অনেক বেশী ভালবাসি

অনেক বেশী ভালবাসি

দাদুভাই নিশিকে তোর কাছে কেমন লাগেরে
-মানে
-মানে যা ভাবছিস তাই
-আমি কিছু ভাবছিনা
-আচ্ছা কেমন লাগে বলনা
-ভালো
-যাক আলহামদুলিল্লাহ্,,বৌমা সবাইকে খবর দাও তোমার ছেলেও রাজী
-দাদু তুমার প্লান কি
-নিশিকে আমার ঘরের বৌমা করবো
-মইরা যামু তাও নিশিরে বিয়ে করতেছিনা
-দেখ বাবা,,আমার বড় মেয়েতো অনেক আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।।রেখে গেছে তাঁর একমাত্র মেয়েটাকে।।ছোট থেকেই নিশিকে নিজের কাছে রেখে আদর-যত্ন করে বড় করেছি।।আমি চাইনা অন্য ঘরে বিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দিতে

-ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছো
-ধুর পাগল,,সবাই কি আর এই বুড়োর কষ্ট বুঝেরে।। তুই আমার রক্ত,,তুই_ই একটু বুঝবি
-তোমার ইমোশনাল কাজে লাগবেনা
-নিজের রক্তকে কি আর কেউ ইমোশনাল করে রে
-আমি ভেবে দেখছি
-একটু তাড়াতাড়ি ভাব।।

জানিনা কখন মরে যাই।।মরার আগে শুধু নিজের নাতনীর বিয়েটা দেখে যেতেচাই (মনের ব্যান্ড বাজায়ে বুড়োটা পালালো।। নিশি আমার ফুপ্পির একমাত্র মেয়ে।।জন্মের পরি ফুপ্পি মারা যায়।।তারপর দাদু নিশির আব্বুকে বলে নিশিকে নিজের কাছেই রেখে দেয়।। এদিকে আমার কত্ত ইচ্ছা ছিলো কোনো অচেনা বাকিকা বিয়ে করে প্রথম দুই মাস প্রচুর কষ্ট দিবো।। আফসুস ইচ্ছেটা মনেহয় ইচ্ছেই রয়েযাবে।। ঘরে শুয়ে ভাবছি কি করবো।।আর অন্য রুমে আব্বু-আম্মুর কাঁটা ঘায়ে নুনেত ছিটে দেবার মতন কথা)

-বাবুর আম্মু নিশিকে কিন্তু আমি অনেক আগে থেকেই আমার ঘরের বউ করে আনবো বলে ভেবে রেখেছি।।আজ বাবা যেটা বললো তাতেতো আমার সব চিন্তাই দূর হয়ে গেলো

-তোমার ছেলে রাজী হলেই হয়।।এত্ত লক্ষী একটা মেয়ে তোমার ওই জল্লাদ মার্কা ছেলের চোখেই বাদবেনা
-হুম।।না করে দিলে কি আর করার।।অনেক গুলো বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে নিশির।।একটার সাথে নাহয় বাবা শেষে রাজী হয়েই যাবে
-তুমি রফিকে একবার বুঝিয়ে বলো
-দেখছি,,জোর করে হলেও নিশি আমার ঘরের বউ হবেই (আহা কি সুখ।।আমি একদিকে পুরো দুনিয়া অপরদিকে।। বাঁচতে হলে নিশির সাথে একবার কথা বলতে হবে।। তাই আর কিছু না ভেবেসোজা নিশির রুমের দিকে রওনা দিলাম)

-কিরে তুই এখানে
-উপায়হীন হয়ে তোর কাছে এলাম।।সবাই বলছে তোর আমার বিয়ের কথা
-হুম শুনেছি।।কিন্তু বাঁচার উপায় কি
-তুই নানুকে মানা করে দে
-আমি পারবোনা।।তুই মানা করে দিলেই তো হয়ে যায়
-তোর কি বিয়েতে মত আছে নাকিরে
-হাহ্,,তোর মতন পেঁচা যেখানে বর সেখানে আমার মত থাকা অসম্ভব
-তাহলে পথ ক্লিয়ার।।দুজনে একসাথে বললেই হয়
-আচ্ছা,,যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।। কালকের মধ্যেই বাসায় সবাই চলে আসবে
-আচ্ছা দেখছি

(ঘরে এসে অনেক বুঝে হিসাব করে একটা প্লান করলাম।। সব প্লানিং শেষ করে ঘুমিয়ে পরলাম।। আফসুস উঠতে দেরী করে ফেলেছি।। ১১টার সময় উঠে দেখি বাড়ি ভর্তি মানুষ।। সাথে আমার সুখ-দুঃখের ফ্রেন্ড গুলাও আসছে।। ওদেরকে কে খবর দিলো)

{ফ্রেস হয়ে গেলাম দাদুর সামনে}
-দাদু
-হুম বল
-আমি বিয়েতে রাজী
-বুকে আয় বাবা
-কিন্তু একটা দুঃখের খবর আছে
-কি দুঃখের খবর
-নিশি নাকি বিয়েতে রাজী না।।

কাল বিকেলে নিশির কাছে জিজ্ঞেস করছিলাম ও রাজী কিনা।।বললো আমার মতন পেঁচা যেখানে বর সেখানে ও রাজী হওয়া অসম্ভব।।আমাকে পেঁচা বলছে দাদু

-দাড়া আমি দেখছি………নিশি…নিশি
-হুম নানু বলো
-তুই নাকি বিয়েতে রাজীনা
-কই!!আমিতো রাজী
-তুই নাকি রফিকে পেঁচা বলেছিস
-নাতো।।এত্ত হ্যান্ডসাম ছেলেকে পেঁচা বলতে যাবো কোন দুঃখে
-আচ্ছা এখন যা…..দাদুভাই যেহেতু তোমরা দুজনেই রাজী সেহেতু আর কোনো সমস্যাই থাকলোনা দুদিন বাদেই তোমাদের বিয়ে।। আগামীকাল বিদেশ থেকে নিশির বাবা আসছেন।।আমি চাই তুমি আর নিশি দুজনে গিয়েই তাঁকে ড্রপ করে নিয়ে এসো

-হুম[মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নাই] (তারপর বন্ধুদের কাছে চলে গেলাম মনের দুঃখ শেয়ার করতে)
-মামু তুমিতো বাড়িতেই ছক্কা মাইরে দিলা(শুভো)
-দোস্ত আমিতো বাড়ির বাইরে মারতে চাইছিলাম।।কিন্তু সবাই ষড়যন্ত্র করছে(আমি)
-তাইলে তুই বাড়ির বাইরেই মারিস।।তোর দাদুকে বলে ভাবীকে আমার নামে সেট করে দে(আতিক)
-তুই ফিল্ডিং করতে আসছিস ফিল্ডিং কর চুপচাপ(শুভো)

{সবাই হেসে দিলো।।দুঃখ একটাই,, ওদেরো মনের ব্যথা বুঝাইতে ব্যর্থ।। তাই ওদের সাথে মজা করেই দুঃখকে কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেলাম।। এদিকে নিশির ফ্রেন্ডরাও চলে এসেছে।।সবগুলা ফ্রেন্ড আমায় একা ফেলে গেলোনিজ দায়িত্বে যার যারটা সেটিং করতে।। কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ <সকাল চারটায় নিশির লাথি খেয়ে লাফ দিয়ে উঠলাম>

-কে…কে
-আমি
-তু…তুই আমাকে মারলি ক্যান
-মামা বলেছে তোকে লাথি মেরে ঘুম থেকে তুলতে
-আজাইরা,,এত্ত সকালে উঠে কি করবো
-আব্বুকে এয়ারপোর্টে আনতে যেতে হবে
-নামবে কখন
-১০টায়
-বাজে কত
-৪টা
-এয়ারপোর্টে যেতে কত সময় লাগবে
-দু-ঘন্টা
-তাহলে আমি বাকি ৪ঘন্টা কি করবো
-ফ্রেস হয়ে রেডি হ
-ওই রেডি হতে ১০মিনিট লাগবে,,এখন রেডিহবো ক্যান
-ধুর ১০মিনিটে আবার রেডি হওয়া যায় নাকি
-[রাগে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেলো]ওই ছেমরি আমি কি তোর মতন আয়নার সামনে বসে আটা-ময়দা মাখবো নাকি,,যে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগবে

-দেখ মেক আপ নিয়ে কোনো কথা বলবিনা
-হুম তাইতো,,আমিতো ভুলেই গেছিলাম এটা মেয়েদের ঐতিহ্য
-যাই হোক,,ব্লাক পাঞ্জাবি পরিস
-আমার হলুদ পছন্দ ওক্কে
-আচ্ছা এখন ঘুমা,,সময় মতন আমি ডেকে দিয়ে যাবো
-যা ভাগ

(তারপর হাজার চেষ্টার পরেও ঘুমের দেখামিললো না।। তাই ফেসবুক লগ ইন করলাম।। প্রফাইলে যাইয়ে পুরাই অবাক,,সবাই congregation জানাইছে বিয়ের জন্য।। আরো অবাক হলাক নিশি Relation Status Married দিছে with মি।। মেসেজে যায়ে ডাবল অবাক সব ম্যাইয়া ব্লোক দিছে সাথে নিশির message status টা approve কর।।অভাগা এক আমি approve করে ফেসবুক থেকে বেড় হয়ে আসলাম।। কিছুক্ষণ গান শুনে ফ্রেস হয়ে কালো একটা পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে হলাম।।

নিশি আমায় ডাকতে এসে পুরাই আবাক,,আমি কালো পাঞ্জাবি পরছি!!ডাবল অবাল আমি,,নিশি হলুড শাড়ী পরছে!! তারপর গাড়ী নিয়ে দুজনে বেড়িয়া পরলাম।। উদ্দেশ্য এয়ারপোর্ট।। এয়ারপোর্ট থেকে নিশির বাবাকে স্বাগতজানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে আবার রওনাদিলাম।। আহা কি দৃশ্য,,আমি গাড়ি চালাচ্ছি নিশিআমার পাশে বসে প্রকৃতি দেখছে আর পেছনদিকে হুবু শ্বশুরমসাই কান্ড দেখে স্মাইল দিচ্ছে।।) {পরেরদিন কিভাবে কিভাবে আমার আর নিশির বিয়ে হয়ে গেলো অজানা।। এত্ত চেষ্টা করার পরেও আটকানো পসিবল হলোনা।। মানুষ সেকা খায়ে দেবদাস,,আমি বিয়ে করে দেবদাস।। বাসরঘরে যায়ে আর কিছু ভাবার আগেই সুইটএকটা ঘুমদিলাম।। সকালে উঠে নিশিকে আমার দুই বাহুর মাঝে আবিষ্কার করলাম।। নিশি কিছু বুঝুক তার আগেই এক লাফ দিয়ে খাটের এক পাশে গিয়ে এমন ভাবে ঘুমিয়ে গেলাম যেন কিছুই হয় নি।।

কিছুক্ষণ পর নিশি ঘুমথেকে জাগলো।।আমি তখন মরার মতন শুয়ে আছি।। নিশি আমায় ঘুমন্ত ভেবে কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।।এটাই হয়তো স্পেশাল মানুষের ভালবাসা!!আমি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলাম।।নিশি তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে ফ্রেস হতে চলে গেলো।। আমিও একটুপর উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম।। মন কেনজানি শুধু নিশিকেই খুঁজতে লাগলো।। এটা হয়তো বিয়ের বন্ধনের টান।। সারা বাড়ি খুঁজাখুঁজির পর ম্যাডামকেরান্নাঘরে পেয়ে গেলাম।। এবাক luckটা আমার প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল হলো,,রান্নাঘরে অন্য কেউ নেই।।}

-কিরে কি রান্না করিস
-কই কিছুনাতো,,মামী মাংস রান্না করছে তাই আমায় একটু দেখতে বললো
-ওওও,,তো তোর আমার বিয়েটাতো হয়েই গেলো তাইনা (মন বলছে একটু প্রেম কড়,,কিন্তু আমার মন থেকে কোনো রোমান্টিক কথাই আসছে না)

-হুম
-তো…চল
-কোথায়
-তাইতো কোথায়
-তোর মাথা ঠিক আছেতো
-ওই সত্যি মাথা কাজ করছে না,,কি করি
-জানিনা
-আমার না প্রেম করতে ইচ্ছে হচ্ছে
-কিইইইইইইইইইই[চোখ বড় বড় করে]
-হুম
-কারসাথে শুধু তাই বল,,আজ ওই ডাইনির এক দিন
কি আমার আমার একদিন
-যদি বলি তোর সাথে
-[মাথা নিচু করে নিলো,,মেবি লজ্জায়]
-চল ছাদে যাই
-এখন অনেক রোদ
-ব্যাপার নাহ্,,সবাই চন্দ্র বিলাসিতা করে আমরা নাহয় সূর্য বিলাসিতা করবো
-ভালোবাসিস তো আমায়
-মনেহয় বাসি
-আগে শিওর হ,,তারপর আসিস
-শিওর হতে গেলে জড়িয়ে ধরতে হবে
-আচ্ছা ধর
-[জড়িয়ে ধরে]নিশি bad luck
-ক্যানো[মন খারাপ করে]
-অনেক বেশী ভালবাসিরে

(এবার নিশিও আমায় জড়িয়ে ধরলো।। আমার সুখের সাগরে হানা দিলো আম্মু।। রান্নাঘরে আসার আর সময় পেলো না।। আমাদের দেখে লজ্জায় চলে গেলো।। নিশিকে ছাড়তেও ইচ্ছে হচ্ছে না।।এদিকে নিশিও ছাড়ছে না।। আফসুস দাদু চলে আসলো)

-কি দাদুভাই বিয়ে তো করতেই চাইছিলা না
-তু…তুমি এখানে ক্যান
-হুম ভুল সময়ে চলে আসছি
-না ঠিক আছে।।

আমার কাজ আছে আমি যাই দাদু পরিবার যেটা করে ভালোর জন্যই করে।। প্রকৃত সুখতো বিয়ের পরেই,,যেখানে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ভালোথাকে।। আবার,,প্রেম করে বিয়ে হাজারো বিপদ আপদ আসে।।অবশেষে ভেঙেও যায়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত