ভালবাসার হাসি

ভালবাসার হাসি

রিয়া বাসট্যান্ডে অপেক্ষা করছে।সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট হয়ে এলো ।অথচ ছেলেটার এখনো কোন পাত্তাই নেই।ফোনও রিসিভ করছে না ফাজিলটা।রিয়ার ইচ্ছে করছে এখন ঐ বাদরটাকে পেলে তার মাথায় একশ একটা পঁচা বেল ফাটাবে।রাগে ফুসফুস করতে করতে আবার রিয়া ফোন দেয় সাগরকে।এবার রিসিভ হয়েছে।ফোন রিসিভ করে সাগর কিছু বলার আগেই রিয়া একদমে বলা শুরু করে…এই যে মিষ্টার গোবর ,আসো তোমাকে আজ দিয়ে দিবো একেবারে কবর…এখন কত বাজে হিসেব আছে?আধাঘন্টা ধরে বসে আছি,এতক্ষণ ধরে ফোন করে যাচ্ছি,রিসিভ করার ও কোন নাম গন্ধ নেই।কোন মেয়ের সাথে টাংকি মারতে গেছ হুম যে ফোনটা ধরতেও সময় হচ্ছেনা? আমি একাই যাবো থাকো তুমি।কারো যেতে হবেনা আমার সাথে।এটুকু বলেই কোন উত্তরের আশায় না থেকে ফোন কেটে দিলো রিয়া।

ওপাশ থেকে সাগর ঠিক বুঝতে পেরেছে রিয়া কেন এত রেগে গেছে।একে তো ফোন রিসিভ করতে দেরি তার উপর আজ সাতটায় বাসট্যান্ডে পৌঁছার কথা।কিন্তু সাগর তো এখনো রেডিই হয়নি।শুয়েই আছে বিছানায়। চোখ মুছতে মুছতে উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেচারা দৌঁড় দেয় বাসট্যান্ডের উদ্দেশ্য।

ও সাগর আর রিয়ার পরিচয়টা দেয়াই হয়নি এখনো।সাগর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে আর রিয়া ১ম বর্ষে পড়ছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে।ওরা দুজন দুজনাকে খুব ভালবাসে।চারবছরে গড়িয়েছে ওদের প্রেমের সম্পর্ক।ওরা আজ গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে দুজন ঠিক করে রেখেছে।তাইতো হাঁপাতে হাঁপাতে সাগর এসে পড়ে বাসট্যান্ডে।এসে দেখে রিয়া মুখ বাঁকা করে অন্যমুখ হয়ে বসে আছে।সাগর এক পা দুপা করে এগিয়ে এসে রিয়ার পাশে বসে।রিয়া কোন কথা বলছে না,একদম চুপ মেরে আছে।সাগর ও ভয়ে কিছু বলছে না।কারণ রিয়া খুব রেগে আছে। এখন কিছু বলা যাবেনা।পরে এমনিতেই রাগ কমে যাবে তার রাগিনীর।

বাস ইতিমধ্যে রওয়ানা করেছে।রিয়া জানালার পাশে বসেছে।রাস্তার পাশের গাছপালা,চিরসবুজ ফসলের মাঠ সহ যা কিছুই আছে সবই যেন বাতাসের গতিতে দৌঁড়াচ্ছে।রিয়া জানালার কাঁচ সরিয়ে ঐ যে তখন থেকে এসব দেখছে তো দেখছেই আর কোন দিকে নজর নেই ওর।পাশে যে সাগর বসে আছে তার কোন খেয়ালই নেই,যেন সাগরকে সে চিনেই না।রিয়া ঐ দূর আকাশের মেঘের খেলাও দেখছে অবাক হয়ে।মনে হয় আগে কখনো দেখেই নি এসব কিছু।রিয়া এতক্ষণ ধরে একটা কথাও না বলায় বাধ্য হয়েই সাগর কথা বলছে এখন..এই ফুলটুসির মা রাগ এখনো কমেই নি বুঝি?

রিয়াঃকার উপর রাগ করব?আমার কে আছে যে তার উপর রাগ করব? (জানালের দিকে তাকিয়েই বলে)

সাগরঃ কেন ফুলটুসির বাবা বুঝি তোমার আপন না?

রিয়াঃআপন হলে আমাকে কখনো কষ্ট দিতে পারতো না।

সাগরঃঠিক আছে আমি তোমার যখন আপন কেউ না তাহলে আমার সাথে আর কথা বলার দরকার কি?যে আমার আপন তার সাথেই এখন কথা বলবো-এইটুকু বলেই এক নম্বরে ফোন করে লুতুপুতু কথা বলার অভিনয় শুরু করে সাগর হ্যালো,ডার্লিং,কি করছো? এই তো জানু, আমি তোমার কথাই ভাবছি তোমার কথা খুব মনে পড়ছে গো সোনা এতক্ষণ ফোনটা কানের কাছেই ধরে রেখেই এভাবে কথা বলছিল সাগর কিন্তু এখন সাগর খেয়াল করে দেখে শুধুহাতটাই কানের কাছে ,ফোনটা নেই।ওর ফোনটা এখন রিয়ার হাতে।রিয়ার চোখের দিকে তাকাতেই সাগরের অবস্থা খারাপ যেন এক বাঘিনী ওর দিকে তাকিয়ে আছে, এখনই সাগরকে গিলে খাবে! সাগর যে এতক্ষণ এমনি এমনি ওরকম লুতুপুতু কথা বলেছে তা ধরা পড়ে গেছে রিয়ার কাছে।রিয়াঃ কোন মেয়ের দিকে তাকালে তোমার চোখ উপড়ে ফেলবো।আর অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেম করলে ঐ মেয়ের সাথেই তোমাকেও কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।

সাগরঃ ফুলটুসির মা থাকতে অন্য কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতে যাবো কেন গো?

রিয়াঃখুব জানি..কেমন ভালবাসো আমাকে।ভালবাসো না ছাই।

সাগরঃবুকটা চিরে যদি দেখাতে পারতাম তাহলে বুঝতে কতটা ভালবাসি তোমায়।

রিয়াঃথাক আর ডায়ালগ দেয়া লাগবে না।

সাগরঃডায়ালগ না রে পাগলী,সত্যি বলছি।খুব ভালবাসি তোমায়।আচ্ছা চোখ বন্ধ করলে কেমন লাগে তোমার বলতো?

রিয়াঃকেমন আবার চারিদিকে সবকিছুই অন্ধকার লাগে,একাকী মনে হয় নিজেকে।

সাগরঃহুম…তোমাকে ছাড়াও আমার ঠিক ওরকম পৃথিবীটাই অন্ধকার লাগে,নিজেকে খুব একা লাগে…সাগর কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করে দেখে রিয়া ঘুমিয়ে গেছে কখন যেন, মাঝে মাঝে রিয়ার মাথাটা দুলছে এপাশ ওপাশ।সাগর অবাক চোখে ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারাটার দিকে অপলক তাকিয়েথাকে ।কী অদ্ভুত এক মায়া চেহারাটার মাঝে। বন্ধ করাচোখের পাতামাঝে মাঝে কেঁপে উঠে। সে দেখতেই থাকে। কপাল ছুঁয়ে আছে একমুঠো চুল । ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয় । রিয়া জেগে যাবে বলে ছোঁয় না।.সাগর অপলক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়েই থাকে । হঠাৎ বন্ধচোখের পাতা নেচে উঠে । চোখেরপাতা সরে ছোট্ট দুটো চোখ উঁকি দেয়। ঘুমজড়ানো কন্ঠে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে ” কী দেখো? “.সাগর বলে – কিছু না । রিয়া বলে, তুমি ঘুমাবে না?

সাগরঃনা,তুমি ঘুমাও।রিয়াঃআমার মাথার নিচে একটা বালিশ দাও না (ঘুমজড়ানো কন্ঠে)

সাগরঃএখানে বালিশ পাবো কোথায়?

রিয়াঃ তাহলে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই? রিয়া উত্তরের অপেক্ষা না করে চুপচাপ মাথা রাখে সাগরের বুকে। বুকের গহীন থেকে গর্জন আসে।কিসের গর্জন এটা? এ গর্জন যেন ভালোবাসার গর্জন, অনেক পাওয়ার গর্জন, সুখের গর্জন ।চোখ বুঁজে রিয়াও সে সুখ মেখে নেয় । এ বুক তার,শুধুই তার । আলতো করে রিয়ার চুলে হাত রেখে সাগর হাসে,এ যেন ভূবন ডাঙার হাসি…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত