রাগি মেয়েটির ভালোবাসা

রাগি মেয়েটির ভালোবাসা

এই রিক্সা এই দিকে….
-কি মামা?
-আমি যদি তোমার রিক্সা করে এই রাস্তা দিয়ে হাতিরঝিল যাই তাহলে কতক্ষণ সময় লাগবে?
-তা মামা পনের মিনিট তো লাগবোই..
-আর আমি যদি হেটে যাই তাহলে?
-তাও পনের মিনিট লাগবো…
-তাহলে আর খামোখা রিক্সায় যাবো ক্যান?আচ্ছা তুমি যাও…
এই দাড়াও,এই নেও ৫টাকা,আমাকে ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য…
মানিব্যাগে এই পাঁচ টাকা আর দুটাকার দুইটা নোট ছাড়া কিছুই নেই…
রিক্সাওয়ালা মিথ্যে বলেছে,পনের মিনিটের যায়গায় ২৫
মিমিট লেগেছে.আবার দেখা হলে পাঁচ টাকা ফিরত নিতে হবে..

কিন্তু কথা হলো লাবন্য আমাকে কোন ব্রিজ আসতে বললো!! রামপুর থেকে থার্ড ব্রিজ?নাকি কাওরান বাজার
থেকে থার্ড ব্রিজ?
এখন কি আবার ফোন দিবো! না থাক যদি রেগে যায়…
ওইযে লাবন্যকে দেখা যাচ্ছে……
তুমি বলোনাই ক্যান কোন দিক থেকে থার্ড ব্রিজ?আমি খুজতে খুজতে ঘেমে গিয়েছি…
আমার কথায় লাবন্যের কোন রিএ্যাকশান দেখা গেলো না..
যাকগে কথা না বললে নাই,আমিও পাশে বসে কানে
হেডফোন লাগিয়ে ফসিলসের গান শুনছি..সিচুয়েশন বুঝে গান শুনতে হয়,এই সিচুয়েশনে আমার প্রিয় ব্যান্ড
ফসিলস…
গানের তালে তালে চোখ বন্ধ করে মাথা দোলাচ্ছি, হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার মাথা নড়ছে না.চোখ খুলে দেখি
লাবন্য পেঁচার চোখের মত চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে…..
হু এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?জ্বীনে ধরেছে?অবশ্য জ্বীনে ধরতেও পারে,সুন্দরি
মেয়েদের জ্বীন আবার খুব ভালোবাসে…
-তুমি আজকেও লেট করে আসছো!!?
-আর বলোনা,আসার সময় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিলো,ওর সাথে কথা বলতে বলতে কখন লেট
হয়ে গিয়েছে খেয়াল করিনি.
-ইভান তুমি যে একটা থার্ড ক্লাস ছেলে সেটা তুমি বুঝতে পারো?
-না বুঝার কি আছে?থার্ড ব্রিজে থার্ড ক্লাস ছেলেরাই বসে..অবশ্য মেয়েরা বসে কিনা জানিনা..আমি কিন্তু
তোমাকে আবার মিন করিনি..
-তুমি আমাকে অপমান করছো?একেতো লেট করে এসেছে তারপরও কোন সাহসে এইরকম বিহেভ করছো?
-বিলিভ মি,ইচ্ছা করে লেট করি নাই.ব্যাটা রিক্সাওয়ালা মিথ্যে বলসে,তাই লেট হয়ে গেছে..
-ইভান আমি তোমার সাথে মজা করছিনা..সবকিছু নিয়ে মজা করবানা..
-কে বললো মজা করছি?আমি সিরিয়াস… এই দেখো এক পায়ে সিরিয়াস…
তারপর যেটা ঘটলো,আমি কেন আমার দুচোখও বিশ্বাস করতে পারলো না…লাবন্য আমার বাম গাল লাল করে
দিয়েছে…গালে হাত দিয়ে বসে আছি….
এতক্ষণে লাবন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আরেকবার শকট খেলাম…চোখ দুটো আগুনের মত লাল হয়ে আছে….
-তোর মত ছোট লোকের সাথে প্রেম করেছি এটাই অনেক বেশী… আমার আগেই বুঝা উচিৎ ছিলো
তোদের মত ফকিরদের করুণা করা যায়,প্রেম নয়..এখনো বসে আছিস কেন ছোটলোকের মত, যা
ভাগ এখান থেকে…
বিনামূল্যের এইরকম অপমানের পরও আমার কেন জানি বসে থাকতে ইচ্ছে করছে…কিন্তু সমস্য হলো যদি ডান
গালে আরেকটা দেয়,এমনিতেই বাম কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে. উঠে দাঁড়িয়ে কাওরান বাজারের দিকে
হাঁটা ধরলাম,এই মুহূর্তে মেসে যাওয়া যাবেনা.মেসে না যাওয়ার কারন দুইটা.,এক- বাম গালের অবস্থা দেখলে

সবাই বুঝে যাবে আমি প্রেমিকার হাতে নির্যাতিত।
দুই- মেসে আমার বাজার চলছে,কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই.
হাতিরঝিলের শেষ মাথায় আসার পর দেখলাম একটা মানুষকে ঘিরে সবাই গোল হয়ে বসে আছে,লোকটা গান
গাচ্ছে,তবে কারো কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে কিনা আগে দেখে সিওর হলাম.এটাই এখন আমার জন্য ঠিক ঠাক যায়গা
সময় কাটানোর…..
লোকটা দারুণ গান করছে,কিন্তু আমার সদ্য ছ্যাঁকা খাওয়া লোকদের মত বিরহের গান শুনা দরকার…মোবাইলের
প্লে লিস্ট খুজেও আসিফ অথবা মনির খানের একটা গানও পেলাম না..কাল একবার এফডিসিতে গিয়ে নায়ক বাপ্পারাজের
সাথে দেখা করতে হবে.তিনি জীবনে এত ছ্যাঁকা খেয়েও কিভাবে দিব্যি বেঁচে আছেন,সেই টিপস নিতে হবে…
মন প্রাণ দিয়ে গান শুনছি,হটাৎ আমার বাম পা কাঁপুনি দিচ্ছে,বুঝলাম আমার মোবাইল কর্তৃক ভূমিকম্প হচ্ছে,এই
মুহূর্তে কল আসা চরম বিরক্তিকর, যে কোন কিছু যখন মন প্রাণ দিয়ে করা হয়,তখন তার মধ্যে কেউ না না কেউ
ব্যাঘাত ঘটাবেই…
মোবাইল বের করে দেখলাম লাবন্যের কল…কল ধরবো কি ধরনা না ভাবতে ভাবতেই কল কেটে
গেলো,আমার মাথায় তখন একটা কথাই ঘুরছে, লাবন্য কি জন্য কল দিতে পারে? দুদিন আগে আমাকে দেওয়া
লাবন্যের দামী ঘড়িটা ফিরত চাইবে!! যেহেতু আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে চাইতেও পারে…..
অবশ্য আমি এখন যে প্যান্ট আর টি-শার্ট পড়ে আছি,সেগুলোও লাবন্যের দেওয়া…
ঘড়িটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে,ভাবলাম এখন কল রিসিভ না করে আরো কিছুদিন ঘড়িটা ইউজ করে,পরে একটা সময়
নিজেই গিয়ে ফিরত দিয়ে আসবো..
আরো তিন চারবার কল আসলো লাবন্যের নাম্বার থেকে…মোবাইল পকেটে রেখে আবার
মনোযোগ সহকারে গান শুনছি,এর কিছুক্ষণ পর আবার মোবাইল কাঁপাকাঁপি শুরু করলো,মোবাইল বের করে
দেখলাম অপরিচিত নাম্বার…
কেউ বিপদে পড়েও তো অন্য নাম্বার থেকে কল দিতে পারে ভেবেই রিসিভ করলাম….
রিসিভ করেই বুঝলাম আমার মত আহাম্মক দ্বিতীয়টি নেই…..
-এতক্ষণ ফোন ধরতেছিলা না কেন?
-সাইলেন্ট ছিলো,দেখতে পাইনি….
-অন্য নাম্বার থেকে কল দিয়েছি বলে দেখতে
পেয়েছো?কোথায় আছো এখন তুমি?
-হাতিরঝিলের শেষ ব্রিজের উপরে…
-ওইখানে থাকো, কোথাও যাবে না আমি আসছি…
বিশ মিনিট পরেই দেখলাম লবন্য গাড়ি নিয়ে হাজির,আমি আগেই ঘড়িটা খুলে রেখেছিলাম. লাবন্যের সামনে ঘড়িটা
ধরে বললাম….আপনার কষ্ট করে আসা লাগতো না..আপনি বললে আমি নিজেই দিয়ে আসতাম…
লাবন্য কেমন করে যেন মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো,সম্ভাব্য চড় খাওয়ার আগেই বাম গালে হাত দিয়ে রাখলাম….
লাবন্য ঘড়িটা নিলো,নিয়ে হাত ধরে গাড়িতে বসতে বলল…..

গাড়ি চলতে শুরু করলো…
আমি ভাবলাম আবার আমাকে পুলিশে দিবে নাকি!কিন্তু আমিতো চুরি অথবা ডাকাতি করিনি…
-বাসায় যাওনি কেন?
-না মানে দেখলাম এখানে ভালো গান হচ্ছে,তাই একটু বসলাম…..
-মিথ্যেটাও ঘুচিয়ে বলতে পারোনা যখন,তখন মিথ্যে বলার দরকার কি?
-না মিথ্যে না,সত্যি….
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল…
আজকে যখন আসতে বলেছিলাম তখন কিভাবে এসেছো,হেটে?
-রিক্সায় আসতাম,ভাবলাম অল্প একটু পথ হেটেই চলে যাই.খামোখা টাকা নষ্ট করে লাভ কি!!
-দেখি মানিব্যাগটা বের করো….
-কি দেখবেন?আছে তো,অনেক টাকা আছে… অনেকটা জোর করেই মানিব্যাগ বের করে দেখলো
কিছুই নেই…
ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না,মনে হচ্ছে কিছু বললেই কেঁদে দিবে….
-আমি যখন জিগ্যেস করেছিলাম লেট করে এসেছো কেন,তখন বললে না কেন তুমি হেটে এসেছো?
-ভাবলাম বললে তুমি রাগ করবে তাই বলিনি..
-তুমি এমন কেন?আমাকে এত কষ্ট দেও কেন?আমি যে তোমাকে মেরেছি,এত খারাপ কথা বলেছি তখন কেন
আমাকে কিছু বললে না?
কেন আমাকে শাসন করলে না?
-কাঁদছেন কেন?আপনি যা বলেছেন সবি সত্যি বলেছেন…
আসলেই আমি ছোটলোক………
-প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও…
-আপনি কেন ক্ষমা চাচ্ছেন?আসলে আমার আপনার সাথে রিলেশনে যাওয়া উচিৎ হয়নি..ছোটলোকদের নজর
সবসময় নিচে থাকতে হয়…
তুমি এমন করে বলতে পারলে?ঠিক আছে ক্ষমা যখন করবে না,আমিও নিজেকে শেষ করে
দিবো..তোমাকে যেই কষ্ট দিয়েছি সেই কষ্ট নিজেকেও দিবো..
আরে কি করছেন?এক্সিডেন্ট করবেন তো!!আচ্ছা ঠিক আছে আপনার উপর আমার কোন রাগ নেই..প্লিজ গাড়ির
স্পিড কমান…
-তুমি আমাকে মাফ করলে তুমি করে বলতে,তুমি আমাকে ক্ষমা করোনি….
-প্লিজ গাড়ির স্পিড কমাও…..এইযে তুমি করে বললাম…
গাড়ি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে…
লাবন্য খাবারের অর্ডার করলো..আমি বললাম আমি খাবো না….বাসা থেকে খেয়ে বেরিয়েছি….
ও শান্ত চোখে আমার দিকে তাকালো,এটা ঝড়ের পূর্বাভাষ,……
তুমি না খেলে সব গুলো খাবার টেবিল থেকে ফেলো দিবো….
খাওয়া শেষে আমি বললাম বাসায় যাবো…লাবন্য কিছু
বললো না,শুধু ইশারা দিয়ে গাড়িতে বসতে বলল.গাড়ি ছুটতে শুরু করলো…..
আমি জিগ্যেস করলাম আমরা কোথায় যাচ্ছি…?
-ভয় পাচ্ছো? আজকে রাতটা তোমার থেকে কিনে নিলাম….যতদূর চোখ যায় যাবো…..
ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়ে রোডের একপাশে গাড়ি থামিয়ে লাবন্য বলল আজকে এখানে থাকবো..
-পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি?কত চোর ডাকাতের ভয় থাকে হাইওয়েতে..
-ভয় নেই কাছেই পুলিশের চেকপোস্ট আছে..
-যদি পুলিশ কিছু জিগ্যেস করে?
-বলবো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে…
আমার বুকে মাথা রেখে লাবন্য ঘুমিয়ে আছে,আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি লাবন্যের দিকে..কি নিষ্পাপ মুখ…
এই নিষ্পাপ মুখ কি করে মাঝে মাঝে এত ভয়ংকর হয়ে উঠে!!
আমি বিকেলের লাবন্যের সাথে এই লাবন্যের মিল অথবা পার্থক্য খুজে বার বার ব্যার্থ হই……..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত