পাগল প্রেমী

পাগল প্রেমী

ভালোবাসা অদৃশ্য তবুও এর একটা শক্তি আছে…ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যা মানুষ কে অমানুষ আবার অমানুষ কে মানুষে পরিনত করতে পারে….
কিছু ভালবাসা ত এমন ও হয় যার মধ্যে সত্যি ই স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়।. কখনো কখনো আমরা কাউকে এতটাই ভালবেসে ফেলি যে আমাদের মস্তিষ্ক এবং মন সব টাই কোনো একজনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ি.
কেউ কারো জন্য মরে যায় না এটা ঠিক আছে, কিন্তূ এমন অনেকের জীবন আছে কারো অভাবে এইভাবে ই বেঁচে থাকে, যেমন টা হৃদপিন্ড তার রক্তপাম্প করা ছেড়ে দিলে একটা প্রানের অস্তিত্ব যেমন হয়, ঠিক তেমন ভাবেই….
তবুও পা দুটো কে শরীরের ভার বইতে হয়…
আর মন নামক অদৃশ্য বস্তূটা ও আর জায়গা নিয়ে প্রসারিত হয় না…. হয়ে উঠে সংকীর্ন….

আর কখনো মস্তিষ্ক বিকৃতি ও হয় ভালবাসার জন্য..মস্তিষ্ক ত কেবল চামড়া বেষ্টিত গোলাকার মাংস পিন্ড,, ব্রেইন নামক উপাদান দ্বারা পরিচালিত হয়, মূলত তার ক্রিয়া নিয়ন্ত্রন মনের দ্বারাই হয়…
মন যখন সংকীর্ন হয়ে পড়ে তখন ই মানুষের মস্তিষ্ক ও বিপরীতে কাজ করতে শুরু করে, তখন ই মানুষ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে,, এটা মোটেও মস্তিষ্কবিকৃতি নয়,, বরং মানসিকতার স্খলন ই একটা মানুষ কে পাগল উন্মাদে পরিনত করে…..
স্ফূর্তি আনন্দ ই মানুষের মনের খোরাক,,,একটা সময় আসে মানুষ স্ফূর্তি হারিয়ে মানসিক পঙ্গুত্ব বরন করে নেয়,, আর সবকিছু হয় কেবল ভালবাসাহীনতার জন্য ই…..

রাজবীর ভৌমিক…. ভৌমিক পরিবারের প্রানবিন্দু,, সকলের খুব প্রিয় এবং স্নেহাস্পদ…
ব্যক্তিগত জীবনেও রাজবীর একজন সুদর্শন আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ।
কলেজ ক্যাম্পাসে রাজের মেধা দূরদর্শিতার সমকক্ষ আর কেউ নেই..
রাজবীর একজন শিল্পী ও বটে… শিল্পীদের জীবন বরাবর ই আনন্দঘন ও সুখের হয়ে থাকে, কেননা একজন শিল্পী নিজের সুরের দ্বারা পৃথিবীকে সৃষ্টি করতে পারে,
অন্যের কান্না হাসি দু:খ কষ্ট সেতারা বেহালার মাউথারগানে খুবই নিখুঁতভাবে তোলে ধরতে পারে..
কিন্তূ এমনি সুরের জাদুকর কোনো শিল্পীর জীবনে ও যে সুর তাল ছন্দ কেটে যেতে পারে তা কি কখনো ভাবা যায়….
তবে মাঝে মধ্যে হয় এরকম….যেমন টা হয়েছে রাজবীরের সাথে…
…..
সুরের জগতে রাজবীর এক অতি পরিচিত নাম.. খুব ভাল গান গায় সে…..তবে এখন আর গাওয়া হয়ে উঠে না.. কারন সে একজন শিল্পী সে একজন মানুষ সেই বোধ টাই আর রাজবীরের মধ্যে নেই……

মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে রাজবীর ….
পূর্বেই বলেছি ভালবাসা হীন তা মানুষকে মানসিক ভাবে বিকৃত করে দেয়,, আর তখন ই মানুষ ভারসাম্য হারায়….
.
রাজবীরের জীবনে ও একদিন ভালবাসা আসে..
প্রিয়া. ওরা একই কলেজে পড়ে,,সেন্ট জুসেফ কলেজ। ..
তখন ই পরিচয়,,একে অন্যের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়,, আর ভালবেসে ফেলে দুজন দুজনকে…..
ভালোই কাটছিলো তাদের দিনগুলি কিন্তূ বাঁধ সাজে তাদের ই ব্যাচমেট রকি..
রকি বড়লোক বাবার বখাটে ছেলে. সব মেয়েকেই কোনো না কোনো সময় তার মনে হয়, যে সে তাকে ভালবাসে। কিন্তূ সেই ভালবাসা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এইবার রকির কুদৃষ্টি পড়েছে প্রিয়ার উপর…
সুযোগ পেলেই প্রিয়াকে উত্যক্ত করে রকি। এই নিয়ে রাজবীরের সাথে ভেজাল ও হয়। প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দেয়া হয়।
নাহ!রকির বিহেভড চেঞ্জ হয়নি।
একটার পরর একটা কুমতলব আটছে রকি..
ফাইনালি রকি যা করেছে তার সাক্ষী বহন করছে রাজের জীবনের বর্তমান অবস্থা।
সেদিন রাজ প্রিয়া রকি আর কলেজের অন্য সবাই গিয়েছিলো স্টাডি ট্যুরে পাহাড়ী এলাকায়…
প্রথম দিন টা তাদের ভাল ই কাটছিলো,,, ওরা ভালভাবেই ফিরতে পারতো যদি না রকি আর তার বন্ধুরা রাজ প্রিয়ার সাথে এমন অন্যায় ষড়যন্ত্র না করতো।
সেদিন রকির প্ল্যান মাফিক ওর বন্ধুরা রাজ কে এ্যাটাক করে আর এদিকে রকি প্রিয়ার সাথে অসভ্যতা করছে,,,
প্রিয়া রকিকে প্রতিরোধ করতে করতে একেবারে পাহাড়ের কাঁধে এসে যায়, একসময় প্রিয়ার পা আর মাটির সন্ধ্যান পাচ্ছিলো না, অর্থাৎ ততক্ষনে সে পাহাড়ের নিচে পতিত হচ্ছিলো….
রাজ দৌড়ে এসে কেবল প্রিয়ার পড়ে যাওয়াই দেখছিলো…
ওর শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিলো..একটু পড়েই জ্ঞান হারায় রাজ…
জ্ঞান ফেরার পর রাজ আর তার পৃথিবীতে নেই…
প্রিয়ার আকস্মিক দূর্ঘটনায় রাজের মস্তিষ্কে বিরুপ প্রভাব ফেলে,,
তাই রাজ এখন স্মৃতিভ্রষ্ট। তার জীবনের সবকিছুই ভুলে গেছে সে। এমনকি প্রিয়া, তার জীবন বন্ধু বান্ধব পরিবার কোনোকিছুই আর তার স্মৃতিতেই নেই
..রাজ কে একটা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়…
কি জানি হয়তো সেখানেই আছে রাজের জীবনৌষধী,
রাজ প্রচন্ড উশৃঙখল,, ও কারো কথা শুনে না,, যাকে পায় তাকেই এ্যাটাক করে।এমতাবস্থায় ওর চিকিৎসা করা যাচ্ছিলো না। তবে একমাত্র পরিনীতা সান্যাল সামনে থাকলেই রাজ চুপ হয়ে যায়, তার সকল পাগলামি ও বন্ধ হয়ে যায়।
পরিনীতা সান্যাল পরী ঐ হাসপাতালের নার্স ….যেখানে এত এত কড়া ডোজের ঔষধ রাজকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না সেখানে পরী সামনে আস্লেই রাজের সব রাগ গলে পানি হয়ে যায়… কাউকে বিরক্ত করে না রাজ যতক্ষন পরী হাসপাতালে থাকে…
কিন্তূ পরী ত ডিউটি টাইম ছাড়া
হাসপাতালে থাকতে পারে না এমন টাই নিয়ম।
কিন্তূ রাজ অনেক বড় পরিবারের ছেলে তার চিকিৎসা ত আর বন্ধ থাকতে পারে না।তাই রাজের পরিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে রাজের চিকিৎসার দায়িত্ব পরিনীতা কে দেয়।
সেই জন্য পরী কে রাজের বাড়িতে থেকে ডে নাইট রাজের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে বলে..পরী প্রথমে এমন প্রস্তাবে রাজি হয়নি.. তবে এক সময় তাকে রাজি হতে হয়,পারিবারিক কারনে.

পরিনীতা রাজের বাড়িতে চলে আসে … ভালবাসা বন্ধুত্ব সবটা দিয়েই চিকিৎসা করতে থাকে রাজের…
পরিনীতার শ্রম আর চিকিৎসার ফলে রাজবীর সুস্থ্য হয়ে উঠে….
…তবে রাজবীরের স্মৃতি থেকে আবারো কিছুটা সময় হারিয়ে গেছে,, আর সেই সময় টা হলো তার পাগল থাকা অবস্থায় পরীর এই বাড়িতে আসা থেকে রাজ কে সুস্থ্য করে তোলা…মাঝখানের সময় টায় রাজ আর পরীর ভালবাসা।।। সব ই ভুলে গেছে রাজ।
এখন রাজ পরীকে চিনেও না। অথচ এই পরীকে রাজ উন্মাদ থাকা অবস্থায় ভালবাসা বিয়ে সংসারের স্বপ্ন দেখায়। এমনকি রাজের ভালবাসার ফসল বেড়ে উঠছে পরীর গর্ভে …
পরীর তার নিজের ভালবাসায় বিশ্বাস আছে আর বিশ্বাস করেছিলো রাজবীরকেও . তাই মানসিক বিকারগ্রস্ত একটা মানুষ কেও সে ভালবাসতে পেরেছে….

কিন্তূ পরী কি জানতো রাজ সুস্থ্য হয়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে,, তাকে চিনতে ও পারবে না রাজ… জানলে হয়তো রাজের ভালবাসায় সাড়া দিতো না পরী… কিন্তূ কি ই বা করবে… ঐ অবস্থায় রাজ কে পরী ভাল না বেসে পারে নি..
আর এখনো ভালবাসে । তাই ত পরী আর রাজের সামনে যায়নি ..
এদিকে রাজ খোঁজে পরীকে রাজ জানে যে পরীকে চিনে না তাও কেন জানি পরীর মুখ টা অর চোখে ভেসে উঠে ।।
তারপর ওর পরিবারের কাছে শুনে পরীর কথা.. অর মায়ের কাছে শুনে পরীর কথা পরীর সাথে রাজের কি হয়েছে না হয়েছে সবকিছুর নীরব সাক্ষী তার মা.
রাজ সুস্থ্য হওয়ার পর পরীকে যখন রাজ খোঁজে নি তখন তারা ভেবেছিলো যে রাজকে পুরনো কথা মনে করিয়ে আর স্ট্রেস দিয়ে লাভ নেই….কিন্তূ এখন নিজেই রাজ পরী কে খুঁজছে ।। তবে পরী কি এবার রাজের ইচ্ছেয় সাড়া দিবে পুনরায়…
.
।।।
তাই রাজ আবারো পরীর প্রেমে উন্মাদ পরী এইবার ও পারেনি রাজের অসহায় অবস্থায় নিজেকে দূরে রাখতে…জিতে যায় পরীর ভালবাসা, কেননা এইবার রাজ এত মস্তিষ্ক বিভ্রম হয়নি,সে ত পরীর ভালবাসা কে পরীক্ষা করে দেখছিলো …
অত:পর রাজের জীবনে পুনরায় প্রেমের পদ্ম ফোঁটে..
রাজের সুর আবারো পরীর প্রনয়ে তাল রাগ পেয়ে থাকে….

এইভাবেই বেঁচে থাকে পাগলপ্রেমীরা, সকল প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত