অচেনা সেই মেয়েটি

অচেনা সেই মেয়েটি

–মা, এই বিয়েটা না করলে হয়না? (আমি)
–দেখ বাবা, এই যুগে এখন এইরকম মেয়ে পাওয়া খুবই কষ্টকর। তাছাড়া মেয়েটা দেখতেও খুবই সুন্দর। তুই এই মেয়েটাকেই বিয়ে কর। (মা)
–ঠিক আছে ঠিক আছে, তোমার কাছে যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। (আমি)
.
–হুম, কালকে মেয়ে পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য আসবে। খুব শিগ্রই বিয়েটা ফাইনাল করবো। (মা)
–তোমার কাছে যেটা ভালো মনে হয় করো। আমি তোমার সব কথাতেই রাজি আছি। (আমি)
–এই তো লক্ষী ছেলে। যা এখন খেয়ে দেয়ে শুয়ে পর। (মা)
.
.
অতঃপর খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ওহ, আমার পরিচয় তো দেয়াই হয়নি। আমি রাফি। পড়াশোনা শেষ করে এখন ব্যবসায় নেমে পড়েছি।
বাবা বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন। পরিবারে এখন শুধু আমি অর মা ছাড়া কেউ নেই।
.
দিন কাল ভালোই চলছিলো। এর মধ্যে মা আমার বিয়ের জন্য উঠে পরে লেগেছে। তাই কি আর করবো,

মাকে খুশি করার জন্য বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম।
.
বিছানায় শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।
.
“”এই তো গতবছরের কথা। আমি ফেসবুকে লেখালেখি করতাম। অনেক গল্প এবং কবিতা লিখে বিভিন্ন পেজে প্রকাশ করতাম।
.
ভালো কবিতা লিখতে পারতাম বিধায় একটা পেজে আমাকে এডিটর করা হয়। সেখানে প্রতিদিন কবিতা লিখতাম।

আমি বেশিরভাগ ভালোবাসার ছন্দ বানিয়ে সেই পেজে প্রকাশ করতাম।
.
কবিতার শেষে একটা ছদ্মনাম ব্যবহার করতাম। কখনই শেষে নিজের নাম দেইনি। ভালোই উপভোগ করতাম পেজটা।

এর মাঝে আমার সেই ছদ্মনামটা অনেক পরিচিত হয়ে গেলো।
.
বেশ কয়েকদিন অসুস্থ থাকার কারণে পেজে কবিতা পোষ্ট করতে পারিনি। প্রায় একসপ্তাহ পর একটা কবিতা লিখে পোষ্ট করলাম। অনেক লাইক এবং কমেন্টস পড়লো। আমি প্রতিটা কমেন্টের রিপ্লে দিচ্ছিলাম।
.
হঠাৎ একটা কমেন্ট দেখে থেমে গেলাম। কমেন্টে লেখা ছিল “এতোদিন কোথায় ছিলেন আপনি?”
.
ঘাটাঘাটি করে দেখলাম কোনো একটা মেয়ের আইডি ওটা। তো কমেন্টে গিয়ে রিপ্লে দিলাম:-
–অসুস্থ ছিলাম তাই আসতে পারিনি। (আমি)
–এখন সুস্থ হয়েছেন তো? (মেয়েটা)
–হুম.. আপনি আমাকে খুব মিস করছিলেন বুঝি? (আমি)
–কেন, মিস করলে সমস্যা আছে বুঝি? (মেয়েটা)
–না, ঠিক আছে। যাক কেউ একজন তাহলে আমাকে মিস করেছে। (আমি)
.
এভাবে আরো কিছুক্ষন কমেন্ট বক্সেই কথা বললাম। পেজ থেকে কমেন্টস করছিলাম বিধায় মেয়েটা আমার আইডি জানেনা। তখন আমি মেয়েটার আইডিতে গিয়ে দেখলাম সুন্দর সুন্দর কিছু স্ট্যাটাস দেয়া আছে। সেখানে কয়েকটা লাইক/কমেন্টস করলাম।
.
তারপর রিকু পাঠাইতে গিয়ে আর পাঠালাম না। যদি এক্সেপ্ট না করে ডিলেট করে দেয় সেই ভয়ে। তারপর তার আইডি থেকে চলে আসলাম।
.
তার ৩থেকে ৪দিন পর হঠাৎ দেখলাম সেই মেয়ে আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে। কোনো ধরনের দেরি না করে সাথে সাথে এক্সেপ্ট করলাম।
.
কিছুক্ষন পর সেই আইডি থেকে sms আসলো:-
–হাই, কেমন আছেন? (মেয়েটা)
–জ্বী ভালো। আপনি? (আমি)
–আমিও ভালো আছি। (মেয়েটা)
.
এভাবে বেশ কিছুক্ষন কথা হলো। কথা বলে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম নিলিমা। (ইন্টারে পড়ে)। মেয়েটার বাড়ি আমাদের পাশের জেলাতেই।
.
সেই দিনের পর থেকে প্রতিদিন মেয়েটার সাথে ফেবুতে চ্যাটিং হতো। জানতে পারলাম মেয়েটার নাকি আমার লেখা গল্প এবং কবিতাগুলো খুব ভালো লাগতো। সে নাকি অনেক আগে থেকেই আমার আইডি খুঁজে বেড়াচ্ছিল, কিন্তু পাচ্ছিলনা । তারপর আমি তার টাইমলাইনে লাইক কমেন্ট করাতে আমার আইডি পেয়েছে এবং পাওয়া মাত্রই রিকু পাঠিয়েছে।
.
এভাবে কথা বলতে বলতে আমাদের মাঝে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। সারাক্ষন ফেবুতে দুজন চ্যাটিং করতাম। আমি মেয়েটার সাথে সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করতাম। মেয়েটাও আমাকে তার সব কথাই বলতো।
.
আমাদের দুজনের মধ্যে বেশ মিল ছিল। আমি যা যা পছন্দ করতাম, মেয়েটাও ঠিক তাই পছন্দ করতো।
.
তারপর একদিন আমি তার কাছে ফোন নাম্বার চাইলাম:-
–এই তোমার ফোন নাম্বার দাও। (আমি)
–ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবে? আমাদের তো প্রতিদিন fb তে কথা হয়ই। (নিলিমা)
–যদি কখনও fb id নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আর কোনো যোগাযোগের মাধ্যম থাকবেনা। তাই চাইলাম। (আমি)
–ঠিক আছে। তাহলে তোমার নাম্বারটা দাও, fb আইডি নষ্ট হয়ে গেলে আমিই যোগাযোগ করে নেবো। (নিলিমা)
.
অতঃপর আমি আমার ফোন নাম্বারটা দিলাম। তারপর ওর নাম্বার চাইলাম, কিন্তু নিলিমা দিতে অস্বিকার করলো। তখন খুব মন খারাপ করলাম।

নিলিমাকে বললাম “তুমি আজও আমায় বিশ্বাস করতে পারলেনা”।
.
নিলিমা কোনো উত্তর দিলোনা। তারপর মন খারাপ করে বসে আছি। হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে মিস্ড কল আসলো।
.
তারপর দেখলাম নিলিমা sms করেছে:-
–তোমার নাম্বারে এইমাত্র একটা মিস্ড কল পেয়েছো? (নিলিমা)
–হুম পেয়েছি। (আমি)
–নাম্বারটা সংরক্ষন করে রেখো। (নিলিমা)
.
তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা নিলিমার নাম্বার। নাম্বার পেয়ে খুব খুশি হলাম।

তারপর থেকে নিলিমার সাথে ফেসবুকে এবং ফোনে নিয়মিত কথা হতো।
. .
এর মধ্যে আমি নিলিমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। নিলিমাকে আমি ভালোবেসে ফেলি।

কিন্তু বলার সাহস পাইনা, যদি সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়ে।
.
যদিও আমি এখন পর্যন্ত ওর চেহারাটা দেখতে পারিনি, কিন্তু ওর মনটা দেখে ফেলেছি। ওর খুব সুন্দর একটা মন আছে।

নিলিমাকে যে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পাবে, সে অনেক ভাগ্যবান হবে।
.
তাই নিলিমাকে না দেখেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। আমি যখন ওর সাথে কথা বলতাম,

তখন আমার কাছে মনে হতো আমরা পাশাপাশি বসে কথা বলছি। আমি কল্পনায় নিলিমাকে দেখতা পেতাম।

দেখতাম ওর মায়াবি হাসি। আমি কল্পনাতেই আমার মনের মধ্যে নিলিমার ছবি একে ফেললাম।
.
তারপর একদিন সাহস করে নিলিমাকে আমার মনের কথা বলে দিলাম। নিলিমা কিছুই বললনা, শুধু চুপচাপ থাকলো।

আমার sms এর কোনো উত্তর দিলোনা। আমিও আর কিছু বললাম না।
.
তারপর ২দিন আমাদের মধ্যে আর যোগাযোগ হয়নি। ২দিনের মাথায় হঠাৎ দেখলাম নিলিমা ফোন করেছে।

আমি খুব ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে নিলিমা বলে উঠলো “i love u”
.
এটা শুনে আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি কিছু বলার আগেই নিলিমা ফোনটা কেটে দিলো।

তারপর আমি কয়েকবার ফোন করার পরও নিলিমা ফোন রিসিভ করলোনা।
.
.
তারপর ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম নিলিমা “i love u” লিখে sms করেছে। আমিও “i love u” লিখে sms করলাম।

তারপর থেকে আমাদের সম্পর্কটা ভালোই চলতে লাগতো।
.
এর মধ্যে নিলিমার কাছ থেকে ওর ছবিও পেয়েছি। ঠিক আমার কল্পনায় আঁকা ছবির মতই সুন্দর।

তারপর আরো বেশি ভালোবেসে ফেললাম নিলিমাকে।
.
তারপর একদিন হঠাৎ আমার ফোনটা হারিয়ে গেলো। নিলিমার সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।

বেশ কষ্ট হচ্ছিলো আমার। আমি জানি নিলিমাও আমাকে না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। নিলিমার নাম্বারটাও ঐ সিমে ছাড়া অন্য কোথাও লিখে রাখিনি।

এমনকি আমার মুখস্তও নেই।
.
কয়েকদিনের মধ্যেই আরেকটা নতুন ফোন কিনলাম। ফোন কিনেই আগে ফেসবুকে ঢুকলাম।

ফেসবুকে ঢুকেই বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। নিলিমা আইডি ডিএক্টিভেট করেছে।
.
নাহ, কোনোভাবেই ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা। কি করবো কিছু ভেবেও পাচ্ছিনা।

নিলিমা অভিমান করে আমার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে।
.
এভাবেই আমি নিলিমাকে হারিয়ে ফেললাম। সে হঠাৎ করে আমার জীবনে এসে আবার হঠাৎ করেই চলে গেলো।

অচেনা সেই মেয়েটিকে আর পাওয়া হলোনা।””
.
.
এতক্ষন শুয়ে শুয়ে নিলিমাকেই ভাবছিলাম। এর মধ্যে চোখের জলে বালিশটা একদম ভিজে গেছে। তারপর সারারাত না ঘুমিয়ে শুধুই কাঁদলাম।
.
পরেরদিন মেয়ে পক্ষ থেকে লোকজন এসে বিয়ে ফাইনাল করে গেলো। তারপর ধীরে ধীরে বিয়ের দিনটা ঘনিয়ে আসলো।
.
আমি এখন পর্যন্ত কন্যাকে দেখিনি, যেহেতু মা দেখেছেন এবং পছন্দ করেছেন, তাই আর দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি।
.
তারপর বিয়ের দিনটা চলে আসলো। বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। বউ বাসর ঘরে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

বাসর ঘরে যাওয়ার মতো এখন আমার মন মানসিকতা নেই। শুধু নিলিমাকে মনে পড়ছে আর চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
.
তারপর চোখ মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম বউ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমার একদম ইচ্ছে করছেনা যে বউয়ের কাছে যাই।

তারপরও পাশে গিয়ে বসলাম।
.
কি বলবো কিছু ভেবে পাচ্ছিনা। হঠাৎ মনে হলো ছাদের কথা। ছাদে গিয়ে যদি চাঁদের আলো দেখি তাহলে মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে।

তাই বউয়ের সাথে কথা না বলে ছাদের দিকে রওনা হলাম। যাওয়ার সময় বউকে বললাম “আমি ছাদে যাচ্ছি,

যদি রাত জাগতে না পারো তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো”।
.
তারপর ছাদে চলে গেলাম। পরিবেশটা একদম নিথুর হয়ে আছে। চারিদিক থেকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছেনা।
.
আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলাম চাঁদটা ঝলমল করছে। চাঁদের মাঝেই আমি নিলিমাকে খুঁজে পেলাম।

চাঁদের সাথে মিশে আছে নিলিমার মায়াভরা চেহারাটা।
.
.
বসে থেকে আনমনে চাঁদ দেখছি। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। ফিরে তাকাতেই দেখলাম বউ ঘোমটা দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি উঠে দাড়ালাম, তারপর বউয়ের সামনা সামনি দাড়িয়ে ঘোমটা তুলে দিলাম।
.
বউয়ের মুখখানা দেখতেই বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো। আরে এতো সেই অচেনা মেয়েটি। যার জন্য মনের মধ্যে অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছি।

কিছুক্ষন আগেও আমি যার ভালোবাসার জন্য কেঁদেছি এ যে সেই নিলিমা।
.
তারমানে আমি আমার নিলিমাকে পেয়ে গেছি? নাহ নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি স্বপ্নে দেখছিনা তো?
এখনও নিলিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনও তার স্বামীকে দেখেনি সে।
.
তাই নিলিমাকে আমি ডাক দিতেই সে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে ফেললো।
–রাফি তুমি? (নিলিমা)
–হুম.. তোমার স্বামী। (আমি)
–কক্ষনই না। তুমি ভালোবাসার নামে আমাকে ধোকা দিয়েছো। (নিলিমা)
.
বুঝলাম মেয়েটা খুব রেগে আছে। সে এখনও আমাকে ভুল বুঝে আমার উপর অভিমান করে আছে।
তখন নিলিমাকে আমি সবকিছু খুলে বললাম। সব শুনে নিলিমা আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর কাঁদতে শুরু করলো।
.
আমি নিলিমাকে আবার আমার সামনে দাড় করালাম এবং প্রাণ ভরে তাকে দেখতে লাগলাম।
চাঁদের আলোতে নিলিমার চেহারা অনেক মায়াবী রুপ ধারণ করেছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত