অনেক ভালবাসি তোমায়

অনেক ভালবাসি তোমায়

-:আপনিতো অনেক সুন্দর গিটার বাজাতে পারেন!
–আপনি কে? কোথা থেকে আসলেন? (অবাক হয়ে)
-:চিন্তা কইরেন না। আমি ভুত-পেত্নি না। আমিওও আপনার মত মানুষ। নিচে থাকি, বাড়িওয়ালার মেয়ে।
–তো আপনি এখানে এত রাতে কি করতে এসেছেন? (রাগ দেখিয়ে)
-:আমি বাড়িওয়ালী! আমি যখন খুশি, যেখানে খুশি যেতে পারি। তাতে আপনার কি?
–তা ঠিক। তাহলে আপনিই থাকেন, আমি গেলাম।
-:আচ্ছা, রাগ কইরেন না। আপনার নাম জানতে পারি?

কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেল নীল। আম্মার কথা খুব মনে পড়ছিল নীলের। তাই রাতের দিকে চাদে গিয়ে একটু গিটারে টিউন তুলছিল। আম্মাই নীলকে গিটার বাজাতে শিখিয়েছিল। আর তিনি আজ চার বছর নীলকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। নীল আর তার আব্বা থাকে। ঠিক তাও না, আব্বা কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় শহরের বাইরে থাকেন। নীলের জন্য তার টাইম নেই। নতুন বাসায় উঠেছে নীল। আব্বার কাছে জেনেছিল, এটা নাকি তার বন্ধুর বাসা। নীল যাতে সমস্যা না হই, তাই এখানে থাকছে। কিন্তু প্রথম দিনেই ব্যাঘাত ঘটাল, বাড়িওয়ালার মেয়েটি।

মেয়েটি হল নীদ্রা, বাড়িওয়ালারর মেয়ে। মেডিকেলে পড়ে। আর নীল পড়া শেষ করে চাকরি করবে তা ভাবছে।
নতুন বাসা, নতুন শহর। তাই নীল ভাবল একটু ঘুরে বেড়ানো জাক। জা ভাবা তাই কাজ। গেল ঘুরতে, যেদিকে দু চোখ যায়। অনেক জায়গা ঘুরল। নতুন নতুন জিনিস দেখল নতুন-নতুন মানুষ। বিকেল গরিয়ে সন্ধ্যা হইয়া গেছে, কিন্তু নীল বাসায় ফিরতে পারছে পাচ্ছে না। কি আর বলবে সরমের কথা। কাউকে বলতেও পারছে না তার বাসাটা কোন দিকে। তাই মনে মনে নিজের গুশটি উদ্ধার করতে শুরু করে দিয়েছিল। অবশেষে পথে পথ ভ্রষ্ট হয়ে বসে রইল এক চায়ের দোকানে। কোন পথ না পেয়ে বাড়িওয়ালা মানে আংকেলকে ফোন দিল।

–আসসালামু আলাইকুম, আংকেল।(আমি)
-:কে?(বাড়িওয়ালা)
–জি আংকেল আমি, নীল।
-:ও বল বাবা।
–আংকে একটা বিপদে পড়েছি।
-:কি বিপদ?
–আংকেল আমি বাসা খুজে পাচ্ছি না।
-:হা হা হা। ও তার মানে তুমি হারায়ে গেছো। তা তুমি এখন কোথায় আছো?
–জি আংকেল আমি অমোক জাইগার তমোক স্থানে বসে আছি।
-:আচ্ছা ওই খানেই বসে থাকো। আমি দেখছি কি করা যায়।
–একটু তাড়া তাড়ি, আল্লাহ হাফেজ।

কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা থেকে একটা মেয়ে ডাকছে। নীল খেয়াল করেও না খেয়ালের ভান করল। জানে কে না কে ডাকছে।

-:এই যে মি. পথ হারানো পথিক ডাকছি শুনছেন না কেন? (পিছনে এসে)
–জি আমি?
-:হা, সবাই তো আর হারাই না। তাই আপনি।
–জি আমি হারারিয়েছি আপনাকে কে বলল?
-:আর নেকামু করতে হবে না, বাড়িতে যেতে হলে রিকশায় উঠেন।
–আচ্ছা।

কোন উপায় না দেখে রিকশায় উঠে পড়লাম। রিকশায় উঠে দেখে দুনিয়ার সব থেকে বিপদে আমি পড়েছে। একটা মেয়ের পাশে বসে থাকতে যে কত অসস্তি লাগছে তা অপ্রকাশ্য। রাস্তাও হইছে ফইন্নি মার্কা, চারিদিকে ভাংগা। হঠাৎ করে বড় একটা ভাংগাই পড়ল, আর নীলের এক হাত নীদ্রার হাতের উপর পড়ল। নীদ্রা চমকে উঠল।

–আ, আ, আমি ইচ্ছা করে দিয় নি। সরি। (নীল)
-:আচ্ছা ঠিক আছে, কিছু হয় নাই।
–না, না। এই মামা (রিকশাচালক) থাম।
-:রিকশা থামাচ্ছেন কেন?
–আমি অন্য রিকশাই যাব।
-:এই রিকশা থামাবেন না, চলতে থাকেন। আর আপনি অন্য রিকশাই জেবেন কেন?
–আমার খুব অসস্তি লাগছে, আর আমি তো পর পুরুষ। আপনার পাশে বসার অধিকার আমার নেই।
-:পর পুরুষ, তা ঠিক। কিন্তু অধিকারটা আমি দিচ্ছি।
–কেন দিবেন? আপনার অধিকার আমি চাই না, প্লিজ।
-:কোন দিন মেয়ের সাথে রিকশাই চড়েন নি নাকি? এরকম বেলুনের মত চুপসিয়ে বসে আছেন কেন?
–আমার জন্মে তো দূরে থাক, বাপের জম্মেও কোন দিন মেয়ের পাশে বসিনি। আর লাস্ট কবে রিকশাই উঠছি তাই মনে নেই।
-:হি হি হি (অট্টহাসি)। আপনি তো অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারেন।

এরকম হাসা-হাসি করতে করতে বাসা পৌছে গেল। আর তেমন দেখা হত না তাদের। নীলের প্রায়ই মন খারাপ থাকত, তাই ইচ্ছা মত গিটার বাজাতো। নীল যখনি গিটার বাজাতো তখনি হয় বারান্ডাই আসতো, নইতো ছাদে চলে যেত। আর নীল ফাকা জায়গা ছাড়া গিটার বাজাতো না। আর নীদ্রাও নীলের গিটারের আওয়াজ শুনে যেত। তার দিকে ড্যাপ-ড্যাপ করে তাকিয়ে থাকত। নীলের খুব সমস্যা হত গিটার বাজাতে। তাই একদিন,

–আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি? আমি যখনি একটু গিটার বাজাতে চাই আপনি আমার সামনে কেন আসেন?
-:আমার বাড়িওয়ালী, আমি যখন যেখানে যা খুশি করতে পারি, আর আপনি এত সুন্দর গিটার বাজান কেন?
–আমি গিটার কি রকম বাজায় আপনার কাছে শুনব নাকি। প্লিজ আমাকে আর ডিস্টার্ব কইরেন না।
-:আমি আপনাকে কি করে ডিস্টার্ব করলাম?
–এই যে আপনি ড্যাপ ড্যাপ করে দেখেন। মনে হয় যেন আমি সার্কাসের বান্দর, খেলা দেখাচ্ছি!
-:হি হি হি। ঠিক কইছেন, আপনি আসলেই একটা বান্দর। হা হা হা।
–ভালো।
-:এই যে শুনেন, শুনেন। সরি….

রাগ করে নীল চলে গেল ছাদ থেকে। ওদিকে নীদ্রা হেসেই বাচে না। ভাবতে থাকে ছেলেটা এত বড় তবুও মনটা এত বাচ্চা কেন? এত সহজ-সরল কেন? আর নীল মেয়ে গুষ্টি-টুষ্টি এক-এক করতে থাকে মনে-মনে। একদিন নীলের খুব জর আসে। জরে সে খুব দুর্বল পড়ে। পানি খেতে গিয়ে নীল পড়ে যায়। দরজার বাইরে থেকে নীদ্রা সুনতে পেয়ে ভিতরে ঢুকে দেখে নীল ফ্লোরে পড়ে আছে। গায়ে হাত দিয়ে দেখল অনেক জর। নীলকে বিছানাই শুয়িয়ে সেবা করতে থাকে। মাথাই পানি ঢালে, ঔষধ দিয়ে দেই। ঘুমের ঘরে নীলের অনেক কথা সুনে নীদ্রা, তার মাকে নিয়ে। অনেকক্ষণ পর নীলের জ্ঞ্যন ফিরে। নীদ্রা পাশে বসে আছে, তা দেখে চমকে যায়।

-:এখন কেমন অনুভব করছেন?
–আপনি এখানে কি করছেন? আর আপনি আমার রুমেই বা কি করছেন? যান বে হন! এটা আপনার বাপের বাড়ি হতে পারে, কিন্তু এখন আমার বাসা।
:-….. (কিছুই বলতে পারল না। কাদতে কাদতে, চলে গেল)

নীল পরে বুঝতে পারল, কি ভুল টাই না সে করেছে। সে একবার তাদের বাসাই গিয়ে নক করতে যেয়েও করল না। অনেক খন পর সন্ধ্যা এর দিকে গিটার নিয়ে গুন তুলছিল। কিছুক্ষন পর নীদ্রা চলে এশে এক কোনে মুখ ফিরিয়ে থাকলো। নীল জানতো সে আশবে, তাই এই কান্ড করা।

–Excuse me. মিস কি নাম জানি!
-:…… (চুপ করে)
–নাম না বললে, ডাকবো কিভাবে?
-:….. (এখনো চুপ)
–আচ্ছা আপু বলেই ডাকতে হবে!
-:আপু বললে গিটার সহ আপনাকে ছাদে থেকে ছুড়ে ফালাইয়া দিবো।(সেই রাম রাগ)
–আপনি তো নাম বলছেন না!
-:নাম দিয়ে কাম কি?
–তাহলে আপুই বলি?
-:আরেক বার বললে ঠ্যাং ভেংগে কচু গাছে ঝুলাইয়া রাখবো।
–আপু বললে কি হবে? এইদিকে একটু ঘুরেন।
-:আমি অটো কিছু জানি না। আর ঘুরবো না। তাতে আপনার কি?
–আচ্ছা, আপনার মরজি আপু!
-:এই এই বাদর কোথাকার (নীলের দিকে ঘুরে তেড়ে আশতে জেয়ে এলো না) এত দিন ধরে তোমার দিকে কেন এত তাকাই বুঝেন না। হ্যা, ভালবেসে ফেলেছি আপনাকে। আপনি তা কি করে বুঝবেন। কিছু না বলে এক হাতে গিটার নিয়ে দুই হাত উজার করে দিল। নীদ্রা আর এক মুহুর্তো দেরি না করে দোউড়ায় গেল নীলের বুক পীঞ্জরে।

–বুঝতাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন, কিন্তু আজ বুজলাম কতটা ভালবাসেন।(নীল)
-:হুম, অনেক ভালবাসি তোমায়, অনেক। (কেদে কেদে নীদ্রা)
–কিন্তু আমি যে অন্য কাউকে ভালবাসি!
-:কাকে?
–আজ সকালে যে আমাকে আদর করে, সুস্থ করে তুললো, তাকে।
-:বাদর কোথাকার, এখনি আমার দম বের হইয়া যেতো।
–তা আমি আপনাকে কি করে ভালবাসবো? আপনার তো নামই এখনো জানি না।
-:ওমা, এখনো বলিনি। আমি নীদ্রা, জান্নাতুল ফেরদৌস নীদ্রা। আর আপনি করে নয়, তুমি করে বলবা।
–আচ্ছা আপু।
-: আবার!

বুকে ধুপ ধাপ করে কইটা পড়লো বুজতে পারলো না নীল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত