সারপ্রাইজ

সারপ্রাইজ

বিয়েটা এবার করেই নে না মা।আর কতদিন এভাবে বাবা-মা কে চিন্তা দিয়ে রাখবি।আমাদের তো বয়স হয়েছে।তোকো একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলে ওপারে গিয়েও শান্তি আমাদের।
বাবা সবসময় এসব আজেবাজে কথা কেনো বলো তোমরা!

আমি তো বলেছি আর কিছুদিন সময় দাও আমাকে।তাছাড়া আমি তো চাকরি করছি আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা না করলেও চলবে।

যেদিন মা হবি সেদিন ঠিক বুঝবি কেনো এতো চিন্তা হয় বাবা-মায়ের।

আবিরের সাথে চার বছরের রিলেশন আমার।এদিকে আবিরও ওর বাসায় বলে উঠতে পারছে না।এভাবে তো চলতে পারে না।বাবা-মাকে এবার একটা ডিসিশন জানাতেই হবে
আমাকে

-শুনো আবির এবার অন্তত বাসায় আমাদের সম্পর্কের কথা জানাও।আর কতোদিন এভাবে চলবে!!
-জানানোর স্কোপ পাচ্ছি কই নিশা!! সামনে বোনের বিয়ে এত এত সব আয়োজন সব আমাকেই সামলাতে হবে।বিয়ের ধাক্কাটা সামলে উঠি তারপর সময় বুঝে বলে দেবো সবটা।

-হ্যা ততোদিনে আমার বিয়েটা হয়ে যাক আর তুমি আমার বিয়েতে বাবুর্চি গিরি করতে এসো।
-রেগে যাচ্ছো কেনো!!
বোনের বিয়ে না দিয়ে আমি কি করে বিয়ে করব!!আমার তো ভাই হিসেবে দায়িত্ব আছে।
-হ্যা দায়িত্ব শুধু তোমারই আছে।আমার বাবা-মায়ের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই!! তাদের বয়স বেড়েছে আমাকে বিয়ে জন্য ভীষন তাড়া দিচ্ছে।

তুমি তোমার বোনের বিয়ের দায়িত্ব পালন করে যাও সারাজীবন।আমি গেলাম।
দুদিন যাবত আবিরের সাথে কোনো কথা বলছি না।কয়েকশো ফোন আর ম্যাসেজ এসে জমা হয়ে আছে কিন্তু এসবে এখন আর আমার রাগ ভাঙ্গবে না।এই সম্পর্কের কোনো পরিনতি নেই। ও থাকুক ওর মতো আমি আমার মতো।
নিশা মা কাল তোকে দেখবে আসবে কাল একটু ছুটি নিয়ে নিস।

মা আরেকটু সময় কি আমাকে দেয়া যায় না!!
তোর বাবার অবস্থা খুব বেশি ভালো না তাই যা বলি মেনে নে।জেদ করিস না মা।
মায়ের মুখের উপর আর কোনো কথা না বলে আমি অফিস চলে গেলাম।
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরবো এমন সময় আবির অফিসের নিচে এসে হাজির।

-কি ব্যাপার!!এখানে কি চাও?
-প্লিজ নিশা আমাকে আর কয়েকটা বছর সময় দাও আমি সব কিছু নিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
-ইয়ারকি হচ্ছে!!কয়কটা বছর!!!আর ইউ ক্রেজি আবির!!?
-কেনো কি হয়েছে!

-আমি তোমাকে এক মাস টাইম দিতে পারবো কিনা তা জানিনা আমি।বাবার শরীরটা ভালো না।কিছু একটা হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
-তাহলে তুমি কি চাও এখানেই ব্রেকআপ করে নেবে!

-আমায় তুমি মাফ করে দাও।আমার পক্ষে এতো সময় অপেক্ষা করা সম্ভব না কিন্তু আমি তোমায় খুব ভালোবাসি আবির।আমি হেল্পলেস প্লিজ ফরগিভ মি।

-ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই হবে।বিয়ে করে নাও তোমার বাবার পছন্দ করা ছেলেকে।ভালো থেকো বাই।
অফিস থেকে ফিরে খুব কান্নাকাটি করতে করতে চোখ মুখ ফুলে গেছে।অন্ধকার রুমে বসে বসে আমাদের চার বছরের প্রিয় মুহুর্ত গুলো মনে করছি আর চোখের জল মুছে যাচ্ছি।এতো কষ্ট হচ্ছে আবিরের জন্য।

কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।সকাল হয়ে গেছে।সবাই বাসা সাজাচ্ছে।একটা নীল জামদানি রাখা আমার টেবিলের উপর।সাথে একগাদা কাচের চুরি আর বেলি ফুল।এগুলো এখানে কে রেখেছে বলে চিৎকার করে উঠতেই ছোট ভাই এসে বলল আপু এগুলো দুলাভাই এনেছে তোমার জন্য।ইচ্ছে করছিলো কষিয়ে একটা চর মারি ওর গালে বিয়ে হলো না এখনো আবার দুলাভাই বলা শুরু করে দিয়েছে।
মা এসে বলল এগুলো পড়ে তৈরি হয়ে চলে আয় সবাই বসে আছে তোকে দেখার জন্য।

আমি মন খারাপ করে রেডি হচ্ছি আর ভাবছি আবিরটা একটা অপদার্থ।একটা খোজ পর্যন্ত নিলো না আমার।আরে চার বছর একটা বিড়াল ছানা পুষলেও তো মায়া ছাড়ানো যায় না।আর ও এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো আমায়।
এসব ভাবতে ভাবতে রেডি হয়ে গেলাম সবার সামনে।কিন্তু এখানে তো শুধু ছেলের বাবা মা একটা মেয়ে বসে আছে।হয়তো ছেলের বোন হবে সম্ভবত মেয়েটা।সবার প্রশ্নের পর্ব শেষে মা রনিকে বলল তোর আপুকে ছাদে নিয়ে যা সেখানে ছেলের সাথে কথা বলে নেক।

-ছাদে যেতে যেতে রনি বলছিলো আপু আপু নতুন দুলাভাই না ভীষন ভালো জানো।
-তুই কি করে জানলি মাথা মোটা!!

-আমাকে অনেক গুলো চকলেট দিলো আর বলল তোমার জন্য যা যা এনেছে সেগুলো তোমার রুমে গিয়ে রেখে আসতে।

-চুপ কর চামচা কোথাকার।আর একবার যদি ওই লোকটাকে দুলাভাই বলে ডাকিস তাহলে তোর চকলেট খাওয়া আমি ঘুচিয়ে দেবো আর যে তুই পাশের বাসার তুলিকে প্রতিদিন ছাদে দাঁড়িয়ে ঝাড়ি মারিস সব মাকে বলে দেবো।
রনি এক দৌড়ে আমাকে রেখে নিচে পালিয়ে গেলো।

আমি আস্তে আস্তে ছাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।কালো শার্ট পড়ে লোকটা পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।শার্টটা খুব চেনা চেনা লাগছে।আমি তাকে না দেখেই পেছন থেকে কথা বলতে শুরু করে দিলাম।

-দেখুন আমি আপনার সাথে বিয়ে করতে চাইছি শুধু বাবার কথা ভেবে।আমি আবিরকে খুব ভালোবাসি।আমার মনে হলো বিয়ের আগে আপনাকে সব কথা বলা দরকার তাই বলছি।আমাদের চার বছরের রিলেশনশিপ ছিলো।
লোকটা কি আমার কথা শুনছে নাকি!!

দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করব ঠিক বাট আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না আই এম সরি।
লোকটা আমার দিকে ঘুরে তাকানোর পরে আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
আমি আমার চোখের সামনে আমার অপদার্থ বয়ফ্রেন্ড আবিরকে দেখতে পাচ্ছি।

-আবির!!এসব কি!! তুমি এখানে কিভাবে? কি করছো তুমি? কিভাবে আমার বাসায় এলে?
আবির হুহু করে হাসতে লাগল।রাগে তখন আমার পুরো চোখ মুখ জ্বলতেছিলো।এসব কি আবির!!

-আগে একটু হাসতে তো দেবে নাকি তারপর বলছি।

-ও বুঝেছি বাবুর্চি গিরি করবে বলে খাবারের মেনু জানতে এসেছো বাবার কাছে!!যাও যাও বাবা নিচেই আছে।কিন্তু ওই লোকটা কোথায় যার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা!!!

আবির আবারো হুহু করে হাসছে আর বলছে কেমন লাগল আমার তুফানি সারপ্রাইজ!!

আমি তোমার বাবার সাথে আগেই কথা বলেছি আমাদের বিয়ে ব্যাপারে।আর আমার বাসায়ও সবটা বলা হয়ে গেছে।নিচে যাদের সাথে দেখা করে এসেছো তারাই তোমার শ্বশুড়- শাশুড়ি আর ওই যে মিষ্টি একটা মেয়ে ওটা আমার বোন ইলিনা।

ওর ও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমাদের বিয়ে একদিনেই হবে সব কিছু প্লান করা হয়ে গেছে।শুধু মিয়া বিবি রাজি কিনা সেই অপেক্ষা।

বদমাশ ছেলে তোমার মাথায় এতো শয়তানি বুদ্ধি ছিলো!!আর বাবা-মা ও আমাকে কিছু বলল না!!
আমিই বারন করেছিলাম যেনো না বলে তাহলে তুফানি সারপ্রাইজটা কিভাবে দিতাম তোমাকে!
আর আমায় যে তুমি কাদালে সেটার কি হবে?

কাদলে চোখ সুন্দর হয় জানো না তুমি!! বিয়ের আগে তাই আমার বউয়ের চোখ গুলো আরেকটু সুন্দর করে নিলাম।বললে না আমার তুফানি সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো?

খুবই বাজে বাবুর্চি মশাই।আপনাকে এর জন্য অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে।
বলুন মহারাণী আপনার শাস্তি আমি মাথা পেতে নিলাম।
এখন থেকে সারাজীবন আপনার আমাকে সহ্য করতে হবে।
জো হুকুম মহারাণী।
পাশ থেকে ছোট ভাই রনি বলে উঠল রাজা রানী রাজি তো হ্যাপি এন্ডিং আজি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত