম।

……………………………………………….(সমাপ্ত)………………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত