সেই দিনটা

সেই দিনটা

মাঝরাতে হঠাৎ ঘূমটা ভেঙ্গে গেলো হৃদয় এর।এসি চালু আছে অথচ ওর শরীর ঘামছে মাঝে মাঝে বেশি গরম পড়লে এরকম হয় ওর খুব তৃষ্ঞা পেয়েছে ওর টেবিল ল্যাম্পটা জালিয়ে পানির গ্লাসটা খুজতে লাগলো হয়ত আজকে আনতে ভুলে গেছে বিছানা থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে পানি পান করতে গেলো হৃদয় একি??বাবার রুমে এখনো আলো জলে ব্যাপারটা কি???(আশ্চর্য হয়ে)

দূর থেকে হৃদয় দেখলো ওর বাবা চেয়ারে বসে চশমা টা লাগিয়ে কি যেন পড়ছে !! দূর থেকে কিছু বোঝা যাচ্ছেনা বাবার রুমের কাছে এল ও দরজার কোণায় দারিয়ে এক চোখ বের করে লুকিয়ে লক্ষ্য করলো সম্ভবত কোন এক ডাইরি রঙ খুব করে হলে কালো ডাইরিটা একবার বাবা দেখছে আর বুকে জড়িয়ে নীরবে কান্না করছে সেকি???বাবা কাদছে কেনো???তাও আবার এই মাঝরাতে ডাইরিতে কি এমন আছে যা দেখে বাবা চোখের জল ফেলছে..??এরকম আরো প্রশ্ন হৃদয় এর মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো কিছুক্ষন পর হুট করে বাবার ঘরের আলো নিভে গেলো হয়ত বা ঘুমিয়ে পড়েছে হৃদয় ও নিজের ঘরে চলে এলো বিছানায় শুয়ে দুই হাত মাথায় রেখে চিন্তা করতে লাগলো  বাবাকে আমি কখনো কোনো পরিস্থিতি তেই কাদতে দেখিনি অথচ সেই বাবা কিনা কাদছে তাও আবার কি না কি সামান্য এক ডাইরির কারণে কি এমন আছে সেই ডাইরিতে আমার খুজে বের করতে হবে হৃদয় ঘুমিয়ে পড়লো পরেরদিন বাইরের উচ্চস্বরে কথা বলা আর হাসির আওয়াজ পেয়ে ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো চোখ ডলতে ডলতে ড্রয়িং রুমে গেলাম~`আসাদ আংকেল এসেছে (বাবার বন্ধু)সাথে তার মেয়েকে নিয়ে আসাদ আংকেল কে চিনি কিন্তু তার মেয়েকে চিনিনা আমাকে কখনো বলেওনি ওনার মেয়ের ব্যাপারে বাবার পাশের সোফায় বসে পড়লাম

——-কি ব্যাপার হৃদয় কেমন আছো??ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে..(আসাদ আংকেল)
—–ইয়ে মানে আরকি আজকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো..জি ভালো আছি আপনি??..(হৃদয়)
—বেশ ভালোএই যে পরিচয় হউ আমার মেয়ে সাথে তোমাকে ওর ব্যাপারে কখনো কিছু বলা হয়নি স্কটল্যান্ড থেকে ফার্মেসিতে পরেছে ১মাস হল দেশে এসেছে তোমাদের বাড়ির দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম অনেকদিন দেখা হয়না ভাবলাম আজকে দেখা করে যাই খুব ভালো করেছিস আসাদ তা মা তোমার নাম কি??(বাবা)

—–জি আমার নাম নিলা

—-খুব সুন্দর নাম মা তাহ দেশে থাকবে নাকি আবার অইখানেই চলে যাবে??
—না আংকেল একবারেই এসেছি(নিলা) এদিকে হৃদয় খেয়াল করে দেখতে লাগলো নিলা নামের মেয়েটিকে….কাজল দেয়া স্থির অচঞ্চল দুটি নয়ন..;নম্রমুখ চাহনী;কথা বলার মধ্যে লজ্জাবোধ ;পরনে ডিজাইনার সালোয়ারকামিজ এককথায় একটি অপ্সরী

—-হাই আমি হৃদয় ;
—(হাত নাড়িয়ে) আমি নিলা আর কিছু বলার আগেই
—–আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে রে আজ না হয় আসি তোরা আমাদের বাসায় আসিস কিন্তু এই সামনের শনিবার ওইদিন নিলার জন্মদিন|জন্মদিনের দাওয়াত টা দিতেই মুলত আসা আমার(আসাদ আংকেল)
—–আচ্ছা সে না হয় আসবো তা কিছু খেয়ে যা (বাবা)
— আজ নয় অন্য একদিন আজ যাই বলেই দেরি না করে নিলাকে নিয়ে আসাদ আংকেল চলে গেলো…হৃদয় তাদের যাওয়া দেখতে লাগলাম
—–যা ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নে!!(বাবা)
—-হুম যাচ্ছি…(হৃদয়) ৩০মিনিট পর
—হৃদয় আমার জরুরী মিটিং আছে আমি বাহিরে বেরোচ্ছি….
—আচ্ছা বাবা সাবধানে যেও(ল্যাপটপ এ গেম খেলতে খেলতে)
—-কিছু লাগলে ম্যানেজার কে বলিস(বাবা)

—–ওকে বাবা

হৃদয়ের মা ওর জন্মের কিছুদিন পরেই মারা যায় এমনটা ওর বাবা ওকে বলেছে কিভাবে মারা গেছে সেটা ওকে বলেনি যা ওর কাছে রিতিমতো একটা রহস্য বাবাই ওকে মানুষ করেছে কোলেপিঠে করে হঠাৎ করেইই হৃদয় এর কাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো”আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম;বাবার কালকের ঘটনা ;বাবা কেন ওরকম ভাবে কাদছিলো ;ও হ্যা আর সেই ডাইরি আমার সেটা পড়তে হবে কি এমন লিখা আছে অটাতে(এরকম সাত পাচ ভাবতে ভাবতে বাবার রুমে ঢূকলো হৃদয়) বাবার রুমে আমি সচরাচর আসিনা ওনার বারণ আছে সবসময় আসা!!আজকে কেন জানি বারণ উপেক্ষা করে ঢূকে পড়লাম পূরো রুম খুজলাম কোথাও পেলামনা.. ডাইরিটা পাবার আশা ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হবো এমন সময় ;মনে পড়ে গেলো বাবা তার সব কিছু ওনার আলমারিতে রাখে!! আসতে করে আলমারিটা খুললাম! একদম কোনার দিকে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে কি যেন…হাতে নিয়ে কাপড় সড়াতেই বাবার হাতে থাকা ডাইরিটার মত ডাইরি পেলাম।

আরে এটাই তো সেই ডাইরিটা জলদ ি করে আলমারিটা লাগিয়ে সব ;রুমের সবকিছু ঠিকমত আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করে বেরিয়ে ওর রুমে আসলো হৃদয় বারান্দার চেয়ারে বসে পড়লো ওটা নিয়ে; আসতে আসতে ডাইরিটা খুলতে লাগলো ২পৃষ্ঠা পর পর ১০-১১লাইন করে লিখা ১ম পৃষ্ঠায় বড় বড় অক্ষরে সুন্দর করে লিখা ”আরনাফ+আহিয়া”’ শব্দটা পড়ে হৃদয় রীতিমতো বড় রকমের শক খেলো; আরনাফ ওর বাবার নাম তা ঠিক আছে কিন্তু এই আহিয়া টা কে ;আমার মায়ের নাম তো মায়া তাহলে ওনার নাম না লিখে ::আহিয়া::কেনো লিখাএকে একে সব গুলো পাতা পড়লো অবাধ্য চোখের জল অনবরত বের হতে লাগলো ওর নয়ন থেকে ডাইরিটাতে লিখা ছিলো আজকে আহিয়ার জন্মদিন আমার থেকে ও একটা অদ্ভুত উপহার চেয়েছে ;এমন অদ্ভুত আবদার শুধু ওই করতে পারে:;ও আমার সাথে ওর জন্মদিনের উপহার হিসেবে ৯ঘন্টা ৩৬ মিনিট কাটাতে চায় ৯ঘন্টা ৩৬মিনিট কেন আমি ওর সাথে সারাদিন কাটাবো কিন্তু ওর সাফ মানা ও ওই নির্দিষ্ট সময়ই আমার সাথে কাটাবে ঠিক এই মুহুর্তে আহিয়া সেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে ওর সাথে আরনাফের প্রথম দেখা হয়েছিলো….রেগ
ে প্রায় আগুন…”:উফফফ এই ছেলেটা কখন আসবে এমন সময়

—কি খবর?? (আরনাফ)
—কয়টা বাজে??(রেগে প্রশ্ন করে আহিয়া)
—-১০ঃ২৩বাজে….. (মোবাইলটা বের করে)
—–আসার কথা ছিলো কয়টায়???
—-১০:০০টায় -সরি সরি;;রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো
—-তোমার এই বাহানা আমি অনেকদিন ধরে শুনছি..;তুমি কবে সময়কে গুরুত্ত দিবে হুম??(কোমড়ে দুইহাত দিয়ে ভ্রু কুচকে আড়চোখে আরনাফের দিকে)

–আচ্ছা আর হবেনা… ও হ্যা এই নাও বলে পিছন থেকে গোলাপের তুরি টা বের করে আহিয়াকে দিলাম নিমিষে ওর রাগটা গলে গেলো;ও ফুল ভারিপছন্দ করে চলো ওই দিকটাতে যাই(আহিয়া) (সকাল ১০:২৩-রাত৯:৫৯)হেটে ;ঘুরে;খেয়ে;মজা করে দিব্যি কেটে গেলো দুজনেরপরবর্তী দিন

—হ্যালো আরনাফ আমার সাথে কি আজকে একটু জরুরী ভিত্তিতে দেখা করতে পারবে???(আহিয়া)
—-কি হয়েছে আহিয়া??anything serious??হুম বলো কোথায় আসবো?(আরনাফ)
—রাস্তার ধার টায় আসো…
—-আচ্ছা আসছি গিয়ে দেখি ও আগে থেকেই সেখানে হাজির;চোখে মুখে বিষণ্ণতা কি যেন একটা কিছু বলবে ব্রেকাপ সম্পর্কিত কিছুবলবেনা এ আস্থা ওর উপর আমার আছে
—-ডেকেছিলে???
—-হুম খুব জরুরী কথা। সামনে চলো হাটতে হাটতে বলি

—-আমি জানিনা আমি যে কথা গুলো বলব।সেগুলো তুমিকিভাবে নিবে..!!কিন্তু আমি না বলেও পারছিনা..! থাকতে পারবোওনা(আহিয়া)
—–কি এমন কথা শুনি??আমায় বলো (আরনাফ)
—–তাহলে শোনো~~আমার হার্টে ছিদ্র দেখা দিয়েছে–আমি মনে হয় আর বেশি দিন বাচবোনা আরনাফ থেমে যায় কথাটা শুনে
—যা বলবে স্পষ্ট করে বলো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা(শ্বাস বেড়ে গেছে)

–সেদিন আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে যাই; আব্বু আমাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়! সেখানে জানতে পারি আমার হার্টে নাকি একটা ছিদ্র আছে যা ক্রমশ বড় হচ্ছে সময় থাকতে অপারেশন করাতে হবে তা না হলে (কান্না করে দেয় আহিয়া) মেয়েটা ফুপাচ্ছে ;এ অবস্থায় হাটা উচিত নয় তাই কাছে কোথাও ওকে নিয়ে বসলাম!পানি খাওয়ালাম তারপর আবার ও বলতে গেলো কিন্তু ওকে শান্ত করিয়ে আমি বললাম

—আরে এই ব্যাপার এটা কোনো রোগ নাকি পাগলী? (ওকে সান্তনা দেয়ার জন্যে)আজকাল এসব নিরাময় কিছুই না চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকনেক উন্নত এখন ;একদম চিন্তা করোনা তুমি ঠিক হয়ে যাবে

—ডাক্তার আংকেল ও আমাকে এইকথাগুলো বলেছে ; আমার হাতে আর ৮ মাস সময় আছে এর মধ্যেই অপারেশন টা করাতে হবে কিন্তু এসব ক্ষেত্রে একটু এদিক সেদিক হলে নাকি আমি…..(আর কিছু বলার আগেই ওর মুখ চেপে ধরলাম) কিচ্ছু হবেনা আমি আছি তো ;আমরা সবাই আছি তোমার সাথে

—-আর এর জন্যে আমাকে সিংগাপুর যেতে হবে ;এসব
কম্পলিকেটেড অপারেশন অখানেই নাকি করতে হয়;বাবা
সব প্রিপারেশন নিয়ে নিয়েছে পরশু ফ্লাইট
—ওহ আচ্ছা তো এই কথা বলতে এসেছো তুমি?নীজেরজীবন আগে যাও গিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসো!! ৮মাসই তো দেখতে কেটে যাবে(মুখ ওইপাশ করে হাল্কা চোখের পানি মুছে ফিরে তাকাতেই)
—-আহিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে এক পা দু পা করে ওর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো (কানে কানে)আরে বুদ্ধু তোমার ভালোবাসা আমার সাথে থাকলে কেউ আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবেনা!!
–তা আমি জানি!! তুমি আমারই থাকবে শুধু
—আমি তাহলে যাই হ্যা??ফোনে কথা বলবো বলে সোঝা হাটতে লাগলো আহিয়া; আর কিছুক্ষন থাকলে হয়ত আরনাফের মায়ার জালে পড়ে যেত আর ও যেতে পারতনা পরেরদিন রাতে আরনাফের ফোনে কল আসে;

—হুম আহিয়া বলো
—আশ্চর্য!! আমি কথা না বলতেই তুমি কিভাবে প্রতিবার বুঝে যাও যে ফোনের এপাশে আমি??
—ফিলিংস বা মনের মিল বলতে পারো ;এই কাল না তোমার ফ্লাইট?? সব ঠিক ঠাক রেডি তো?
—আর হ্যা শোনো??আমি আমার বাবাকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে বলেছি;বাবা সম্মতি দিয়েছে;অপারেশন শেষ হলেই বিয়ে কিন্তু
—–কিন্তু কি?
—আমার অপারেশন টা যদি আনসাক্সেস্ফুল হয়?তাহলে তো আমাদের বিয়েই হবেনা(ফোনের অপাশে কান্না শুরু হয়ে গেছে অলরেডি)
—আরে বোকা মেয়ে তোমাকে না সেদিন বোঝালাম তোমার কিচ্ছু হবেনা…টেনশন করোনা
—-কালকে আমাকে এগিয়ে দিতে আসবে?(আহিয়া)
—সেটা আবার বলতে হয় নাকি অবশ্যই আসবো..এখন ঘুমিয়ে পড় ;ঘুমের ও প্রয়োজন আছে; দুজনে ফোন কেটে দিলো:মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়লো ঠিক ই কিন্তু ছেলেটার চোখে বিন্ধু মাত্র ঘুম নেই;প্রিয়জনের দূরে চলে যাওয়া কতটা কস্টের তা ও জানে পরেরদিন সকালে ওকে বিদায় দেয়ার মুহুর্ত ~নিশ্চয়ই যে কারো জন্যে কস্ট দায়ক….কিন্তু আমার তা মনে হয়নি বরং কস্ট পেয়েছি ওর চলে যাবার আগে বলা সেই ৫টি কথায় যা সোঝা আমার বুকে গিয়ে বুলেটের মতো বিধেছে
–ও বলেছিল

–নিজের খেয়াল রাখবা;আমাকে নিয়ে চিন্তা করবানা; আমি ট্রিটমেন্ট এর মাঝে মাঝে কল দিবো;আমি মরে গেলে কাদবেনা একদম আর আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি;
–আমি দাত বের করে ভেবলার মতো একটা হাসি দিয়ে ওকে বিদায় জানাই ও চলে গেলো আরনাফ এদিকে ওর জন্যে আল্লাহের কাছে দোয়া নামাজ পড়তে লাগলো কারণ উপরে উপরে যতই নিজেকে শক্ত রাখুক না কেন ভীতরে ওর ঠিক ই ভয় কাজ করছে

– ওকে হারানোর ভয়!!!

–তখনো ৮মাস হয়নি কিছুদিন বাকি…এরই মাঝে ওর ফোনে আবার কল আসে
–হ্যালো??
–চিনতে পেরেছো??
—তু..তুমি (প্রচুর অবাক হয়ে)কেমন আছ?
—তোমার ভালবাসা আর ডাক্তারদের চেস্টা আমায়য় সুস্থ করে তুলেছে আমায় ভালো করে তুলেছে!!
–তার মানে
—-হ্যা তুমি ঠিকই অনুমান করছো আমার অপারেশন সাকসেস্ফুল…কাল সন্ধ্যা ৭টার ফ্লাইটে দেশে আসছি আমায় নিতে আসবেনা??
—(আনন্দাশ্রু নিয়ে)উমমম মাথা ঝাকিয়ে)আসবো পরবর্তী দিন সন্ধ্যায় আরনাফ রেডি হয়ে বিমানবন্দর গেল ;
–হঠাৎ ও লক্ষ্য করলো চারপাশের লোকজন ছোটাছুটি করছে;কিছুই বুঝে উঠল না ও; একজন লোককে জিজ্ঞেস করল
—এক্সকিউজ মি ভাই!! এখানে এসব কি চলছে??
—আপনি জানেননা??
—না একটু কাইন্ডলি বলবেন??
–তাহলে শুনুন আজকের সন্ধ্যার ফিরতি প্লেন আকাশ পথে ক্রাশ করেছে
—হোয়াট কি যা তা বলছেন???কয়টার ফ্লাইট?
–৭টার
—এইবার আর ও নিজেকে থামাতে পারলোনা  বুকের ভেতর টা একরকম মোচড় দিয়ে উঠল নাহ এ হতে পারেনা (লোকটিকে দুই হাত দিয়ে ধরে বলতে লাগলো)আমাকে ছেড়ে ও এভাবে যেতে পারেনা!! বিধাতার এই কাজ আমি মানিনা..!!

বলেই একদিকে যখন ও ওইখানেই হাটুগেড়ে চোখের জল ফেলছিলো অন্যদিকে বাকিদের স্বজনরা ছূটাছুটি করছিলো অন্যদিকে অন্য বিমান দিয়ে আক্সিডেন্ট করা প্লেনের মৃত যাত্রীদের আনা হচ্ছে রাত ৩টা বাজে এখনো ও একই অবস্থায় ;নিজের মধ্যে হিতাহিত জ্ঞান নেই হঠাৎ করে ইমিগ্রেশন বক্সে কারো কথা শোনা গেলো ‘যাদের যাদের পরিচিতরা প্লেনে ছিলো তাদের অভিভাবক দের দৃষ্টি আকর্ষন করছি ;তারা দয়া করে উল্লেখিত স্থানে চলে আসুন”’ পাগলের মত ছুটতে ছূটতে ও ওইখানে গিয়ে তন্ন তন্ন করে আহিয়ার দেহ খুজতে লাগলো মেয়েটা মারা গেছে ও এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা অনেক খোজার পরো ওর দেহ পাওয়া গেলোনা অবশেষ এ জানা গেলো যে কিছু যাত্রীর লাশ সমুদ্রের পানির গভীরে পড়ে গেছে আর সেখানেখানে জমে পূরোপূরি নস্ট হয়ে গেছে ; যার মধ্যে নাকি মেয়েটার ও লাশ আছে সব আশা ছেড়ে দিয়ে মনে বিশাল ভাড় নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে অসহায় মানুষ দের মত বের হয়ে এল ও এদিকে তাকাও!!এই নাও খাও!!হাতে হাত রেখে ঘোরা খাওয়া!ওর হাসি!!যাওয়ার আগে বলে যাওয়া কথা!!

বিয়ের কথা!!আর এই আক্সিডেন্ট”’এই সব দৃশ্য গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তখন আর আনমে হয়ে হাটছিলাম ঠিক সেই মুহুর্তে ঠিক সেই মুহুর্তে আরনাফ লক্ষ্য করলো সামনে থাকা গাছটির দিকে;রাতের মিঠি মিঠি আলোতে গাছটিকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।গাছটি দেখে ওর মনে কেন জানি একটা গাড় প্রশান্তির ছাপ পাওয়া গেলো যেন ওই গাছের কাছে গেলেই ওর ব্যাকুল শোকাহত মন বিন্দু মাত্র হলেও শান্তি পাবে গাছটির তলায় গিয়ে বসে পড়লো! দুই হাত দুই হাটুর সংস্পর্শে এনে মাথা নিচু করে খানিকক্ষণ বসে থাকলো! ‘আওয়াজ টা কিসের”??কেমন জানি গুঙানোর.! এদিক অদিক চোখ বুলাচ্ছি..নাহ কিছু তো দেখতে পাচ্ছিনা;হয়ত আমার ভ্রম” আবারো অন্যমনস্ক হয়ে গভীর চিন্তাজগতে মগ্ন হয়ে গেল।আবার একই আওয়াজ!!! শেষ বার খোঁজাখুঁজি করার সময় দেখলো.., গাছের বিপরীত প্বার্শে একটা সাদা তোয়ালা নাড়াচাড়া করছে ;কি হতে পারে ভেবে সেটার কাছে যায়!! একি??এতো এক নবজাতক শিশু।অস্ফুট চোখে হাত পা আকিবুকি করছে ;নাড়াচ্ছে আর জোরে জোরে কাদছে!! আশে পাশে চোখ বুলালাম! কাউকে তো দেখতে পাচ্ছিনা তাহলে এই বাচ্চাটা কোথা থেকে এলো?? হয়তো বাচ্চার অভিভাবক কোথাও গেছে.. আবার চলে আসবে।

এই ভেবে আরনাফ আবার গাছতলাতে বসে পড়লো!!আর বাচ্চাটির দিকে নজর রাখলো ;কেমন বাবা মা নিজের সন্তানকে এতরাতে এভাবে একা ফেলে অন্য জায়গায় যায়!!আসুক অনারা আচ্ছা তরেক বোকা দিবো ১ঘন্টা যায় ;২ঘন্টা যায় ;৩ঘন্টা যায়;বাচ্চা টা সেখানেই আছে আগের মতো;বাচ্চার অভিভাবক এর কোনো খোজ খবর নেই।ততক্ষনে ভোর সকাল, নাহ! কিছু একটা ঘাবলা আছে!! আবার বাচ্চাটির কাছে গেল ও!! ওকে কোলে নিলো ;একটা অন্যরকম অনূভুতি!!দুই ছোট হাত ওর মুখ চোখ ধরার চেস্টা করছে ; ;ঠিক তখনি তোয়ালার ভীতরে কাগজের মত কি যেন একটা কড়মড় করলো..বাচ্চাটাক  ে এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে কাগজটা বের করলাম! একি?এটা তো একটা চিঠি!! আশ্চর্য হয়ে পড়তে লাগলো এই চিঠি টা যে বা যিনি পাবেন তাকে বলছি,আমি মায়া (বাচ্চাটির মা।)

খুব বেশি কথা লিখতে পারলে পূরো ঘটনাটি একে একে লিখে দিতাম কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠল না। কাপা কাপা হাতে শুধু এতটুকু লিখে রাখছি….যে আমার বাচ্চাটিকে পাবেন দয়া করে ওকে নিজের কাছে রেখে দিয়েন বা কোনো এক নিরাপদ স্থানে পৌছে দিয়েন!!” চিঠা টা পড়ার পর বাচ্চাটার জন্যে ওর খুব মায়া হলো কিন্তু চিঠি তে লিখা যে বাচ্চাটা পাবে তার ভরণপোষন তার। কিন্তু আমি প্রাপ্তবয়স্ক থঠিক আছি কিন্তুতো অবিবাহিত…. ধেৎ আমি এসব কি ভাবছি আর বলছি অন্যের বাচ্চার দায়িত্ত আমি কেন নিবো??ভুল তারা করবে আর মাশুল দিবে অন্যরা।এসব ভেবে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো বাচ্চাটিকে অখানে আবার রেখে দিলো অন্য কারো নজরের অপেক্ষায়। কেউ একজন এলো;মতলব ভালোনা ;দেখতেও নেশাখোর টাইপের;বাচ্চাটি তুলে ফোন টা বের করে কাকে জানি ফোন দিলো ;লুকিয়ে লুকিয়ে সেগুলো নোটিশ করলাম।

মুহুর্তের মধ্যে একদল লোক মুচকি হেসে বাচ্চাটিকে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সুবিধার না দেখে আড়াল থেকে বের হয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলাম; বাচ্চাটি কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?কে হোন আপনারা ওর??”ওদের একজন উত্তর দিলো.. ‘যেই হোই আর ‘যেখানেই নিয়ে যাই তাতে তোর কি??::যা ভাগ”আশে পাশে থেকে লোক জোগাড় করলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেখে ওরা বাচ্চাটি ফেলে চলে গেলো বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে জমা ভীড়ের লোকদের উদ্দেশ্যে বললাম;’বাচ্চাটি বেওয়ারিশ;কোনো স্বহৃদয় বান ব্যক্তি বাচ্চার দায়িত্ত নিবেন? জমা ভীড় ফাকা হতে ১মিনিট ও লাগলোনা।

আসলে পৃথিবীতে সবাই যে যার স্বার্থ নিয়েই থাকে.~~অন্যের কথা ভাবেনা। এখন বাচ্চাটিকে আবার ফেলে চলে গেলে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর দুস্ট মানুষরা ওকে নিয়ে কি করবে তা ভাবাতীত। সেখানে দাঁড়িয়ে অনেককক্ষন ভেবে শেষ মেষ একটা সিন্ধান্ত নিলাম… বাচ্চাটির গুরুদায়িত্ব আমিনিবো!! এই জীবনে আহিয়া ছাড়া আর কাউকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা তাই আমি এই জিবনে আর বিয়ে করবনা!!এই বাচ্চাটিই হবে আমার পৃথিবী।সমাজে এর পরিচয় হবেআমার দত্তক নেওয়া সন্তান হিসেবে। প্রাপ্তবয়স্ক ছিলাম তাই দত্তক নেওয়ার মিথ্যা বাহানানিয়ে বাচ্চাটি নিজের কাছে রেখে দেই;হয়ে উঠি ওর বাবা।নইলে সমাজ কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান বলে ওকে ধিক্কার দিত।

নাম দেই আদর করে হৃদয়। হয়ে উঠল আমার মধ্যমণি। এখন আমার সমস্ত আশা ভরসা ওকে ঘিরেই। ও ঈ হলো আমার স্বপ্ন।এখন ডাইরির পাতা সমাপ্ত হলো।সাথে হৃদয় ;ওর বাবার জীবন কাহিনী। ডাইরিটা পড়ে ওর বাবা আসার আগেই ঠিক ঠাক করে আগের জায়গায় রেখে দিলো ”ওগুলো অতীত! অতীত নিয়ে আকড়ে থাকলে জীবন থমকে যায় সেখানেই। আমার উচিত আজকে যা জানলাম তা অতিত হিসেবেই আমার জীবনে থেকে যাক। যারা আমাকে জন্মের পর ফেলে দিয়ে গেছে তাদের জন্যে কেন আমি দুঃখ করব।আমার বাবাই আমার সব।… (হৃদয় মনে মনে বলল)সাথে ফেললো স্বস্থির নিঃশ্বাস

শনিবার…

—-হৃদয়!!! এই হৃদয়!!!
–হ্যা বাবা (রুম থেকে)
—আয়তো আমার সাথে
—কোথায় বাবা??(বের হয়ে)
—-কিরে তোর মনে নেই?
—কি মনে নেই বাবা??
—সেইদিন যে তোর আসাদ আংকেল এলো ওর মেয়ে নীলার জন্মদিনের দাওয়াত দিতে ভুলে গেলি এত তাড়াতাড়ি??
—হুম মনে পড়েছে…তো???
—তো জন্ম দিনে যাবো কিছু একটা তো নিয়ে যেতে হবে বল??
—হুম
—কি হুম হুম করছিস.? চল আমার সাথে এখন
—যাবো মানে?কোথায় যাবো??
–তোর মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কমে গেলো নাকি??মেয়েটার জন্মদিনে আমাদের প্রথম দাওয়াত দিলো খালি হাতে যাবো নাকি। কিছু একটা তো নিয়ে যেতে হবে।
–হ্যা তো নিয়ে যাও
—কিছু নিতে হলে মলে যেতে হবে আমার সাথে চল।তুই তো জানিসই তোর পছন্দই আমার পছন্দ
–মন টা তৃপ্তিতে ভরে উঠলো। বাবা আমাকে কতটা ভালোবাসে। আচ্ছা বাবা চলো চয়েস করে একটা আংটি কিনলো হৃদয়।নীলাকে বেশ মানাবে
–বাবা এটা কেমন?
–তোর পছন্দ?
–ওই আর কি? আরনাফ সাহেব বললো
-excuse me plz pack it
–pleasure sir কিনে ওরা বাড়ি গেলো সেদিন সন্ধ্যাবেলা বাবার সাথে আসাদ সাহেবের বাড়িতে…
—কিরে এসেছিস? আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? (আসাদ আংকেল)
–আরে না! আসতে কিসের সমস্যা হবে(বাবা)
–আয় আয় বস।
–তা তোর মেয়ে মানে আমার নীলা মামনী কোথায়?
–রেডি হচ্ছে আসবে কিছুক্ষন পরে

হৃদয় এর বাবা আর আসাদ আংকেল কথা বলছিলো আর হৃদয় বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো! দেখতে দেখতে চোখ পড়লো সিড়ির দিকে। হিলের ঠক ঠক আওয়াজ করে কে যেন নামছে। চোখ সরানো যাচ্ছেনা এরকম সেজে কে যেন নামছে। হৃদয় দেয়ালে হেলান দিয়ে আগ্রহের সাথে মেয়েটার আসা দেখছে। এতো সেই মেয়েটা.! কি যেন নাম ও হ্যা নীলা।ওরই তো জন্মদিন। নজরকাড়া সাজে সেজেছে। নিলা আসাদ আংকেলের কাছে গেল বাবার সাথে সৌজন্য।সাক্ষাত করে অবশেষে কেক কাটা হলো। বাবা আমাকে নিলার সামনে ওনার কাছে ডাকলেন। আমিও বাধ্য ছেলের মতো গেলাম।

—ওকে গিফট টা দে?

পকেট থেকে আংটি টা বের করে বাবাকে।দিলাম ”এই নাও বাবা” আমাকে দিচ্ছিস কেন?ওকে পরিয়ে দে? ইয়ে মানে বাবা হয়েছে হয়েছে এখন পরিয়ে দে আংটি নিয়ে ওর দিকে অগ্রসর হলাম নীলা ওর হাত বাড়িয়ে দিলো আংটিটা পরিয়ে দিলাম। পিছনে দেখি আসাদ আংকেল আর বাবা হাসছে;আর এদিকে নিলাও (লিখার সময় লেখকও হাসছিলো এই মোমেন্ট কল্পনা করে)হৃদয় ৪৪০ ভোল্টের লজ্জা পেলো। জন্মদিন আর নাচ গান হবেনা তা কি হয় নাকি?হুট করে বাড়ির লাইট অফ হয়ে মিঠে আলোয় আলোকিত হলো সবাই জোড়ায় নাচছে। বাবা আর আংকেল সোফায় বসে আছে ; এমন সময় আসাদ আংকেল বললো

–কি হৃদয় নাচতে জানো তো? (-রহস্য মিশ্রিত লজ্জিত হাসি দিয়ে)জি জানি
–তো দাঁড়িয়ে আছো কেন?যাও তো তাহলে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে নেচে আসো
–লজ্জায় মাথা হেড আস্তে করে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে নিলার কাছে গেলাম নীলা আমাকে দেখে বললো
—কিছু বলবেন?
–(কি বলবো)ও হ্যা আপনার বাবা আপনার সাথে আমাকে ডান্স শেয়ার করতে বলেছে।
—আমার বাবা বলেছে বলে এসেছেন শুধু নাকি?নিজ ইচ্ছায় আসেননি?
–(হ্যা সূচক হাসি দিয়ে) হুম
–নীলা হাত এগিয়ে দিলো হৃদয় হাত বাড়িয়ে দিলো শুরু হলো গানের তালে।রোমান্টিক মূহুর্ত।নাচের ভীতরেই
–আপনি তো বেশ ভালো ডান্সার মি:(নীলা)
—I am always good(হৃদয়)
—ও তাই নাকি?
—হ্যা
এরকম অনেক কথা হলো। অবশেষরূপে ওরা love at first sight না দুজনেই love at last sight খেলো কারণ এর পর ওরা সেই গাড়িতে উঠল যেটার গন্তব্য বিবাহ। বাবা ছেলে আর নীলা কে নিয়ে শুরু হলো আরেকটা সেদিন যেখানে রয়েছে সীমাহীন ভালোবাসা

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত