অপূর্ণ ভালোবাসা

অপূর্ণ ভালোবাসা

তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে লামিয়া আর তানিমের বিয়ে ঠিক হয়েছে। লামিয়া কে প্রথম যেদিন দেখতে গিয়েছিলো সেদিনই প্রথম দেখাতেই লামিয়াকে পছন্দ করে ফেলে তানিম। লামিয়াকে দেখে আর দ্বিতীয় বার ভাবতে হয়নি “লামিয়া থাক অন্য আরেকটা মেয়ে দেখবো” বরং উল্টো প্রথম দেখাতেই লামিয়া কে বিয়ে করার কথা বাসায় বলে দেয়। তানিম সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আর লামিয়া এখনো পড়ালেখা করছে। লামিয়া দেখতে যেমন সুন্দর ঠিক সেই সুন্দরের মতোই ওর মন৷ তানিম দেখতে তেমন সুন্দর না হলেও অনেকটা গুছানো যেটা লামিয়ার পছন্দের। তানিম চেয়েছিলো খুব তাড়াতাড়ি লামিয়া কে পাশে পাওয়ার, যাতে আয়নাতে নিজেকে একা না বরং পাশে লামিয়া কে রেখে আয়না দেখা৷ লামিয়ার কাঁধে মাথা রেখে রাতের মায়াভরা চাঁদ দেখার, হাত ধরে পাশাপাশি হাটার, একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার৷ কিন্তু লামিয়া এত তাড়াতাড়ি বিয়ের করতে রাজি না৷ তানিম কে একটু বুঝার জন্য বাবা, মার থেকে তিন মাস সময় চেয়ে নিলো৷ তিনমাস সময়, এটা শুনে তানিমের প্রথমে একটু কষ্ট হলেও পরে মেনে নিয়েছে তিনমাস না বরং নব্বই টি দিন পরই তো লামিয়া আমার হবে৷

তিন মাস, নব্বইটি দিন৷ এই নব্বইটি দিনে প্রতিদিনেই তানিম আর লামিয়া একসাথে হয়েছে, পাশাপাশি বসেছে, একসাথে পা মিলিয়ে শিশির ভেজা সকালে হেটেছে, একসাথে রাতের ঘুমহারা তারাগুলো গুনেছে৷ লামিয়া চকলেট খুব পছন্দ করে এটা জানার পর থেকে প্রতিদিন দেখাকরার সময় চকলেট নিয়ে আসতো তানিম। প্রতেকটা সময় লামিয়ার মনের মতো হতে চেয়েছে এবং হয়েছে ও৷ লামিয়া ইচ্ছা গুলো, স্বপ্ন গুলো, ভালো লাগা, খারাপ লাগা সবকিছুই খুব কাছে থেকে জেনেছে৷ তানিম দিন গুনছে কখন নব্বই দিন শেষ হবে, কখন লামিয়া কে কাছে পাওয়া যাবে, কখন ভালোবাসা যাবে।

দেখতে দেখতে নব্বইটি দিন শেষ হয়ে গেলো৷ সাত দিন পর বিয়ে। দুজনই বিয়ের কেনাচাকাটা নিয়ে ব্যাস্ত। লামিয়া বিয়ের জন্য শাড়ি দেখছে এমন সময় লামিয়ার ফোনে কল আসলো৷ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তানিমের কল। কল রিসিব করার পর ;

– কোথায় আছো
— কেনো তুমি কি জানোনা কোথায় আছি৷ শাড়ি দেখছি
– তোমার সাথে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে, যত দ্রুত পারো দেখা করো।
— তোমার এমন কি কথা আছে যেটা আমি জানিনা, ডিস্টার্ব করো না তো, শাড়ি দেখতে দাও।
– সত্যি বলছি খুব প্রয়োজনিয় কথা আছে, আমি পার্কে আছি তুমি চলে আসো৷
— আমি পারবো না আসতে
– এতকিছু জানিনা, দেখা করো

লামিয়া কে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না৷ লামিয়া একটু কাজ আছে বলে শপিংমল থেকে বেড়িয়ে পরলো তানিমের সাথে দেখা করার জন্য। পার্কে গিয়ে দেখলো তানিম বসে আছে, লামিয়া কাছে গিয়ে বলল ;

— বলো, কি তোমার ইম্পরট্যান্ট কথা
– আগে বসো
— বসতে পারবো না, যেতে হবে এখনো অনেক কিছু কেনার বাকী।
– পরে যেয়ো। এত তাড়া কিসের
— আরে বোকা, তাড়া কোথায় দিলাম
– গত দুইটা দিন তোমায় একবারের জন্য দেখতে পারিনি, বলতে পারবা তোমাকে প্রথম দেখার দিন থেকে এমন কোন দিন আছে যে তোমার সাথে দেখা করিনি।
— হুম, প্রতিদিনই দেখা হয়েছে

– তাহলে গত দুই দিন দেখা হলো না কেনো, কেনো এত কষ্ট দিলে। তুমি জানোনা তোমাকে না দেখে আমি ভালো থাকতে পারিনা৷

— ঢং করো না তো, কি তোমার ইম্পরট্যান্ট কথা সেটা বলো।
– এটাই আমার কথা
— কোনটা
– কেন দেখা হলো না
— আর সাতদিন পরেই তো বিয়ে, তখন সারাদিন দেখো পারলে তোমার অফিসে নিয়ে সামনে বসিয়ে রেখে দেখো, তবু এখন ঢং করো না। আসি আমি
– আমি ঢং করছি, এটা মনে হয় তোমার
— না, তেমন করে তো বলিনি
– যেও না প্লিজ, পরে যেও

দুইজন বসে আছে কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলছে না, একটুপর লামিয়া বললো ;

— রাগ করছো?
– নাহ তো, রাগ কেন করবো
— আমার চকলেট দেও
– উফফফফ, একদমই মনে ছিলো না
— ওহ, এখন তো বিয়ে চলে আসছে তাই একটু একটু করে ভালোবাসা ও মেঘের মতো করে উড়ে যাচ্ছে।
– একদিন চকলেট আনিনি বলে এমন করো কেন, চকলেট আনিনি কিন্তু ওপরের দিকে চেয়ে দেখো তোমার জন্য বিশাল এক আকাশ নিয়ে আসছি, হবে না এতে?
— যাও, কথা নাই তোমার সাথে
– এই বদ মহিলা, রাগ করো না। চোখ বন্ধ করো

লামিয়া চোখ বন্ধ করলে লামিয়ার হাতে চকলেট দিলো তানিম। চকলেট পেয়ে খুব খুশি হলো লামিয়া, তখন তানিম বললো “তোমার ভালো লাগা গুলো কি করে ভুলে যাই।

লামিয়া চকলেট খাচ্ছে, তখন তানিম বললো ;
– আমার কিছু শর্ত আছে, যদি শর্ত গুলো মানতে পারো তাহলে বিয়ে করবো তোমাকে
— শর্ত, এমন কঠিন কথার মানে কি তানিম্মাআআআ

– বিয়ের দিন রাত থেকে প্রতিদিন রাতে আমার সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে আমার পাশে দাড়িয়ে, ঘুম ভাঙ্গিয়ে যখন বলবো আকাশ দেখবো তখন আমার সাথে আকাশ দেখতে যেতে হবে, হাজার হাজার তারাগুলো গুনতে হবে আমার সাথে, রাতে যখন ঘুমাবে তখন আমার বুকে ঘুমাতে হবে, গান শোনাতে হবে, এক প্লেটে করে খেতে হবে, আর আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো, ভালোবাসতে হবে আর কখনো ছেড়ে যেতে পারবা না।
তানিমের শর্তগুলো শুনে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লামিয়া উত্তর দিলো
— ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, আমি আপনার সব শর্তেই রাজি। শুধু আপনি আমার পাশে থাকলেই হবে৷
– সবসময়ই পাবে, দুনিয়াটা একদিকে আর তুমি অন্য দিকে হলেও আমি তোমার পাশেই থাকবো। কথা দিলাম
— হুম জানি, আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। একজন সঠিক মানুষকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন।
– হুম বদ মহিলা। ভালোবাসি অনেক

ফোন বেজে ওঠার আওয়াজ অনুভব করলো তানিম৷ ফোন হাতে নিয়ে দেখে ওর আম্মুর ফোন কল। ফোন রিসিব করার পর ওপাশ থেকে তানিমের আম্মু বললো ” তাড়াতাড়ি বাসায় এসো, শপিংমলে যেতে হবে তো ”

মায়ের কথা শুনে লামিয়ার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাইক নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো তানিম। আর লামিয়া রওনা দিলো শাড়ি কেনার জন্য।

লামিয়া পছন্দের শাড়ি খুজছে কিন্তু কোন মতেই কোন শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না। এ দোকান থেকে অন্য দোকান শাড়ি দেখছে, মনের মতো শাড়িই খুজে পাচ্ছে না। শাড়ি পছন্দ না হওয়াতে একটু বিষন্ন লাগছে লামিয়া কে। শাড়ি রেখে চুপ করে বসে আসে এমন সময় তানিমের নাম্বার থেকে কল আসলো। কল রিসিভ করলো লামিয়া, তখন ওপাশ থেকে অচেনা এক কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেলো ;

– বাইক নিয়ে আসা এ লোকটিকে কি আপনি চিনেন?
লামিয়া রেগে গিয়ে বললো
— তানিমের কাছে ফোন দিন, কে আপনি
– যার এই ফোন তিনি একটু আগে এক্সিডেন্ট করেছেন৷ তিনি নেই আর।

অচেনা লোকটির কথা শুনে “থ” হয়ে গেলো লামিয়া। শপিংমল থেকে দৌড়ে চলে আসলো এক্সিডেন্ট স্পটে৷ তানিমের নিথর দেহটি রাস্তার এক কোনে পড়ে আছে, চারদিকে মানুষ ভির হয়ে আছে। ভির ঠেলে তানিমের প্রানহীন দেহের কাছে গিয়ে বসে পড়লো লামিয়া। খুব জোড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু পারছে না কোন শক্তি নেই৷ কান্না করছে কিন্তু কান্নার কোন আওয়াজ ও হচ্ছে না। হয়তোবা এ কান্না আর শেষ হবেও না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত