সুপ্ত ভালোবাসা

সুপ্ত ভালোবাসা

ছুটির দিনে বিকালে বসে বই পড়ছি। এমন সময় শ্রাবণী(আমার স্ত্রী) মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
— যাই পাশের ফ্ল্যাটের নতুন ভাবীর সাথে আড্ডা দিয়ে আসি।
আমি বই থেকে মুখ না সরিয়েই যেতে সম্মতি দিলাম।
২০ থেকে ২৫ মিনিট পর শ্রাবণী আসলো। ওর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আমি দুষ্টামি করে ওকে বললাম,

~পাশের বাসার ভাবী কি তোমায় কামড়িয়ে দিয়েছে? মুখ এত লাল হয়ে আছে কেন?
শ্রাবণী রাগে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললো,
— পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর সাথে তোমার এত কি? তোমার এত প্রশংসা করে কেন?
আমি অবাক হয়ে বললাম,

~ভালো মানুষের প্রসংশা করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
— তুমি যদি ভালো মানুষ হও তাহলে দুনিয়াতে খারাপ মানুষটাকে? আমি তোমার সাথে ৮ বছর হলো সংসার করছি। তোমার মাঝে তো আমি ভালোর কিছুই দেখি নি।
আমি তখন ফিসফিসিয়ে বললাম,
~ রতনে রতন চিনে আর শুয়োরে চিনে কচু..
জানি না কথাটা কিভাবে শ্রাবণী শুনে ফেললো। সে রাগে অন্যরুমে চলে গেলো।

আমি মিটিমিটি হাসছি আর ভাবছি, বাঙালি মেয়েরা সত্যিই খুব অদ্ভুত। ওরা স্বামীর প্রশংসা অন্য মেয়ের থেকে শুনতে পারে না আবার স্বামীর নিন্দাও অন্য মেয়ের থেকে শুনতে পারে না…

সেদিন দুপুরে আমি আর শ্রাবণী একসাথে দুপুরের খাবার খাচ্ছি। এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ। শ্রাবণী দরজা খুলে দেখে পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী তরকারীর বাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণীকে দেখে উনি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,

– ভাবী, পিয়াস ভাইয়ের জন্য এই শুটকির তরকারীটা এনেছি। পিয়াস ভাইয়ের মুখে শুনেছি শুটকি মাছের তরকারী না কি উনার খুব প্রিয় কিন্তু আপনি না কি শুটকি মাছের তরকারী রান্না করতে পারেন না। তাই নিজে রান্না করে নিয়ে এসেছি।

তরকারীর বাটিটা যখন শ্রাবণীর হাতে দেয় তখন ভাবী আমাকে চোখের একটা ইশারা দেয় আর শ্রাবণী সেটা খেয়াল করে।

বিকালে দিকে দুইহাতে ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে যখন বাসার গেইটের ভিতর দিয়ে ঢুকি তখন চোখে কি যেন একটা পড়লো। আমার দুইহাতে বাজারের ব্যাগ থাকার কারণে চোখে কি পড়লো সেটা বের করতে পারছিলাম না। তখন পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী আমার এই অবস্থা দেখে নিজে চোখ থেকে ময়লাটা বের করে দিলেন। আর এই দৃশ্যটা শ্রাবণী পিছন থেকে দেখলো।

বাসায় ঢুকার সাথে সাথে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। শ্রাবণী আমার দিকে একটার পর একটা জিনিস ছুড়ে মারতে লাগলো আর আমি ধরতে লাগলাম,
~ আরে তোমার কি হলো, তুমি এমন করছো কেন?
শ্রাবণী রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
–আমি তোমার মত লম্পট স্বামীর সাথে সংসার করবো না। আমি আজকেই বাপের বাড়ি চলে যাবো।
~কেন, আমি কি করেছি?

— কি করেছো আবার প্রশ্ন করো। আমার ঠোঁটে তো বিষ আর মধু হলো পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর ঠোঁটে। আমি আজ নিজের চোখে দেখেছি। ছি ছি ছি….

শ্রাবণী আমার কোন কথায় শুনলো না। ব্যাগ গুছিয়ে বাবার রাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর সে ফিরে এসে বললো,

— এটা আমার বাসা। আমাদের বিয়ের সময় বাবা এটা আমায় গিফট করেছিলো। বের হলে তুমি বের হয়ে যাবে….
রাত ১১ টা আমি এখনো বাসার বাহিরে। শ্রাবণী আমাকে বের করে দেবার পর এখনো বাসায় যায় নি। আমি জানি আমি বের হবার পর থেকে শ্রাবণী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আমার ফিরে আসার অপেক্ষায়। মেয়েটা বড্ড আমায় ভালোবাসে।

একবার মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি শ্রাবণী বিছানাতে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কাঁদছো কেন। তখন ও বলেছিলো, যদি কোলবালিশেই জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছিলে…
যে মেয়েটা আমার পাশে সামান্য কোলবালিশটা সহ্য করতে পারে না সে কি করে একটা মহিলাকে সহ্য করবে আমার পাশে….

১১টার দিকে বাসায় এসেছি। শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখগুলো ফুলা ফুলা। তারমানে আমি চলে যাবার পর সারাক্ষণ কান্না করেছে।চুপচাপ দুইজনে শোয়ে পড়লাম। এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ পেলাম। দরজাটা খুলে দেখি পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী। আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখে বললেন,

– পিয়াস ভাই এত রাতে আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য আমি সরি। আসলে আমার শোবার ঘরে ফ্যানের ক্যাপাসিটরটা নষ্ট হয়ে গেছে। একটু ঠিক করে দিবেন প্লিজ?
এমন সময় শ্রাবণী পিছন থেকে বলতে লাগলো,

— আপনার শোবার ঘরে এত সমস্যা হয় কেন? আজ ফ্যান চলে গেছে কাল চলে যাবে লাইট। আর সব সময় তা ঠিক করার জন্য আমার স্বামীকেই কেন যেতে হবে? অন্য কেউ কি নাই? আর আপনার এত সমস্যা থাকলে বিদেশ থেকে নিজের স্বামীকে আসতে বলতে পারেন না? আমার স্বামীর প্রতি আপনার এত লোভ কেন? আর কখনো যদি আমার স্বামীর পিছনে দেখেছি তাহলে আপনার ঠ্যাং ভেঙে দিবো..

পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী শ্রাবণীর এইসব কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শ্রাবণী শুধু মুখে বলেই থামে নি। ভাবীকে মারতে পর্যন্ত গিয়ে ছিলো। আমি কোন রকম শ্রাবণীকে আটকেরেখে ভাবীকে বললাম এখন চলে যেতে…
পরদিন বিকাল ৪ টার দিকে আমি আর অরু( পাশের ফ্ল্যাটের ভাবী)বসে আছি একটা রেস্টুরেন্টে।
আমি অরুর হাতটা ধরে বললাম,
~গতকালকে শ্রাবণীর ব্যবহারটার জন্য তুই রাগ করিস নি তো?
অরু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

– আরে আমি রাগ করবো কেন? আমি তো এইখানে এসেছি শ্রাবণীকে রাগানোর জন্য..

অরু আমার ছোট বেলার বন্ধু। একজন সাইক্রিয়াট্রিস। ও এইখানে এসেছে শ্রাবণীকে সুস্থ করার জন্য। আসলে আমার আর শ্রাবণীর বিয়ে হলো ৮ বছরের মত হবে। কিন্তু এখনো আমাদের বাচ্চা হয় নি। আর এইসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে শ্রাবণী ডিপ্রেশনে চলে যায়। তাই এখন চেষ্টা করছি শ্রাবণীর মাথা থেকে এই বাচ্চার চিন্তাটা দূর করে অন্য একটা চিন্তা ঢুকাতে। তাই অরুকে নিয়ে এই অভিনয় গুলো করছি..
এমন সময় হঠাৎ অরু বললো,
– পিয়াস, শ্রাবণীকে খুব ভালোবাসিস?
আমি মুচকি হেসে বললাম,

~ কতটুকু ভালোবাসি জানি না। তবে আমার বাচ্চা চাই না। ও যদি আমার পাশে থাকে তাহলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত