হঠাৎ দেখা

হঠাৎ দেখা

এই মুহূর্তে যে মেয়েটি অামার সামনের সিটে বসে অাসে সে অামার প্রাক্তন প্রেমিকা। অামার প্রথম ও শেষ ভালোবাসার মেয়েটি। তাকে এতোগুলো বছর পর দেখে অামার অবাক বা খুশি হবার কথা, কিন্তু অামি তার কোনটাই হতে পারছি না কারণ ওর পড়নের সাদা কাপড়টা। অামি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি এতো বছর পর ওকে এভাবে দেখবো।

ওর সাথে একটা মেয়েও অাছে সম্ভবত ওর মেয়ে অাচ্ছা ও কি অামাকে চিনতে পেরেছে। হয়তো পারেনি। না পারারই কথা গত ১৯টা বছর অামাদের কোন দেখা বা কথা হয়নি। কত মধুময় ছিল সেই দিন গুলো। তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। পড়াশোনায় যেমন ভাল ছিলাম তেমনি খেলাধুলো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ছিলাম সেরাদের তালিকায়।

হঠাৎ করেই একদিন কলেজের এক অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয় অামাকে। সেই সাথে মায়াকে, সেই দিনই প্রথম মায়াকে দেখি। অার প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা তারপর অাস্তে অাস্তে সে ভালোলাগা রূপ নেয় বন্ধুত্বে, অার সব শেষ ভালোবাসায়। অল্প কিছু দিনের ভিতরে একে অপরকে মনের কথা জানিয়ে দিলাম। তারপর একে একে পুরো কলেজ জেনে গেলো অামাদের ভালোবাসার কথা। সবার মুখে মুখেই শুধু অভি অার মায়া কারণ দুজনেই লেখাপড়া অার বাকি সব বিষয়ে খুবি ভাল ছিলাম।

ইন্টার ফাইনালের অাগে কত যে দুজন কলেজ ফাকি দিয়ে পার্কে বসে ছিলাম সকাল থেকে বিকেল অব্দি তার হিসেব নেই। কত শত স্বপ্ন ছিল তখন দুজনের কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে উঠবো। লেখাপড়া শেষ করে অামি একটা চাকরি নিবো। তারপর দুজন বিয়ে করে ছোট একটা সুখের সংসার করবো।

কিন্তু ভাগ্য হয়তো তা চায়নি, তাইতো অাজো অামার বিয়ে হয়নি। কারণ মনটা যে সেই কবেই মায়াকে দিয়ে রেখেছি। যতদিন যাচ্ছিল ততই মনে অামাদের ভালোবাসা বাড়তে থাকলো। কখন কলেজে যাবো কখন দেখা হবে। কিংবা কখন কলেজ পালিয়ে পার্কে যাবো তা অাগে থেকেই দুজন ঠিক করে রাখতাম।

কতদিন দুজন সন্ধ্যায় কোচিং ফাকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি। ফুচকার দোকানেনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একে অপরকে ফুচকা খায়িয়ে দিয়েছি। সেই সবব এখন শুধুই স্মৃতি। অামাদের বন্ধু মহলে রটে গেলো। অামরা পালিয়ে বিয়েও করে ফেলেছি। তাই সবাই অামাদের সেরা জুটি বলে জানতো। একটা সময় কলেজের শিক্ষকরাও ব্যাপারটা জেনে যায়। এক কান দু কান হতে হতে একটা সময় মায়ার বাবার কান পর্যন্ত চলে যায়। অার এদিকে দেখতে দেখতে অামাদের ফাইনাল চলে অাসে।

দুজনেই খুব ভালো করে পরীক্ষা দিতে থাকি দিনরাত পড়াশোনা করতে থাকি। একটা সময় দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। তখন মায়ার সাথে প্রায় যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে মায়ার বান্ধবীর মাধ্যমে চিরকুট পাঠাতাম। অার তার উত্তর অাসতো। এদিকে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার কারণে মা বার বার বাড়ি যাবার জন্য চিরকুট লেখতে থাকে। একটা সময় মায়ের সাথে দেখা করতে গ্রামে চলে যাই।

সেদিন হয়তো অামি জানতাম না মায়ার মুখটা দেখার জন্য অামাকে এই দীর্ঘ ১৯ বছর অপেক্ষা করতে হবে। গ্রাম থেকে যখন রেজাল্টের জন্য অাসলাম মনে অনেক অাশা নিয়ে মায়ার সাথে দেখা হবে। সে অাশা অার পূর্ণ হলো না। মায়া রেজাল্ট নিতে অাসেনি। ওর বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারি ওরা কোথায় গেছে কেও বলতে পারে না।

দিনের পর দিন অামি পাগলের মত খুঁজেছি মায়াকে কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না। দেখতে দেখতে এতোগুলো বছর কেটে গেছে অাজ অবশেষে চেরচেনা প্রিয় সেই মুখ অামার সামনে বসা। খুব ইচ্ছে করছে একবার স্পর্শ করেরে দেখি, সত্যিই কি অামার মায়া। চট্রগ্রাম যাচ্ছি অফিসিয়াল কাজে ভাবতেও পারিনি ওর সাথে এভাবে অাবার দেখা হবে। অতীতের দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎই কানে ভেজে উঠলো।

কেমন অাছো অভি?(মায়া) চমকিত হয়ে এইতো ভালো অাছি তুমি (অামি) অামার অার থাকা তুমি কি অামায় চিনতে পেরেছো? অামায় কি তোমার মনে অাছে(মায়া) তোমাকে কি ভুলা যায় মায়া? তোমাকেতো অামি মন থেকে ভালোবেসে ছিলাম কি করে ভুলবো বলো(অামি)

মায়ার চোখে পানি টলটল পাশেই মেয়েটা ঘুমিয়ে অাছে। মায়া চোখ মুছতে মুছতে অামি জানি অামি তোমার চোখে অপরাধী। কিন্তু বিশ্বাস করো অভি অামি ইচ্ছে করে তোমাকে ঠকাইনি। অামাদের সম্পর্কের কথা বাবা অাগেই জেনে গিয়েছিল। তুমি গ্রামে যাবার পর অামাকেও তারা গ্রামে নিয়ে যায় ঘুরবার কথা বলে।

অামিও সহজ সরল মনে তাদের সাথে গ্রামে যাই, কিন্তু গ্রামে যাবার পর বুঝতে পারি অামি ভুল করেছি। বাবা অামাকে মিথ্যা বলে গ্রামে নিয়ে গিয়েছেন। তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। চেয়ে ছিলাম অাত্মহত্যা করবো কিন্তু পারিনি, বাবা মায়ের বাঁধায়। অবশেষে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিয়েটা করে নেই।

চোখের পানি মুছতে মুছতে কোথায় যাচ্ছো অভি?? (মায়া) অফিসের একটা কাজে যাচ্ছি তুমি কোথায় যাচ্ছো অার কেন যাচ্ছো? (অামি) অামি একটা ছোট এনজিওতে চাকরি করি চট্রাগ্রামেই থাকি মেয়ে ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে। কলেজ ছুটি তাই নিয়ে অাসতে গিয়েছিলাম। কি করবো বলো মেয়েটার যখন তিন বছর তখন ওর বাবা মারা যায়। এক বছর পার হবার পর শশুর বাড়িতেও থাকতে পারলাম না। অবশেষে এনজিওতে একটা চাকরি নিলাম। যা পাই তা দিয়ে দুজনের চলে যায়।

তোমার কথা বলো অভি ভাবী কেমন অাছে, ভাবীকে সঙ্গে অানলে না। ছেলে মেয়ে কয়জন।(মায়া) বুকের মাঝে কেমন যেন একটু চিনচিনিয়ে উঠলো মায়ার কথাতে। তবুও হাসি মুখে উত্তর দিলাম হ্যাঁ ভালো অাছে। বলতে পারলাম না। মায়া তোমার জায়গাটা অাজও অন্য কাউকে দিতে পারিনি। কথা বলতে বলতে ট্রেন থেমে গেলো। চলে এসেছি দুজনেই চট্রগ্রাম। অভি যদি কোন দিনন পারোরো অামায় ক্ষমা করে দিও(মায়া) বলতে বলতে মেয়েটা জেগে উঠেছে ততক্ষণে মায়াও নিজেকে সামলে নিয়েছে।

ট্রেন থেকে নেমে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে দুজন। মায়া ইশারা দিয়ে বিদায় নিলো। একটা রিক্সায় উঠে বসলো মা মেয়ে। অামি অপলক চেয়ে অাছি অামার ভালোবাসার মানুষটি অারও একবার মিলিয়ে যাচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। অামার চেয়ে থাকি ছাড়া অার কিছুই করার নেই। শুধু চিৎকার করে একটি কথাই বলতে ইচ্ছে করছে মায়া অামি তোমাকে ভুলি নেই। অামার ভালোবাসার গন্তব্য যে শুধুই তুমি।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত