বৃষ্টি

বৃষ্টি

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মেজাজ খিঁচড়ে আছে। একটা দাঁত প্রচন্ড ব্যথা করছে।বোধ হয় ফেলে দিতে হবে।ডাক্তার দেখলে আমি ভয় পাই।দু একজন ডাক্তার এর আচরণ একেবারে যাচ্ছে তাই।মাঝে মাঝে মনে হয় এরা কসাই খানা থেকে ট্রেনিং নিয়ে ডাক্তার হয়েছে। ভাল ডাক্তার ও আছে,সংখ্যায় কম।

নাহ,ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে, এক্ষুণি ডাক্তার দেখানো দরকার। রেডি হতে শুরু করলাম। বড়বোন চা নিয়ে এলো,কি রে বান্দর কী করছিস?

_ব্রেক ড্যান্স করছি আপু।আমি হলাম বাংলার মাইকেল জ্যাকসন।
– চড় মেরে তোর দাঁত ফেলে দেব।
– তোমাকে আর কষ্ট করে চড় মেরে দাঁত ফেলতে হবে না,একটা দাঁত বোধ হয় এমনিতেই ফেলে দিতে হবে,সারারাত ব্যথায় ঘুমাতে পারিনি।

– তোকে যে আমার মোবাইলে লোড করার জন্য টাকা দিলাম, দিয়েছিলি?
– টাকা তো লোড দিলাম, কিন্তু সে টাকা কী করে আমার মোবাইলে চলে এলো বুঝলাম না! নিশ্চয়ই ক্রস কানেকশন হয়েছে।

– তুই কি মানুষ হবি না?
– হওয়ার তো চেষ্টা করছি, হতে পারলে তোমাকে জানাবো।
বোন বেড়িয়ে গেল। ব্যথা বাড়ছে, এক্ষুণি ডাক্তার না দেখালে চলছে না।বেরুতে যাব,বন্ধু লিটন এসে হাজির।
– দোস্ত বেরুচ্ছিস?
– হা।
– গেছি রে দোস্ত, একেবারে গেছি!
– কোথায় গেলি।
– ফেঁসে গেছি রে দোস্ত। তোর কাছে নাইলনের দড়ি হবে?
– দড়ি দিয়ে কি করবি?
-গলায় ফাঁস দেব,এই জীবন আর রাখতে চাই না।
– পাটের দড়ি আছে ওটা দিয়ে হবে না?

– তুই গাধা নাকি!পাটের দড়ি ফ্যানের সাথে বেধে ফাঁস দিলাম, দেখা গেল দড়ি ছিড়ে চিটপটাং। ইজ্জত থাকবে!
-কোরবানির গরুর জন্য একটা দড়ি কিনেছিলাম, খুজে বের করতে হবে।এক কাজ করতে পারিস,ফোর ফোরটি কারেন্টের লাইন দেখে ঝুলে পর,সহজেই মামলা খতম।

– আরে হাঁদারাম, কারেন্ট শক নিলে যদি শরীর পুড়ে যায় তখন বিচ্ছিরি দেখাবে না! ইজ্জত পাংচার হয়ে যাবে না!
– আরে বেটা তুই বেচে থাকলে তবেই না ইজ্জতের প্রশ্ন আসবে? তুই তো তখন ইন্নালিল্লাহ হয়ে যাবি।
– ভাল বলেছিস তো! তাহলে তাই করি।

লিটন বেড়িয়ে যাচ্ছিল, আমি তাকে থামালাম। এমন কাহিনী ও প্রায়ই করে ভয় পাওয়ার কিছু নাই।একেবারে সহজ সরল ছেলে। কিছুক্ষণ পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
আমি বললাম, আত্মহত্যা করবি ভাল কথা,কেন করবি সেটা তো বললি না।

– ও হো দোস্ত, তোকে বলিনি! মহা কেলেঙ্কারির রে দোস্ত! আমি শেষ!
– কি হয়েছে বলবি তো!
– তুই তো জানিস আমি বৃষ্টিকে কতোটা Love করি। এক বছর লেগেছে ওকে রাজি করাতে। এ মাসে ওকে পাঁচ বার চাইনিজ খাইয়েছি।
– ভাল কথা,সমস্যা কি?
– অনেক রিকুয়েস্ট করে গতকাল ওর ফেসবুক পাসওয়ার্ড নিয়েছি।
– তারপর?
– গতকাল রাতে মেসেঞ্জারে কবিতা লিখে পাঠালাম –

তুমি হলে গরু
আমি হবো ঘাস
তুমি হলে পুকুর
আমি হবো মাছ।
তুমি হলে মরিচ
আমি হবো ঝাল
তুমি হলে নদী
আমি হবো খাল।
তুমি হলে নৌকা
আমি হবো বৈঠা,,

– ভালই তো লিখেছিস,সমস্যা কি?
– কবিতা লিখেই তো ফেঁসে গেছি।
– কীভাবে?
– নিজের কবিতা ভালই চালাচ্ছিলাম,পরের কবিতা লিখেই ফেসে গেলাম।ঐ যে ঔই কবিতাটা লিখলাম _
আয় বৃষ্টি ঝেপে
ধান দেব মেপে,,,,,
এই কবিতা পড়েই বৃষ্টি ক্ষেপে গেল।
– কেন,ক্ষেপলো কেন?
– ধান লিখতে গিয়ে ভুলে ধ এর আকার দিতে মনে নাই,ফলে বৃষ্টি পড়ল-
আয় বৃষ্টি ঝেপে
ধন দেব মেপে,,,
আমি কিছুতেই বুঝাতে পারলাম না,ওটা আমি ধান লিখেছিলাম।

– এ তো মহা সমস্যা!
– আরও আছে রে দোস্ত!
– আবার কি?
– লেখার শেষে লিখলাম Best of luck.
– ভালোই তো লিখেছিস!
– মোটেই ভাল লিখিনি রে দোস্ত! তুই তো আমার ইংরেজি বিদ্যার দৌড় জানিস,Luck লিখতে গিয়ে ভুল করে L এর জায়গায় F হয়ে গেছে।Best of luck এর জায়গায় হয়ে গেছে Best of fuck!

– বলিস কি রে! এতো মহা ঝামেলা!
– শুধু কি ঝামেলা! বৃষ্টি হন্যে হয়ে গরু খোজা করছে আমাকে পিটানোর জন্য! কাছে পেলে নির্ঘাত খুন করবে!
– তুই বুঝিয়ে বলিসনি?
– সুযোগ পেলাম কোথায়? একবার সাহস করে ফোন করেছিলাম। বৃষ্টির মতো গালি বর্ষন শুরু করলো! পটানোর জন্য বলেছিলাম Girlfriend এর পায়ের নিচে Boyfriend এর বেহেস্ত। তাতে ও কাজ হয়নি।
– বৃষ্টি কে ভুলে যা।
– প্রথম প্রেম কি ভোলা যায়?
– ভোলা চাঁদপুর লক্ষী পুর সব জায়গায় যায়,কিন্তু তোর প্রেম তো পাবনা গিয়ে বসে আছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তোর পাবনা পাগলা গারদে থাকা উচিত।

-বলিস কি?
-ঠিকই বলছি।

ব্যাটাকে কীভাবে তাড়ানো যায়,ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে, ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে।আমার ভাগ্নির নাম মেঘ,মাঝেমাঝে ফাজলামি করে ওকে বৃষ্টি নামে ডাকি।আমি ডাকলাম, বৃষ্টি একটু এদিকে আস তো!

– বৃষ্টি তোর এখানে! আগে বলবি তো! ওরে বাবা রে,গেছি রে!বলেই লিটন দরজার দিকে দৌড়াতে শুরু করলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত