কথা দিলাম

কথা দিলাম

আমি যখন বিয়ে করি বিয়েরদিন তখন আমার শশুর আব্বা আমার হাত ধরে বলে-
“বাজান তুমি আমার মাইয়াড়ারে কোনোদিন কষ্ট দিয়ও না,আমার নুসরাতকে সবসময় হাসিখুশিতে রাইখো
তুমি আমারে কথা দাও।
→আমি জনগণের সামনে মুখ থেকে রুমাল’টা সরিয়ে বলি –
→জ্বি আব্বা কথা দিলাম।আম্রনের মাইয়ারে কোনোদিন কষ্ট দিবো না।সবসময় হাসিখুশিতে রাখবো কথা দিলাম!
.
সেদিন নুসরাত এর আব্বারে কথা দিয়ে আজ আমি বিশাল বড় প্যারায় আছি এখন। কিছু হলে নুসরাত তার বাবাকে কথা দিলাম

সেদিনটার কথা বলে কান্না করতে করতে।
আজকে দুপুরে ভাত খেতে বসছি, ঝালের কারণে ভাত আর মুখে দেওয়া যায় না বউটারে নরম সুরে বলি-

_জান তুমি এগুলো কি রান্না করছো?
_ইলিশে মাছ অালু দিয়ে তরকারি রান্না করছি।কেন দেখতেছো না?
_দেখতেছি তবে খাইতে পারতেছিনা ঝালের জন্য।
>বউটা আমার শাড়ির আঁচলের চাবি ঘুরাইতে ঘুরাইতে বলে-
.
_আমি পরিবারের ছোট মেয়ে মা,বাবা কাজ করতে দেয় নাই অনেক অাদরে রাখছে আমারে।তোমার বউ হওয়াতে আমি

তোমার জন্য রান্না করি যেমন হইছে চুপচাপ খেয়ে ফেলো।
,
বউটার কথা শুনে রাগটা বিমানের মতো উঠে গেলো মাথায়।কিছু বললে শশুর আব্বারে যে কথা দিলাম সেটা বলা শুরু করবে

সেজন্য কিছু না বলে ভাতের প্লেট রেখে উঠে গেলাম।
.
নুসরাতের উপরে রাগ করে দুপুরের খাবার খাইতে গেলাম বল্টুর হোটেল এ।বল্টুর হোটেল এ ভাত খেয়ে ৫ বার গেলাম টয়লেট এ।

আর তো শান্তি লাগে না দেশ দুনিয়া কেমন জানি অশান্তি লাগের।বাড়িত না গিয়ে চলে গেলাম বন্ধু সাজিদ এর বাড়িত।

সেখানে শুয়ে আছি আর চিন্তা করি বউটার হাতে রান্না খাইলে ভালো হইতো শুধু শুধু রাগ করলাম আর এখন এ অবস্থা।

রাগ করছি তো করছি আজকে বাড়িত যামু না এ চিন্তা করে শুয়ে আছি বন্ধু সাজিদ এর বাড়িত।
.
সন্ধ্যা যখন হয় নুসরাত শুধু ফোনে কল করে আমি রিসিভ না করে শুয়ে আছি।রাত ১০টা বাজে আবার শুরু হলো মোবাইলে কল দেওয়া,

ফোন রিসিভ করে আমি বলি-
.
_হ্যালো কি হইছে এতবার মোবাইল কেন করতেছো।
_তুমি কোথায়?
_সাজিদের বাড়িত।
_এশারের নামাজ পড়ছো?
__না,এখনো পড়ি নাই।
_কেন?
_শুয়ে ছিলাম তাই।
_কখন আসবা?
_আজকে আসবো না এখানে থাকবো।
_তুমি আমার বাবারে কি কথা দিয়েছো?
_কথা দিয়েছি তোমাকে কখন ও কষ্ট দিবো না,আমিতো তোমাকে কিছু বলি নাই আজ।
_না তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো আজ।
_কিভাবে কষ্ট দিয়েছি মিথ্যা বলো কেন।
.
→বউটা আমার হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো। কান্না করতে করতে বলে-
.
_অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ তুমি কি জানো তোমাকে ছাড়া আমি অাজকে সারাদিন কত কষ্ট ছিলাম। তুমি অামাকে আজকে অনেক কষ্ট দিয়েছো

যা কখনো আগে দাও নাই। তুমি আমার বাবাকে কথা দিয়ে কথা রাখো নাই। আর এখন বলতেছো বাড়িতে আসবা না আমি একা কিভাবে

থাকবো আজ অ্যাঁ অ্যাঁ।
_ও আচ্ছা আমি বুঝতে পারি নাই তুমি যে কষ্ট পাবে।আচ্ছা এবার তোমাকে কথা দিলাম আর কোনোদিন এমন কষ্ট দিবো না।প্লিজ আর কাঁদবা না।
_সত্যি করে বলো আর এমন কখনো ছেড়ে চলে যাবে নাকি।
_সত্যি আর কখনো এমন হবে না। আমি এখনই বাড়িত আসতেছি।
_আগে মসজিদ থেকে তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ে আসো। আমি তোমার জন্য কেক্কা ফেরদৌস আপ্পার স্টাইলে নুডলুস বানিয়েছি ।
.
→মনে মনে চিন্তা করলাম?এমনিতে বল্টুর হোটেল এ খেয়ে অবস্থা লে হালুয়া।বউটা কেক্কা ফেরদৌসি এর স্টাইলে নুডলুস বানিয়েছে আল্লাহ জানে?

খাইলে আজ কি হয়।আমি চুপ থাকাতে নুসরাত ওপাশ থেকে বলে-
.
_এ চুপ কেন! তুমি আসবা না?
_জ্বি আচ্ছা মহারাণী এখনই আসতেছি।
_সাবধানে আসো হুম।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
_নামাজ পড়ে নাও আগে।
_পড়ে নিবো এখন,আল্লাহ হাফেজ।
.

“কাল্পনিক গল্প কথা দিলাম। তবে বাস্তবে সবাই এমন করে শশুর আব্বারে কথা দেয়!কেউ কথা রাখে কেউ কথা রাখে না।তবে আমার মতে যে মেয়েটা তার মা,বাবা,ভাইবোন সবাইকে ছেড়ে আপনার কাছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকার শপথ করছে তাকে কখনো কষ্ট না দেওয়া ভালো।
সবসময় হাসিখুশিতে রাখা উচিত হয়তো একটুখানি ভুল থাকতে পারে সংসার করতে গেলে,তবে সেটা স্বামী-স্ত্রী মেনে নিলে হয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত