সিনিয়র vs জুনিয়র

সিনিয়র vs জুনিয়র

—বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে,কানে হেডফোন লাগিয়ে রিমিক্সের তালেতালে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা মেয়ের মিষ্টিমধুর কন্ঠে থমকে দাড়াই; —-ঐই ছেলে তোমার নাম রাহুল না?

–হুম, আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
—এতো ভাব নেও কেনো হ্যা,,আমার সামনে বেশি ভাব নিবানা বলে দিলাম?(মেয়েটি)
–আপনি কোন দেশের রাজকন্যা যে আপনার সামনে ভাব নেওয়া যাবেনা? যত্তসব আসে যে কোথাথেকে!!
—ঐই যানো আমি তোমার সিনিয়র তাই মুখ সামলে কথা বলবা বলে দিলাম?(মেয়েটি)
–আপনি আমার সিনিয়র সেটা আগে বলবেন তো,, আপু আমার একটা সখ আছে পূরন করবেন?(আমি)
—দেখবো পারি কিনা,,আগে বলবে তো?(মেয়েটি)
–আমার ছোট বেলা থেকে বড় আপুদের সাথে প্রেম করার খুব সখ,,আপু তুমি আমার সাথে প্রেম করবা?(আমি)
–মানুষের কতো কিছুর আশা,,আর তোর কিনা বড় আপুদের সাথে প্রেম করার আশা?(মেয়েটি)
–হুম আপু,,প্লিজ আপু তুমি আমার সখটা পূরন করবে?
—তোর সাথে প্রেম করবো তুইকি আমারে প্রপোজ করছোস?(মেয়েটি)
–সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দুইহাত দুই দিকে দিয়ে বলি,,

আপু তুমিকি আমারে তোমার পিচ্চি জামাই করবা,, তোমার সন্তানের বাবা করবা,,গৌধুলি লগনে হাতে হাত রেখে চলার সাথি হবা,,শীতের রাতে উষ্ণতার অবলম্বন বানাবা,,পূর্ণিমা রাতের চাঁদ দেখার সাথি করবা,,আমার ঘড়ের দুষ্টমিষ্টি বধু সেজে আমাকে রাঙ্গাবা?I love You Apu.. (আমি)
–হুম বানাবো,,তোরে আমি আমার সপ্নের পুরুষ বানিয়ে রাখবো এই হৃদয় গহীনে হাজার হাজার বছর ধরে..
—তাহলে আপু আমারে একটা ইয়ে দাও না….!!(আমি)
–যাহ! আমার বুঝি লজ্জা করে……!!(মেয়েটি)

[বালিকা ইয়ে দিতে তার ঠোট আমার ঠোটের কাছে আনলো তখনি মায়ে চিল্লানিতে সব কিছু উধাও হয়ে যায়,,তার মানে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সপ্ন দেখছিলাম]

—মা এতো সকালে চিল্লাইতেছো কেনো,,একটু আরামে ঘুমাতে দেওতো?(আমি)
–কি এখন এতো সকাল! এখন সকাল ৯টা বাজে আর তুুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?(মা)
—সকাল ৯টা বাজে তো আমি কি করবো,,দূর এতোদিন পরিক্ষার জন্য ভালোমতো ঘুমাতে দেওনি,, এখনতো পরিক্ষা শেষ একটু ঘুমাতে দিলে কি হয়?
–কি তুুই এখনো ঘুমাবি,,তোরে না কাল রাতে তোর ফুপা ফোন করে বললো তুই যাতে সিহাবেরে আনতে যাস!!(মা)
–ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি?(আমি)
–তারাতারি আয় তোর ফুপা এর মধ্যে দুই বার ফোন দিছে!!(মা)

দূর ভালো লাগে না,,কি সুন্দর একটা রোমান্টিক সপ্ন দেখছিলাম,,হঠাৎ মা এসে সপ্নের গুষ্টিরপিণ্ডি চটকায়ে
ফেললো,,সালার সিহাব্বা তোরে যদি এখন সামনে পাইতাম তাইলে তোর বিয়া করার সখ বের করে দিতাম
থুক্কু সেইটা কোনোদিনই পারবোনা কারন সিহাব আমার বড় তাই আজকের মতো ছেড়ে দিলাম!
এতোখন ধরে ফাও প্যাচাল করতে গিয়ে আমার পরিচয়টাই দিতে মাগার মনে নাই! আমি রাহুল এবার HSC দিবো,আর সিহাব হলো আমার ফুফাতো ভাই কিছুদিন হলো বিয়ে করছে,,আমার টেষ্ট পরিক্ষার কারনে বিয়েতে যেতে পারিনাই,,তাই পরিক্ষা শেষ বলে সিহাবেরে আনতে যেতে বলছে সেটাই মা বলতে এসে আমার সপ্নের ১৩টা বাজাই ফেললো,,আপনারা সবাই বসে বসে চা খান আমি ফ্রেস হয়ে আসি। রাহুল ও রাহুল তোর ফোনে কে যেনো ফোন দিতাছে কখোন থেকে!!(মা)

–এতো চিল্লাইতেছো কেন,,একটু শান্তিতেও খাইতেও দিবানা?(আমি)
—ঐই আমি চিল্লাই না,,তোর ফোনে কতোক্ষন ধরে ফোন দিতাছে তাই বলছি,,আর এতেই চিল্লানো হয়ে গেলো না?[আমার কান ধরে](মা)
–এই কি করছো মা কান ছাড়ো লাগছে কিন্তু! কান বড় হয়ে গেলে কিন্তু তোমার ছেলেরে কেউ বিয়া করবো না,, সবাই কান ওয়ালী বলে হাসাহাসি করবে,,সেটা তোমার দেখতে ভালো লাগবে বলো?(আমি)

—ঐই বেশি কথা রেখে দেখ কে বার বার ফোন দেয়?
–যাচ্ছি!

খাওয়া দাওয়া সেরে ফোনের কাছে গিয়েতো আমার চোখ চরক গাছে উঠে যায়,,এতো আমার একমাত্র সিনিয়র ফুলটুসির ফোন! মা যদি যানতে পারতো যে তার পিচ্চি পোলাডা একটা সিনিয়র বউমা জুটাইয়া ফালাইছে,,আর এটা তার সেই একমাত্র লক্ষী বউমার ফোন তাইলে আমারে এতো আদর কইরা ফোন ধরতে বলতো না সোজা কচু গাছের সাথে ফাঁসি দিয়া তারপরে সকালের নাস্তা খাইতো!! এইতো জানপাখি আবার ফোন দিছে,,ফোন ধরেই;

—হ্যালো ফুলটুসি কেমন আছো?(আমি)
–ঐই আপনারে না বলছি এইসব ছাইপাস নামে আমারে না ডাকতে!!(মেঘা) [পুরো নাম মারজিয়া আক্তার মেঘা,,আমি মেঘা বলেই ডাকি]

—একটু বললে কি হয় জানপাখি?(আমি)
–ঐই আপনার সাথে কোনো কথা নাই আমি ফোন রাখলাম!!(মেঘা)
—ঠিক আছে আপনি ফোন রাখেন,,সকালে যে প্রপোজ করছে সেটাই এস্টেপ করবো কি আর করা!!(আমি)
–ঐই কি বললে কে আপনারে প্রপোজ করছে,,যদি ঐই

মাইয়ারে সামনে পাইনা তাইলে মাথার চুল একটাও রাখবোনা,,সাথে আপনারও হাত-পা ভেঙ্গে নিজের কাছে বসাই রাখবো বলে দিলাম!![বালিকা দেহি রেগে গেছে](মেঘা)

—আরে ভালো করে আমার কথাটাতো শুনবেন নাকি?
–কি শুনবো হ্যা,,তলে তলে মাইয়াগো লগে ডেটিং মারেন সেইগুলো শুনাবেন?(মেঘা)
—আরে লক্ষীটি সেটা না,,আজ সকালে সপ্নের ভিতরে একটা আপুরে প্রপোজ করছিলাম,,আর আমারে ফ্রিতে একটা ইয়ে দিছে,,দেখতে কিন্তু একদম আপনার মতো!

–যাহ! দুষ্ট কোথাকার,,আমিতো যানি আপনি সারাদিন শুধু মেয়েগো পেছনে লুতুপুতু করেন তাই রাতে শুয়ে শুয়ে ঘুমের ভিতরে মেয়েদের দেখেন!!(মেঘা)

–না জানপাখি তোমারে ছাড়া কি আর কাউকে নিয়া ভাবতে পারি?(আমি)
—কেমন ভাবেন সেটাতো ভালোই জানা আছে,, সারাদিনে একবার ওতো খবর নেন না,,আবার আমি দিলেও ধরতে চান না,,চৌদ্দবার দিয়ে দিয়ে তারপর মিষ্টারের দেখা মিলে,,আবার বলে ভালোবাসি!!(মেঘা)

—কি করবো লক্ষীটি মোবাইলে একটা আপু বলে আপনার ফোনে যথেষ্ট পরিমানে ব্যালেন্স নাই তাই আপনি এখন আপনার ফুলটুসির সাথে রোমান্টিক কথা বলতে পারবেনা তাই আপনার সাথে কথা বলতে পারিনা এতে আমার কি দোষ বলেন?(আমি)

—থাক এতো কাহীনি শুনতে চাই নাই,,কি করছো এখন বাবুটা?(মেঘা)
—এইতো আমার ফুলটুসির সাথে প্রেম করছি,,আপনি কি করছেন?(আমি)
–ঐই আপনারে না ঐইসব ছাইপাস বলতে না করেছি,, আবার বলছেন কেনো?
–ঠিক আছে লক্ষীটি আর বলবোনা,,আজ না আমি সিহাবেরে আনতে যাচ্ছি!!(আমি)
–তাই ভালো,,কোনো মেয়ের দিকে তাকাবানা কিন্তু যদি শুনি কোনো মেয়ের দিকে তাকাইছেন তাইলে কিন্তু একটা মারও মাটিতে পড়বেনা বলে দিলাম!!(মেঘা)

—এতোই যখন ভয় তাইলে আপনে সাথে গেলেই তো পারেন,,তবে আপনার মতো কাউরে যদি পাই তাইলে ভালোই হবেনে একটু রোমান্টিক আলাপ করা যাবেনে কি বলেন?(আমি)
—যানিতো আপনার স্বভাব ভালো না,,মেয়ে দেখলেই লাইন মারতে মন চাই,,যদি কারো সাথে কথা বলেন না তাইলে আপনার সাথে আড়ি!!(মেঘা)
–ঠিক আছে কথা বলবোনা,, তবে একটা শর্তে!!(আমি)
—কি শর্ত হ্যা,,কি শর্ত সেইটা আগে বলেন?(মেঘা)
–না মানে আজকে তো সকালে এমন রোমান্টিক একটা সপ্ন দেখলাম সাথে ফ্রিতে একটা ইয়েও পাইলাম,,তাই বলছিলাম যে আজ থেকে তুমি করে বললে হয়না,,আর সাথে ফ্রিতে একটা যদি ইয়ে দিতেন তাইলে অনেক ভালো লাগতো!!(আমি)

—আপনি কোনোদিন ও শুদরাবেন না (মেঘ) [বালিকা দেহি মুখের উপর ফোন কেটে দিলো] আপনারা হয়তো ভাবছেন এ আবার কেমন প্রেম যে আপনি আপনি করে কথা বলি,,আসলে আমার কপালটাই খারাপ,,আশা ছিলো তুমি করে কথা বলবো কি রোমান্টিক না হবে,,আবার মাঝে মাঝে দুই একটা ইয়ে দিবে,,কি আনন্দ আকাশে বাতাসে,,কিন্তু না কিছুই হবে না সব নাকি বিয়ের পর,,কেমনডা লাগে বলেন,, বলতে গেলে আবার আমার ১৩টা বাজাই ফেলে তাই মাগার কিছুই কইতে পারি না! আপনাদের মনে প্রশ্ন হইতে পারে আমি এমন মাইয়ার লগে পিরিতের নাও কেমনে বাইলাম,,সময় হলে সব বুজতে পারবেন..!

অতঃপর সিহাবেরে নিয়া আসতে রওনা দেই। ছোটবেলা থেকে আমার ট্রেনে চড়তে খুব ভালো লাগে,, তাছাড়া সিহাবের শশুর বাড়ি আবার অনেক দূরে তাই ট্রেনে করেই যেতে হয়,,যাক ভালোই হলো অনেকদিন পর একটু আরাম করে ট্রেন ভ্রমন করা হবেনে,, সিহাব হলো আমার ফুফাতো ভাই,,সিহাবরা দুই ভাই সিহাব ছোট আর সিয়াম বড়,,সিয়াম ভাই বিয়ে করছে আরো দুই বছর আগে একটা ছেলেও আছে..! ট্রেন তার নিজস্ব গতিতে পথ চলতে লাগলো,,আর আমি বসে বসে আমার স্মৃতির পাতায় পাতায় ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে যায়,,মেঘার সাথে প্রথম দেখার স্মৃতি গুলি চোখের সামনে ভেসে উঠে…!

আজ থেকে দুই বছর আগে সিয়াম ভাইয়া বিয়ে করে,, তখন আমি SSC পরিক্ষা দিচ্ছিলাম,,পরিক্ষার শেষের দিকে সিয়াম ভাইয়া বিয়ে করে,,পরিক্ষার কারনে বিয়েতে যেতে পারিনাই,,তাই পরিক্ষা শেষ হলো আমাকে আনতে পাঠায় সিয়াম ভাইয়াদের,,সিয়াম ভাইয়ার শশুর বাড়ি গিয়ে পৌছায় দুপুরবেলা,,সবাই খাওয়া দাওয়া করে যে যার মতো করে ঘুরতে চলে যায় তাই আমি একা একা ছাদে গিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছিলাম,,আর আপন মনে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলছিলাম,,শীতের পড়ন্ত বিকেলের মিষ্ট মধুর উষ্ণতার অবলম্বন রোদকে উপভোগ করছিলাম,, চারদিকে সবুজের সমারোহ বেদনা সিক্ত মনকেও আনন্দময় করে তুলতে পারে,,তাই এমন প্রাকৃতিক দৃশ্যকে হাত ছাড়া না করতে মোবাইল দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময়তার ভিতরে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করার ব্যার্থ চেষ্টা করছিলাম!

হঠাৎ একটা মিষ্টি মধুর কন্ঠে নিজেকে হারিয়ে ফেলি ভাবনার রাজ্যে,,যে কন্ঠ আমার মনকে করে তুলে প্রেমা সিক্ত,,কেগো তুমি ওগো মায়াবিনী তোমার ঐই মিষ্টি মধুর কন্ঠে নিজেকে যে করেছি দিওয়ানা,, ওগো রুপসিনী তুমি দেখা দেবে আমার এই আখি তলে,,তোমার ঐই রুপ দেখে আমার উড়ুউড়ু মনটাকে করতে চাই রঙ্গিন,আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে মনটা বেদনা সিক্ত হয়ে পড়ে,,সেই মিষ্টি মধুর কন্ঠকে খুজি আমি মনে মনে নিজের অন্তরালে,,আজও আমার প্রতিটা শিহরন জুরে সেই কন্ঠের মাধুরতা বেজে উঠে! ভগ্নগ্রস্থ হৃদয় নিয়ে আকাশের পানে চেয়ে নিজের শূর্নতাকে দূর করার ব্যার্থ চেষ্টা করছি…! কিছুখন নিরবতার পর কে যেনো আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বাণি ছুড়ে দিলো;

—বেয়াই মোবাইল দিয়ে ছবি তুললে হবে না,,ক্যামেরা দিয়ে তুলতে হবে!![সিয়াম ভাইয়ের শালীকা আমার প্রান প্রিয় বেয়ান মেঘা]
–একা একা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে কি লাভ! তাই মোবাইলেই দিয়েই ছবি তুলছি!!(আমি)
—তাই,,তাহলে মানুষ যোগাড় করে নিতে হয়!!(মেঘা)
–আমার এই কপালে জোড়া ছবি তোলার ভাগ্য মনে হয় নেই!!(আমি)
—কেনো আমি আছি না,,আসবো আপনার একা একা ছবিকে জোড়া জোড়া করতে?[মুখে দুষ্টামির হাসি](মেঘা)
—থাক আপনাকে আর কষ্ট করে ছাদে উঠতে হবে না!

আমার বেশি কথা বলতে ভালো লাগছিলো না তাই ছাদ থেকে সরে যায়,,মনটা শুধুই সেই মায়াবি পাগল করা কন্ঠকে মনে মনে খুজে বেড়াচ্ছে,,যানিনা কেমন হবে সেই অদৃশ্য সপ্ন পরী তবে মনটা যে তার ঐই মুখের একটু মিষ্টি মধুর পাগল করা কন্ঠ শুনতে বড়ই ব্যাকুল হয়ে আছে…!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত