ভিন্নরূপি বন্ধু

ভিন্নরূপি বন্ধু

“সংসদ ভবন” নামক ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলার পাশাপাশি তিন রুমের মাঝের রুমটার অধিবাসী মামুন, নুহাশ এবং শান্ত।

মামুন এবং নুহাশ শান্ত’র চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একবছরের সিনিয়র হলেও বদ্ধ রুমের আচরণটা বন্ধুসুলভই।

হয়তো শান্ত’র সমবয়সী বন্ধুরা আনন্দই দিতে পারে একটু বেশি, তবে বাস্তব জীবন, শিক্ষা এবং সহযোগিতায় মামুন-নুহাশের জুড়ি নেই।

শান্ত একটু বেশিই অত্যাধুনিক, চুলের স্টাইল এবং পোষাকের আধুনিকতা অনেক দৃঢ়ভাবে ছুঁয়েছে তাকে।

এই অত্যাধুনিক বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই মামুন, নুহাশ এবং পাশের রুমের বন্ধুদের কাছে একটু বেশিই পঁচতে হয় শান্তকে।

তবে নিজের এই অত্যাধুনিকতার উপর দৃঢ়তা দূর হয়নি কখনো৷ কারণ পঁচানো শেষে দুই রুমমেট তাদের বন্ধুত্বময় ভালবাসায় ভুলিয়ে দেয় সব।
.
রুমা নামের একটা মেয়ের সাথে শান্ত’র সম্পর্কটা বেশ কিছুদিনের।

রুমাকে অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে শান্ত, তবে বিষয়টা তার চালচলনের সাথে মোটেও যায়না৷

শান্ত’র প্রেমে কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়ালেও দুই রুমমেট এবং অন্যদের কাছে এই বিষয়টাও মজা নেয়ার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারন, শান্ত মেয়েটাকে অনেক বেশি ভালবাসলেও মেয়েটার ভালোবাসাময় দিকটা ছিলো খুব নড়বড়ে। একটু এদিক-ওদিক হলেই ব্রেকআপের হুমকি।

ভালোবাসা নামক সম্পর্কে দুজনই জড়িত থাকলেও খুব একটা পাত্তা দিতোনা শান্তকে।

শান্ত’র উজাড় করা ভালোবাসার প্রাপ্য সম্মান মেয়েটা দিতে ব্যর্থ বলেই একটু বেশিই পঁচতে হতো সবার কাছে। শান্ত আর রুমার সম্পর্কটা চলছিলো এমন অদ্ভুত চক্রে।
.
অপরাহ্নের বিরতিতে ঘুমিয়ে পড়ায় ফোনের রিংটোনের আওয়াজটা কান পর্যন্ত যাচ্ছিলোনা শান্ত’র।

ঘুম ভাঙ্গার পর রুমার মিসডকল দেখে একটু ভয় পায় শান্ত, কেনোনা কল দিতে দেরি হলে যার ঝাড়ি খেতে হয় তার কল পিক না করতে পারা মানেই বিপদ সংকেত।

এমনটা ভাবতে ভাবতেই রুমাকে কল ব্যাক করে শান্ত। রুমার কণ্ঠটা ততক্ষণে বারুদ থেকে আগুনে পরিণত হয়েই গেছে।

ভ্রান্ত মন্তব্যের সহিত পরবর্তীতে যোগাযোগ না করার আদেশ দিয়েই কলটা কেটে দিলো।

এরপর কয়েকবার কল করলেও জবাব পায়নি কোন, শেষবারের মতো কল করতেই জবাব টা পেলো বিভিন্ন গালিতে।

রুমার এ আচরণটা নতুন নয়, তবে আজকের আচরণটা একটু বেশিই ভয়ংকর। তাই বিমর্ষ মন নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো শান্ত।
.
সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের সবার মাঝে জানাজানি হয় বিষয়টা, শান্ত’র ব্রেকআপ হয়ে গেছে কিছু নতুন গালি শ্রবণের মাধ্যমে।

যে যার মতো করেই মন্তব্য করেই চলেছে শান্ত’র কানের কাছে এসে।

“রুমার কাছে আর কতোদিন এইভাবে গোলামি খাটবি; মাইয়াটা তোরে নাচিয়ে ছাড়লো; ভাই আপনার গার্লফ্রেন্ড টা একটা অমানুষ;

এইরকম মাইয়ার লগে প্রেম কইরা জীবন তছনছ ভাই; এতো ভালোবাসার পরও মাইয়াটা তোরে চুল দিয়াও জিগাইলো না;

ভাই বাদ দেন এইসব” এমন অনেক মন্তব্যে কষ্টের ভার টা ক্রমশই বেড়েই চলছিলো।

অতঃপর মামুন, নুহাশ এবং অন্য সবার সম্মিলিতভাবে কিছু টিটকারি এবং হাসাহাসি অতিষ্ট করে তুলছিল শান্ত’র মন।

“সত্যিই একটা বাড়তি যন্ত্রণা এই ছাত্রাবাসের সবাই” এমনটা ভেবেই অতিমাত্রায় রাগের সহিত হনহন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
.
রাত দশটার কাটা পেরিয়ে অনেক দূর অতিক্রম করে গেছে, তখনও ছাদের এক কোনাকে বিশ্বস্ত বন্ধু ভেবেই বসে বসে কষ্টের কথাগুলো বলছে আর অশ্রু ফলাচ্ছে শান্ত।

মামুন, নুহাশ এবং দুইটা ছোট ভাই শান্ত’র খোঁজে ছাদ পর্যন্ত উঠতেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো শান্ত।

মামুন, নুহাশের প্রতি রাগের মাত্রা কমাতে না পেরে ছাত্রাবাস ছাড়বে সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রস্থান করার উদ্দেশ্য উঠে দাঁড়ালো শান্ত……,

ঠিক তখনই ফোনের রিংটোন টা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে রুমার নামটা দেখেই শান্ত কিছুটা অবাক।

কখনো রাগ করার পর সে আগে কল করেনি, অথচ আজকে এতো কঠিন রাগের পরও কল দিলো সে।

কল পিক করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ শান্তকে আরো বেশি চমকে দিলো। কান্নাভেজা গলায় রুমা…..
–তুমি আমাকে এতো ভালবাসো আগে কেনো বলোনি?
–বলেছি, কিন্তু তুমি বুঝোনি।
–একটা স্টাইলিশ, অত্যাধুনিক ছেলে কাউকে এভাবে ভালোবাসেনা, এমন ভ্রান্ত ধারণাই ছিলো সবার, সাথে আমারো। তাই তোমার সাথে অভিনয় করে গেছি।
–তো এখন কিভাবে বুঝলা যে আমি স্টাইলিশ ছেলে হয়েও তোমাকে পাগলের মতোই ভালোবাসি?
–বলবোনা, বলতে বারণ আছে।
–কে বারণ করলো?
–যে আমাকে বলেছে শান্ত নামের স্টাইলিশ অত্যাধুনিক ছেলেটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

আমার সাথে ঝগড়া হলে শান্ত তার চোখ অন্য কাউকে দেখাতে ভয় পায় অশ্রু দেখে যাবে বলে। হয়তো একটু আগেও শান্ত’র চোখে জল ছিলো আমাকে ঘিরে।
–কে বলেছে বলোনা?
–তোমার সবচেয়ে বেশি রাগের কারণ যারা, বিশেষকরে মামুন-নুহাশ ভাইয়া এবং বন্ধুরা৷
.
কথাটা শুনতেই চোখের অশ্রুরা মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিযোগিতায় নেমে আসার। নিস্তব্ধতা ছুঁয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো শান্ত৷

অশ্রুফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে৷ কিছুক্ষণ পর নিস্তব্ধতাকে ছুটি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মামুন-নুহাশদের উপর, সাথে কান্নার শব্দ এবং গতি বাড়িয়ে বলতে লাগলো……
–ভাই, আপনারা……!
আমি ভাবছি আমারে আপনারা দেখতেই পারেন না। থ্যাংক ইউ ভাই, থ্যাংক ইউ সো মাচ৷ আমাকে আমার ভালবাসা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই৷

আপনারা আমার বড় ভাই না, আমার বন্ধু, ভিন্নরূপি বন্ধু………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত