মিষ্টি বউ

মিষ্টি বউ

– অ্যাই,তোমার মানিব্যাগ কোথায়?(মিষ্টি)
– কিছু বলল্লা?
– হুম,,শুনতে পাও নি??
– না তো।
– ন্যাকামি করবা না.. ভালোয়_ভালোয় বলো মানিব্যাগ কোথায়?
– ওহ..মানিব্যাগ তো গতকাল হারিয়ে ফেলছি।
– মিথ্যা বলবা না!
– যাও তো এখন অনেক সুন্দর একটা স্বপ্ন
দেখতেছি…
– কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখো?
– ওই তো পাশের বাড়ির নিহাকে নিয়ে। আহা,কী রোমান্টিক সিন…….!!
– কিহহহ।বাদর দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা….
– রুমে বাদর আসলো কই থেকে?বাদর তো গাছে থাকে
– তুই বাদর…. তাড়াতাড়ি মানিব্যাগ দে….
– মানিব্যাগ এতোক্ষণে অন্যর পকেটে।হা হা হা★
[এইসব মানিব্যাগ খালি করার ধান্দা।আমিও নাছর বান্দা দিমু না]
– এই মিষ্টি আমার ফোন নিয়ে কই যাও??
– যদি মানিব্যাগ না দেখিয়ে দাও,তাইলে এইটা ভেঙ্গে ফেলবো।
– এ কি!! আমার উপর রাগ না দেখিয়ে,ফোনের উপর দেখাচ্ছো কেনো?
– হুম…এখন বলো মানিব্যাগ কোথায়?!
– কি জানি মনে নাই তো…..
– আবার?? এই যে ফেলে দিলাম কিন্তু!!
– না সোনা না।ওই যে ড্রয়ারে রাখা আছে।
– এই নাও তোমার ফোন।লক্ষী ছেলে…উম্মাহহহ।
– লক্ষী ছেলে হতে চাই না।তুমি মানিব্যাগ টা আমার কাছে নিয়ে আসো।
– নাহ্.. তা তো হবে না।এখন আমি আমার ইচ্ছা মতো টাকা নিবো।
– এইটা কী ধরনের ডাকাতি??
– হুম..ডাকাতিই তো।
– কত টাকা নিলে?
– ৩ হাজার…
– কিহহহহহহ।সকাল সকাল এতো টাকা নিয়ে কই যাবে?
– সেইটা তোমাকে বলতে হবে??
….
আমার আর বুঝতে বাঁকী রইল না..মিষ্টি বিউটি
পাল্লারে যাবে।তার মধ্যে,, আজ আবার আমার
চাচাতো বোনের গায়ে হলুদ।।আগে যদি
জানতাম,নিজের স্বামীর মানিব্যাগে
ডাকাতি দিয়ে নিজের রুপচর্চা
করবে,,তাহলে,বাবা!এই মেয়ের ধারে-কাছে
যেতাম না।এখন কিছুই করার নেই, বিয়ে তো
করেই ফেলছি!! মানিব্যাগ টা বহুত সাবধানে
রাখতে হয়।

বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে মানিব্যাগের
কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি আর ২ হাজার
টাকা আছে।ওইটা নিয়ে এসে, বালিসের
নিচে রেখে আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা
করলাম।কিন্তু একটু পর…………
– ভাইয়া..ঘুমিয়ে পড়েছিস?
– [সামান্য চোখটা খুলে দেখি,বৃষ্টি আসছে। খাইছে!! এইটাও টাকা নেওয়ার ধান্দায় আসছে]
– কী রে ভাইয়া?
– আমি এখন ঘুমের মধ্যে আছি আপু।
– ঘুমের মধ্যে থাকলে কেউ কথা বলতে পারে??
– হুম,,আমি পারি।
– ভাইয়া কিছু টাকা দে না??
– [ জানি তো সবার একটাই চাহিদা] এইখান থেকে সর…আমি উঠলে কিন্তু তোর খবর আছে!
– ভাইয়া উঠ না?
– ওই..কি হইছে বল?
– আমাকে ২ হাজার টাকা দে না?
– আমি কি টাকার ব্যাংক??
– ভাবীকে তো ৩ হাজার টাকা দিছিস!
– তোর ভাবী ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।
– তাহলে আমাকে এখন দে??
– তোকে কিন্তু এখন…….!! ওই যা, আব্বুর কাছে গিয়ে টাকা নে…..
– আচ্ছা,, ঠিক আছে টাকা দেওয়া লাগবে না।
[বেশ ভাল করেই খেয়াল করলাম..বোনটা আমার মনটা ছোট করে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে…]
– বৃষ্টি??
– [ নিশ্চুপ ]
– বৃষ্টি এই দিকে আয় তো…?
– হুম।বল কি বলবি??
– এই নে ২ হাজার টাকা…….
– ভাইয়া জানতাম তুই আমাকে টাকা দিবি।
[ বোনটা টাকা পেয়ে আমাকে ৩ মিনিট যাবৎ জড়িয়ে ধরে আছে।দুনিয়ার অনেক গুলো সুখের
মূহুর্তের মধ্যে মনে হচ্ছে এইটা একটা। অনেক ভালো লাগতেছে বোনটাকে খুশি করতে পেরে]
– বৃষ্টি এবার তো ছাড় আপু।
– ভাইয়া তুই দুনিয়ার সব থেকে ভালো ভাইয়া আমার।
– এই পাগলি কাঁদিস কেনো?
[ খুশিতে বোনটা আমার চোখে জল এনে ফেলেছে]
– ভাইয়া তুই তাড়াতড়ি উঠে,ফ্রেশ হয়ে নে। আমরা কিন্তু বিউটি পাল্লার। থেকে এসেই বিয়ের বাড়িতে যাবো।
– তার মানে,, তুইও তোর ভাবীর সাথে বিউটি পাল্লারে যাবি??
– ব্যাপার টা এতোক্ষণে তোমার মাথায় ঢুকলো ভাইয়া?
….
এই বিউটি পাল্লার গুলো,মাইয়াদের আসল রুপ আর কাউকে দেখতে দিবে না।ফ্রেশ হয়ে, কিছু
খাইতে যাবো, দেখি বাড়িতে কেউ নেই। আব্বু-আম্মু কাল রাত থেকেই বিয়ের বাড়িতে।
আর শয়তান দুইটা পাল্লারে! নিজেই সামান্য একটু নাস্তা সেরে পিসিতে বসলাম। অনেক
গুলো কাজ জমা হয়ে গেছে।।কাজ গুলো শেষ না করতেই দেখি মহারাণী দুইটা হাজির।
..
মহারাণী দুইটার দিকে অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি…চিনবার শক্তি নেই, কে কোনটা…!!!
– বৃষ্টি তুই কোনটা??
– এই যে ভইয়া আমি এইটা।[ বৃষ্টি হাত তুলে আমার কথার উত্তর দিল]
– তুমি এখনো রেডি হও নি? কখন যাবে আরও বিয়ের বাড়িতে??( মিষ্টি বলল্ল..)
– একটু দাঁড়াও..আমি রেডি হইতেছি।
….
পিসি থেকে উঠে,গোসল দিয়ে রেডি হয়ে ওদের সাথে বিয়ের বাড়িতে চলে গেলাম।
বিয়ের বাড়িতে এসে দেখি,সবাই মিষ্টি আর বৃষ্টির মতো পাল্লার পাগলি। তবে অনেক
লালনা..বিয়ের বাড়ি বলে কথা! কাউকে ঠিক ভাবে চিনতে পারছি না।।
বিয়ের বাড়িতে গেলে,সব ছেলেদের একটা কমন ব্যাপার আছে..আমার ক্ষেত্রও
ব্যাপারটার ব্যতিক্রম ঘটলো না। অলরেডি..২/৩ টা মেয়েকে চোখ মেরে ফেলছি।কিন্তু আমার
সামনে একটা মেয়ে আমাকে দেখে মিটি- মিটি হাসতেছে।ব্যাপার কী!!আমাকে দেখে
হাসে কেনো??আবার একটু চিনা চিনা লাগতেছে…..
…*
কিছু না ভেবে, মেয়েটাকে চোখ মেরে বসামল।কিন্তু মনে হচ্ছে, পিছন থেকে কেউ
একজন আমার চোখ মারা টা দেখে ফেলল।। ধুর..কে কি দেখলো, সেইটা আমার দেখার
বিষয় না। উফফফ,,,এত্তো আটা আর ময়দা, নিশ্চিত কিছু দিনের মধ্যেই এই গুলোর দাম বেড়ে
যাবে!! নিজের বউ এবং বোনটাকেও আর রক্ষা করা গেলো না।।
হঠাৎ সামনে এসে কে জানি আমার শার্টের কলার টা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। চোখ গুলো
বড় বড় করে তাকিয়ে দেখি ‘মিষ্টি’। এইবার খাইছে! নিশ্চিত কিছু ঝামেলা আছে এর মাঝে”!

– ব্যাপার কি তোমার? নিজের চোখ
সামলিয়ে রাখতে পরো না??
– কী করছি আমি বলবা তো?
– তুমি ওই মেয়েকে চোখ মারলে কেনো?
– কোন মেয়ের কথা বলছো?
– এই যে একটু আগে একটা মেয়েকে…?
– সেইটা তুমি কেমনে দেখলে?
– তার মানে, তুমি সত্ত্যি নিজের ইচ্ছায় চোখ মারছো?
[ এ রে!! ধরা খেয়ে গেলাম…]
– না বাবু,, বিশ্বাস করো আমি চোখ মারি নি!
– তোমার বোন বৃষ্টিও দেখছে।
– বৃষ্টি কেমনে দেখলো?
– তুমি যাকে চোক মারছো, সেইটা আমি আর আমার পিছনে বৃষ্টি ছিল।
[খাইছে!! নিজের বাঁশ নিজেই তৈরী করলাম]
– ওহ..তইতো বলি,,এইরকম চিনা চিনা
লাগতেছিল কেন!
– ছিঃ আমার ভাবতে অবাক লাগছে তুমি এইরকম
একটা ছেলে!!
– আমি মোটেও সেইরকম ছেলে না,হু।
– এখন যে তোমার একটা কাজ করতে হবে, বাবু?
– কী কাজ, বাবু??( অনেক খুশি হয়ে বল্লাম…)
– ৪০ বার কান ধরে উঠ-বস করতে হবে।
– হু,,বলল্লেই হলো! আমি করবো নাকি তাই….
[কথাটা শুনে মিষ্টি চোখ গুলো এতো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে
আমাকে গ্রাস করে ফেলবে মূহুর্তের মধ্যে..]
– উঠ- বস করতেছি তো।এতো রাগ হওয়ার কি
আছে!
– হু,এক্ষণি শুরু করো,,কেউ নাই আশে পাশে।
– করতেই হবে?
– হু,শুরু…start……..
– এক…দুই…তিন…চার…পাঁচ…। বাবু শাস্তিটা
একটু কমানো যায় না???
– নাহ্….যা বলছি তাই। কথা কম বলে নিজের
কাজ করো…..
– ছয়…সাত…আট…নয়….দশ……..→[ চলছে চল্লিশ
পর্যন্ত ]
,,
,,
তারপর থেকে আর কখনো ভুলেও বিউটি পাল্লারে যাওয়া মেয়েদের চোখ মারতে যাই না। না
জানি কখন ‘মিষ্টি’ বউটা আমার মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দেয়…….!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত