বেকার ছেলের প্রেম

বেকার ছেলের প্রেম

—কি হয়েছে রিফা কাঁদছ কেন?
.
—বাবা আমার বিয়ের পাত্র দেখছেন।
.
—কি বলছ তুমি?
.
—তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবা?
.
—এভাবে বলছ কেন? আমি আজই তোমার বাবার সাথে কথা বলব।
.
—হাঃ হাঃ বাবা যখন শুনবে তুমি বেকার তখনি তোমাকে বাতিল করে দিবেন।তার কাছে বেকার মানেই বাতিল।
.
—তাহলে আমি কি করব? বলে দাও।
.
—আমি জানি না।কিচ্ছু জানি না।কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।কিছু একটা করো।
.
—তুমি কিছু চিন্তা করো না।আমি দেখছি কি করতে পারি।
.
এই কথা বলেই ফোন কেটে দিলাম।ভাবছি কি করা যায়।কিন্তু কিছু মাথায় আসছে না।
.
প্রচন্ড ভালবাসি আমি রিফাকে।অন্য কারো সাথে দেখতেই পারব না।আমার এত সংগ্রাম,এত যুদ্ধ সব তো ওরি জন্য।
.
নাহ কিছু একটা করতেই হবে।দরকার হলে আজকেই বিয়ে করে ফেলব রিফাকে।কিন্তু বিয়ে করতেও তো টাকার দরকার।
.
হঠাৎ ভাবলাম আরেহ আমি এত চিন্তা করছি কেন?আমার পিচ্চি বেলার বন্ধু রাশেদুল তো আছেই।
.
রাশেদুল আর আমি দুইজনেই একসাথে ঢাকা এসেছি।একসাথেই লেখাপড়া শেষ করেছি।
.
দূর সম্পর্কের এক মামার লবিং থাকায় ভাগ্যের ফেরে আজ একটা ভাল চাকুরি করে সে।বিয়ে শাদী করবে কিছুদিন পর।
.
রাশেদুল কাছে হাজার দশেক টাকা কিছুই না।সাঁত পাঁচ ভেবে ফোন দিলাম তাকে।অনেকক্ষন পর রিসিভ হলো ফোনটা।
.
—দোস্ত কি অবস্থা?
.
—ভাল নারে দোস্ত।রিফার বাপে তার বিয়ের জন্য পাত্র দেখতাছে।
.
—আহারে।তুই তাইলে এখন কি করবি?
.
—আর কি করমু।রাস্তা একটাই।ওরে বিয়ে করমু।আজ কালের মধ্যে।কিন্তু হাত খালি। ১০ হাজার টাকা দেনা দোস্ত।তোর কাছে তো এইটা হাতের ময়লা।
.
—দোস্ত বিশ্বাস কর এই মুহুর্তে আমার কাছে বিষ খাওয়ার ও পয়সা নাই।১০ হাজার টাকা কোথায় পাবো? চাকুরীটা শুরু করেছি মাত্র।
.
—দোস্ত দেখ না ম্যানেজ করতে পারিস কিনা?
.
—দোস্ত ম্যানেজ করতে পারলে কি আর তোকে না করতাম। তুই আমার অনেক কাছের বন্ধু।তোর সাহায্যে আসতে পারলে বরং খুশি হতাম।
.
—ঠিক আছে দোস্ত। দেখি কি করতে পারি।
.
এই কথা বলেই ফোনটা রেখে দিলাম।খুব খারাপ লাগছিল।কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।রিফাও ফোন দিচ্ছিল বারবার।
.
কিন্তু কি বলব মেয়েটাকে জানি না।তাই ফোন রিসিভ করলাম না। অনেক ভেবে চিন্তে ভাবলাম টিংকুর
.
বাসায় যাই ও টাকা দিতে না পারুক বুদ্ধি তো দিতে পারে।যেই ভাবা সেই কাজ।
.
তবে রাশেদুল বাসায় গিয়ে যেয়ে যা দেখলাম তা হয়ত কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।রাশেদুলের বাসায় বিশাল পার্টি।
.
মদ আর ভদকার বোতল খুলে বসে আছে রাশেদুলের বন্ধুরা। এদের মধ্যে সবাইকেই আমি চিনি।সবাই বন্ধু ছিলাম একসময়।
.
ভাগ্যের পরিহাসে আজ এরা সবাই পোষ্টে আর পার্টে আমার থেকে অনেক উচুঁতে।দরজা খোলাই ছিল।
.
পুরোটা খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকতে জেতেই শুনলাম আমাকে নিয়েই ওখানে কথা হচ্ছে।রাশেদুল কে যেন বলল,
.
—কিরে রাশেদুল তোর প্রিয় বেস্ট ফ্রেন্ড শাকিল রে পার্টিতে দাওয়াত দিছ নাই?
.
—হু ইজ শাকিল? দেখ ভাই আমি শাকিল টাকিলদের চিনি না।এইসব বেকার বাতিল ফকিরদের সাথে আমি রাশেদুল চলি না।
.
—হেঃ হেঃ আগে তো তোদের গলায় গলায় ভাব ছিল এখন কি হলো?
.
—দেখ আগের কথা বাদ দে।সময় আর জীবনের প্রয়োজনে কত জনের সাথে মিশতে হয় তাই বলে সবাইকে কি বন্ধু ভাবতে হয়?
.
—হুম ঠিক।ওইসব ফকিরের ছেলের সাথে তোকে মানায় না।
.
—ঠিক বলছস।আর এইসব ফকিরের পোলাদের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত না।খালি ২ দিন পর পর টাকা ধার চায়।
.
আজকেই এই রাশেদুল আমার কাছে টাকা চাইল ১০ হাজার।বিয়া নাকি করব।খাইতেই পায় না বিয়ার শখ।
.
—তুই দিলি?
.
—আরেহ ধূর তোর মাথা খারাপ? এইসব ফকিরদের বাতিল মালদের একবার টাকা দিলে তা আর ফেরত পাওয়া যায় নাকি।
.
আমি কি এতই বোকা যে টাকা দিমু? হাঃ হাঃ।
.
ঘরে না ঢুকে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম আমি।দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন যেন।
.
যে রাশেদুল মেসে অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজের হাতে ভাত খাইয়েছি, কস্টের টিউশনির টাকা দেশে না পাঠায় পরীক্ষার ফরম ফিল আপের
.
জন্য তার হাতে তুলে দিয়েছি আজ সে রাশেদুলের কাছে আমি একটা বাতিল মাল।হাহ জীবন টা আসলেই চরম এক বাস্তবতার মুখোমুখি করল আমাকে।
.
এইসব ভাবতে ভাবতে হাঁটছি হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা বাইক তীব্র গতিতে বেড়িয়ে গেল আর একরাশ নোংরা কাঁদা আমার
.
একটাই জোড়া তালি দেওয়া ভাল শার্ট টাকে নোংরা করে দিল।বাইক ওয়ালে দেখলাম।চালকের আসনে বসে আছে নাজমুল।
.
আমার সেই বন্ধু যার কাছে গতকাল ১০০ টাকা চেয়েছিলাম কিন্তু নাই বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল অথচ আজ সে মজা করে গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে বাইকে ঘুরছে।
.
এই সেই নাজমুল যাকে একসময় নিজের টাকা দিয়ে বেনসন সিগারেট খাওয়াতাম।কারন তার পকেটে সিগারেট খাওয়ার মত পয়সা থাকত না।
.
নাজমুলের গার্লফ্রেন্ড কে দেখে নিজের ভালবাসার মানুষটির কথা মনে পড়ে গেল।মোবাইল বের করে দেখলাম ২৫ টা মিসকল আহারে কত ভালবাসে আমাকে মেয়েটা।
.
সারা জীবন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য পুরাই পাগল হয়ে আছে। কিন্তু মেয়েটা আমার কাছে ভাল থাকবে না।
.
চীরজীবন কস্ট আর সংগ্রামি করতে হবে তাকে।সহসা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম।ফোন দিলাম রিফাকে।বললাম,
.
—হ্যালো কি সমস্যা রিফা? বার বার ফোন দিচ্ছ কেন?
.
—এইভাবে কেন কথা বলছ? কি ব্যাবস্থা করলে জানার জন্য ফোন দিচ্ছি।
.
আমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি শুধু তুমি বলবে আর সব কিছু ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসব।
.
—সব কিছু ছেড়ে আমার কাছে আসবে কেন? আমি তোমাকে রাখব কোথায়?
. এই সব নাটক ছাড়।বাবা যেইখানে চায় বিয়ে করে নাও।
.
—এইসব কি ধরনের কথা? তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?যদি বিয়েই না করো তাহলে প্রেম করেছিলে কেন?
.
—ইচ্ছে হয়েছে করেছি।এখন আর তোমাকে ভাল লাগে না। আর দয়া করে আমাকে ডিসটার্ব করবে না।বাই।ভালো থেকো।
.
এই কথা বলেই ফোন টা বন্ধ করে দিলাম।যতই মানা করি তারপরো একবার না
.
বারবার ডিস্টার্ব করবে আমায় রিফা কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলে আর কয়বার করবে?থাক কয়েকদিন কাঁদবে।
.
তারপর এম্নি ঠিক হয়ে যাবে।বাবার চাপাচাপিতে এক সময় বিয়ে করবে তারপর স্বামী সন্তান নিয়ে নিজেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
.
তারপর ও অনেক ভাল থাকবে,সুখে থাকবে।
.
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রেল লাইনের কাছে চলে এসেছি খেয়াল নেই।
.
আচ্ছা এইখানে লাইনের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লে কেমন হয়?সব যন্ত্রনা,সব কস্টের পরিসমাপ্তি।
.
বাস্তবতার নির্মম কষাঘাত আর সহ্য হচ্ছে না।কিন্তু না তাও পারলাম না। বৃদ্ধ বাবা মায়ের করুন মুখচ্ছবি ভেসে উঠছে বার বার।
.
চাতক পাখির মত চেয়ে রয়েছেন তারা আমার দিকে।
.
আবার বাসায় ফিরে আসলাম।শার্ট টা ধুলাম।কাল আরেকটা ইন্টারভিউ আছে।
.
চাকুরিটা হবে না জানি তারপর ও আশা।আমার মত বেকার বাতিলদের যে আশাই সবকিছু।
.
******************************************************************************
বেরত্বর জন্য হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মানুষের আসা ভারসা ভালবাসা। বেকারত্ব কমিয়ে আনা না গেলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত