সুন্দর

সুন্দর

“আমি নিজের সম্পর্কে জানি। কতটা ফর্সা আমার চেহারা আমি জানি। আপনার উদ্দেশ্য কী বললে উপকৃত হই।”
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রায়হান বললো।

“ সত্য কথা বলবো? ”
জেবা ইসলাম বেশ কড়কড়ে কণ্ঠে।
“ জ্বী, আপনি সত্যই বলুন। ”

একটা সিগারেট ধরাবে ভেবেছিল রায়হান। কী ভেবে যেন আবার প্যাকেটটা যথাস্থানে রেখে দিলো।
“ যদি বলি আমার সুন্দরী বৌ পাওয়ার স্পৃহা নেই। সব পুরুষের মতো। তবে সেটা মিথ্যা বলা হবে। তবে আপনার মাঝে যা আছে। তা অন্যসব মেয়েদের মাঝে খুব কমই আছে। ”
জেবা বিরক্ত হলো।

“ আসল কথা বলুন। ”

রায়হান বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। জেবার বাড়িতে এভাবে আচম পাখীর মতো একরকম জোর করে বসে থাকাটা সে পছন্দ করছে না। বিরক্ত হচ্ছে।

“ মিস জেবা। আমার কাছে না মনে হয় সুন্দর ব্যাপারটা মানুষের চরিত্রে থাকে। মানুষের মনে থাকে সৌন্দর্য। আপনি আমাকে একটু ভুল বুঝেছেন। আমি সুন্দর বলেছি আপনাকে, সুন্দরী নয়। ”

জেবার মনে হলো। আসলেই তো লোকটা তাঁকে সুন্দরী বলেনি। কেউ যখন জেবাকে সুন্দরী বলে তখন সে রেগে যায়। সে তো সুন্দরী না। সে শ্যামবর্ণের মেয়ে। যে কোনো বিষয় নিয়ে হোক। আলগা পিরিত আর মিথ্যা কথা। জেবা একদমই সহ্য করে না।
রায়হান থেমে আবার বললো।

“ আমি ছোট বেলা থেকে খুব জেদি মিস জেবা। যা চাই তাই পাই। না পেলে আদায় করে নিই। তা শুদ্ধ করে হোক আর অশুদ্ধরূপে। আমি সবসময়ই চাইতাম আমার বৌয়ের কাছে সবাই মাথানত করে থাকবে। ভয়ে নয়, ভালবেসে। মাথানত করে থাকবে বলতে আপনি বুঝেছেন তো? ধরুন আমার মা সংসারের একটা বড় সিদ্ধান্ত নিবে। তার জন্য আমার বৌয়ের সাথে পরামর্শ করবে। মা জানবে তাঁর সাথে পরামর্শ করলে সে ঠকবে না। আমার ভাবীদের বিশ্বস্ত সব জিনিসপত্র অনায়াসেই আমার বৌয়ের কাছে জমা রাখবে। তাঁদের বিশ্বাস থাকবে কমপক্ষে এই মেয়ে কোনোমতেই সেগুলোর কিছু হতে দেবে না। যার মনে বাচ্চাদের জন্য সীমাহীন দুর্বলতা। সে বাপের বাড়ি গেলে যেন গোয়াল ঘরের গরুটারও মন খারাপ হয়। আমার সবচেয়ে চরিত্রহীন বন্ধুটাও যেন তাতে মুগ্ধ হয়ে বলে, এই মেয়েটাকে কষ্ট দিস না ভাই। আল্লাহ্ সহ্য করবে না।

আমি চাইতাম আমার বৌটা সবার থেকে আলাদা হবে। পার্থক্য গড়ে দেবে তাঁর উদারতা দিয়ে। যার সরলতায় অন্ধ মানুষও তাঁকে দোয়া করবে। এসব আমি আপনার মাঝে দেখেছি। আপনি সুন্দর। সুন্দরী কিনা আল্লাহ্ ভালো জানে। আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। ঐযে আমার বৌয়ের কাছে সবাই মাথানত করবে ভেবে। আরেকটা কথা, আমার মতো বাজে লোককে আপনার বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছেন। খুব ভালো লাগছে। কাল পর্যন্ত আমাকে কেউ বাজে লোক বললে রাগ হতো। আজ থেকে হবে না। ভালো থাকবেন। ”

বলেই রায়হান উঠলো। জেবা একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। আরে তাঁর দেখা সবচেয়ে বাজে লোকটা যে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে তাঁর জানা ছিলো না। কথা বলার ভঙ্গিমায় কী মুগ্ধতা! হঠাৎ বলে উঠলো।

“ আচ্ছা আজ থেকে আর কেউ বাজে লোক বললে রাগ করবেন না কেনো? ”
রায়হান শেষবার গাম্ভীর্য্যপূর্ণ মুচকি হেসে বললো।

“ বাজে উল্টো করলে জেবা হয়। ”

কথাটা বলতে বলতে সিঁড়িতে পা দিলো। এক পা দু’পা করে নিচে নামছে। দুয়েক মিনিটের মধ্যে জেবার কি হলো সে বুঝতে পারলো না। এক দৌড়ে নিচে নামলো। রায়হান রিকশা ডাকছে।

“ চলে যাচ্ছেন? ”
“ হ্যাঁ, এটা তো আমার শ্বশুর বাড়ি না। যে থেকে যাব। ”
“ আপনার সিগারেটের প্যাকেকটা ভুলে ফেলে এসেছেন। ”
“ ওহ, কই এনেছেন? দেন। ”
“ দিবো না। ”
“ আশ্চর্য, কেনো দিবেন না? আচ্ছা আপনি খেলে রেখে দেন। ”
জেবা অবাক হয়ে বললো।

“ আরেহ, আমাকে দেখে কী মনে হয় আমি সিগারেট খাই? ওই প্যাকেকটা বাসর ঘরে দিবো। তারপরে আর জীবনেও সিগারেট ধরা যাবে না। এর আগেও না। মনে থাকবে? ”

রায়হান চোখ বড়বড় করে বললো।
“ মানে? ”
“ মানে হচ্ছে আপনি একটা বাজে লোক। ”
বলেই জেবা সিঁড়ি দিয়ে কয়েক মুহূর্তে অন্দরমহলে চলে গেলো!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত