জীবনের মোড়

জীবনের মোড়

গিটারটা কাঁধে নিয়ে কলেজের পাশ দিয়ে হেঁটে
চলেছি ।তখনি কথা নেই বার্তা নেই রোদের
মাঝে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি মাথা বাঁচাবার দায়ে
একটা ষ্টেশনারী দোকানের ছাউনীতে
দাড়ালাম। তখনই সাথে সাথে আরেকটা মেয়েও
কাক ভেজা হয়ে আসলো। আমি হালকা হালকা
মেয়েটার দিকে তাকাতে লাগলাম। তখনই মেয়েটা বলে উঠলো…
— এই যে মিস্টার রোমিও তোমার গিটারটা সাইড করো। আমার দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছে।
— গিটার কেন সাইড করবো। তুমি যেমন ভিজে যাচ্ছো তেমনি যদি আমার গিটারও ভিজে যায়।
— আহারে একটা গিটার ভিজলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমি ভিজলে তো জ্বর চলে আসবে।
— ও তাই তো। ওকে দাঁড়াও
— ধন্যবাদ।
— মেনশন নট।
আমি কোন মতে গিটারটাকে বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইশশ যদি আজ একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতো তাহলে এই মেয়ের কথায় গিটার সরিয়ে জায়গা দিতাম না। প্রায় ১৫ মিনিট পর বৃষ্টিটা অনেক হালকা হয়েছে তাই ডান দিকে মোড় নিলাম আর তখনই মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেলাম। কারন মেয়েটা বাম দিকে যেতে চাই ছিল। আর মেয়েটা পড়ে যাওয়ার আগে আমি ওর হাতটা ধরে নেই। ইশশ পুরো রোমান্টিক মুভি।
— এই যে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি আমায় তুলবে। পাবলিক তো বিনা টিকিটে শো দেখছে।
— আরে হা উঠো।
— হুমম ঠিক আছে। আর তোমার নামটা কি?
— আমি রাজ, নাম তো শুনা হি হোগা।
— সবাই মুভির রাজ হয় না। আর আমার নাম বৃষ্টি।
— তাই তো সরে না আমার দৃষ্টি।
— মানে?
— না তো কিছু না।
— ফ্লাট করছো আমার সাথে।
— কোথায় আর করতে পারলাম? তার আগেই তো তুমি বুঝে ফেলেছো?
— ঠিক তাই, চান্স মেরে লাভ নাই কারন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
— ও আচ্ছা বোন আসি।
— হুমম বায়।
মেয়েটা চলে গেল আর আমি দেবদাস মুডে হাঁটতে লাগলাম। তখনই তুহিনের ফোন আসলো।
— হুমম তুহিন বল।
— কিরে কোথায় তুই আর আমার গিটারই বা কোথায়?
— আরে দোস্ত বৃষ্টিতে আটকা পড়ে গেছিলাম। এখন ষ্টেশনে আছি। তারাতারি আসছি।
— ও এতো তারাতারি আসার দরকার নেই। তোর গলা শুনে মনে হচ্ছে কোন কিছু হইছে?
— আরে না তেমন কিছু না।
— দেখ রাজ আমি তোর বন্ধু হতে পারি কিন্তু তোকে আমার ভাই মনে করি তাই তারাতারি বলে দে কি হয়েছে। তারপর মেয়েটার সাথে ঘটে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনা তুহিনকে বললাম। তখন তুহিন হাঁসতে হাঁসতে বলল…..
— ওরে আমার গরীবের শাহরুখ খান তোরে কে বলল এইসব বলতে। আজকাল মেয়ে এইসব পুরাতন ডায়লগে পটে না।
— তাহলে?
— মেয়েকে তোর সম্পর্কে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বল।
— কি রকম?
— মনে কর, তোদের বাড়ি হলো ১ তলা আর তুই মেয়েকে বলবি তোদের বাড়ি ৫ তলা। তারপর মেয়ের সামনে ভাব নিয়ে বলবি “ইশশ আমার বাইকটা কেন যে বন্ধুকে দিলাম, এখন আমার হেঁটে বাসায় যেতে হবে। ”
— এতেই কাজ হবে।
— যদি এই কথা গুলোতে মেয়ে না পটে তাহলে মনে করবি মেয়ে ভাল। আর যদি মেয়ে পটে যায় তাহলে মেয়ে মায়ের ভোগে। মানে খারাপ মেয়ে।
— বুঝলাম কিন্তু ওই মেয়ের সাথে আবার কিভাবে কথা বলবো? মেয়ে তো বলে দিয়েছে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।
— আরে গাধা এই কথা ভাল মেয়েরা ব্যবহার করে ছেলেদের প্রপোজ থেকে বাঁচতে আর খারাপ মেয়েরা ব্যবহার করে আরো ২টা ছেলে যেন তার পিছন ঘুরে। ট্রাই করতে তো আর দোষ নেই।
— ওকে।
— আচ্ছা এখন রাখলাম, তুই এসে গিটারটা দিয়ে যা।
— আচ্ছা।
তারপর গিটার টা নিয়ে তুহিনের বাসার কাছে চলে গেলাম। ইশশ যদি মধ্যবিত্ত না হতাম তাহলে হয়ত আমারও একটা কিউট গার্লফ্রেন্ড থাকতো। যেমন তুহিনের আছে। তুহিনের গিটার দিয়ে ওর থেকে আরো টিপস নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কাল কলেজে আবার যাবো ওই মেয়ের খুঁজে।
(২)
নিত্তিয়া রেস্টুরেন্টে বসে আছে। কারন আজ একজনের সাথে ওর দেখা করার কথা। গত কিছুদিন আগে ওর পরিবার তার বিয়ে ঠিক করেছে। আর গতকাল সেই ছেলে নিত্তিয়ার সাথে মিট করবে বলে ফোন দিছে। নিত্তিয়া প্রথমে মানা করলেও রাজি হয়েছে পরিবারের দিকে চেয়ে। কারন তার এখন বিয়ে করার কোন শখ নেই। নিত্তিয়া প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বসে আছে কিন্তু ছেলের আসার নাম নেই। কিছুক্ষন পর ছেলেটা আসলো। ছেলেটা একটু মোটা হলেও ইনোসেন্ট বলা যেতে পারে। তখন ছেলেটা বলল…
— তোমাকে অনেক লেট করানোর জন্য সরি।
— ঠিক আছে।
— আচ্ছা কি খাবে বলো?
— না তেমন কিছু না। আপনি আপনার জন্য অর্ডার দেন।
— কি নিত্তিয়া তুমি আমায় আপনি আপনি করে বলছো কেন? আগামী মাসেই তো আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
— বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু বিয়ে তো আর হয়ে যায় নি। আগে বিয়ে হোক তখন ভেবে দেখবো আপনি থেকে তুমি ডাকা যায় কি না।
— বাহ্ তুমি এতো চুপচাপ আর ভাব নিয়ে থাকো কেন?
— দেখুন আমি ভাব নেই না আর যদি বলেন ভাব নেই তাহলে ভাব এটা তো আমার একটু বেশিই আছে।
— ওকে তোমার ভাব তোমার কাছে রাখো। এখন খাবারের কিছু অর্ডার করা যাক। খাবার আসতে আসতে না হয় আমরা আলোচনা শেষ করে ফেলবো।
— ওকে।
তারপর খাবারের অর্ডার দেওয়া হলো। কিন্তু নিত্তিয়া সেই এক রকমই চুপচাপ আছে। তখন ছেলেটি আবার বলল..
— আচ্ছা এখনো তো আমরা ঠিক ভাবে পরিচিত হই নি। আমি সৌরভ, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। (সৌরভ নিত্তিয়ার সাথে হাত মিলাবার জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলো)
— আমি নিত্তিয়া। এবার অনার্সের থার্ড ইয়ারে গনিত বিষয়ে আছি। ( অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে)
— আচ্ছা নিত্তিয়া তুমি কি সব সময়ই এই রকম ভাবে থাকো।
— সব সময় কেন থাকবো? আমার বন্ধু বা বান্ধবীদের সাথে তো আমি অন্যরকম। যেমন একটা মুক্ত পাখি।
— তাহলে আমার সামনেই বা এমন মুক্ত পাখি হয়ে থাকো না।
— কেন? আপনি কি আমার বন্ধু নাকি?
— হতেই তো পারি। দোষ কিসে?
— অনেক সমস্যা আছে। কারন আমি সবার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করি না। আমি যার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবো তাকেও স্পেশাল হতে হবে।
— হুমম বুঝলাম।
তারপর তেমন আর কথা হলো না। তাদের মাঝে চলতে লাগলো খানিকের নিরবতা আর খাবার আসার অপেক্ষা। প্রায় ১০ মিনিট পর তাদের অর্ডার করা খাবার চলে আসলো। তারপর নিত্তিয়া আর সৌরভ খুব চুপচাপ খাচ্ছিল। যেন কেউ কাউকে চিনে না। তখন সৌরভ আবার বলল…
— আচ্ছা নিত্তিয়া তুমি কি কি রান্না করতে পারো?
— আমি যা যা খেতে পছন্দ করি তাই।
— মানে? তুমি কি কি খেতে পছন্দ করো?
— ভাত, আলুর ভর্তা আর যেকোন ভাজি।
— ও খুব ভাল। এক্কেরে রাজভোগ খাবার।
— হুমম জানি।
সৌরব কোন মতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিত্তিয়াকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বার হলো।
— তো নিত্তিয়া এখন কি তুমি বাসায় যাবে?
— না একটু লাইব্রেরিতে যাবো কিছু বই কিনার আছে।
— তাহলে চলো আমিও তোমার সাথে যাই।
— আপনার ইচ্ছা।
— তুমি আমায় এতো এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?
— কোথায় না তো?
— ওকে চলো।
তারপর নিত্তিয়ার সাথে সৌরভও গেল। বই কিনার টাকা সৌরভ দিতে চাইলে তাকে মানা করে দেয়। সবটা নিত্তিয়া নিজে দিয়ে বাসায় চলে আসে।
.
এভাবে দিন গুলে পার হতে লাগলো আর সৌরভ নিত্তিয়ার মনে একটু একটু বিশ্বাস যোগাতে লাগলো। কিন্তু নিত্তিয়া আগের মতই রয়ে গেল। একদিন রাতে নিত্তিয়া নিজের রুমে বসে বই পড়ছিল তখন সৌরভের ফোন আসে।
— হুমম বলেন?
— এখনো আপনি করে বলবে?
— বললাম তো আগে বিয়ে হয়ে যাক।
— তুমি না একটু পুরাতন কালের মতই আছো। যেমন আগের মুভিতে রাজ্জাক কবরি ছিল।
— বলতে পারেন।
— হুমম এত্তো পুরান মডেল হলে আমার চলবে না। একটু আধুনিক হও। ডিজিটাল ড্রেস পরো।
— কেন? পুরানকালের ড্রেসে কি আধুনিক হওয়া যায় না।
— না হওয়া যায় না।
— তাহলে বায় আপনি আমায় ফোন দিবেন না। এটা বলেই নিত্তিয়া ফোনটা কেঁটে দিলো। কারন সবাই তার প্রিয় মানুষকে বাঙ্গালি সাঁজে দেখতে পছন্দ করে যেমন শাড়িতে। কিন্তু এই দিকে সৌরভ ডিজিটাল পোশাকের দিকে মহিত।নিত্তিয়া তার এক বান্ধবির আইডি দিয়ে সৌরভকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে ছিল। সেখানে সৌরভ অনেক কথায় তার ফ্রেন্ডকে পটাতে চেয়ে ছিল। সে ভেবে পাচ্ছে না কি করবে? পরিবারকে কি বলে দেওয়া ঠিক হবে যে সৌরভ ভাল ছেলে না। যতটা ভদ্র সৌরভকে দেখা যায়, ঠিক ততটা অভদ্র আর খারাপ টাইপের ছেলে ও। আবার ফোনটা বেজেঁ উঠলো। তাকিয়ে দেখে সৌরভ। রিসিভ করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করলো। কিন্তু নিত্তিয়া চুপ করে আছে।
— হ্যালো নিত্তিয়া সরি। তোমাকে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয় নি। আমি তোমার সাথে মিট করতে চাই প্লিজ।
–( চুপ)
— কি হলো কথা বলো না। আমায় শেষ একটা সুযোগ দাও?
— ওকে, কোথায় দেখা করতে চান?
— আগে যে অনন্যা রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে সেখানেই।
— ওকে কাল বিকাল ৪টায় চলে আসবেন।
— ওকে ধন্যবাদ।
বলেই নিত্তিয়া ফোনটা কেটে দিলো। যদিও ইচ্ছা নেই তবুও একবার চান্স দিয়ে দেখা যাক সৌরভ ভাল হয় কি না?
(৩)
কিছু দিন পর, আজও তুহিনের গিটারটা কাঁদে নিয়ে হেঁটে চলে আসলাম। কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কোন বৃষ্টিরই দেখা নাই । না আকাশের বৃষ্টি আর না ওই মেয়ে বৃষ্টির। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেই বৃষ্টিকে আসতে দেখে চুলটা একটু ঠিক করে নিলাম। আমার সামনে আসতেই…
— আরে বৃষ্টি তুমি এখানে।
— বাহ্ মিস্টার রোমিও যে, তা আজ কার জন্য অপেক্ষা করছো।
— বলতে পারো কোন বৃষ্টির।
— মানে??
— আরে আকাশের বৃষ্টির। আজ খুব ভিজতে ইচ্ছা করছে।
— বৃষ্টিতে ভিজলে তো তোমার গিটার নষ্ট হয়ে যাবে।
— আরে একটা গিটার গেলে কি হবে? আমার কাকুর তো গিটারের শো-রুমই আছে।

— তাই নাকি।
— হুম তা মেডাম বৃষ্টি আজ এতো লেট করে আসলে কেন? কাল তো কত্তো তারাতারি দেখা হইছিল।
— আরে আর বলো না। আজ বিউটি পার্লার যাওয়ার পর ব্যাগে দেখি টাকা আনি নি তাই ভাবলাম বাসা থেকে টাকা নিয়ে আসি। তাই আবার বাসায় গিয়ে তারপর পার্লারে গেলাম। এখন কলেজে আসলাম।
— বাব্বা প্রতিদিন পার্লারে যাও বুঝি?
— কি যে বলো না? যদি পার্লারে যাওয়া মিস করি তাহলে তো মুখে ব্রণ দেখা দিবে। তখন কি কোন ছেলে আমায় ভাল করে দেখবে।
— ও আচ্ছা । তোমার পার্লারের খরচ বুঝি তোমার বয়ফ্রেন্ড দেয়।
— কি যে বলো না? আমি তো কোন রিলেশনই করি না।
— ও মা গো, তুমি তো কিছুদিন আগেই বললে তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।
— আরে আধা ঘন্টা আগে তো আমার ব্রেকআপ হলো।
— কি বলো? আধা ঘন্টা আগে তো তুমি পার্লারে ছিলে।
— আরে ফোনে কথা বলে ব্রেকআপ করছি।
— ও আচ্ছা।
— আচ্ছা রাজ চলো আমরা সামনের অনন্যা রেস্টুরেন্টে যাই। আমার খুব খিদে পেয়েছে।
— কিন্তু আমি তো আমার মানি ব্যাগ আমার ছোট ভাইকে দিয়ে এসেছি। ওর তো আজ জন্মদিন। তাই বললাম যত টাকা খুশি খরচ করার জন্য।
— ও কত্তো কিউট তুমি। সামান্য জন্মদিনের জন্য ভাইকে নিজের মানি ব্যাগ দিয়ে দিলে।
— হুমম
— আচ্ছা সমস্যা নেই। আজ তোমার বিল আমি দিয়ে দিবো কিন্তু বাকি টাকা গুলো তোমায় দিতেই হবে।
–ওকে কিন্তু?
— আবার কি হলো রাজ?
— আরে আমার বাইক তো তুহিন চালাতে নিয়ে গেছে। আমি একা একা বাইক চালিয়ে বোরিং হয়ে গেছি।
— কি বলো তুমি? কাল থেকে বাইক নিয়ে আসবে। আর বোরিং হবে না গো, তোমার পাশে তো আমি বসবো।
— ওকে।
— আচ্ছা এবার চলো তো রেস্টুরেন্টে যাই।
নয়ত পরে আমার খুদা লেগে যাবে।
— হা হা হা ওকে চলো বাবু।
খুব হাসি মুখেই একটা রিকশা নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম। কারন, আজ তো সব বিলই বৃষ্টি দিবে। কিন্তু কাল থেকে ও আমায় আর পাবে কোথায়? নে বাবা আজ যত ইচ্ছা মেয়ের টাকায় খেয়ে নে।
.
রেস্টুরেন্টে বসে পেট ভরে খেতে লাগলাম আর বৃষ্টির বক বক শুনতে লাগলাম। ইশশ, কত্তো যে কথা বলতে পারে এই মেয়ে। আরে একটু চুপচাপ থাকতে পারে না। মনে হয় বাপের আদুরের দুলালী তাই এতো কথা বলে। জীবনে এমন একটা মেয়ে দরকার যে খুব চুপচাপ মিষ্টি একটা মেয়ে। যে আমায় বুঝবে আর প্রতিদিন পার্লারে যাবে না। আমার টাকা বাঁচাতে চাইবে।হঠাৎ বৃষ্টি বলল…
— কি হলো রাজ কি ভাবছো?
— ভাবতাছি আমার বউ এখন কি করছে?
— মানে?
— না মানে আমার হবু বউ কি করছে আর কি??
— ও তাই বলো।
এই মেয়ে তো শুধু সুন্দরী মেয়ে না বরং রিনাখানের প্রতিমূর্তি। আমাকে এখান থেকেই পালাতে হবে। নয়ত কখন জানি বলে ও বাসায় টাকা রেখে আসছে, এখন যেভাবে হোক আমি যেন বিল দেই।
— আচ্ছা বৃষ্টি শুনো,
— হুম বলো।
— আমারটা একটা বিয়ের দাওয়াতে যেতে হবে তাই বাবাকে নিয়ে জুয়েলারীর দোকানে যেতে হবে।
— ও, তুমি পছন্দ করতে পারবে তো নাকি আমি আসবো।
— না না তোমার আসা লাগবে না। আমি তোমার জন্যও একটা আংটি কিনে আনবো নে।
— ও কত্তো কিউট তুমি।
— ওকে তাহলে আমি যাই।
— ওকে যাও বাবু, আমি তোমার বিল দিয়ে দিবো নে।
.
কোন রকমে পকেট বাঁচিয়ে গিটারটা কাঁদে নিয়ে চলে আসলাম। নয়ত এতক্ষণে আমার হয়ে যেত। রেস্টুরেন্ট থেকে বার হয়েই পাশের পার্কে চলে গেলাম।
(৪)
নিত্তিয়া আজও তারাতারি চলে এসেছে রেস্টুরেন্টে কিন্তু সৌরভের আসার কোনো খু্ঁজ নেই। যে সময়ের মূল্য দিতে জানে না সে আবার কি নিজেকে বদলাবে। প্রায় ৩০ মিনিট পর সৌরভ এসে সামনের চেয়ারে বসলো। তখন নিত্তিয়া বলল…
— এত্তো দেখা করার কি প্রয়োজন বলেন?
— আসলে গতকাল রাতে তোমায় সাথে যা কথা
হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত।
— হুমম এরপর বলেন।
— আচ্ছা যাই হোক এই গুলো নাও। ( নিত্তিয়ার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো)
— এতে কি আছে?
— কিছু গল্পের বই।
— ধন্যবাদ।
–আচ্ছা কি খাবে বলো?
— কিছু না আপনি খান।
— আচ্ছা নিত্তিয়া এমন চুপচাপ থাকলে কি চলবে?
— কেন এতে আপনার সমস্যা কি?
— আমারই সমস্যা, আমি কি তোমার মত বোবা মেয়েকে নিয়ে সংসার করবো নাকি।
— শুনেন আমি বোবা না। আর আপনি এখানে বোবা মেয়েদের অসম্মান করলেন। আচ্ছা বোবারা কি মানুষ না। আর বোবা মেয়েদের কি বিয়ে হয় না?
— তাই বলে তুমি তো বোবা না।
— আমার বেশি কথা বলতে ভাল লাগে না।
— কিন্তু আমার এমন মেয়ে পছন্দ না।
— তাহলে আপনার বাবা মাকে বলে দেন আপনি এই বিয়েতে রাজি না।
— বাবা মা মানবে না।
— তো আপনি এখন কি বুঝাতে চান?
— আমি বলতে চাই নিত্তিয়া তুমি তোমাকে একটু বদলে নাও।
— ঠিক কি রকম?
— আমার মত একটু চুপচাপ হবে, রাতে আমার সাথে পার্টিতে যাবে মদ খাবে আর মাস্তি করবে। দুই মিনিটের জীবনে মজা ছাড়া আর আছে কি?
— বাহ্ আজ তোমার আসল রূপটা বুঝতে পারলাম। পার্টিতে যাও আর মদ খাও এইসব জানলে কখনো আমার বাবা মা রাজি হতো না। আমি আজই মা বাবা কে সব বলবো।
— যাও যাও দরকার নেই তোমার মতো ফালতু মেয়ের। শুধু শুধু সময় নষ্ট করালে। অন্যদিকে দিয়া আমার জন্য ওয়েট করে বসে আছে।
— বাহ্ ভালই রূপ দেখালে তোমার।
— হুম যাও আর শুনো তোমার পিছনে আমার যে টাকা গুলো খরচ গেল তা সবটাই বিফলে। না তোমাকে পটাতে পারলাম আর না তোমার সাথে রুম ডেট করতে পারলাম।
— ছিঃ ছিঃ তুমি যে কি পরিমান লম্পট তা আজ বুঝলাম। ( নিত্তিয়া কেদেঁ দিলো)
— হুমম যাও তো এখান থেকে। তোমার চোখের জল দেখার সময় নেই আমার কাছে।
— এই নাও তোমার টাকা। যত টাকা আমার পিছনে খরচ করলে তার চেয়ে বেশি হবে এখানে।( ৩ হাজার টাকা সৌরভের মুখের উপর ছুড়ে মারলো) সৌরভ হা করে তাকিয়ে থাকলো আর নিত্তিয়া কাঁদতে কাঁদতে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে আসলো। এখন নিত্তিয়ার কাছে কোন টাকা নেই কারন যা ছিল সবই সৌরভের মুখের উপর ছুড়ে মারছে। নিত্তিয়া পাশের পার্কের একটা বেঞ্চে বসে কাঁদতে লাগলো। যাকে একটু বিশ্বাস করার চেষ্টা করেছিল সেই তাকে ধোঁকা দিলো।
(৫)
আমি এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। তখন একটা মেয়েকে কাঁদতে দেখে তার কাছে গেলাম। এমনি বৃষ্টির হাত থেকে কোন মতে বেঁচে গেলাম। এখন যদি কোন সমস্যায় ফেঁসে যাই। তবুও মেয়েটাকে দেখে খুব মায়া হলো। সব মেয়ে তো আর বৃষ্টির মত লোভী হয় না। আমি খুব ভদ্র ভাবে নিত্তিয়ার পাশে গিয়ে বসলাম। ও আমায় দেখা মাত্র দূরে সরে বসলো।তখন আমি বললাম…
— ভয় পাবেন না। আমি খারাপ ছেলে না। কিন্তু আপনি কাঁদছেন কেন?
— আপনাকে কেন বলবো?
— আসলেও তো আমায় কেন বলবেন? ওকে আমার নাম রাজ। আমি একজন বেকার ছেলে তবে চাকরীর খুঁজে আছি। আশা করি এবার হয়ে যাবে কারন চাকরীর পরীক্ষাটা ভালই হইছিল।
— আমি নিত্তিয়া। গনিত বিষয়ের উপর অনার্সে আছি ৩য় বর্ষে।
— এবার তো পরিচিত হলাম। এবার বলো সমস্যাটা কি?
— আপনাকে সমস্যা বললে আমার লাভটা কোথায়?
— দেখো নিত্তিয়া যদি পরিচিত মানুষের কাছে সমস্যা বলো তাহলে হয়ত তোমায় একরকম পথ দেখাবে। কিন্তু অপরিচিত মানুষের চেয়ে জ্ঞান নেওয়াই ভাল।
— আপনাকে কে বলল?
— আমি নিজেই বললাম। আচ্ছা আমরা যখন স্কুল কলেজের অনুষ্টানের ভাষণ শুনতাম তখন স্যারদের ভাষন শুনার চেয়ে বাইরে থেকে বিশেষ অথিতি আসা লোকের ভাষণ কেন শুনি। যেন নতুন কোন কিছু জানতে পারি। তেমনি আপনি যদি আপনার সমস্যাটা বলেন তাহলে আমি ভাল একটা পথ দেখাতে পারি।
–আপনি আমায় কি পথ দেখাবেন? আপনাকেও তো রেস্টুরেন্টে এক মেয়ের সাথে খেতে দেখছিলাম। আপনার ভাব দেখে মনে হচ্ছিল আপনি টাকা বাঁচিয়ে পালিয়ে আসছেন।
— ও তাহলে আপনাকে সব কাহিনীটা বলি। তারপর আমি নিত্তিয়াকে আমার আর বৃষ্টির মাঝে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই বললাম। তখন নিত্তিয়া বলল….
— আমার ঘটনা ঠিক উল্টা। আমার পারিবারিক ভাবে যে ছেলের সাথের বিয়ে ঠিক করছে সে ভাল না। আরো অনেক মেয়ের সাথে ওর লিংক আছে। ও একটা প্লে বয়।
— হুমম বুঝলাম।আপনাকে কি করতে হবে আমি বলে দিচ্ছি? কিন্তু আপাতত আপনি আপনার চোখের জলটা মুছে ফেলো।
— ওকে।
— এবার বলেন?( নিত্তিয়া চোখটা মুছতে মুছতে বলল)
— প্রথমত তুমি তোমার মাকে ফোন দাও আর সব ঘটনা খুলে বলো।
— ওকে।
নিত্তিয়া আমার কথা মত তার মাকে সব বলল। তারপর তার মা তাকে হয়ত কিছু বলেছে তাই নিত্তিয়া শুধু মাথা নাড়িয়ে হুমম বলল। তাই আমি বললাম…
— কি মেডাম আন্টি কি বলল?
— বলল এখন কান্নাকাটি না করে বাসায় চলে যেতাম কারন সন্ধ্যা হতে চলেছে। রাস্তাঘাটে বাজে ছেলে থাকতে পারে।
–( নিত্তিয়ার কথা শুনে আমি চোখ গুলো কুঁচকালাম)
— আরে আপনি না তো। সৌরভের মত বাজে ছেলেরা তো থাকতে পারে।
— তাই বলেন। আচ্ছা শুনেন, আপনি সৌরভের দিকে কত টাকা ছুড়ে দিছেন?
— ৩ হাজারের মত হবে। কারন কাল মাত্র আমার টিউশনির বেতন পেয়ে ছিলাম।
— এটা আপনি রাগের মাথায় ভুল করছেন। আপনি এখন আমার নাম্বার থেকে সৌরভকে ফোন দেন।
— পারবো না এই কুত্তার বাচ্চাকে ফোন দিতে।
— আবার রাগ দেখায়। আপনি ফোন দিয়ে দেখেন আমি কি বলি?
–ওকে
নিত্তিয়া ওর মোবাইল থেকে সৌরভের নাম্বারটা আমার মোবাইলে তুলে ফোন দিলো আর দুইবার রিং হতে সৌরভ রিসিভ করলো। তখন আমি বললাম..
— কে সৌরভ বলছেন তো?
— হুমম.. আপনি কে?
— আমার পরিচয় বা আপনাকে না দিলাম। আমার কথা আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনি এখন দিয়ার সাথে আছেন তাই না।
— ওই আপনি কে? আর আপনি এইসব জানলেন কি করে?
— কথায় আছে ডালের স্বাদ থাকে নিচে তেমনি তুমি মেয়েদের সাথে ফ্লাট করে চলবে আর তোমার খুজঁ কেউ রাখবে না এটা কেমন করে হয়?
— তো আপনি কি চান?
— বাহ্ আমি কিছু বলার আগেই বুঝে গেলেন।
— কাজের কথায় আসো।
— ওকে শুনেন, আপনাকে একটু আগে নিত্তিয়া
যে ৩ হাজার টাকা ছুড়ে মারছে ওই টাকা সহ ২ হাজার টাকা এক্সট্রা আমার এই নাম্বারে বিকাশ করে পাঠাও। সময় মাত্র ১০ মিনিট। যদি কাজ না হয় তাহলে নিত্তিয়া আর দিয়ার সাথে করা ব্যবহার তোমার বাসায় চলে যাবে।
— ওকে পাঠাচ্ছি।
আমি ফোন রেখে দেওয়ার সাথে সাথে নিত্তিয়া হাসতে শুরু করলো। মেয়েটা কাঁদলে যতটা কিউট লাগে তার চেয়ে বেশি কিউট লাগে হাসলে।
— কি হলো হাসছেন কেন?
— আপনি খুব মজার মানুষ। আচ্ছা আমি তো বয়সে আপনার ছোটই তাহলে তুমি করে ডাকেন।
— তুমি করে ডাকতে পারি যদি তুমি আমায় তুমি করে ডাকো।
— ওকে।
সাথে সাথে আমার নাম্বারে ৫ হাজার টাকা চলে আসলো। তারপর কাছের একটা বিকাশ দোকান থেকে নিত্তিয়াকে টাকাটা তুলে দিয়ে দিলাম। ও আমায় কিছু টাকা রাখতে জোড় করার পরও নেই নি। তারপর একটা রিকশায় নিত্তিয়াকে তুলে দিলাম। ও আমায় বায় চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ রিকশা থামিয়ে আমার সামনে আসলো…
— ওই রাজ একটু শুনো তো
— হুমম বলো।
— আসলে আমি বাসায় গেলাম কি না এই খুঁজটা তুমি কি করে নিবে?
— আরে এটাই তো মনে ছিল না।
— তোমার মোবাইলটা দাও তো। ও আমার ফোনে কি করে যেন আমার মোবাইলটা ফেরত দিলো।
— কি করলে এটা?
— আমার নাম্বারটা নিত্তি দিয়ে সেভ করে দিছি।
— শর্ট নাম কেন?
— যারা আমার কাছে স্পেশাল তারা আমায় এই নামে ডাকে।
— হা হা আর আমার নাম্বার তোমার ফোনে কি দিয়ে সেভ করছো?
— বাসায় গিয়ে বলি নয়ত এখন তুমি রেগে যেতে পারো।
— ওকে।
তারপর নিত্তিয়া হাসতে হাসতে চলে গেল। আমিও oপায়ে হেঁটে চলে আসলাম বাসায়।
.
প্রায় ১৫ মিনিট পর আমি নিত্তিয়াকে ফোন দিলাম। খুব oতারাতারি রিসিভ হয়ে গেল। যেন কারো ফোনের আশায় ছিল।
— হুম মিস্টার রোমিও বলো।
— ওই তুমি আমার নাম্বার রোমিও দিয়ে সেভ করেছো।
— হুমম কারন তুমি যেমন নাটক করতে পারো oতেমনি কারো মনও চুরি করতে পারো।
— শেষ পর্যন্ত চুর বানালে।
— হুমম বানালাম, তাতে তোমার কি সমস্যা?
— না কোন সমস্যা না।
— দেখো আমার সাথে ভাব নিবে না।
— এই যে মেডাম আমি ভাব নেই না কিন্তু যদি বলো ভাব নেই তাহলে ভাব এটা আমার একটু বেশিই আছে।
— ওই তুমি এই ডায়লগ কই থেকে শিখলে।
— এটা আমি সব সময় বলি।
— ও ভাল।
— কেন আগে বুঝি কেউ বলতো?
— না তেমন কেউ না।
— ও আচ্ছা।
— আচ্ছা তোমার চাকরীর কি খবর?
— এই তো বলে ছিলাম তো হয়ে যেতে পারে।
— তারাতারি একটা চাকরী নাও ওকে।
— কেন?
— এমনি এতো কিছু তোমার বুঝতে হবে না।
— আচ্ছা।
— রাজ কাল একবার দেখা করতে পারবে?
— কেন?
— আরে সৌরভের থেকে যে ২ হাজার টাকা মারলাম তা খাবো না বুঝি।
— ওকে আসবো।
— হুমম আর হলুদ পাঞ্জাবীতে আসবে ওকে। আর বেশি না কিছু ফুল আর একটা চিপস নিয়ে আসবে।
— ওকে।
— আচ্ছা আমি তোমার জন্য কি আনবো?
— তোমার যা মন চায়।
— ওকে
বলেই ফোন রেখে দিলাম। হায়রে, এই মেয়ে বলছিল ও কথা কম বলে তাই সৌরভ এমন oকরছে। এখন তো আমার কানের ১৪টা বাজিয়ে ফেলছে। হয়ত ও কথা বলতে পছন্দ করে বরং শুনতে নয়। কাল দেখা করে দেখি জীবনের oমোড়টা কোন দিকে যায়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত