অপেক্ষা

অপেক্ষা

ওই যে বা পাশের নীল শাড়িটা দেখান তো মামা!একটু মেলে ধরেন তো সামনে।আরে ওইটা না, পাশের টা।সুতোর কাজ করা।

-স্যার ওইটা নিবেন?ওইটা বেশি ভালো হইবো না।টিকবো না বেশিদিন।সস্তা মাল।নিলে এই জামদানী শাড়ি টা নিয়া যান।এক্কেরে পাইকারী দামে দিয়া দিমুনে।দেখছেন,শাড়ি খানের জমিন দেখছেন? যে কেরুর পছন্দ হইয়া যাইবো।

-আচ্ছা দাম কতো? রাখা যাবে কতো তে?
-একদাম ৪১৫০ টাকা।আপনার জন্য বিশেষ ছাড় দিয়া ৪০০০ টাকায় দিমু।

হিমু পকেটে হাত দিয়ে দেখলো মাত্র ২১৭৫ টাকা রয়েছে।এদিকে শাড়িটাও বেশ পছন্দ হয়েছে।একবার কল্পনাও করে নিয়েছে রুপাকে।নীল শাড়ি,কাচের নীল রেশমি চুড়ি, খোলা চুল,চোখে হালকা কাজল আর ছোট্ট একটা কালো টিপ।অপ্সরীর মতো দেখাবে রুপাকে।ঠিক এইদিন টির জন্য একটি বছর অপেক্ষা করে আছে হিমু।রুপারও নিশ্চয়ই মনে আছে।ও যেই মেয়ে!! ওর ভুলে যাওয়ার কথাই না।ঠিক আজকের দিনে হিমু আর রুপার প্রথম দেখা হয়েছিলো।রুপা কি শাসন টাই না করেছিলো সেদিন।প্রতি বছর রুপা হিমুর পছন্দের হলুদ পাঞ্জাবি নিয়ে এইদিন হিমুর সাথে দেখা করবেই।কতোকিছু হাতে করে নিয়ে আসে মেয়েটা আর সে কিছুই দিতে পারে না।গতবছর থেকে টাকা জমানো শুরু করেছে রুপাকে এবছর চমকে দেওয়ার জন্য।অথচ কারনে অকারনে নানা সময় টাকা খরচ হয়ে গেছে।ঠিক মতো রাখলে আর এমন টা হতো না।

-স্যার…ও স্যার.. কোথায় হারায়ে গেলেন? আপনে কি নেবেন শাড়ি? না নিলে যান গা।অন্য কাস্টমারদের দেখার সু্যোগ দেন।দোকান বন্ধ কইরা বারিত যামু।
-ওই সুতোর নীল শাড়িটার কেমন দাম?
-একদাম ১৯৫০ টাকা।নিলে নিবেন, নাইলে নাই।
-একটু কম করা যায় না মামা?
-আরে শেষ বেলায় জ্বালাইয়েন না তো।বললাম তো কম হইবো না।
-আচ্ছা ভালো করে প্যাকেট করে দেন।

চুড়ির দোকান টা এখান থেকে বেশ দূরে।হেটে যেতে গেলে দেরি হয়ে যাবে।তবুও জোর পায়ে হেঁটে গিয়ে নীল রঙের ২ডজন রেশমি চুড়ি কিনে একটা দোকান থেকে ফোন করল রুপাকে। রুপা আগে থেকে জানতো নিশ্চয়ই হিমু আজ যোগাযোগ করবে।সেই সকাল থেকে ফোনের ওপাশ থেকে অপেক্ষা করে আছে।ফোন হওয়ার সাথে সাথেই হিমু রুপার কন্ঠ শুনতে পেলো।হিমুও জানতো রুপা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে থাকবে।

—হ্যালো!
—সাদা আকাশ নীলে মিশে গেলে কেমন লাগে দেখেছ একবারও? খেয়াল করে দেখো.. তখন আকাশকে আর একলা মনে হয় না।সেই আকাশের সবটা নীল তোমায় দিতে ইচ্ছে করে।
—হিমু,আজ দেখা করবে একটিবার?
—বারান্দায় এসে দাড়াও।আমি আসছি।
—মিথ্যা কেন বলো হিমু? আমি জানি আগেরবারের মতো এবারো তুমি আসবে না।আমায় বোকা বানাবে।
—আসলেই বুঝতে পারবে।

রুপা বারান্দায় এসে দাড়াতে দেখে দারোয়ান এর কাছে একটা প্যাকেট দিয়ে ফিরে যাচ্ছে হিমু।দারোয়ান এসে সেটা রুপার হাতে দিয়ে চলে গেলো।ঘরে এসে প্যাকেট টা খুলে দেখতে পেলো তার ভেতর একটা নীল শাড়ি,রেশমি চুড়ি আর একটুকরো কাগজ। তাতে লেখা–“প্রিয় রুপালি, জানো কি?আকাশের নীল হার মেনে যায় তোমার নীল শাড়ি পড়া সৌন্দর্যের কাছে।নীল শাড়ির সাথে বেশি মোটা করে কাজল দিওনা…একটা রেখাতেই ভালো লাগে বরং।নীল রেশমি চুড়ি, আর ছোট্ট একটা টিপ।যেভাবে বললাম সেভাবেই এসো কিন্তু…অপেক্ষায় থাকব।

তৈরী হয়ে সময়মতো পৌঁছে গেলো রুপা..সাথে হিমুর পছন্দের হলুদ রঙের পাঞ্জাবি আর নিজ হাতের রান্না।হিমু বেশ পছন্দ করে।এরকম ছন্নছাড়া জীবন যে কবে ছাড়বে ছেলেটা! এমন সময় পেছন থেকে হিমুর ডাক শুনতে পেলো।হলুদ পাঞ্জাবির সাথে উষ্কখুষ্ক চুল আর হাতে একটা বেলি ফুলের মালা। রুপাকে দেখতে সত্যি আজ পরীর মতো লাগছে।শ্যামলা মেয়েগুলোকে কাজল দিলে যে কতো মায়াবতী দেখায় তা হয়তো রুপাকে না দেখলে বোঝা যেতো না।হিমু এগিয়ে গিয়ে মালাটা রুপার চুলে পড়িয়ে দেয়।” রুপা আজ তোমায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।চোখ ফেরাতে পারছিনা আমি।

—এতো কিছু কেনো কিনতে গেলে হিমু?এতোগুলো টাকা খরচ করার কি খুব দরকার ছিলো?
—কি যে বলো রুপা!পছন্দ করে কিনতে আর পারলাম কই?পছন্দ যা হয় তা দামে হয়না।তোমার পছন্দ হয়েছে রুপা?
—হ্যা।অনেক পছন্দ হয়েছে।তুমি আমার জন্য এনেছো এটাই অনেক।(বলতে বলতে রুপার চোখে পানি চলে এলো)
—সত্যি…তোমায় আজ এতো সুন্দর কেনো লাগছে??
—থাক হয়েছে।এবার খেয়ে নাও দেখি।”

রুপা খাবারটা এগিয়ে দেয়। সত্যি বলতে হিমুরও সকাল থেকে এক কাপ চা ছাড়া পেটে কিছুই পড়েনি।তাই আর কিছু না বলে খেতে বসে যায়।রুপা চেয়ে চেয়ে হিমুকে দেখে আর হাসতে থাকে।

-“হিমু,কেমন হয়েছে?
-খুব ভালো হয়েছে।
-হাহা.. মিথ্যা বলছো, তাই না??
-না…না,।মিথ্যা বলছি না।সকাল থেকে কিচ্ছু খাওয়া হয়নি।আসলে কি জানো রুপা?
—হুম?
—আমাদের এই পুরো জগতটাই মিথ্যা।
—তাই নাকি?এই যে, আমি ভাবি তুমি আমায় ভালোবাস…এটাও কি এরকম মিথ্যা হিমু?”

হিমু কিছু বলে না।রুপার দিকে একবার তাকিয়ে খাবারটা রেখে চলে যায়।রুপা আটকায় না।কারন ও জানে এখন ডাকলে হিমু আসবে না ফিরে। তবুও রুপা অপেক্ষা করবে হিমুর জন্য।সে অপেক্ষার মুক্তির টিকিট কোথাও পাওয়া যায় না।রুপার সারাটা জীবন কেটে যাবে এই অপেক্ষা নিয়ে। কারণ,রুপারা শুধু অপেক্ষা করতেই জানে…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত