তুমি তোমার জন্য

তুমি তোমার জন্য

আপনার কি কাল বিকেলে একটু সময় হবে? প্রশ্নটা শুনে একটু অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে। কপালের মাঝে আমার চিন্তার ভাজ পরা দেখে মেয়েটা বলল, তেমন কিছু না শুধু একটু কথা বলবো। আমি বিন্দুমাত্র দেরী না করে বললাম, কথা থাকলে আপনি এখনি বলতে পারেন। অনেকটা কড়া চোখে তাকিয়ে মেয়েটা বলল, আপনি কি ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাবেন না, আপনাকে শুধু কিছু প্রশ্ন করবো। মনে মনে অনেক হাসি পেলো আমার। ভয়। এই শব্দটার সাথে আমি অনেক পরিচিত।

আমি মেয়েটাকে বললাম, না ঠিক ভয় না, ভাবছি কি ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন? আর হঠাৎ এভাবে বললেন, আমার তো অন্য কাজও থাকতে পারতো। মেয়েটা বলল, কাল বিকেল চারটায় ভার্সিটির সামনের কফিশপে আসবেন। এটা বলেই যখন উনি চলে যাচ্ছিল তখন আমি বললাম, বাজেট বাড়ালে চিন্তা করে দেখতাম আসবো কিনা? পেছনে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মানে? আমি বললাম, মানে আমি কফি না খেয়ে অন্য কিছু খাবো। এই যেমন কফিশপটাতে চিকেন ফ্রাই পাওয়া যায়। ওটা আমার অনেক পছন্দ। যেহেতু দরকারটা আপনার তাই আমি কিছু বললে সেটা তো আপনি রাখতেই পারেন তাই না? এটা শুনে তার মুখের ভাবখানা এমন হলো যে কি ছেচড়ার পাল্লায় পরেছে সে। কিছু না বলে চলে গেলো। আমি শুধু হাসছি। ভাবছি কাল কিভাবে ওর প্রশ্ন থেকে পার পাওয়া যায়।

আসলে ওর বাবা একজন প্রভাবশালী লোকদের মধ্যে একজন। তার বাবার টাকার অভাব নেই এটা বলতে পারি। কি মনে করে যেন তার বাবা আমার সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছেন। আসলে আমি আর এই মেয়েটি একই ভার্সিটি থেকে বের হয়েছি। আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আর মেয়েটি বিবিএ থেকে। আর আমাদের ডিপার্টমেন্টের ডিন ছিলেন মেয়েটার বাবা। এটা অবশ্য আমি জানতাম না। মেয়েটিকে জানতে গিয়ে জেনেছি। তবে এই মেয়েটি একটু অন্যরকম ছিল। সে কখনই তার বাবার টাকায় চলতে পছন্দ করত না। বাবার নিজস্ব গাড়িতে না এসে সে প্রতিদিন ভার্সিটির বাসে অথবা লোকাল বাসেই আসতো। মেয়েটির কোন কিছুর অভাব নেই তবুও সে টিউশন করতো। রোদের মাঝে দাড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করা, না হলে হেটেই গন্তব্যে পৌছানো অথবা টিউশনির বেতন পেলে রাস্তার পাশে বসে বান্ধবীদের নিয়ে ফুচকা খাওয়া এসবের মধ্যেই সে নিজেকে খুজে নিতো। আমাকে যদি বলা হয় জিবনে সংগ্রাম করা কোন মেয়েকে দেখেছেন, তবে আমি নির্দিধায় কয়েকজন মেয়ের নামের পাশে নিচে হলেও এই মেয়েকে রাখবো। খুব সাধারন ছিল তার জিবন। পড়াশুনাতেও সে অনেক ভাল ছিল।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আবার ভার্সিটির শিক্ষক হিসেবেই সে চাকরী পেয়ে যায়। বাবার আদুরে মেয়ে না হয়ে এই মেয়েটা যে কেন এরকমটা হয়েছে তা আমি জানিনা। একবার তো ভার্সিটিতে এক ছেলেকে সেই পিটিয়েছিল সে। তখন হয়তো কেউ জানতো না যে ওর বাবা সিভিল ডিপার্টমেন্টের ডিন। তাই অনেক শিক্ষক তাকে মিটিং এ বসে বহিস্কার করতে চাইল। ছেলেটি মেয়েটির কোমরে দুবার হাত দিয়েছে তাই এই অবস্থা। অবশ্য আমি নিজে দেখেছিলাম ব্যাপারটা। কিন্তু যেভাবে মেয়েটা ছেলেটাকে পিটালো সবাই উল্টোটা ভেবে বসলো। সেদিন অনেকটা চিন্তিত দেখাচ্ছিল তাকে। তার বাবা সেদিন বলেছিল মিটিং এ যে মেয়েটিকে আরেকবার সুযোগ দেয়া যায় কিনা। সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলো যখন জানলো মেয়েটি তার মেয়ে। তারপরও অনেকে ব্যাপারটা মানতে পারছিলো না।

মেয়েটার পাশে গিয়ে আমি বললাম ওখানে একটা সিসি ক্যামেরা ছিল ওটার দারা সবাইকে সত্যিটা দেখানো যেতে পারে। এটা শুনে মেয়েটা আমার দিকে একবার তাকিয়ে সবার সামনে কম্পিউটার থেকে অনেক দ্রুতো ওই সময়ের ফুটেজ দেখিয়ে দিল। সবাই তখনও থো মেরে চুপ হয়ে আছে। পেছন থেকে আমি মুচকি হেসে ভাবলাম, মেয়েটা তো কম্পিউটারেও দক্ষ অনেক। পরেই তার বাবাকে ও বলল, আমি কোন ভুল করিনি বাবা। আমার জন্য তোমার সম্মানে কোন ক্ষতি হবে না। ওর বাবা তখন কিছু বলতে পারেনি। পরের দিনে ওই ছেলেকে বহিস্কার করা হল আর প্রায় সব শিক্ষকরাই মেয়েটার সাথে ভালমন্দ কথা বলল। আসলে শিক্ষকদের সরি বলাটা যেন একটা অন্যরকম হয়ে যায় তাই একটু সহানুভুতি দেখানোর চেষ্টা। তবে আশ্চর্য মেয়েটা আমাকে ধন্যবাদ পর্যন্তও দেয় নি। সেদিনের পর থেকে সবাই ওকে অনেক সমীহ করে চলে। ছেলেরা তো অনেক বেশিই। জুনিয়ররা তো উঠতে বসতে সালামের ওপর থাকে ওকে দেখলে। সিভিল ডিপার্টমেন্টে পড়ার খাতিরে তার বাবার সাথে অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল।

ছাত্র হিসেবে আমিও খুব একটা খারাপ ছিলাম না। তাই উনার সাথে অনেক ভাল একটা চেনা পরিচিতি ছিল আমার। ইনডোর গেমসে একদিন আমার এক বন্ধুর সাথে তার ঝামেলা হয়। ঘটনাটা এরকম ছিল যে মেয়েটি তার বন্ধুদের সাথে খেলছিল আর কথা ছিল যারা হেরে যাবে তারা ক্রামবোর্ড ছেড়ে দিবে। তো মেয়েটা হেরে গেলে ক্রাম ছেড়ে দেয় তবে তার এক বন্ধু ছারতে নারাজ। তাই আমার বন্ধুটি একটু বেশিই বলে ফেলে তাকে। আর এ জন্যই তাকে অনেক কথা শোনায় মেয়েটি। ঘটনাস্তলে আমি যখন পৌছাই তখন আমার বন্ধুটিই আমাকে বলে কিছু বলিস না আমি একটু বেশি বলেছি। এদিকে আমি আসাতে মেয়েটি কেমন যেন চুপ হয়ে গেছে। মেয়েটির বন্ধুটিকে এতোটুকু শুধু বলেছিলাম, নিয়ম মানতে শিখুন। আমরা কেউই এর উপরে নই। মেয়েটি কিছু বলেনি তবে আমার বন্ধুকে বলল, মেয়েদেরকে নিজের বোনের চোখে দেখলে ওই খারাপ কথাটা মুখেও আসতো না। বোনের চোখে দেখতে শিখুন।

একটু দুরে গিয়ে আমি ‘কখনই না’ বলে দৌড়ে চলে আসি। তবে যেতে যেতে মেয়েটার রাগী মুখটা দেখতে ভুলিনি। যখন ভার্সিটির প্রায় শেষ সময়ে চলে আসি তখন নিজেকে অন্যরকম লাগতো। নিজে নিজেই ভাবতাম, আমি ওই মেয়েটিকে ভালবাসি। কেন ভালবাসি তা আমি জানি না। শুধু জানি তার কাজের ধারা গুলো। দুটি টিউশন করায়, ভার্সিটি করে তার ওপর সপ্তাহে একবার কোন অনাথ আশ্রমে যায় আবার মাসে কোন একদিন হাসপাতালে রোগীদের দেখতে যায় সাথে কিছু জিবনের ভাল মুহুর্ত গুলো উপভোগ করতেও দেখা যায়। আমি জানি সে সংগ্রাম করছে নিজের মাঝে কোন কমতি না রাখার। সবার মাঝেই যে সে একজন এটা সে প্রমান করতে চায়। প্রমান করতে চায় যে সেও অন্য ছেলেমেয়েদের থেকে কোন অংশে কম নয়।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যখন একটা চাকরি পেয়ে যাই তখন নিজ ডিপার্টমেন্টে স্যারদের মিস্টিমুখ করাতে ভুলি নি। ডিন স্যার অনেক খুশি হয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে দুটি বছর। আমিও আগের জবটা ছেড়ে দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপে জব করছি। এর মাঝেই একদিন স্যার আমায় ডাকলেন। সরাসরি তার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বললেন উনি। আমি হাসিমুখে বললাম, আমার জানা অনেক ভাল ছেলে আছে স্যার। আমি সব খোজখবর আপনাকে দিতে পারবো । স্যার একটু চুপ থেকে বললেন, তুমি বিয়ে করবে আমার মেয়েকে? আমিতো কিছুক্ষন চুপ হয়েই থাকলাম। তারপর স্যার আবারও বলল, দেখো তুমি আমার মেয়েকে তো চেনই। ও একটু অন্যরকম। ছেলেদের ওভাবে মাথায় নেয় না। এটা বলতেই আমি বললাম, জি স্যার একটু তাড়ছিরা। মেয়ে গুন্ডা। তারপরেই ভাবলাম কার সামনে কি বলছি? আমি মাথা নিচু করে নিলে স্যার আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর একটু জোরে হেসে বললেন, হ্যা অনেকটা এরকমি। তবে মেয়ে গুন্ডা না ওটা গুন্ডি হবে।

এটা শুনে স্যারের দিকে তাকিয়ে আমারও হাসি পেল। একটু পরে স্যার বলল, তা তুমি কি এই পাগলিটার দায়িত্ব নেবে বাবা? মনে মনে বলছি, নেবো না মানে? আপনি মেয়েকে রেডি হতে বলেন আমি নিতে আসছি বরযাত্রী নিয়ে। কিন্তু বলা হল না। মৃদু শব্দে বললাম, আমার মা বাবাকে জানালে ভাল হত। তখন স্যার বললেন, এসব নিয়ে ভেবো না। আমি কথা বলব তোমার বাবা মার সাথে। কিন্তু সমস্যা আর এক জায়গায়। আমি স্যারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে স্যার বলল, আসলে আমার মেয়েটা রাজি হবে কিনা বলতে পারছি না। তোমাকে কিছু একটা করতে হবে তাই তোমাকে ডেকে এসব বলা। আসলে ওকে নিয়ে তো আমারও চিন্তা হয় কিন্তু ও এটা বোঝে না। আমি একটু ভেবে স্যারকে বললাম, আপনি আমার ব্যাপারে আপনার মেয়েকে আগে জানান তারপর দেখুন আগে কি বলে। তারপর কিছু একটা করা যাবে। স্যার মনে হয় ব্যাপারটা বুঝলো। বলল, আচ্ছা আজকে জানিয়ে আমি কোনরকমে তোমার সাথে দেখা করার জন্য বলছি। আমি শুধু মাথা নাড়ালাম। তারপর তো স্যারের থেকে বিদায় নিয়ে আমি অফিসে চলে এলাম।

দুপুরে স্যার ফোন দিয়ে বলল, তেমার অফিসের ঠিকানা নিয়েছে। হয়তো অফিসেই দেখা করবে। তুমি তৈরী থেকো। আমি বললাম, স্যার আজকেই আসবে? স্যার বলল, তাই তো মনে হচ্ছে। আসলে তোমার কথা একটু রেগেই বলেছি তো তাই আরকি। আমি বললাম, স্যার অফিসে এসে আবার পিটন শুরু করবে নাতো? স্যার বলল, তা বলতে পারছি না তবে তুমি সাবধান থেকো বলেই ফোনটা রেখে দিল। আমি ভাবছি কি মেয়ে রে ভাই? ওর বাবাও ভয় পায় আর আমি তো হিসেবেরি কেউ না। তারপর বিকেলের দিকে তানিমা আসলো। ও হ্যা মেয়েটির নাম তানিমা। আমার সাথে দেখা করে ওই তো ভার্সিটির সামনে কফিশপে দেখা করার জন্য বলল। তারপর থেকে তো এসবি ভাবছি। এখন কাল যে কি হবে ভেবে পাচ্ছি না।

পরেরদিন যথাসময়ের দশ মিনিট আগে ওই কফিশপে বসে আছি। একটু পরেই হয়তো চলে আসবে তানিমা। বলতে না বলতেই দরজা দিয়ে ঢুকলো ও। ক্লাস নিয়ে আসলো হয়তো। একটু ম্যাডাম ম্যাডাম লাগছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমায় দেখতে পেয়েই এদিকে আসলো। ভাবখানা এমন ছিল যেন লবন মরিচ পেলে আমাকে কাঁচাতেই খেয়ে ফেলবে। সামনে এসে বসতেই ওয়েটার ডেকে একটা কফি আর একটা চিকেন ফ্রাই অর্ডার করলো। আমি হেসে ফেললাম চিকেন ফ্রাই অর্ডার করাতে। একটু চুপ থেকে বলল, বলেন, আমাকে কেন বিয়ে করতে চান? আমি সোজাসুজি উত্তর দিলাম জানিনা। ও বলল, মানে? আবারও বললাম, মানে জানিনা।

বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে তাই। ও আবারও বলল, ঠিক আছে। ইচ্ছে যখন হয়েছে বিয়ে করবেন কিন্তু আমাকে কেন? তখনি ওয়েটার চিকেন ফ্রাই আর কফি দিয়ে গেলো। চিকেন ফ্রাইটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে বললাম, প্রতিদিন যেন চিকেন ফ্রাই খেতে পারি এজন্য। তানিমা এবার বলল, আপনি কি মজা করছেন আমার সাথে? আমি বললাম, জি একটু। কেন বলেন তো? ও একটা রাগী ভাব নিয়ে আমাকে বলল, আমি সিরিয়াস। দেখুন, আগেই বলে রাখছি, আমাকে বিয়ে করে আপনি সুখে থাকতে পারবেন না। আমি অন্য সবার মত ঘরে বসে ঢুকঢুকি বাজানোর মেয়ে না। আমি তখনি বললাম, সমস্যা নেই ঢুকঢুকি বাজাবেন না তো কি হয়েছে, আমি আপনাকে অন্য কিছু কিনে দেব ওগুলো বাজাইয়েন। ও এবার বলল, আপনাকে দেখলেই না কেমন গা টা জ্বলে যায় আমার।

আপনাকে দেখলেই মনে হয় আপনার মনে কোন শয়তানি কারবার আছে। আপনি আমার বাবাকে কি বলেছেন বলুনতো? আপন কাউকে দুর থেকে দেখলে আর তাকে কাছে না পেলে গা তো একটু জ্বলবেই। আর আমার মনের সব কারবার এখন আপনার আমার বিয়ে নিয়ে। আর আপনার বাবা অনেক ভাল মানুষ। উনি আপনার ভাল চান দেখেই আজ আপনি আমি এখানে। মেয়েটা মনে হয় এবার রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলো না। চেয়ার থেকে উঠে আমার শার্টের কলার টা ধরে কিছু বলতে যাবে তখনি আমি বললাম, এই দারান দারান কি করছেন। আমরা তো সবেমাত্র দেখা করলাম, একদিনেই এতো কাছাকাছি আসাটা কেমন না। একটু তো ধৈর্য ধরেন। সামনে সব হবে। এটা শোনার পর ও কলার ছেড়ে চেয়ারে বসে পরলো। নিজের কপালে নিজেই বারি দিয়ে আমার দিকে তাকালো।

আমি আবারও বললাম, বিয়েটা হতে দিন সব হবে। চিকেন ফ্রাই টা প্রায় শেষের দিকে আর ও কফিতে এখনও হাতই দেয় নি। ও একটু সামনে এসে বলল, আপনি কি মানুষ? আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিনা এটা বুঝতে পারছেন। আমি বললাম, আপনাকে আমি ছাড়া কেউ বিয়ে করবেনা বলেই হাতটা মুছে ওর কফিটা নিয়ে একটা চুমুক দিলাম৷ ও তখনও অবাক হয়ে আছে। একরাশ বিরক্তির ভাব নিয়ে যখন ও উঠে যাচ্ছিলো তখন আমি বললাম, ও ম্যাডাম হ্যালো, আপনি ডেকেছেন তাই বিলটাও আপনি দিয়ে যান। ও দাঁত কিড়মিড়িয়ে বিলটা দিয়ে চলে গেলো। চলে যাওয়ার পরপরই আমি অট্টহাসিতে ফেটে পরি। অনেকখন হাসিটা দমিয়ে রেখেছিলাম। ওয়েটার আমার পরিচিত তাই তখন পাশে এসে বলল, কি মামা এতো হাসেন কেন? আমি হাসতে হাসতেই বলি আরেকটা চিকেন ফ্রাই দাও।

বাসায় বসে টুকটাক কিছু কাজ করছিলাম। তখনি এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই, ওপাশে হালকা কান্নার শব্দে কে যেন হ্যালো বলল। আমি বললাম, কে বলছেন? আমি তানিমা বলছি আপনি নিশ্চয়ই মামুন সাহেব বলছেন। আমি বললাম, জি বলছি, আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে বলেন? ওপাশ থেকে তানিমা বলল, আপনি জলদি করে আহসানিয়া হাসপাতালে চলে আসুন। বাবা খুব অসুস্থ, আর আপনার নাম ধরে ডাকছিল।

আমি আসছি বলেই ফোনটা রেখে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হাসপাতালে পৌছানোর পর তানিমা আমার সামনে এসে বলল, দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। বাবাকে এটাই বলবেন। আর উনি যেন এসব ব্যাপারে কোন চিন্তা না করে। ওর কথা ভালভাবে না শুনে বললাম, বাদ দিন। এসব পরে হবে। আপনি থাকেন আমি একটু আসছি। কেবিনে ঢুকেই স্যারের কাছে যেতেই স্যার উঠে আমার হাত ধরে বললেন, ও কি বিয়েতে রাজি হয়েছে? আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, মানে? স্যার বলল, আরে বিয়েতে রাজি করানোর জন্যই তো এই নাটক গুলো করতে হল। ও তো বাসায় আমাকে সোজা বলে দিল যে বিয়ে করবে না। এসব শুনে আমি বসার জন্য চেয়ার না পেয়ে মেঝেতেই বসে পরলাম।

মনে মনে বলছি শ্বশুর হবেন আপনি একটা। হাসতে হাসতে উঠে বললাম, হুম রাজি হয়েছে। স্যার কে বললাম, ওর আসলে বিয়ে করতে এতো অনিহা কেন? স্যার বলল, ওর মায়ের মৃত্যুর পরেই ও কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যায়। তারপর থেকেই তো ওর মত করেই চলছে ও। আমি ভাবলাম, আমাকেই ঠিক করতে হবে এসব। এরপর তো তার সাথে কিছুদিন পর বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের রাতে সেই এক কাহিনি হয়ে গেলো। আমি রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম। ফোনটা বের করে এক বন্ধুকে ফোন। ফোনটা ধরতেই বললাম, হ্যালো দোস্ত কেমন আছিস? ও বলল, এইতো আছি। অনেক অনেক শুভ কামনা তোর জন্য। আর সরি রে তোর বিয়েতে আসতে পারলাম না। আমি বললাম, না এসে ভালই করেছিস। আমার বউকে দেখলে তুই আমাকে আর বিয়ে করতে দিতি না।

নিজেই বিয়ে করে ফেলতি। ও হাসতে হাসতে বলল, তুই কোথায়। এই তো রুমে বসে আছি। ও বলল, তুই কি তোর বাসর ঘরে ঢুকে এসব কথা বলছিস আমাকে? আমি বললাম, হ্যা রে। তোর ভাবি যে ভালবাসা দিলো তাতেই তোর কথা মনে পরে গেল। দোস্ত আজ আর কথা না বলি তোর ভাবির মনে হয় আর তোর সইছে না। ও হেসে ফোনটা রেখে দিলো। ফোনটা রাখতেই তানিমা রক্তচোখে বলল, এই ছেলে তোর সইছে না মানে কি? আর কি ভালবাসা দিছি হ্যা? আমি বললাম, দেননি কিন্তু দিবেন তো। হাজার হলেও আজ আমাদের বাসর রাত। শাড়ির আচলটা ঠিক করে বলল নিকুচি করেছে তোর বাসর রাতের। একটা বার যদি আমাকে কোনরকম ছোয়ার চেষ্টা করেন তবে এখানেই মেরে রেপিং করে পার্সেল করে আকাশে পাঠিয়ে দেব। খানিকটা ভয় পেয়েছি কথাটা শুনে কারন মেয়ে এই ধাচেরই। তবুও একটু সাহস নিয়ে বললাম, কোন কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠাবেন আকাশে? এটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও চুপ হয়ে থাকলো।

আমি বললাম, না মানে আমিও কিছু পাঠাতাম আরকি। এই যেমন আপনাকে তো অনেক ভালবাসি কিন্তু ওগুলো তো কাজে লাগবে না তাই কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতাম যদি উপরে কারও কাজে লাগে। হটাৎ ও বিছানা থেকে নেমে কর্নার থেকে একটা রড বের করে বলল, বাঙ্গালীর ভাল কথায় কাজ হয় না। আমি এটা দেখে আর টু শব্দ করার সাহস পেলাম না। তোতলিয়ে কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। তারপরও বললাম, আ-আ-আপনি-নি কি করছেন এ-এসব? ও তখন তিরস্কার করে বলল, কি করছি বাবু বুঝতে পারছো না এখনি? ভালবাসা শেষ পাঠানো? আর একটা শব্দ না করে সোফায় ঘুমিয়ে পরুন৷ আর কখনও যদি আমাকে কোন প্রকার বিরক্ত করার চেষ্টা করেছেন তাহলে আমি মুখে কিছু বলবো না। রডটা দেখিয়ে বলল, এটা কথা বলবে। আমিও চুপচাপ সোফায় গিয়ে শুয়ে পরি। সকালে উঠে দেখি ম্যাডাম তৈরী হচ্ছে। মনে হচ্ছে ভার্সিটিতে যাবেন পড়াতে। সামনে গিয়ে বললাম, আজ তো বউভাত, আজকে দয়া করে কোন ঝামেলা করবেন না। অনেক আত্মীয় আসবে তাই অনুরোধ করছি।

আমার মাঝে সে কি দেখল তা বুঝলাম না তবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। দিনের সব কিছু শেষ হলে রাতে ওদের বাড়িতে চলে আসলাম। স্যারকে কিছু না বলে শুধু বললাম, আমি শেষ। স্যার হয়তো কিছু বলতো কিন্তু তখনি বললাম, রাতে দরজা খোলা রাখবেন, আমি আসতে পারি। সোফায় ঘুমোতে ভাল লাগে না আমার। এটা বলেই চলে আসি। রাতে ওই একই অবস্থা। সে বিছানায় আর আমাকে সোফা দেখিয়ে দিল। আমি বসলাম ওখানে। ও শুয়ে পরলে আমি নিঃশব্দে ছাদে চলে আসি। ছাদ থেকে শহরটা ভালই দেখা যায়। অনেক কিছু চিন্তা করছি। ভাবছি যাকে ভালবাসতাম একটু হলেও তাকেই তো পেয়েছি তবে কেন আজ এই অবস্থা আমার। এই মেয়েকেই কেন এরকম হতে হবে? পরে আবার ভাবলাম, এরকম বলেই তে একেই ভালবাসি আমি। রাতটা এসব বিভিন্ন কথা ভাবতেই কেটে গেলো।

পরেরদিন সকালে ওকে কিছু না বলে শ্বশুরের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে মা বাবাকে ওর ব্যাপারে সব কিছু বললাম। আর এও বললাম যে তেমরা এসব ব্যাপারে চিন্তা করো না। বাবাকে দেখলাম হাসছে। মা হেসে বলল, চিন্তা তুই করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে শ্বশুর পেয়েছিস একটা। আমিও হেসে অফিসে চলে এলাম। অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি ম্যাডাম চলে এসেছে এখানে। আমি আবারও শেষ। আজও সোফায় ঘুমাতে হবে। এভাবেই চলে গেল বেশ কদিন। একদিন রাতে অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি সে বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো কোন কারনে উদাসীন সে। ফ্রেশ হয়ে দুকাপ কফি বানিয়ে তার কাছে গেলাম। হঠাৎ করে আমি যাওয়াতে সে একটু চমকেই উঠলো । আমি হেসে তার দিকে কফির মগটা বারিয়ে দিলাম। সে আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে কফির মগটা নিলে আমি পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। সে চুপ করেই আছে আমিও কিছু বলছি না।

হটাৎ আমি বললাম, মন খারাপ? ও আনমনেই উত্তর দিল, হলেই বা কি আর না হলেই বা কি? এরকম একটা উত্তর পেয়ে আমি তাকে একটা প্রস্তাব করলাম। বললাম, আচ্ছা একটা কাজ করা যায় না? ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি? বললাম, স্বামী হিসেবে নাই বা মানলেন তবে যেহেতু ভার্সিটিতে একি সাথে পড়েছি তাই বন্ধু তো হতেই পারি তাই না? ও এবার আবারও সামনে তাকালো। একটু পরে বলল, আমাকে বিয়ে করে আপনার অনেক সমস্যা হয়েছে তাই না? আমি হাসলাম এটা শুনে। বললাম, আমার এক বন্ধু ছিল। ওর বা আমার মন খারাপ হলে আমরা ভাল কিছু খেতে বের হতাম। যেখানকার যেই খাওয়ারটা বিখ্যাত ওটাই খেতাম। আজ মনে হচ্ছে আপনার মন খারাপ। হওয়ারই কথা। আমার সাথে তো কথা বলেন না আর বাসায় তো বাবা মা। মনের কিছু কথা আছে যেগুলো শেয়ার না করে হয় না। তাই বন্ধু হয়ে বলছি, চলুন, নান্নাতে বিরিয়ানি খেয়ে আসি। ভালো লাগবে। ও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।

একটু পরে ফিক করে হেসে দিল। আমার চোখ সেটা না দেখে পারলো না। ও বলল, আপনি না অনেক রসিক মানুষ বুঝলেন। অনেক রাগের মাথায় হলেও কিসব উল্টো পাল্টা বলেন আর মন খারাপ থাকলেও। চলুন তবে খেয়ে আসি বলেই ও তৈরী হতে গেলো। আমি ভাবছি সত্যি কি সে রাজি হল? নান্নাতে এসে ও দুই প্লেট বিরিয়ানি খেয়েছে। আমি এক প্লেটেই ভর্তি হয়ে গেছি। বিল দিয়ে যখন বাসায় ফিরছি তখন হালকা করে শীত করছে। আমার গায়ে একটা সোয়েটার সাথে চাদর আছে। আর ওর গায়ে শুধু শাড়ি। তাই চাদরটা খুলে তার গায়ে জড়িয়ে দিলাম। এটা দেখেই ও আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম, শীত করছে আর আপনি তো ভারী কিছু পরেন নি তাই আরকি। ও কিছু না বলে চাদরটা ভালভাবে জড়িয়ে নিলো। রাতে এসে আবারও আগের মতই চলতে হল।

এখন আমি আর তানিমার কাছে যেতে চাই না। কারন যতটা কাছে যেতে চাই তার থেকে মনে হয় আরও দুরে চলে আসি। তাই বন্ধু হয়েই ভাল আছি। কিন্তু শুভ কাজটা করল আমার এক বান্ধবী। হঠাৎ করে একদিন দেখা হয়ে গেলো নিশার সাথে। তাই ওকে নিয়ে যখন রেষ্টুরেন্টে যেতে চাচ্ছি তখনি কেমন করে জানি তানিমার সাথে দেখা হয়ে গেলো। তানিমা নিশার দিকে তাকিয়ে বলল, মেয়েটা কে? নিশা এটা শুনে আমার হাতটা ধরে আমাকে বলল, কে এই মেয়েটা? একে আমাদের কথা বলনি? আমি অবাক হয়ে নিশাকে বললাম, নিশা ও আমার স্ত্রী।

নিশা হুট করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে কান্নার অভিনয় করে বলল, তুমি আমাকে ছেড়ে এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে? আমার কথা একবারও ভাবলে না? এসব শুনে তানিমা কেমন যেন মুখে হাত দিয়ে চলে গেল। মনে হল ও কাঁদছে। আমি ওকে থামাতে যেতেই দেখি নিশা এদিকে হেসে শেষ। আমি নিশাকে বললাম, তুইও না পারিস বটে। ও এখন কি মনে করল? এমনিতে তো ওর সাথে… আর কিছু বললাম না। ও আমার কাছে এসে বলল, ওর সাথে কি? আমি বললাম, কিছু না। তখন ও রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আমার থেকে সবটা শুনলো। বলল, দেখ দোস্ত মানুষের মনে কখন ভালবাসা আসবে এটা বলা কঠিন। তবে আমি তখন ওভাবে বলাতে মেয়েটার চোখে পানি এসেছিল।

এটা কাজে লাগাতে পারিস। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, সত্যি বলছিস ও আমার জন্য কেঁদেছে? অনেক হেসে বলল ওকে অনেক ভালবাসিস তাই না? আমি হেসে বললাম, তোর স্বামীর সামনে পেলে তোকে কি করি দেখিস। আরও কিছু কথার মধ্যে তাকে বিদায় জানাই। বাসায় আসার পর রুমে ঢুকে দেখি লাইট বন্ধ। রুমটা অন্ধকার করে বসে আছে তানিমা। রুমে লাইট জালিয়ে দেখি ও বিছানার এক পাশে মাথা হাটুর মাঝে রেখে বসে আছে। আমি ওকে বললাম, কি ব্যাপার রুম অন্ধকার করে রেখেছেন কেন? ও কিছু বলল না। আমি বললাম, ওটা আমার বান্ধবী ছিল তাই তখন মজা করেছে ওভাবে। ও তখন অনেকটা রেগে বলল, আমি কি এসব শুনতে চেয়েছি নাকি? তখন ওর মুখটা দেখলাম লাল হয়ে কান্নার কারনে নিজেকে যেন মাতিয়ে তুলেছে। বললাম, না, জানতে চান নি তবে আপনি কাঁদছেন কেন? কি কারনে মন খারাপ? ও বলল, আপনি আর একটা কথা বললে মাথাটা চিবিয়ে খাবো এখনি।

আমি হাসলাম। বললাম, আচ্ছা চলেন আজ আপনাকে একটা ভাল জিনিস খাইয়ে আনি। অনেক ভাল লাগবে। ও তখন মুখের ওপর যাবনা বলে চুপ করে বসে থাকলো। আমি বললাম, তাহলে একাই যাই? ও আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, একা কেন যাবেন? আপনার বান্ধবীকে ডেকে নিন। আমি বললাম, কথাটা খারাপ বলেন নি। দারান ফোন দেই। এটা বলতেই ও রড টা নিয়ে এসে আমাকে বলল, আপনি বের হোন। বাইরে গিয়ে কথা বলেন। সঙ্গে হালকা করে কান্নার ফোপানোটাও বোঝা যাচ্ছে। আমি ওর দুটো হাত ধরে বলি রাগ করেছেন বুঝলাম তবে কান্না করছেন কেন? আমি যদি এতোদিন ভালবেসেও আপনার অবহেলা গুলোকে এই বুকের মাঝে নিয়ে চলতে পারি তবে আপনি তো আর আমাকে ভালও বাসেন না। তারপরও এতো রাগ কেন? ও কান্নাটা লুকাতেও পারছে না তারপরও খুব কষ্টে বলল, আমি রাগ করিনি আপনি হাত ছাড়ুন। হাতটা ছেড়ে দিয়ে আমি বাসার বাইরে চলে আসি।

যখন বাসায় ফিরি তখন অনেক রাত হয়ে গেছে। ঘরে এসে দেখলাম কেউ নেই। হয়তো তানিমা ছাদে গেছে। তাই দু কাপ কফি বানিয়ে ছাদে গেলাম। দেখলাম ও ছাদের রেলিং ধরে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। কাছে যেতেই শুনলাম ও বলছে, বাবা ও অনেকক্ষন হল বেরিয়েছে। এখনও আসছে না। ফোনটাও রেখে গেছে। তুমি কি একটু আসবে এখানে? ওপাশ থেকে ওর বাবা কি বলল তা বুঝলাম না তবে ও রেগে গিয়ে বলল, তুমি না আসলে আমি একাই বের হচ্ছি ওকে খুজতে। তখনি আমি ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওর বাবাকে বললাম, আমি এসেছি আপনি চিন্তা করবেন না। বলেই ফোন কেটে দিলাম।

তখন ও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বললাম, তো যাবেন না খুজতে আমাকে? উপরে তাকিয়ে আবারও সেই পরিচিত রাগী ভাব এনে বলল, আমি আপনাকে খুজতে চাই নি। বলেই যখন চলে যাচ্ছিল তখন ওকে ধরে ফেললাম। একপাশে কফির মগদুটো রেখে ওর কাছে গিয়ে বললাম, কি লাভ হয় আমার থেকে দুরে থেকে। ভালো তো কেমন করে জানি বেসেই ফেলেছেন। তো বুঝতে পারছেন অবহেলা কেমন লাগে? ও আর কিছু বলছে না। কিছু বলবেন নাকি আমি আবার চলে যাবো? এটা শোনার পর ও নিজে থেকেই কেমন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি তো থো হয়ে আছি। হঠাৎ ও বলল আমি সরি। আমিও ভাব নিয়ে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। ও মাথা উঠিয়ে বলল, ঠিক আছে মানে? আমি বললাম, সরি মেনে নিলাম। তখন ও রেগে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলে আমি আবারও তাকে জড়িয়ে নিলাম। ও কান্না করছে আর আমি কেন যেন হাসছি। মনে হচ্ছে ভেতর থেকে একটা পাথরের দেয়াল সরে গেলো। এরপর দুজনে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছি।

ও কিছু বলছে না শুধু আমার হাতটা জড়িয়ে আছে। ওকে বললাম, কখন ভালবেসেছেন বলেন তো? ও তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এখনও আপনি করেই বলবেন? আমি বললাম, আপনি স্বামী হিসেবে মানলে না হয় অন্য কিছু বলে ডাকা যেতো। ও বলল, কে বলেছে মেনে নেই নি? আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, আপনি। ও বলল, তখন অন্য পরিস্থিতি ছিল তাই। আমি বলি, তো এখন কি পরিস্তিতি? ও বুকে আস্তে কিল দিয়ে বলল, আপনি কিছু বুঝেন না তাই না? আমি বললাম, কি বুঝবো? আপনি অন্য কিছু না বললে আমি কিভাবে বলি? আর তাছাড়া…. আর কিছু বলতে না দিয়ে আমার মুখে হাত দিয়ে বুকে মাথা রেখে বলল, ভালবাসি তোমাকে। আমি আর কিছু না বলে ওকে জড়িয়ে নিলাম। একটু জোরে বললাম, ভালবাসি আমিও। তবে তুমি তোমার মতই থেকো। তুমি তোমার জন্য তাই তোমার তুমিকেই আমি ভালবাসি। আর সাথে নিশাকেও ধন্যবাদ জানালাম।

এটা শুনে ও বলল, ওই মেয়ের কথা আবার বলছো? আমি খানিকটা হেসে বললাম, আরে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। অনেকদিন পর দেখা তাই একটু মজা করছে। এটা শুনার পর ও মনে হয় একটু লজ্জা পেল। তারপর কফির ধোয়াতে ফু দিতে দিতেই রাত পার করে দেওয়ার চিন্তা করছি দুজনে। রাতটা যেন অনেক ছোট সময়ে এসেছে। আমাদের দিকে তাকিয়ে হয়তো প্রকৃতিটাও একটু একটু হাসছে। হয়তো বলছে ম্যাডাম হঠাৎ ছাত্রী হয়ে গেলো কেন? তাদের আমি বলছি, সবুর করো ভাইরা, সবুরে নেওয়া ফলে..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত