দৃষ্টির আলো ছায়া

দৃষ্টির আলো ছায়া

সকাল থেকেই বৃষ্টি চলছিলো থামার যেন নামই নিচ্ছিলো না।  এদিকে নিধি ফোনের উপর ফোন করেই চলছে।

এতো করে বললাম এই বৃষ্টির মধ্য দেখা না করি, কে শোনে কার কথা। তাই বৃষ্টি মাথাই নিয়ে চললাম স্টেশনের পাশের

রেস্টুরেন্টির দিক। যেয়ে দেখি নিধি আপন মনে গল্পের বই পড়ে চলেছে।

ইমরান:আজ দেখা না করলে কি এমন হতো?

নিধি:তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই।

ইমরান:তোমার পাগলামী আর গেল না।

নিধি:না যাবেও না কখনো।

ইমরান:তুমি জানো না বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে।

নিধি:আরে আসলে না হয় বাসায় যেয়ে মাথাই হাত বুলিয়ে দিয়ে আসবো দেখবা ম্যাজিকের মতো জ্বর পালিয়ে যাবে।

ইমরান:তাইলে তোমার পুলিশ বাবা আমার পিছে বন্দুক দৌড় করাবে।

নিধি:প্রেম করলে দৌড় শিখতে হয় জানো না।

ইমরান:কথা তো ভালই শিখছো চল বৃষ্টি থেমে গেছে নায়তো আবার আসলে ভিজে ফিরতে হবে।

নিধি:আর একটু থাক না তুমি পাশে থাকলে আর কোথাও যেতেই মন চায় না।

ইমরান:অনেক হইছে এবার চলতো।

নিধির সাথে দেখা হয় অনেকটা নাটকীয় ভাবে।

বাস স্টপে দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

এর মাঝেই একদল পুলিশ এসে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলো।

কিছুই বুঝতেছিলাম না কি হতে যাচ্ছে।

থানায় পৌছনোর পর কনেস্টেবল নিয়ে গেল এসআই এর রুমে।

ওখানে বসতে বলে চলে গেল।

মোটা ভুড়িআলা পুলিশটা কেমন করে যেন তাকাচ্ছিলো।

কিছু বলতে যাবো এমন সময়,

পুলিশ:নিধিকে চিনো?

ইমরান:নিধি আবার কে?

আর আমাকে এভাবে তুলে আনছেন কেন?

পুলিশ:থাপরিয়ে সোজা করে দিবো, যেটুকু জানতে চাওয়া হইছে সেটাই জবাব দিবে।

ইমরান:না, এই নামে কাউকে চিনি না।

পুলিশ:তাহলে কাল সিটি কলেজের সামনে নিধির সাথে কি করছিলো।

ইমরান:সিটি কলেজে, আমি ওখানে পড়ি আর আপনি কার কথা বলছেন আমি একদমই জানি না।

পুলিশ:ফাজলামি করার জায়গা পাও না, জানোই না যখন নিধির রিক্সা ভাড়া তুমি দিচ্ছিলা কেন?

ইমরান:ওহ আপনি ওই মেয়েটার কথা বলছেন, আসলে ওনার কাছে টাকা খুচরা ছিলো না আর আমিও রিক্সা ভাড়া দিচ্ছিলাম তাই ওনাকে টাকা খুচরা করে দিছি এটুকুই।

পুলিশ:এই বেয়াদব ছেলে একদম মিথ্যা বলবে না, নিধিকে যে ফলো করে সেই তো তুমি?

ইমরান:আপনাদের হয়তো কোথাই ভূল হচ্ছে নিধি নামের মেয়েটিকে ডাকেন তাহলেই সব বুঝতে পারবেন।

এর মাঝেই নিধি চলে আসলো এসেই পুলিশের ভূল ধরিয়ে দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো। ভাবছিলাম আজ হয়তো মশাদের সাথেই রাতের ডিনার করতে হবে

কিন্তু অল্পের জন্য বেচে গেলাম।

নিধি:সরি আমি বুঝতেই পারিনি বাবা আপনাকে এভাবে তুলে আনবে।

ইমরান:শুধু কি তুলেই আনছে পুরা বন্দো বস্তো করেছিলো জেলের ভাত খাওয়ানো জন্য।

নিধি:আসলে একটা ছেলে প্রতিদিন আমাকে ফলো করে, তাকে ভেবেই আপনাকে তুলে আনছিলো আমি দুঃখিতো।

ইমরান:(মনে মনে বললাম এতো সুন্দর মেয়ে দেখলে যে কেউই ফলো করবে এতে ছেলেটারই বা কি দোষ) আচ্ছা ঠিক আছে । বলে চলে আসলাম।

এভাবেই শুরুটা হয়েছিলো নিধির সাথে পরিচয় এরপর ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমাদের মাঝে।

একই কলেজে পড়তাম তাই কথা বলা আর আড্ডাটা ভালই চলছিলো।

নিধি গান গাইতে খুব ভালবাসতো আর ওর গানগুলো শুনে কোথাই যেন হারিয়ে যেতাম।

একটা আলাদাই মায়া ছিলো ওর গানের মাঝে যা মায়ার দিয়ে আটকে রাখতো।

একদিন হটাৎ করেই নিধি জিদ ধরে বসে বৃষ্টিতে ভিজবে আমাকে সাথে নিয়ে।

ওমনি যা বলা সেই কাজ হাতটা ধরে নেমে গেলো বৃষ্টিতে ভিজতে।

সেবার ৩ দিন জ্বরে ভুগছিলাম ২য় দিনে যখন নিধি আমাকে খুজে পাচ্ছিলো না সরাসরি বাড়িতে এসে হাজির বন্ধুদের নিয়ে।

নিধি:অনেকটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম না।

ইমরান:আরে না সামান্য জ্বরতো দেখো ঠিক হয়ে যাবে।

নিধি:সবটাই আমার জন্য[ওর চোখে পানি দেখতে পাচ্ছিলাম]

ইমরান:আরে পাগলী কি করছো জ্বরই তো আসছে, এমন তো নয় যে ভাল হবো না।

নিধি:ঠিকমতো ঔষুধ খাবে আর ফোন বন্ধ কেন হুম?

ইমরান:এইতো তোমাকে দেখার জন্য।

নিধি:তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে ওঠো।

এর মাঝেই আম্মু চলে আসে, তারপর নিধি চলে যায়।

সেদিনের পর থেকে কখনো এমন আবদার করেনি।

সুস্থ্য হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

দেখি নিধি গোমড়া মুখে বসে আছে যেতেই মুখটাই হাসি ফিরে এলো। সেদিনের মতো অনেক ঘুড়লাম নিধিকে নিয়ে।

নিধিকে বাসায় দিয়ে আসার সময় দেখলাম একটা পিচ্চিকে কিছু লোক ধরে মারছে।

সেখানে যেয়ে জানতে পারলাম ছেলেটা নাকি ঔষুধ নিয়ে পালাচ্ছিলো তাই ওকে ধরে মারছে।

কিছুটা আবাক হলাম ঔষুধ দিয়ে এই পিচ্চিটা কি করবে।

তাই কোন রকমে লোকগুলোর সাথে কথা বলে ছেলেটিকে বাচালাম। ততোক্ষনে পিচ্চিটার মাথাতে কেটে গেছে,

ফার্মেসীতে গিয়ে পিচ্ছিটাকে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।

ইমরান:কিরে ওই লোকগুলো তোকে মারছিলো কেন?

পিচ্চি:ভাই আমার মায়ের খুব অসুখ, ডাক্তার বলছে ঔষুধ না খাওয়াতে পারলে বাচবে না।

ইমরান:ওহ চল দেখি, কি ঔষুধ কিনা লাগবে।

পিচ্চি:এই যে ভাইজান এতে লেখা আছে।

ঔষুধগুলো কিনে কিছু ফল নিয়ে পিচ্চির মাকে দেখেতে গেলাম।

বস্তিতে থাকে পিচ্চিটা, শুনলাম পিচ্চটার বাবা মারা গেছে,

আর মা ও মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।

জীবনটা বড়ই অদ্ভুত, যার আছে তার আপন বলতে সবাই আছে।

আর যার নেই তার আপনজন দূরবীন দিয়েও খুজে পাওয়া যায় না।

আবার দেখতে আসবো বলে সেদিনের মতো বিদায় নিলাম।

বাসায় এসে গা এলিয়ে দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম নিজেই জানি না।

এর মাঝে দুই দিন চাকরীর ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য নিধির সাথে দেখা করতে পারলাম না। ভাবছিলাম মাস্টার্স করবো আর

পাশাপাশি একটা ছোট খাটো একটা জব করবো।

বাসায় আসতেই যা শুনলাম তা নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

নিধি নাকি এক্সিডেন্ট করেছে, আমার বন্ধুরা বাসায় আসছিলো আমাকে জানানোর জন্য। আর এদিকে মোবাইলটাও নষ্ট হওয়ার সময় পাইলো না।

তাই তাড়াতাড়ি হাসপাতালে দিকে ছুটলাম যেয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি পস্তুত ছিলাম না।

নিধির দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে চোখ না পেলে নিধি আর কোনদিন চোখে দেখতে পারবে না।

নিধির বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চোখ ডোনারদের খুজতে থাকলাম।

কোথাও পাচ্ছিলাম না, পাগলের মতো হাসপাতালের বারান্দায় বসে চুপিচুপি কাঁদছিলাম।

হটাৎ কে যেন কাধে এসে হাত রাখলো।

দেখি ডক্টর দাড়িয়ে আছে, তার কাছে যা শুনলাম তা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলাম।

নিধির জন্য চোখ নাকি পাওয়া গেছে কিছুক্ষনের মধ্যেই নাকি অপারেশন শুরু করবে।

কে দিলো চোখ, সেটা জেনে আরো অবাক হলাম।

যেয়ে দেখি সেই পিচ্চিটা যাকে বাচিয়ে ঔষুধ কিনে দিয়েছিলাম ওর মায়ের জন্য ।

হাসপাতালের মর্গের কাছে বসে কাঁদছে, পাশে কিছু লোক ঘিরে ধরে আছে।

ওর মা মারা গেছে আজ,

আমাকে কাঁদতে দেখে ডাক্তারের কাছে থেকে জানতে পারে নিধির চোখের কথা।

আর ওই পিচ্চিই নাকি ওর মায়ের চোখ নিধিকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে।

বন্ধুদের নিয়ে পিচ্চির মায়ের লাসটা কবর দিয়ে আসলাম।

ফোন করে আম্মুকে সব খুলে বললাম আর বললাম পিচ্চিটা আমাদের সাথেই থাকবে।

আম্মুও আর বাধা দিলো না,

ভাবছে হয়তো ছেলেটা আজ বড় হয়ে গেছে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শিখে গেছে।

কয়েক দিনের মধ্যে নিধিও ভাল হয়ে গেলো।

এদিকে আমার চাকরীটাও পেয়ে গেলাম।

এখন পিচ্চটা আমাদের সাথেই থাকে।

ওর নাম রেখেছি নিরব,

অনেকটা শান্ত প্রকৃতির হয়ে গেছে মাকে হারিয়ে।

কিন্তু এ কয়েক দিনে আমাদের পরিবারের সাথে ভালই মিশে গেছে।

পারিবারিক ভাবে নিধির সাথে বিয়েটাও সেরে ফেললাম।

ভালই কাটছে দিন।

তবুও নিরবকে দেখে মাঝে মাঝে সময়গুলো আটকে যায় ক্ষনিকের জন্য।

যদি ও না থাকতো তাহলে এই পরিবারটা এতো সুখের হয়তো কখনোই হতো না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত