স্ত্রীর ভালবাসা

স্ত্রীর ভালবাসা

তখন রাত ৩ টা বাজে। হঠ্যাৎ আমার কানে ভেসে আসল নীলার (আমার বউয়ের নাম) আওয়াজ। আমি চোখ খুলে তাকালাম। আমার চোখ মেলানো দেখে নীলা বলে উঠল…..
–এই ঘুম থেকে ওঠো।
–আর একটু ঘুমায়?
–না, আর একটুও নয়। তাড়াড়াড়ি উঠে পড়।
–সকাল হয়ে গেছে নাকি?
–না, হয়নি।
–তাহলে এখন কি করব?
–তুমি উঠবে নাকি পানি ঢালতে শুরু করব।
–এই না, থাক আমি উঠছি।
–কিন্তু কি করব এখন?
–আমরা দুজনে একসাথে তাহাজ্জতের সলাত আদায় করব।
–আচ্ছা তুমি আজ পড়, আমি কাল থেকে পড়ব।
–না, আজ থেকেই পড়তে হবে।
–আমি বললাম তো কাল থেকে পড়ব।
–আজ থেকেই পড়তে হবে। যদি না পড় তাহলে আজ রান্না অফ। না খেয়ে তোমাকে থাকতে হবে। (রাগান্বিত কন্ঠে)
–প্লিজ এমন করো না।
(আমিও জানি নীলা না খেয়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না)
–আমার আব্বু একটা ভুল মানুষের কাছে আমাকে বিয়ে দিয়েছেন।
–কেন? কি করলাম আমি?
–কিছু মনে হয় জানে না।
–প্লিজ বলো না, কি করেছি আমি।
–তুমি একদিনও তাহাজ্জতের সলাত আদায় কর না। কুরআন, হাদিস পড়া প্রায় বাদ দিয়েই দিয়েছো। কথা ছিল আমরা বিয়ের পর এক প্লেটে খাবার খাব, কিন্তু তুমি বাইরে (রেস্টুরেন্ট) থেকে খাবার খেয়ে আসো। বাসায় আমি একা একা খায়।
–হুম, বুঝতে পেরেছি।
–বুঝার জন্য ধন্যবাদ। আমি আর তোমার সাথে থাকব না। সকালেই বাপের বাড়ি চলে যাব। (কান্না কন্ঠে)
–কেন?
–কেন থাকব আমি তোমার সঙ্গে? কোন কাজগুলো তুমি ঠিকভাবে করছো।

একদমে কথাগুলো শেষ করে রাগে ফুলতে ফুলতে আমার সামনে থেকে চলে যেতে যাবে, তখনই পিছন থেকে আমি নীলার হাতটা ধরলাম। হাতটা ধরেই একটা চুমু দিলাম।
–এই আমার হাতটা ছেড়ে দাও বলছি।
–না, ছাড়ব না।
–কেন? আমার একটা কথাও তুমি শোন না, আমি আর তোমার সাথে থাকব না।
–প্লিজ আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যেও না। আমি একটা সুন্নাত তো মানছি এখনও।
–কোনটা? কোন সুন্নাতটা পালন করছো তুমি?
–আমি তোমাকে ভালবাসি। নবী মুহাম্মদ (স) তার স্ত্রীদের কে অনেক ভালবাসতেন। আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি।

আমার কথা শেষ হতেই নীলা আমার পাশে বসে পড়ল। হাসবে না ভেবেও হেসে ফেলব। চোখে গভীর ভালবাসা এনে আমার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলল…..
–তাহলে বাকিগুলো মানছো না কেন?
–আমাকে ভালবাসা দিও, উৎসাহ দিও। কথা দিলাম, এখন থেকে মানব। ইনশাআল্লাহ।

নীলা আমার কথা শুনে দুই হাত তুলে দু’আ করল, হে আল্লাহ আমার স্বামীকে আপনার সকল আদেশ ও নিষেধগুলো সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন! এরই মধ্যে মসজিদের মিনার হতে ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের সুললিত কন্ঠে ফজরের আযানের ধ্বনি। নীলা আমাকে ফজরের নামাজে যাওয়ার জন্য ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। আমি বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, ওজু করে নিলাম। নীলা আমার হাতে-মুখের পানিগুলো মুছে দিল। পাঞ্জাবি আর টুপি দিয়ে বলল, যাও নামাজ পড়ে আসো। আমি নীলার কথায় সম্মতি জানালাম এবং তাকেও পড়তে বললাম।

আমি আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করলাম, নীলার মতো একজন দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়ার জন্য। নামাজের পর দুখানা হাত তুলে আল্লাহর নিকট দু’আ করলাম, আমরা যেন ইসলামের সকল বিষয়গুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারি এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারি। আমিন!

আল্লাহ তায়ালা যেন এমন একটি সুন্দর মনের দ্বীনদার স্ত্রী বা জীবন সঙ্গী সবাইকে দান করুন, আমিন

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত